সংবাদ শিরোনামঃ

পরিস্থিতি বেসামাল : সতর্ক সরকার ** হত্যার রাজনীতি পরিহার করে নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন ** মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদেরের রিভিউ আবেদন ** অনিশ্চয়তায় পোশাক খাত অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত ** বিরোধী নেতাদের ধরপাকড় সরকারের জন্য বুমেরাং হবে ** অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ** অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া ** এখন আর সুষ্ঠু রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না ** রাজনৈতিক সঙ্কটে থমকে যাচ্ছে অগ্রগতি ** ধীরে ধীরে ইসরাইলের গলার ফাঁস এঁটে আসছে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’ ** সরকার দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ** পানিবদ্ধতায় হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওরের আমনচারা এখন গোখাদ্য **

ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪২২, ২ মহররম ১৪৩৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

মনসুর আহমদ
আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যাকে নিয়ে বিভিন্ন ভাষায় তাঁর কাল থেকে অসংখ্য কাসিদা, কবিতা, প্রবন্ধ, কাব্য ও জীবন চরিত রচিত হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে অপর দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে এমন বিশদ আলোচনা ও সাহিত্য সম্ভার সৃষ্টি হয়নি। রাসূল (সা.)কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিরাট সাহিত্য সম্ভারের দিকে তাকালে সেই আল্লাহর শাহী দরবারে বিনয়ে মাথা নত হয়ে আসে, যিনি তাঁর মাহবুবের শানে কুরআন পাকে এরশাদ করেছেন, ‘ওয়া রাফায়্না লাকা জিকরাক-আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।”

রাসূল (সা.)-এর শানে কাসিদা রচনা করেছেন কবি কা’ব বিন যুহাইর, হাসসান ইবনে সাবেত, শরফুদ্দীন বুসিরী আরও কত শত আশেকে রাসূল। নবী প্রেমের এই মাহফিলে বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে গান গেয়েছেন তা স্মরণ করে বাঙালি মুসলমানের হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে, আল্লাহর শোকরিয়ায় মাথা নত হয় এই ভেবে যে এমন পবিত্র প্রেমের মাহফিলে বাঙালি কবির শরিক হয়ে গান গাওয়ার সুযোগ ঘটেছে।

বাঙালা সাহিত্যে রাসূল (সা.)কে নিয়ে এত বেশি গান আর কেউ রচনা করেনি, যা করেছেন কবি নজরুল ইসলাম। শুধু বাঙালাই বলি কেন “সমালোচকদের ধারণা ফারসি সাহিত্য ছাড়া অন্য কোনো সাহিত্যে হজরত মোহাম্মদ সম্পর্কিত এমন মনোরম গানের সন্ধান মেলে না।” নজরুল রচিত প্রতিটি গানের কলিতে ফুটে উঠেছে রাসূল- প্রেমের সুর। গানের প্রতিটি শব্দ ও বর্ণ রাসূল প্রেমিকদের অন্তরে প্রেমের জোয়ার জাগিয়ে তেলে। নজরুলের এ সব গান শুধু গানই নয়, এ সবের মাঝে প্রতিধ্বনিত হয়েছে হেরার গুহায় বেজে ওঠা বেহেশতি সুর। বাংলা ভাষায় নজরুল ইসলাম সবচেয়ে বেশি গান রচনা করেছেন। তাঁর গানের সংখ্যা চার হাজার, কারও কারও মতে পাঁচ হাজার। নারায়ন চৌধুরীর মতে “ বাংলা ভাষায় সব চেয়ে বেশি সংখ্যক গান লিখেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা তিন হাজারের মত হবে। কারও কারও অনুমান সংখ্যাটি তার চেয়েও বেশি। এটিই এ দেশের এ পর্যন্ত গীতি রচনার সর্বোচ্চ রেকর্ড। তার  পরেই রবীন্দ্র সঙ্গীত। (সোয়া দু’ হাজার) নজরুল ইসলামের গানের জগতকে সীমাহীন সমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করা চলে। “সমুদ্রের কোটি কোটি তরঙ্গের প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র উচ্ছাসে উচ্চতায় জলভারে বর্ণে। অথচ ব্যষ্টির স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বেও কোটি তরঙ্গের সমষ্টিতে আবার সমুদ্রের একটা মহান সমগ্র রূপ ও বিদ্যমান।” নজরুল সৃষ্টি গানের পারাবার “তার বহু স্তরী বহৃ প্রসারী গভীর তল সমগ্র জীবন শিল্পের একটি মাত্র অভিব্যক্তি।” সমুদ্রের অংশ দেখে যেমন সমুদ্রের ধারণা অসাধ্য নয় তেমনি তাঁর গানের “কোনো কোনো বিশেষ দিক চিন্তনের ফলে তার জীবন শিল্পের ধারণা সংগ্রহ করা অসম্ভব নয়।”

জীবন শিল্পীকবি নজরুল আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে চির বিদ্রোহী সরওয়ারে কায়েনাত রাসূল মুহম্মদ (সা.)কে। রাসূলের শানে এত নাত ও গীত রচনার পেছনে বিদ্যমান ছিল রাসূলের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা। তিনি রাসূল (সা.)কে শ্রেষ্ঠতম গুরু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।      

একবার কোনো এক প্রসঙ্গে ইবরাহীম খাঁর সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে নজরুল বলেছিলেন :

“আমার শ্রেষ্ঠতম গুরু যিনি, সেই হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর কথা মনে করুন। তিনি মে’রাজে গেলেন কিন্তু ধরার ধুলাকে ভুললেন না, ফিরে এলেন। কত গওস, কুতুব, ঋষি পয়গম্বর সে মহান সুন্দরের পরম আকর্ষণে নিজকে সম্পূর্ণ বিকিয়ে বিলিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু আমার রাসূল সে আকর্ষণের চুম্বক খণ্ডকে বুকের তলে পুষে নিয়ে ফিরে এসেছেন তাঁর সঙ্গে আর সবাইকে সেই সুন্দরের পথে ডেকে নিয়ে যেতে। আমিও তাই করতে চাই।”

সুন্দরের পথে সবাইকে ডেকে নিয়ে চলতে যাওয়ার ইচ্ছাই তাঁর কাব্যে মানবতার সুর বিদ্রোহের সুর জাগিয়ে তুলেছে। শ্রেষ্ঠতম গুরুর প্রতি হৃদয়ের চরম আকর্ষণই তাঁকে রাসূলের শানে অসংখ্য নাত ও গান রচনার প্রেরণা যুগিয়েছে। “উর্বর মৃত্তিকা না হলে রাশি রাশি ভারা ভারা ফসল জন্মাতে পারে না গানের অনুষঙ্গের মৃত্তিকার উর্বরতাকে কবি মানসের উর্বরতার শক্তি বলে বুঝতে হবে।” তাই বলা চলে রাসূলের শানে অসংখ্য গানের ফসল ফলানোর পেছনে রয়েছে রাসূল প্রেমে সিক্ত উর্বর কবি মানস।

নজরুলের রাসূল প্রেমে সৃষ্ট সাগরোপম বিশাল কবি প্রতিভার বিশ্লেষণ বিরাট কঠিন কাজ, যা যোগ্য গবেষকদের জন্য রয়ে গেল, এখানে তার সামান্যতম তুলে ধরা হলো যাদ্বারা কবির নবী প্রেমের গভীরতার সামান্যতম উপলব্ধি সম্ভব হয়ে ওঠে। কবি লিখেছেন-

ক. তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে।

মধু পূর্র্ণিমারই সেথা চাঁদ দোলে॥

যেন উষার কেলে রাঙা রবি দোলে॥ (গজল)

খ. ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ, এল রে দুনিয়ায়

আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়॥ ( গজল)

গ. তৌহিদের মুর্শিদ আমার মুহাম্মদের নাম

মুর্শিদ মুহাম্মদের নাম

ঐ নাম জপলেই বুঝতে পারি খোদাই কালাম

মুর্শিদ মুহাম্মদের নাম॥

ঘ. মুহাম্মদ নাম যতই জপি, ততই মধুর লাগে।

নামে এত মধু থাকে, কে জানিত আগে॥

ঙ. ইয়া মুহাম্মদ বেহেশত হতে

খোদায় পাওয়ার পথ দেখাও।

এই দুনিয়ার দুঃখ থেকে

এবার আমায় নাজাত দাও॥

চ. এ কোনো মধুর শারাব দিলে আল- আরাবী সাকী।

নেশায় হলাম দেওয়ানা যে, রঙিন হল আঁখি॥

ছ . ইসলামের ঐ সওদা লয়ে

এল নবীন সওদাগর,

বদ নসীব আয়, আয় গুনাহগার

নতুন করে সওদা কর। (জুলফিকার)

জ. হে মদীনার নাইয়া ...

তোমার নাম গেয়েছি শুধু কেঁদে সুবহু-শাম,

(মোর) তরিবার আর নাইতো পুঁজি বিনা তোমার নাম।

ঝ. মোহাম্মদ মোর নয়ন মনি

মোহাম্মদ মোর জপমালা

ঐ নামে মিটাই পিপাসা

ও নাম কাওসারের পিয়ালা।

ঞ. মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে।

তাই কিরে তোর কন্ঠের গান এমন মধুর লাগে॥

ট. বে আমার কাবার ছবি

চে মোহাম্মদ রাসূল

শিরোপরি মোর খোদার আরশ

গাই তারি গান পথ -বেভুল

ঠ. আমার মোহাম্মদের নামের ধেয়ান হৃদয়ে যার রয়

খোদার সাথে হয়েছে তার গোপন পরিচয়॥

ড. সেই পথে মন ধায়

রাসূলে খোদার নবীর সরদার

যে পথে চলিলেন হায়॥

ঢ. আল্লাহ অমার প্রভু আমার নাহি ভয়

আমার নবী মোহাম্মদ যাহার তারিফ জগৎ ময়॥

ণ. মন চাহে মদিনা যাব।

আমার রাসূলে আরাবী না হেরি নয়নে

কি সুখে গৃহে রব।

ত. জগদ্বাসীরে, আখেরী পয়গম্বর আজি নাজিল হয়েছে।

নাজিল হয়েছে যে নবী, নাজিল হয়েছে

নয়ন ভরে আজকে নবীর জুলওয়া দেখে নে॥

থ. আমার হৃদয় শামাদানে জ্বালি মোমের বাতি

নবীজী গো! জেগে আমি কাঁদি সারা রাতি॥

 à¦¨à¦¬à§€ প্রেমে মত্ত এ মস্তনা কবি নবীর পূন্য ভূমি চুমিবার আশা হৃদয় পশে ছিলেন। কিন্তু সুযোগ ও আর্থিক অসচ্ছলতা তাঁর প্রেমের পথে অন্তরায় হয়েছিল। তাইতো কবি তাঁর প্রেমসিক্ত সালাম নবীজীর রওজায় পৌঁছে দেবার জন্য কাউকে অনুরোধ করে গাইছেনÑ

১)কাবার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদীনায়

আমার সালাম পৌঁছে দিও নবীজীর রওজায়।

২) দূর আরবের স্বপ্ন দেখি বাংলা দেশের কুটির হতে।

বেহোঁশ হয়ে চলছি যেন কেঁদে কেঁদে কাবার পথে॥

৩)আয় মরুপারের হাওয়া ; নিয়ে যারে মদিনায়।

জাতপাক মোস্তফার রওজা মোবারক যেথায়॥

নবীর আবির্ভাবে কবির মনোজগতে জাগ্রত ইন্দ্রিয়াতীত অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তার গানে গানে। যেমন-

নূরের দরিয়া সিনান করিয়া

কে এলো মক্কায় আমিনার কোলে

ফাগুন পূর্ণিমা -নিশিথে যেমন

আসমানের কোলে রাঙা চাঁদ দোলে॥

এহা নবীর আবির্ভাব ও তিরোভাব নিয়ে কবি নজরুল ইসলাম বহু সংখ্যক গান কবিতা রচনা করেছেন। সে সব আদর্শিক গান ও কবিতা শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, এ সব কবিতা ও গান গোটা মুসলিম বিশ্ব সাহিত্যেও অনন্য মর্যাদার অধিকারী। কবি রাসূলের জীবন নিয়ে কোনো মহাকাব্য বা জীবন চরিত রচনা করেননি। রাসূলের আংশিক জীবন কথা নিয়ে রচনা করেছেন ‘মরু ভাস্কর’ জীবনী কাব্য। এ জীবনী কাব্য রচনাতে কবি ইতিহাসের অনুসরণের চেয়ে পুঁথি সাহিত্যের রূপ ও রীতি অধিকতর গ্রহণ করেছেন। রাসূল (সা.)-এর আবির্ভাব ও তিরোভাব বর্ণনা করতে গিয়ে কবি মরু ভাস্করের ‘অনাগত অধ্যায়’-এ বলেন :

সহসা জাগিল সাধ,

আপনারে লয়ে খেলিতে বিধির, আপনি সাধিতে বাদ।

অটল মহিমা গিরি-গুহা- ত্যাজি’- কে বুাঝিবে তার লীলা

বাহিরিয়া এলো সৃষ্টি প্রকাশ নির্ঝর গতি শীলা।

িিত অপ্ তেজ মরুৎ ব্যোমের সৃজিলা সে লীলা রাজ

ভাবিল সৃজিল পুতুল খেলার মানুষ সৃষ্টি মাঝ।

.. .. .. ...

কহিলেন প্রভু, ভয় নাই দিনু, আমার যা প্রিয়তম

তোমার মাঝারে - জ্বলিবে সে জ্যোতি তোমাতে আমারি সম

আমা হতে ছিল প্রিয়তর যাহা আমার আলোর আলো-

মোহাম্মদ সে, দিনু তাহারেই তোমারে বাসিয়া ভালো।

কবির এ লেখায় রাসূলের সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনায় শুধু পুঁথি কাব্য নয় বরং বিখ্যাত কিতাব ‘যোরকানী’ ও বিভিন্ন তাফসীরের প্রভাব বিদ্যমান।

মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিসের বাণী - “আমি সমগ্র সৃষ্টির নবী ”অপূর্ব হৃদয়গ্রাহী ছন্দে প্রতিধ্বনিত হয়েছে ‘ মরু ভাস্কর’ কাব্যে। ‘ অনাগত অধ্যায়’ এ বলা হয়েছে-

“খুঁজিছে দৈত্য- দানব দেবতা , জ্বিন -পরী -হুর পাগল প্রায়

কোথায় ওগো সে আলো কোথায়?

উৎপীড়িতের নয়নের জলে নয়ন কমল ভাসায়ে চায়

কোথায় মুক্তিদাতা কোথায়?

শৃংখলিত ও চিরদাস খোঁজে বন্ধ -অন্ধকার কারায়

বন্ধছেদন নবী কোথায়?

আদি ও অন্ত যুগযুগান্ত দাঁড়ায়ে তোমার প্রতিক্ষায়

চির সুন্দর তুমি কোথায়?

বিশ্বপ্রণব ওঙ্কার ধ্বণি অবিশ্রান্ত গাহিয়া যায়

তুমি কোথায় তুমি কোথায়? ”

রাসূল (সা.) সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখায় কবির ভক্তিবাদী ধ্যান ধারণা এবং গভীরতর আবেগ প্রকাশ পেয়েছে। কবির ‘বিষের বাঁশী’গ্রন্থেও ‘ ফাতেহা-ই দোয়াজ দহম’তার একটি উত্তম প্রমাণ। মহানবীর আবির্ভাব ও তিরোভাব নিয়ে কবির গান-

নিখিল ঘুমে অচেতন সহসা শুনিনু আজান

শুনি সে তকবীরের ধ্বণি আকুল হল মনপ্রাণ

বাহিরে হেরুনু আসি , বেহেশতের রৌশনীতে রে

ছেয়েছে জমিন ও আসমান।

আনন্দে গাহিয়া ফেরে ফেরেশ্তা হুর গেলমান। ( আবির্ভাব)

তিরোভাবে লিখেছেন-

হায় হায় উঠেছে মাতম

আকাশ পবন ভূবন ভরি ,

আখেরে নবী দীনের রবি নিল বিদায়

বিশ্ব^ নিখিল আঁধার করি।।

অসীম তিমিরে পূণ্যের আলো

আনিল যে চাঁদ সে কোথায় লুকালো

আকাশ ললাট হানি কাঁদিতেছে মরুভূমি

শোকে গ্রহ তারা পড়িছে ঝরি।। ( তিরোভাব)

রাসূল প্রেমিক কবি নজরুল ইসলাম রাসূল (সা.)-এর ঐতিহাসিক উদার চরিত্র বিশ্লেষণ ও বর্তমান মুসলিম জাহানের অবস্থা বর্ণনা করেছেন অতি হৃদায়াগ্রাহী ভাষা শৈলীতে যেন মুসলমান তাঁর ‘খুলুকে আজীম’ কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারে। একটি গীতি কবিতায় কবি লিখেছেন-

তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ, মা কর হজরত।

ভুলিয়া গিয়াছি তব আদর্শ তোমার দেখান পথ। 

বিলাস বিভব দলিয়াছ পায়ে ধূলি –সম তুমি, প্রভু ,

আমরা হইব বাদশা নবাব, তুমি চাহ নাই কভু।

এই ধরণীর ধন -সম্ভার

সকলের এতে সম অধিকার,

তুমি বলেছিলে ধরণীতে সব সমান পুত্রবৎ॥

তুমি চাহ নাই ধর্মের নামে গ্লানিকর হানাহানি,

তলোয়ার তুমি দাও নাই হাতে দিয়াছ, অমর বাণী।

মোরা ভুলে গিয়ে তব উদারতা

সার করিয়াছি ধর্মান্ধতা

বেহেশত হ’তে ঝরে না কো আজ তাই তব রহমত।।

কবি নজরুল তাঁর অন্তর দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন রাসূলের আগমনে নিখিল ধরণীকে পুলকে আত্মহারা। কবি শিশু নবীকে ‘আলোক শিশু’ , ‘ আলো দূত’ ,‘জ্যোতিষ্মান’,‘ সুধার প্রস্রবন’ প্রভৃতি বাক প্রতিমায় সজ্জিত করে পাঠককুলের ইন্দ্রিয়জ অক্ষুভূতিকে যেন ইন্দ্রিয়োত্তর রূপের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করেছেন। কবি রাসূলের ইন্তিকালে দেখেছেন ধূলির ধরণীকে ক্রন্দনরতা , আবার বেহেশতের জগতকে দেখেছেন আনন্দ মুখর। কবির চিত্ত অমৃত গ্রহণ করেছে রাসূলের বিশাল জীবন থেকে। কবি জীবনে রাসূল জীবনের বিভিন্ন দিকের বিস্ময়কর প্রকাশের যে শিল্প সুলভ নৈপুণ্য ও পূর্ণতার পরিচয় রয়েছে তা বিশ্ব সাহিত্যে কদাচিৎ দেখা যায় কিনা সন্দেহ। শিশু নবীর আগমনে কবি লিখেছেন-

পুরাতন রবি উঠিল না আর

সেদিন লজ্জা পেয়ে

নবীন রবির আলোকে সেদিন

বিশ্ব উঠিল ছেয়ে। ( মরু ভাস্কর)

আবার লিখেছেন-

আলোকের শিশু, এল গো জড়ায়ে আঁধার উত্তরীয়

জানাতে যেন গো, “বিষ জর্জর,

এবার অমৃত পিও।” (আলো -আঁধারি)

কবি রাসূলের ওফাতে দেখেছেন মর্ত লোকের শোক কাতরতা ও বেহেশত জগতের আনন্দোদ্বেলতা। কবি লিখেছেন-

মৃত্তিকা- মাতা কেঁদে মাটি হল বুকে চেপে মরা লাশ

বেটার জানাজা কাঁধে যেন-তাই বহে ঘন নাভি-শ্বাস।

 à¦ªà¦¾à¦¤à¦¾à¦²- গহরে কাঁদে জিন, পুনঃ ম’লো কিরে সোলেমান?

বাচ্চারে মৃগী দুধ নাহি দেয়, বিহগীরা ভোলে গান।

ফুল পাতা যত খসে পড়ে বহে উত্তর- চিরা বায়ু

ধরণীর আজ শেষ যেন আয়ু ছিড়ে গেছে শিরা স্নায়ু।

রাসূলুল্লাহর ওফাতে বেহেশতের আনন্দ মুখর চিত্রঃ-

বেহেশত সব আরাস্তা আজ সেথা মহা ধুমধাম

গাহে হুর-পরী যত, “সাল্লাল্লাহো আলায়হি সাল্লাম।”

কাতারে কাতারে করজোড়ে সবে দাঁড়ায়ে গাহিছে জয়,-

ধরিতে না পেড়ে ধরা মার চোখে দরদর ধারা বয়।

আজ অমরার আলো ঝলমল সেথা ফুটে আরো হাসি

শুধু মাটির মায়ের দীপ নিভে গেল, নেমে এল অমা -রাশি।

আজ স্বরগের হাসি ধরার অশ্র“ ছাপায়ে অবিশ্রাম

ওঠে একই ঘনরোল- “সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লাম।”

এ ভাবে কবি নজরুল ইসলামের ‘ মরু ভাস্কর’ বিভিন্ন কাব্যসহ কবির গজল ও গানে কম বেশি রাসূল প্রসঙ্গ এসেছে। এ কথা ঠিক যে“ সংখ্যা সব সময় সৃষ্টির উৎকর্ষের নির্ভরযোগ্য মাপকাঠি নয়। তবে সংখ্যা প্রাচুর্যকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়, যে কথা গোড়াতেই বলেছি, সৃষ্টির অনায়াস উৎস শক্তি ,কল্পনার সাবলিলতা ও সমৃদ্ধি।”

কবি নজরুলের সৃষ্টি কল্পনার উৎস শক্তি রাসূল (সা.)-এর প্রতি নির্ভেজাল প্রেম । তাইতো রাসূল (সা.)কে নিয়ে কবি লিখতে পারেলেন এত কবিতা গজল ও গান। পাঠককুলের অবগতির জন্য নিচে রাসূল (সা.) প্রসঙ্গে কবির কিছু গানে কলি তুলে ধরা হল। যেমন-

আমিনার কোলে নাচে হেলে দুলে

আমিনা দুলাল নাচে

আহম্মদের ঐ মিমের পর্দা (এ গানটিতে সূফিবাদের প্রভাব লণীয়)

আল্লাহ রাসূল জপের গুণে কি হল দেখ চেয়ে

আল্লাহ নামের নায়ে চড়ে যাব মদিনায়

আমার প্রিয় হযরত

আল্লাহ রাসূল জপরে

আল্লাহ রাসূল বলরে মন

আমিনা দুলাল এসে মদিনায়

আজি আল কোরইসি প্রিয় নবী

ওরে ও মদীনা বলতে পারিস

ও যে আমার কমলিওয়ালা

ওগো আমিনা তোমার দুলালে আনিয়া

কহিল একদা হজরতে এক দরিদ্র ক্ষুধাতুর

চলোরে কাবার জিয়ারতে, চলো নবিজীর দেশে

চলরে তোরা সাগর পারে সোনার মদিনায়

নাম মুহম্মদ বোলরে মন, নাম আহম্মদ বল

মদিনায় যাবি কে আয়, আয়

মদিনাতে এসছে সেই

মারহাবা সৈয়দে মক্কী আল আরবী

মোদের নবী কমলিওয়ালা

মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে -আলা

মুহাম্মদের নাম জপি

যাবি কে মদিনায়, আয় ত্বরা করি

যে রসূল বলতে নয়ন ঝরে

যেয়ো না যেয়ো না মদিনা দুলাল

সাহারাতে ফুটল রে ফুল

সৈয়দে মক্কী মদনী

সেই রবিয়ল আউয়ালের চাঁদ এসেছে ফিরে

হে মদীনার নাইয়া, ভব নদীর তুফান ভারি কর নদী পার

হে মদিনার বুলবুলি গো, গাইলে তুমি কোন্ গজল

হে মুহাম্মদ এসো এসো

হে প্রিয় নবী...

পাঠাও বেহেশ্ত হতে হজরত পুনঃ সাম্যের বাণী

ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এল নবীন সওদাগর

আল্লাহকে যে পাইতে চায় হযরতকে ভাল বেসে

মরুর ফুল ঝরিল অবেলায়

বহিছে সাহারায় শোকের লু হাওয়া

তোরা যারে এখনি হালিমার কাছে

মদিনার শাহান শাহ কোহ্-ই-তুর বিহারী

তোমায় যেমন করে ডেকে ছিল আরব মরুভূমি

আরে ও দরিয়ার মাঝি মোরে নিয়ে যারে মদিনায়

খোদার হাবিব হলেন নাজিল

যেতে নারি মদীনায়

মোহাম্মদের নামের ধ্যান হৃদয়ে যার রয়

লহ সালাম লহ দীনের বাদশা

বাণিজ্যেতে যাব এবার মদিনা শহর

মরু সাহারা আজ মাতোয়ারা

মরুর ধূলি উঠল রেঙে রঙিন গোলাপ বাগে

এখানেই শেষ নয়, কবির রয়েছে অসংখ্য নাতে রাসূল, গান ও গজল। বাঙালি মুসলমানের কাক্সিত ধ্যানের জগতকে বাণীরূপ দেয়ায় নজরুল ইসলামের একক প্রয়াসের এই সাফল্য বিস্ময়কর। 

রাসূল (সা.)-এর জীবন চরিতের বিভিন্ন দিক সন্ধান চেষ্টার শেষ হয়নি, আর তা কোনো কালেই হবে না। সীমাহীন সাগরে মাত্র কিছু নুড়ি নিপে করেছেন বিভিন্ন আশেকে রাসূল। যে সত্তার ব্যাপারে স্বয়ং ‘সৃষ্টিকর্তার তুলি আপন শেষ রেখা টানেনি’ তার জীবন চরিত রচনা অসমাপ্ত থেকেই যাবে।

 

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।