সংবাদ শিরোনামঃ

পরিস্থিতি বেসামাল : সতর্ক সরকার ** হত্যার রাজনীতি পরিহার করে নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন ** মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদেরের রিভিউ আবেদন ** অনিশ্চয়তায় পোশাক খাত অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত ** বিরোধী নেতাদের ধরপাকড় সরকারের জন্য বুমেরাং হবে ** অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ** অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া ** এখন আর সুষ্ঠু রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না ** রাজনৈতিক সঙ্কটে থমকে যাচ্ছে অগ্রগতি ** ধীরে ধীরে ইসরাইলের গলার ফাঁস এঁটে আসছে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’ ** সরকার দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ** পানিবদ্ধতায় হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওরের আমনচারা এখন গোখাদ্য **

ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪২২, ২ মহররম ১৪৩৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

 ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ ফররুখ আহমেদের জন্ম ১০ জুন ১৯১৮। তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এ অসামান্য কবি । তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে একটুখানি জানার প্রয়াস আমাদের-

জন্ম ও জীবিকা : ফররুখ আহমেদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার। তিনি খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই এ পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। তবে চল্লিশ-এর দশকে তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। তিনি ভারত বিভাগ তথা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেন।

কর্মজীবন : ফররুখ আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় কলকাতায়। ১৯৪৩ সালে আই জি প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন তিনি। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক মোহাম্মদী-র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন।

পারিবরিক জীবন : ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)-এর সঙ্গে ফররুখ আহমদের বিয়ে হয়। তাঁর নিজের বিয়ে উপলে ফররুখ ‘উপহার’ নামে একটি কবিতা লেখেন যা ‘সওগাত’ পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়।

ফররুখ আহমদের ছেলেমেয়ে ১১ জন। তাঁরা হলেন- সৈয়দা শামারুখ বানু, সৈয়দা লালারুখ বানু, সৈয়দ আবদুল্লাহল মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহেল মাসুদ, সৈয়দ মনজুরে এলাহি, সৈয়দা ইয়াসমিন বানু, সৈয়দ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান [আহমদ আখতার], সৈয়দ মুহম্মদ ওয়হিদুজ্জামান, সৈয়দ মুখলিসুর রহমান, সৈয়দ খলিলুর রহমান ও সৈয়দ মুহম্মদ আবদুহু।

সাহিত্য কর্ম : সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর প্রধান পরিচয় ‘কবি’। ফররুখ আহমদ কিছু সনেটও রচনা করেছেন। তাঁর রচনায় ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া আরবি ও ফারসি শব্দের প্রাচুর্য তাঁর লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে ডানপন্থার প্রতি সমর্থন থাকলেও তিনি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই কবি ফররুখ আহমদ আশ্বিন ১৩৫৪ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৪৭) সংখ্যা মাসিক সওগাত-এ পাকিস্তান : রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য নিবন্ধে লেখেন : গণতান্ত্রিক বিচারে যেখানে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষাকে পর্যন্ত যাঁরা অন্য একটি প্রাদেশিক ভাষায় রূপান্তরিত করতে চান তাঁদের উদ্দেশ্য অসৎ। পূর্ব পাকিস্তানের সকল অধিবাসীর সাথে আমিও এই প্রকার অসাধু প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

কাব্যগ্রন্থ : সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম মুনীরা, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা, ধোলাই কাব্য, হাতেম তায়ী, নতুন লেখা, কাফেলা, হাবিদা মরুর কাহিনী, সিন্দাবাদ, দিলরুবা, শিশুতোষ গ্রন্থ : পাখির বাসা, হরফের ছড়া, চাঁদের আসর, ছড়ার আসর, ফুলের জলসা।

পুরস্কার : ১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক প্রাইড অব পারফরমেন্স এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাঁকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।

মৃত্যু : ফররুখ আহমদ ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর, সন্ধেবেলা ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

কবিকে নিয়ে যত কথা : শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবি ফররুখ আহমদ [১৯১৮-৭৪] তাঁর সমকালে সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠিত, উচ্চারিত এবং অভিনন্দিত হয়েছিলেন। কবির এই গ্রহণযোগ্যতার একমাত্র কারণ যে তাঁর কাল এবং কালের শিখরস্পর্শী কবিতার শক্তি- সে কথা বলাবাহুল্য। সমকালে তিনিই যে ছিলেন শীর্ষে, এ কথার স্বার তো রয়ে গেছে প্রচুর। ধরা যাক, প্রায় তাঁরই সমবয়সী নন্দিত কথাশিল্পী আবু রুশদের [১৯১৯] কথা। ফররুখকে তিনি দেখেছেন খুব কাছে থেকে। শুধুই দেখেননি-তাঁকে জেনেছেনও বটে। সমকালীন বন্ধুদের দৃষ্টি কিছুটা ঘোলাটে, কিছুটা অস্পষ্ট, কিছুটা ঝাঁপসা রয়ে যায়। এটা দোষ বা গুণ-বিচার্য বিষয় নয়। এমনটি ঘটেই থাকে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ফররুখ বিবেচনায় তাঁর সমকালীন বন্ধু এবং সহযাত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এতটুকু সেই অস্পষ্টতার ছায়ামাত্র নেই। এমনকি নেই তৎকালীন সমালোচকদের মধ্যেও। এখানে ফররুখ আহমদের সমসাময়িক কথাশিল্পী আবু রুশদের [সওগাত : ভাদ্র ১৩৪৮] মন্তব্যের সাথে প্রথমে কিছুটা পরিচিত হওয়া যাক। তিনি বলেছেন, ফররুখ আহমদ-ফররুখ আহমদ রোমান্টিক কবি, অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক বাস্তববোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাঁর কাব্যে সৌন্দর্যের জয়গান অকুণ্ঠ , সুদূরের প্রতি আকর্ষণও তাঁর কাব্যের আর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

তবুও তিনি নিঃসন্দেহে আধুনিক। তাঁর একটি বলিষ্ঠ সজাগ তীè অনুভূতিশীল মন আছে যা সৌন্দর্যের অস্তিত্বকে স্বীকার করবার সাহস রাখে, কিন্তু রোমান্টিসিজমের বিপদ সম্বন্ধে যা সর্বদা সচেতন।

তাঁর মেধা এবং সূক্ষ্ম পরিমাণ-জ্ঞান বিস্ময়কর এবং তাঁর বয়সের রচনায় অপ্রত্যাশিত। শব্দের নিপুণ চয়নে, কল্পনার ব্যাপকতায় এবং গভীর অর্থে পরিস্ফুট রূপক-মাধুর্যে তাঁর কবিতা সহজেই বিশিষ্টতা অর্জন করেছে।

আবু রুশদের ঐ মন্তব্যের ঠিক দশ বছর পর, মাসিক মোহাম্মদী পৌষ ১৩৫৮ সংখ্যায় আহমদ শরীফ [১৯২১-৯৮] লেখেন : আমাদের বাংলা ভাষায় স্বকীয় আদর্শে সাহিত্য সৃষ্টি করতে হবে, আদর্শ হবে কোরআনের শিক্ষা, আধার হবে মুসলমানি ঐতিহ্যানুগ আর বিষয়বস্তু হবে ব্যক্তি বা সমাজ অথবা বৃহদার্থে জগৎ ও জীবন। এভাবে আমাদের জাতীয় সাহিত্য ও জাতীয় জীবন গড়ে উঠবে। সাম্প্রতিক সাহিত্যে তরুণ কবি ফররুখ আহমদ একান্তভাবে মুসলিম ঐতিহ্যের পরিপ্রেেিত কাব্য সাধনা করে পথের দিশারির গৌরব অর্জন করেছেন।

মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ [১৮৯৮-১৯৭৫] ছিলেন ফররুখ আহমদের অগ্রজ গদ্য- লেখক। ফররুখের চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন প্রায় বিশ বছরের। আর তিনি ইন্তিকাল করেছিলেন, ফররুখের ইন্তিকালের এক বছর পরে, ১৯৭৫ সালে। তিনি ফররুখ আহমদের হাতেম তায়ীর [প্রকাশকাল : ১৯৬৬] আলোচনায় [পাকিস্তানী খবর, আগস্ট ১৯৬৬] বলেন , মুসলিম ঐতিহ্যের ছায়াঘেরা এই অপূর্ব অবদান কবিকে চিরদিনের জন্য স্মরণীয় করে রাখবে সন্দেহ নেই। এই ছিল ফররুখ আহমদ সম্পর্কে, তাঁর সমকালীন অজস্র মন্তব্যের মাত্র তিনটি নজির। আর তাঁর মৃত্যুর [১৯ অক্টোবর, ১৯৭৪] পরপরই পত্র-পত্রিকায় যেসব সম্পাদকীয়, নিবন্ধ, শোকবাণী প্রকাশিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে তো আজকের অনেকেই পরিচিত আছেন। তবুও সেখান থেকে মাত্র দু’টি সম্পাদকীয় মন্তব্য এখানে তুলে ধরছি,“ফররুখ আহমদ আর নেই। কবিতার আকাশ থেকে ঝরে পড়ল উজ্জ্বল একটি জ্যোতিষ্ক। তমিস্রা হনন করল আলোর সেই শিখাকে, বাঁকা তলোয়ারের মত ছিল যার তেজ এবং প্রভা। এই শ্রেষ্ঠ কবির মৃত্যু গোটা বাংলা সাহিত্যকেই দরিদ্র করে দিয়ে গেল না, সেই সঙ্গে এই সাহিত্যের কবিকুল, লেখক আর পাঠকদের আকীর্ণ করল এক আত্মগ্লানিতে যা কখনো স্খালন করা যাবে না।

তিনি নিজে আজ সে অনন্ত লোকের যাত্রী। কিন্তু তাঁর কবিতাকে স্পর্শ করতে পারবে না মৃত্যু-এটাই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা।” [দৈনিক বাংলা, ২১ অক্টোবর, ১৯৭৪] এর পরদিন দৈনিক সংবাদ, ২২ অক্টোবর, ১৯৭৪-এ লেখা হয়, চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশকের প্রথমে একজন প্রখর আধুনিকতাবাদীরূপে এবং পরে ইসলামী জীবনদর্শনের প্রবক্তারূপে কবি ফররুখ আহমদ বাংলা কবিতায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। এই সময় তিনি তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে অনেককেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন যশে এবং কৃতিত্বে। তাঁর বক্তব্যে ছিল দুই পর্যায়েই তীব্রতা, শক্তি এবং প্রবলতা। তাঁর সৃষ্টিকে আমাদের কাব্য-জগতে মণিঞ্জুষার মধ্যে রাখতে হবে তাঁর সমগ্র সৃষ্টির মূল্যায়ন দ্বারা।” কবি ফররুখ আহমদ সেইসব ভাগ্যবান কবিদের মধ্যে অন্যতম, যারা কালের মধ্যে বিচরণ করেও হয়েছিলেন কালোত্তীর্ণ। তিনি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং অকুণ্ঠ মূল্যায়ন পেয়েছেন, সংবর্ধিত হয়েছেন, ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং উন্মোচিত হয়েছেন তাঁর অগ্রজ, সমসাময়িক, সময়-উত্তর-এমনকি আজকের শতাব্দীর এই প্রজন্মের লেখক, কবি, সমালোচক ও বিপুল-বিশাল পাঠকদের দ্বারা। ফররুখ আহমদ একটি কাল, এমনকি একটি শতাব্দীতেও যে নিঃশেষ হবার মতো কবি নন-তাঁর এই দুর্বার চলমানতাই সেই স্বার বহন করে।  তথ্যসূত্র : বাংলা সংবাদ: রেনেসাঁর কবি ফররুখকে স্মরণ

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।