সংবাদ শিরোনামঃ

পরিস্থিতি বেসামাল : সতর্ক সরকার ** হত্যার রাজনীতি পরিহার করে নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন ** মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদেরের রিভিউ আবেদন ** অনিশ্চয়তায় পোশাক খাত অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত ** বিরোধী নেতাদের ধরপাকড় সরকারের জন্য বুমেরাং হবে ** অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ** অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া ** এখন আর সুষ্ঠু রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না ** রাজনৈতিক সঙ্কটে থমকে যাচ্ছে অগ্রগতি ** ধীরে ধীরে ইসরাইলের গলার ফাঁস এঁটে আসছে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’ ** সরকার দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ** পানিবদ্ধতায় হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওরের আমনচারা এখন গোখাদ্য **

ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪২২, ২ মহররম ১৪৩৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

হাবিব মুহাম্মদ
সাহিত্যের চিরায়ত শুচিতা, শাশ্বত সততা এবং সাহিত্যের সঙ্গে ধর্ম ও সত্যের ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য হাইলাইট করতে হচ্ছে ‘ইসলামী সাহিত্য’ পরিভাষাটির। এটি সাম্প্রদায়িক বিভাজন নয়, সত্যের সঠিক রূপায়ণ। এ-বিভক্তি অতিভক্তি থেকে নয়, সাহিত্যের স্বভাব-বিভূতি থেকে। এ-প্রতীকায়ন আবেগাশ্রিত নয়, বিবেক-বিভান্বিত, বিদ্বেষ-প্রসূত নয়; বাস্তব-সমর্থিত। কারণ ইসলামের সঙ্গে রয়েছে সাহিত্যের এক ঘন-গভীর সম্পর্ক। সাহিত্যের ইসলামী (আরবি ভাষায়) শব্দ হলো, ‘আল-আদব’ যার অর্থ, নিমন্ত্রণ, শিষ্টাচার ও পরিশীলিত আচরণ ইত্যাদি। এই শব্দের আদিতেই রয়েছে শ্লীলতার পেলবতা। সেই সাহিত্যই মহত্ সাহিত্য বিবেচিত হওয়ার যোগ্য, যার বিষয়বস্তু হবে শিষ্ট-শ্লীল, বর্ণনাও যার হবে শিষ্ট-শ্লীল।

ইসলাম শুধু আকিদাসমষ্টির নাম নয়। ইসলাম সম্পূর্ণ একটি তাহজিব ও সংস্কৃতির নাম। তাই এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সাহিত্য ও কবিতা। ইসলাম সূচনাকাল থেকেই সাহিত্য ও কবিতার সৌন্দর্য বর্ধন করেছে। সাহিত্যের মাধ্যমে ইসলাম সংশোধন ও গঠনমূলক কাজে অবদান রেখেছে। সেই সাহিত্যের নামই ইসলামী সাহিত্য। আর এই সাহিত্যের ছায়াতলে রয়েছে সাহিত্যের সমূহ শাখার স্থান। কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, নাটক, ব্যঙ্গসাহিত্য, রম্যসাহিত্য, বক্তৃতাসহ অন্য সবকিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ইসলামী সাহিত্যের ফিরিস্তিতে। এই সাহিত্য মানবজীবনের পাশে থাকে, মানুষকে জীবিত রাখে; মানুষের জীবনকে উজ্জ্বল করে। জীবনের দিক-দিগন্তের আলোচনা সেখানে হতে পারে, থাকতে পারে। চাঁদ-সূর্যের আলোচনা, গ্রহ-নত্রের আলোচনা, বাগানের ফুলের বন্দনা, অন্তরঙ্গ মানুষের প্রতি প্রীতি নিবেদনের আলোচনা, ‘খোদি ও খোদার’ (যেমন ইকবাল করেছেন) আলোচনা থাকতে পারে। তবে শর্ত হলো এসবের মাধ্যমে সমাজে নগ্নতা ও অশ্লীলতা নয়, মহত্ত্বের মূল্যবোধ জাগতে হবে।

সূরা ইউসুফে যৌনতার আলোচনা রয়েছে। তবে সে আলোচনা এমন পদ্ধতিতে নয়, যার কারণে মানুষের অন্তরে যৌন-আকাক্সা জাগ্রত হয়; বরং এমন শৈলীতে বিধৃত হয়েছে, যার কারণে চারিত্রিক মূল্যবোধ সর্বাঙ্গে জয়ী হয়। ইসলামের জীবনবিধান আকিদা ও আমলের সৌন্দর্যতত্ত্বের নাম। চাঁদ-সূর্যে-নত্রে যিনি এত সৌন্দর্য দান করেছেন, তিনি তো চান, তাঁর সৃষ্টির সমুদয় অঙ্গনে সৌন্দর্যের লেপন ও প্লাবন হোক। সেই সৌন্দর্য যখন মানুষের কথায় ও লেখায় ফুটে ওঠে, তখন তাকে বলা হয় সাহিত্য। প্রত্যেক মানুষ চিন্তা, জ্ঞান ও ভাষাগতভাবে সমান নয়। এজন্য সাহিত্য অর্জন করা ও চর্চা করা প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য কর্তব্যও নয়। তবু সাহিত্য ইসলামের দৃষ্টিতে অতিপ্রশংসনীয় গুণ। ফলে অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্ক খুব বেশি। আর ইসলামী সাহিত্যের ত্রে জীবনের পরিধির মতো প্রশস্ত, সাগরমুখী নদীর মতো সতত প্রবহমান। সাহিত্যের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক শুধু যে শোভনীয় তা নয়, বরং তা অপরিহার্যও। কারণ মানুষের জীবনে ভালো-মন্দ উভয়ের উদ্দীপক শক্তি পাওয়া যায়। সাহিত্যের েেত্রও ভালোত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দীপক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর ভালোত্ব প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় প্রেরণা হলো ধর্ম। চরিত্রপরিশোধনের উৎসও হলো ধর্ম। সাহিত্যিকের যদি পথের সঠিক দিশা না থাকে, তা হলে তিনি লাখো মানুষের ধ্বংসের কারণ হতে পারেন। সাহিত্যিক সমাজে ফ্যাসাদের হোতাও হতে পারেন, ভালো কিছুর কর্তাও হতে পারেন। সাংঘর্ষিক চাহিদার আঘাতে তিনি কখনও সর্বনাশা শক্তির সঙ্গও দিতে পারেন। তাই একজন সাহিত্যিক মানবজাতির জন্য শত্রুও হতে পারেন, মিত্রও; সেবকও হতে পারেন, ঘাতকও।

পৃথিবীতে যেহেতু গঠন ও ভাঙন, শুভ ও অশুভ সর্বদাই মুখোমুখি সংঘর্ষে থাকে, তাই সেই সংঘর্ষমুখর মরুভূমিতে সাহিত্যকে শুধু তামাশাদর্শক হলে চলবে না। তাকে হতে হবে কল্যাণের পথপ্রদর্শক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মই বিচার করবে যে, সত্য-মিথ্যার সংঘর্ষে সাহিত্যিক সত্যের পথে চলেছেন, নাকি অসত্যের প নিয়েছেন। সুন্দরের সমর্থন জুগিয়েছেন, নাকি অসুন্দরের পে হয়েছেন। এ-কথাও মনে রাখতে হবে যে, সাহিত্যের ভেতরে প্রবল প্রভাব যেমন রয়েছে, রয়েছে উজ্জীবনী ও সম্মোহনী শক্তিও। শব্দে-বাক্যে জাদুময়তাও যেমন থাকতে পারে, তেমনি ওষুধের বিষাক্ততাও থাকতে পারে। সেটা গঠনের অসিলাও হতে পারে, আবার ভাঙনের কারণও হতে পারে। সঠিক জীবনাদর্শ থেকে যদি সাহিত্যের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়, তা হলে সেটা ইমানকেও জ্বালিয়ে দিতে পারে, শিষ্টাচারকেও বলি দিতে পারে। সমূলে মুছে দিতে পারে চারিত্রিক মূল্যবোধ। ধর্ম ও সাহিত্যের পারস্পরিক সম্পর্ক যদি ছিঁড়ে যায়, তা হলে সাহিত্যের তরবারি খাপছাড়া হয়ে মানবতাকে রক্তাক্ত ও তবিত করতে পারে। পৃথিবীতে এর নজির কম নয়।

গভীর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এ কাজটি করার সাধনাসাগরে ডুব দিয়েছিলেন মুসলিম উম্মাহর নিষ্ঠাবান রাহবার সৈয়দ আলী হাসান নাদভী রহ.। যুগে যুগে ‘ফিতনা-ফ্যাসাদ’ বোঝার এবং তা থেকে উম্মতকে রা করার দূরদৃষ্টি ও শক্তি আল্লাহ পাক যাঁদের দান করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম পুরোধা ছিলেন সৈয়দ আলী নাদভী রহ.। তিনি এ-অবস্থা দেখেছিলেন এবং ব্যবস্থাও বুঝেছিলেন। তাই তিনি ডাক দিলেন সর্বত্রের মুসলিম লেখক-চিন্তক-গবেষকদের। মুসলিম সাহিত্যিকদের একই প্লাটফরমে নিয়ে আসার ল্েয এবং সাহিত্যের চিরায়ত শুচিতা ও শাশ্বত সততা বজায় রাখার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘রাবিতাতুল আদাবিল ইসলামী আল-আলমিয়্যাহ্’ (আন্তর্জাতিক ইসলামী সাহিত্য সংস্থা)। প্রতিষ্ঠা-প্রভাত থেকেই প্রতিষ্ঠানটি শক্তি ও সাহসের, ধৈর্য ও ঔদার্যের সবটুকু বিলিয়ে সাহিত্যের বিভিন্ন à¦¶à¦¾à¦–à¦¾Ñ à¦•à¦¬à¦¿à¦¤à¦¾, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, জীবনী, ছড়া, নাটক ইত্যাদি রচনার শিল্পোত্তীর্ণ ইসলামী রূপরেখা পেশ করে আসছে। আজ সে-রাবিতাকে ইসলামী শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির সবচেয়ে যোগ্য ও সফল প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিতে হয়। যেটাকে আজ আমরা ‘ইসলামী সাহিত্য’ বলে চিহ্নিত করি। আর সাহিত্যের এ-ধারা বর্তমান যুগের নতুন কোনো উপসর্গ নয়। সেটা ইসলামের মতোই চিরনতুন, আবার চিরপুরনো। বিশ্বময় এই ধারা সংবর্ধিত, গৃহীত, অনুসরিত ও চর্চিত।

সাহিত্যকে আজ (কুরআন-বর্ণিত) ‘হিক্মা’ তথা প্রজ্ঞার দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখতে হবে। স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার সমন্বিত রূপে, সীমাবদ্ধতা ও ‘হিকমাধর্মিতার’ যৌথায়িত কাঠামোতে সাহিত্যের বিকাশ ঘটাতে হবে। নববী আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ‘সমন্বয়ধর্মিতা’ ধর্মানুগ উদারতা অবশ্যই আমাদের প্রদর্শন করতে হবে। তা হলেই পৃথিবীর পাদপীঠে আবার উড্ডীন হবে সত্যের জয়পতাকা। সৃষ্টি হবে ‘শুচি সাহিত্যের’ আলোড়ন ও আন্দোলন। ঘটে যাবে এক পল্লবিত বিপ্লব। মনে রাখতে হবে, ‘কলম ও কলবের’ কিমিয়া-অনুশীলনই সাহিত্যের প্রকৃত সাধনা।

সুতরাং আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলামী সাহিত্য মানে শুধু সংবাদ পরিবেশন, ধর্মীয় বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং নামমাত্র দায়সারা গোছের কিছু অনুত্তীর্ণ কবিতা-ছড়া নয়, বরং ইসলামী সাহিত্যের আওতায় থাকতে পারে মানোত্তীর্ণ ও যুগোত্তীর্ণ সব গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, আত্মজীবনী, গ্রন্থালোচনা, এমনকি নাটকও। এককথায় আধুনিক যুগের সৃষ্ট সাহিত্যের সমূহ শাখার প্রবেশাধিকার থাকতে পারে ইসলামী সাহিত্যের উদার কিন্তু বিধিবদ্ধ অঙ্গনে। তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী সাহিত্য সংস্থা’ কর্তৃক প্রকাশিত ‘আল-আদাবুল ইসলামী’ পত্রিকাটি। এটি পুরো পৃথিবীর ইসলামী সাহিত্যের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সাহিত্যপত্রিকা। এর শাখা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পত্রিকা বের হয়, যেগুলো সঠিক অর্থে ইসলামী সাহিত্যের যোগ্য প্রতিনিধিত্ব করে। ওইদিকে আমাদেরও নজর দিতে হবে। যুগ যুগ ধরে একই জায়গায় জড়-শক্ত হয়ে বসে থাকলে চলে না। যুগের পরিবর্তন থেকে, নদীর প্রবাহ থেকে, সাগরের শান্ত-উত্তাল ঢেউ থেকে, আকাশের রঙবেরঙের শামিয়ানা থেকে, পরিবর্তমান প্রকৃতি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

বিধি-নিষেধের পূর্ণ লেহাজ রেখে আমাদের সব েেত্র খুঁজতে হবে নতুন পথ, সংগ্রহ করতে হবে নতুন পাথেয়। মনে রাখতে হবে, পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে। পথিকের পায়ে-গায়ে লেগে থাকে পথের সৌরভ-গৌরব। সেই সৌরভ পথিক যেখানে, যে-অবস্থায়, যেভাবে ছড়িয়ে দেয়, সেখানেই তৈরি হয় পথ। সংকলিত

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।