সংবাদ শিরোনামঃ

অবশেষে সরকার ও আ’লীগের পরাজয় ** তত্ত্বাবধায়কের দাবি মানুন নয় তো বিদায় নিন ** আওয়ামী লীগাররা বিস্মিত হতবাক! ধস আর ঠেকানো যাচ্ছে না! ** উন্নয়নের রাজনীতি উপহার দিন না হলে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দেয়া হবে ** আ’লীগের ফ্যাসিবাদী চেহারা ** প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গ-তামাশা বনাম খালেদা জিয়ার আলটিমেটাম ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** ঢাকার মহাসমাবেশে আসতে পথে পথে বাধা ** ৪২টি ট্রেন চলাচলের জংশন স্টেশন পার্বতীপুরে যাত্রী ভোগান্তির শেষ নেই **

ঢাকা শুক্রবার ২ চৈত্র ১৪১৮, ২২ রবিউস সানি ১৪৩৩, ১৬ মার্চ ২০১২

মুহাম্মদ আসাদ

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রীর নাম প্রমীলা নজরুল ইসলাম। পরিবার প্রদত্ত নাম আশালতা সেন গুপ্তা ওরফে দোলন বা দুলী। মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তেঁওতা গ্রামে বাংলা ১৩১৫ সালের ২৭ বৈশাখ (১০ মে, ১৯০৮) প্রমীলার জন্ম। পিতার নাম বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত। যিনি ত্রিপুরা রাজ্যে নায়েবের পদে চাকরি করতেন। তার পিতা অকালে মৃত্যুবরণ করলে বিধবা গিরিবালা দেবি অনূঢ়া প্রমীলাকে নিয়ে কুমিল্লায় গমন করেন। প্রমীলার চাচা ইন্দ্র কুমার সেন গুপ্ত এ সময় কুমিল্লার কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ইন্সপেক্টর ছিলেন।

পুস্তক ব্যবসায়ী আলী আকবর খানের আমন্ত্রণে কাজী নজরুল ইসলামও ১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে  (বাংলা ১৩২৭ সালের চৈত্র মাসের শেষ ভাগ) প্রথম কুমিল্লার দৌলতপুরে বেড়াতে আসেন। পূর্বদিন সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে রওনা হয়ে আলী আকবর খান ও কাজী নজরুল সন্ধ্যায় কুমিল্লা পৌঁছেন। রাত হয়ে যাওয়ায় তারা কান্দিরপাড়ে অবস্থিত প্রমীলার চাচা ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাসায় ওঠেন। ইন্দ্রবাবুর জ্যেষ্ঠ পুত্র বীরেন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত ছিলেন আলী আকবর খানের স্কুল জীবনের বন্ধু। তিনি কলকাতায় থাকতেন এবং হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। আলী আকবর খান বীরেন্দ্রের মা বিরজা সুন্দরী দেবীকে মা বলে ডাকতেন। সেই সুবাদে নজরুলও তাকে মা বলে ডাকা শুরু করেন। এ বাসাতেই নজরুল প্রথম কিশোরী প্রমীলাকে দেখেন। দৌলতপুর এসে নজরুল ১৩২৮ সালের ৪ আষাঢ় পর্যন্ত আলী আকবর খানের বাড়িতে অবস্থান করেন। দৌলতপুরে খান সাহেবের ভাগ্নি নার্গিস আসার খানমের সঙ্গে তাঁর প্রথম বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পরই রাতের বেলা নজরুল ও আলী আকবর খানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। নজরুলকে নাকি ঘরজামাই করে রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। পরদিন সকালে নজরুল চিরদিনের মতো দৌলতপুর ত্যাগ করে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে চলে আসেন। সেখানে সেন পরিবারে অত্যন্ত আদরের সঙ্গে ঠাঁই পান। এখানে তিনি মোট ২১ দিন অবস্থান করেন।

দুর্গা পূজার সময়ও (১৯২১) নজরুল একবার কুমিল্লা আসেন। এ যাত্রায় প্রায় মাস খানেক তিনি প্রমীলাদের বাসায় থাকেন। ১৯২২ সালে তৃতীয়বার নজরুল কুমিল্লায় আসেন এবং ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত কুমিল্লায় অবস্থান করেন। এ সময় কুমারী প্রমীলা সেনগুপ্তার সঙ্গে তার গভীর প্রেমের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে, বীরেন্দ্র সেন কলকাতায় স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। মে মাসে স্কুল গ্রীষ্মের ছুটি হওয়ায় তিনি কুমিল্লায় মা বাবার সঙ্গে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন। নজরুলও তখন কুমিল্লায় ছিলেন। ছুটির শেষের দিকে বীরেন্দ্র কলকাতায় যাওয়ার পথে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের তেঁওতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নজরুলও তার সঙ্গী হন। তারা কুমিল্লা থেকে ট্রেনে চাঁদপুর এবং চাঁদপুর থেকে স্টিমারে গোয়ালন্দ পৌঁছেন। গোয়ালন্দ থেকে  তারা আরেকটি স্টিমারে তেঁওতা আসেন। তেঁওতাতেই তখন স্টিমার ঘাট ছিল। এটাই ছিল নজরুলের পথম তেঁওতা সফর। নজরুল কয়েকদিন মাত্র তেঁওতা অবস্থান করেন। নজরুল জমিদার বাড়ির পুকুরে সাঁতার কেটেছেন, ঘাটলায় বসে বাঁশি বাজিয়েছেন। এসব কাহিনী প্রাচীন লোকদের মুখে শোনা যেত। এখন তারা আর কেউ বেঁচে নেই।

কলকাতায় ফিরে গিয়ে নজরুল ইসলাম ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর ‘ধূমকেতু’র পূজা সংখ্যায় প্রকাশিত নজরুলের কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশের জন্য ধূমকেতুর উক্ত সংখ্যাটি বাজেয়াপ্ত করে নজরুলের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় (৮ নভেম্বর ১৯২২) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি পুনরায় তেঁওতা আসেন। নজরুলের ধারণা ছিল পূজোর সময় কুমিল্লা থেকে সেন পরিবার তেঁওতায় গ্রামের বাড়ি এসেছেন। কিন্তু প্রমীলারা তেঁওতা না আসায় নজরুল কুমিল্লায় চলে আসেন। প্রমীলারা তখন কুমিল্লায়ও ছিলেন না। তিনি তার মামাদের কর্মস্থল বিহারের সমস্তিপুরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর বেলা ১২টায় কুমিল্লা থেকে পুলিশ নজরুলকে গ্রেফতার করেন। বিচারে নজরুলের এক বছর কারাদণ্ড হয়। ১৯২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর কারামুক্ত হন।

এরপর নজরুলের জীবন সেই মধুরতম মুহূর্তটি ঘনিয়ে আসে ১৩৩১ সালের ১২ বৈশাখ মোতাবেক ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল শুক্রবার। তিনি প্রমীলা সেনগুপ্তার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। মুসলিম রীতি অনুসারে নজরুলের সাথে প্রমীলার বিয়ে পড়ানো হয় (সূত্র : কলাণ কাজী সম্পাদিত ‘শতকথায় নজরুল’, পৃ.-৪১৩)। মা ও মেয়ে উপন্যাসের লেখিকা মিসেস এম রহমান সাহেবার উদ্যোগে কলকাতার ৬নং হাজি লেনে এই বিবাহ কার্য সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর নবদম্পতিকে মিসেস এম রহমান হুগলিতে নিয়ে যান। সেখানে শ্রী ভূপতি মজুমদারের সহায়তায় হামিদুননবী মোখতার সাহেবের একটি বাড়িভাড়া করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এ বাড়িতেই ১৩৩১ সালের জন্মাষ্টমীর দিন নজরুল প্রমীলার প্রথম পুত্র আজাদ কামাল জন্ম হয়। কিন্তু নবজাতকের আয়ু ছিল মাত্র কয়েক মাস।

১৯২৬ সালের ৩ জানুয়ারি নজরুল হুগলি ছেড়ে সপরিবারে কৃষ্ণনগর যান। প্রথমে গিয়ে ওঠেন শ্রী হেমন্ত কুমার সরকারের বাড়িতে। এরপর চাঁদ সড়কের পাশে বিরাট কম্পাউন্ডওলা একতলা বাংলো ধরনের বাড়িতে থাকেন। বাড়ির নাম ‘গ্রস কটেজ’। বাড়ির পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম ও আরামদায়ক ছিল। এই বাড়ির পাশেই ছিল লেখক সাহিত্যিক আকবর উদ্দিনের বাড়ি। তিনি কৃষ্ণনগর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। কবি পরিবারের সাথে আকবর উদ্দিনের সৌহার্দ গড়ে উঠেছিল একটি কারণে আকবর উদ্দিন ছিলেন বিপতœà§€à¦•à¥¤ আকবর উদ্দিনের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটক ছিলেন প্রমীলা ও নজরুল। হুগলিতে থাকাকালীন সময় প্রতিবেশী আখতারুন্নেসার সাথে আকবর উদ্দিনের এই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। আকবর উদ্দিন বলেছেন, আমার বিয়ের পর দোলনা (প্রমীলা) প্রায় আমাদের বাড়ি এসে আমার স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করতেন। আর ১৯২৮ সালের প্রথমদিকে যে আড়াইমাস নজরুল ঢাকায় ছিলেন তখন দোলনা অনেকদিন সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত আমাদের বাসায় কাটাতেন।’

কৃষ্ণনগরের এই বাড়িতেই ১৯২৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রমীলা নজরুলের দ্বিতীয় পুত্র বুলবুলের জন্ম হয়। ১৯২৮ সালের শেষদিকে কবি কৃষ্ণনগর ছেড়ে সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে পানবাগান লেনের বাড়িতেই কবির তৃতীয় পুত্র সানি (কাজী সব্যসাচী) জন্মগ্রহণ করেন। পানবাগান লেনের বাড়ি থেকে নজরুল ইসলাম মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের এক দ্বিতল বাড়িতে যান।  সেই বাড়িতেই মে মাসের ৭-৮ তারিখে তাদের প্রাণপ্রিয় পুত্র (বয়স ২ বছর ৮ মাস) বুলবুল বসন্ত রোগে মারা যায়। ১৯৩১ সালে নজরুলের ৪র্থ ও কনিষ্ঠ পত্র কাজী অনিরুদ্ধের জন্ম হয়।

প্রমীলা নজরুল ১৯৩৮ সালে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন। তার নিম্নাঙ্গ অবশ হয়ে যায়। আমৃত্যু (৩০ জুন, ১৯৬২) তিনি ঐ অবস্থাতেই স্বামী সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। রোগ সারানোর জন্য কবি নজরুল কোনো চিকিৎসাই বাদ রাখেননি। প্রমীলার প্রতি নজরুলের কতটা দরদ ও প্রেম ছিল সে সম্পর্কে অনেক নজরুল গবেষকও অবগত নন। তিনি কবি প্রমীলাকে সারিয়ে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। প্রমীলার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে নজরুলের জন্মভূমি চুরুলিয়ায় দাফন করা হয়। অনেকের মতে, নজরুল-প্রমীলার প্রেম কাহিনী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উপাখ্যান হিসেবে বিবেচিত।

লেখক : সাহিত্যিক, ইতিহাস গবেষক

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।