সংবাদ শিরোনামঃ

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কখনও সামরিক শাসনের অনুঘটক ছিল না ** ১৯৭২ সালে যুদ্ধাপরাধী তালিকায় এদেশের কারো নাম ছিল না ** বাংলাদেশ এখন একতরফা প্রেমেই মজেছে ** আগাম নির্বাচনের পথে পাকিস্তান ** শিাঙ্গনে শিার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে ** পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকারের সর্বাত্মক উদ্যোগ ** ‘সৈয়দ’ ও ‘স্বৈরশাসকের’ ভয়ঙ্কর বয়ান ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** ইসলামের দৃষ্টিতে বর্ষবরণ ** গতিহীন জীবনের নিত্য হাহাকার যেখানে কেঁদে মরে ** টাঙ্গাইলে লাইট হাউস ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে এলাকাবাসী বিস্মিত ** মুখরোচক কুষ্টিয়ার তিলের খাজা ** বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ **

ঢাকা শুক্রবার ১৪ মাঘ ১৪১৮, ৩ রবিউল আওয়াল ১৪৩৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১২

পাহাড়ের কোলে মনোরম আলিনগর আবাসন প্রকল্প

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
হাসান বানুর পাঁচ সন্তান। স্বামী মুছা মিয়া বাজারের কুলি। মাস দুয়েক আগে তারা বসবাস শুরু করেন এ পাড়ায়। এখানে স্বামীর কোনো কাজ নেই। স্কুলপড়–য়া তিন সন্তানের পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয় নেই। তাদের জীবনের গতি প্রায় থমকে গেছে। সংসারে নিত্য টানাটানি-হাহাকার। হাসান বানুর পরিবারের এই চিত্র ৩৭০টি পরিবারে। এমন চিত্র দেখা গেল চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের দণি অলিনগর আবাসন প্রকল্পে।

এই আবাসন প্রকল্পে সরকার ওদের বসবাসের ব্যবস্থা করেছে মাত্র; মৌলিক অধিকারের কোনো বালাই নেই এখানে। কাজের ত্রে না থাকায় এখানকার মানুষের দিন কাটে অনাহারে-অর্ধাহারে। শিাসূলভ পরিবেশ না থাকায় শিশুদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। নানা অভিযোগের কথাও শোনালেন প্রকল্পের বাসিন্দারা।

বারইয়ারহাট-করেরহাট সড়কের হিঙ্গুলী এলাকা থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ি এলাকায় এ প্রকল্পের অবস্থান। বাসিন্দারা কোনো কাজে পাড়ার বাইরে গেলে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করতে হয়। অসমতল ও ভাঙাচোরা রাস্তায় গ্রীষ্মে চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও দুর্ভোগ নেমে আসে বর্ষায়। পাড়ার বাসিন্দা শাহজাহান সঙ্গে করে নিলে গেলেন সেখানে। চলতি পথে তিনি এখানকার বাসিন্দাদের নানা কষ্টের কথা বলতে শুরু করলেন। তার কথার প্রতিটি বাক্যেই প্রতিধ্বনিত হয়, এ পাড়ার মানুষের কষ্টের মূলসূত্র হলো কাজের ত্রে না থাকা।

পাড়ায় প্রবেশের আগে দূর থেকে দেখা যায়, উদোম শরীরে জনা বিশেক শিশু ফুটবল নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে। পাহাড়ের কোলে এ পাড়ায় সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে প্রকৃতি। আঙিনায় সৃজিত বৃাদি এখনো যেন মিতালী করে আছে মাটির সঙ্গে। দুই মাস আগে সর্বশেষ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সবকিছু যেন নতুন করে শুরু হতে লাগল। কিন্তু এখানকার ছোট্ট ছোট্ট সোনামনিরা বেড়ে উঠতে পারছে না প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। তাদের জীবন থমকে আছে নানা সঙ্কটে, কারণে-অকারণে।

শাহজাহান বললেন, এখানে কোনো বিদ্যালয় নেই। হিসাব করে তিনি জানালেন, এ পাড়ায় চার দফায় ঠাঁই পেয়েছে ৩৭০টি পরিবার। এর চারপাশে আগে থেকে বসবাস করে আসা পরিবারের সংখ্যাও কমপে ৩০০। প্রতিটি পরিবারে কমপে দুই থেকে তিনটি শিশু রয়েছে বিদ্যালয়ে গমনেচ্ছু। পাড়ার অদূরে রয়েছে দণি অলিনগর আইডিয়াল স্কুল। হাসান বানুদের পরিবারে দু’ বেলা আহারের ব্যবস্থা হয় না, সেখানে কিভাবে তারা ওই স্কুলে পড়াবেন শিশুদের? এই প্রশ্ন তাদের সকলের।

পাড়ায় সাংবাদিক এসেছেন- এ কথা শুনে একে একে জড়ো হতে লাগলেন নানা বয়সের মানুষ। সাংবাদিকের কাছে তাদের কোনো চাওয়া নেই; কিন্তু কষ্টের কথামালা বলতে পারবেন মন খুলে- এই ভেবে ছুটে এসেছেন। বিবি মরিয়ম, আজিমুন্নেছা, ফাতেমা আক্তার, বিবি জোহরা, মাওলানা আমির হোসেন, আমিরুল ইসলাম, আবদুল কাদের সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করছেন, তারা মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। কিন্তু তারা স্বাভাবিক জীবনও হারিয়েছেন। পাহাড়ের কাঠ আহরণ করে আনার সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ৩০ কিলোমিটার পূর্বে গহীন পাহাড় থেকে বাঁশ কেটে সংসারের ব্যয় মেটানো বেশিরভাগ মানুষের পইে অসম্ভব। এ অবস্থায় জীবন-জীবিকার তাগিদে কি করবেন তারা? তাদের শিশুগুলো কি মানুষের মত মানুষ হওয়ার সুযোগ পাবে না? তারা কি আজীবন অজ্ঞতায় ডুবে থাকবেন? এ জাতীয় নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত সাংবাদিক। তারা এও বলছেন, ‘আপনি তো আমাদের দেখতে এলেন। অন্য কেউ তো তাও করে না। এমনকি মেম্বার-চেয়ারম্যানও না।’

সাংবাদিককে ঘিরে যখন পাড়াবাসীর ছোট-খাটো জটলা বাঁধে, পাশের ঘরের দাওয়ায় হেলান দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে এক মধ্যবয়সী নারী। কাছে যেতেই দেখা গেল, এ নারীর শুকনো চেহারায় হতাশার ছাপ স্পষ্ট। তিনি হাসান বানু, পাঁচ সন্তানের দুঃখী জননী। কোনো এক সময় মিরসরাইয়ের সন্দ্বীপ টিলায় তার বাড়ি ছিল। সেখান থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়ে পাঁচটি বছর কেটেছে ওই টিলার পাশেই এক ভাড়া বাড়িতে। সেখানকার জোহরা আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত তার দুই মেয়ে এক ছেলে। দুই মাস আগে এই আবাসন প্রকল্পে তাদের স্থায়ী বসতি হয়েছে, কিন্তু সন্তানদের পড়ার কোনো ব্যবস্থা হয়নি। কাজের কোনো ত্রে নেই, স্বামী মুছা মিয়া জোরারগঞ্জ বাজারে কুলির কাজ করেন। এ নিয়ে তাদের যে সংসার, তাতে দুই বেলা পেটপুরে ভাত খেতে পারে না সন্তানরা।

এই আবাসন প্রকল্পে প্রথম দফায় বিএনপি সরকারের শাসনামলে গড়ে ওঠে ১০০টি পরিবারের আবাস। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনাবাহিনী ২০০ পরিবার, পরবর্তীতে বর্তমান মহাজোট সরকার দুই দফায় ৪০ ও ৩০ পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে। প্রথম তিন দফার ঘরগুলোর প্রতিটি শেডে বাস করে ১০ পরিবার। শেষ দফার ৩০টি ঘর একটু আলাদা। প্রতিটি বসতভিটা আট শতক জমিতে তৈরি। দুই কবিশিষ্ট টিনসেড, অনেক ভিটায় করা হয়েছে বৃরোপণ। ৩০টি পরিবারের জন্য রয়েছে চারটি নলকূপ, তাও অনেক দূরে পাহাড়ের নিচে। গোসলের জন্য পুকুর-ডোবা কিছুই নেই। নেই কোনো স্বাস্থকেন্দ্র।

উপজেলা প্রাথমিক শিা কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘দণি অলিনগর গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াটি অনেকদূর এগিয়েছে। আশা করছি, খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে। তবে বিদ্যালয়টি আবাসন প্রকল্পে হবে কি না, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।