সংবাদ শিরোনামঃ

অবশেষে সরকার ও আ’লীগের পরাজয় ** তত্ত্বাবধায়কের দাবি মানুন নয় তো বিদায় নিন ** আওয়ামী লীগাররা বিস্মিত হতবাক! ধস আর ঠেকানো যাচ্ছে না! ** উন্নয়নের রাজনীতি উপহার দিন না হলে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দেয়া হবে ** আ’লীগের ফ্যাসিবাদী চেহারা ** প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গ-তামাশা বনাম খালেদা জিয়ার আলটিমেটাম ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** ঢাকার মহাসমাবেশে আসতে পথে পথে বাধা ** ৪২টি ট্রেন চলাচলের জংশন স্টেশন পার্বতীপুরে যাত্রী ভোগান্তির শেষ নেই **

ঢাকা শুক্রবার ২ চৈত্র ১৪১৮, ২২ রবিউস সানি ১৪৩৩, ১৬ মার্চ ২০১২

আবু মালিহা

স্বাধীনতা পরবর্তী কাল থেকেই বাংলা সাহিত্য এবং সুস্থ সংস্কৃতির উপর কাঁচি চালানোর মত এক শ্রেণীর সাহিত্যেকের বাড়াবাড়ি মূলক অপসংস্কৃতি চর্চায় বেশ তৎপর হতে দেখা যায়। উদ্দেশ্য একটিই সিদ্ধি হাছিল। জেনে শুনে বা জ্ঞান পাপীর মতো তাদের ব্যাধিজনিত অপকীর্তির এ এক নষ্ট সংস্কৃতির অপদেবতাদের উল্লম্ফন বই আর কিছু বলা যায় না। আর এদের মূলোৎপাটনে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টারও অন্ত ছিলনা আরেক শ্রেণীর মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার একনিষ্ঠ সাহিত্য প্রেমিকদের। যারা ছিলেন বৈপ্লবিক চেতনার ধ্বজাধারী দৃঢ় চিত্তের সাহিত্য সৈনিক, বোদ্ধা এবং তৌহিদবাদী নাবিকসম। বাংলাভাষা এবং সাহিত্যের সে ধরনেরই একজন হলেন কবি আফজাল চৌধুরী। ষাটের দশকের একজন শক্তিমান কবি। দীর্ঘকাল এ সাহিত্যসেবী বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে নিজেকে জ্বাজ্জল্যমান রেখেছিলেন দেশ, জাতি এবং উম্মাহর স্বার্থে। বিশেষ করে বাংলা কবিতায় ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায়, ইসলামী ঐতিহ্য এবং যুব সমাজকে দৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে যে ধরনের কাব্য প্রেরণায় স্বকীয়তাকে ঔজ্জ্বলতায় দীপ্তিমান করা যায়, সে ধরনের জীবন জগৎ উপলব্ধিগত স্বচ্ছ ধারণায় অবগাহন হতে উদ্বুদ্ধ করতেন প্রতিনিয়ত। সামাজিক অবক্ষয়, হতাশা আর পঙ্কিলতার প্রশ্রবন থেকে জাতীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের পূত চেতনায় স্নানাসিক্ত হতে, দিব্যভজনদের অনুরক্ত হতে প্রাণাবেগ জাগিয়ে দিতেন। সেই চেতনার কল্যাণকামিতায় কবির প্রথম প্রয়াস অনবদ্য রচনা কাব্যগ্রন্থ ‘কল্যাণব্রত’ তার মানবিক আর্তির এক দীপ নিদর্শন। যা তাকে আরো প্রজ্জ্বলিত করে তুলেছে নন্দন কাব্য ধারার নতুন সংযোজনে।

জগত সংসারে পাপ বিদগ্ধ মনোভাবের নূব্জ মানবিক অপরাধ প্রবণতাকে নিকষ কালো আঁধার থেকে পরিত্রাণ লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর সাংস্কৃতিক দাওয়াতী চেতনার আরেক আহ্বান ছিল লৌকিক কাব্য মেখলায় ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’- বাস্তবিকই পাপ বিদগ্ধ পৃথিবীর গভীর ক্ষতকে মানব দুর্জনদের হাত থেকে রক্ষাকল্পে মানবীয় গুরু অপরাধের ব্যাথা বেদনাকে হালকা করার জন্য তিনি পুষ্প কুঞ্জের কন্টক জ্বালা সয়ে হলেও নিরন্তর অন্তর প্রশান্তির জন্য দুর্বহ অসহনীয় নির্যাতিত পৃথিবীর কষ্টবোধকে সহজাত করেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে দৃঢ় মনোবল সৃষ্টিতে উৎসাহ যুগিয়েছেন।

সাহিত্যের প্লেগ-এ এক মারাত্মক ব্যাধি। সুস্থ্য সংস্কৃতি বিল্পবে এ মহামারী ‘ওলাউটার’ মতই ধীরে ধীরে ধ্বংস প্রাচীর রচনা করে। কিন্তু মুক্তপ্রাণের সাহসী সংস্কৃতি প্রেমিদের নিরলস প্রচেষ্টায় সে মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরিয়ে আনতে অনেক সাহিত্যিক যোদ্ধা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে থাকে। সে ধরনের মহাপ্রাণ বপুর এক কাব্যপ্রেমিক ছিলেন কবি আফজাল চৌধুরী। ৯ জানুয়ারী ছিল তাঁর মৃত্যু দিবস। আমরা শুধু পঞ্জিকা দিবসেই সীমাবদ্ধ রয়েছি তাদের স্মরণ তালিকায় বা শ্রদ্ধা নিবেদনে। সেটি কিন্তু নিতান্তই অপ্রতুল। আমরা চাই কবি আফজাল চৌধুরীর মত মহৎ প্রাণের কবিদের শুধু নির্দিষ্ট দিবসেই নয়, অন্তত সাংস্কৃতিক জগতে তাদেরকে নৈমিত্তিকভাবে সাহিত্য কর্মের চেতনায় অনুরনন রাখতে এবং শিল্পকলা এবং সাংস্কৃতিক নানা অঙ্গণে তাদের কল্যাণ ধর্মী সৌরভকে ঘ্রাণসিক্ত করতে। দুর্জন সাহিত্যিকদের নানা অপকর্মে সুস্থ্য সাহিত্য মালঞ্চে যে সহজ সরল জীবনবোধকে হত্যা করে বধ্যভূমি রচনা করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কবি আফজাল চৌধুরী ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে শৈল্য চিকিৎসকের মতই অপসংস্কৃতির জঞ্জালকে দূরীভূত করার প্রয়াস পেয়েছেন স্থান, কাল ভেদে নানা সাহিত্যাঙ্গণে। কবি আফজাল চৌধুরী সমসাময়িক কালের বহু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বহু অসংগতির বিরূপ সমালোচনা করে কবিতার অক্ষরেখায় সরলীকরণ করেছেন বহু রাজনীতিক বোদ্ধাদের নিয়ে। পাশাপাশি রাজনীতি সংস্কৃতিতেও তিনি এনেছিলেন এক বিপ্লব সঞ্জাত নির্মোই জীবন প্রবাহ। মনুষত্ব বিকাশে এবং আদর্শিক রাজনীতির নিরিখে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন বহমান স্রোতস্বীনি নদীর মতই। বাঁধা মানেননি কোন করাল গ্রাসী অপরাজনীতির সংঘাতময় বিবর্তনের মানব উপত্যকায়। যেখানে ধ্বংস এবং সৃষ্টির মুখোমুখী অবস্থান সেখানে তিনি ছিলেন একজন মহীরূহ সব আদর্শিক চেতনায় সৃষ্টির উল্লাসে এক দৃঢ় অভিযাত্রী। কবিতার ভাব ভাষায় তিনি প্রতিনিয়তই নির্মাণ করেছেন আদর্শের শিলালিপি বেবিলনীয সভ্যতাসম সত্য প্রকাশে সাহিত্য উদ্যান। এ যেন তার ছিল মহাচেতনার এক স্ফুলিংগ ধারা। সত্য মিথ্যার বিভেদ রচনায় তিনি ছিলেন পারংগম এক মহাযুধিষ্টির। কাব্য প্রেম ছিল তার সহজাত প্রবৃত্তি এবং জাগতিক সুখ-স্বপ্ন রচনায় ছিলেন পবিত্র আত্মার এক ঐশী দ্যোতনার প্রোজ্জল আলোকে উদ্ভাসিত প্রেম-ভালবাসা এবং কবিত্ববোধে তার নিরলস সাধনা ছিল সকল কল্যাণধর্মী মানবতাবোধে উজ্জীবিত। কবিতা ও রাজনীতি চর্চা ছিল তার সমান্তরাল প্রকাশ। আধ্যাত্মিকতা ও মানবিকতা ছিল তার কাব্য চর্চায় একনিষ্ঠ সাধনা। সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি আর দেশজাতির দুর্ভাগ্য রচনায় যারা ছিল গিনিপিগের মত তাদের প্রতিহত করতে তার ছিল ক্ষুরধার কাব্য তরবারীর আঘাত। আর সমাজ ধ্বংসকারীদের তরে তার বিপ্লবাত্মক তৌহিদী চেতনার দাওয়াতী অভিযান। এ গুণ বৈশিষ্ট্যই তাকে করেছে মহীয়ান আর গৌরব দীপ্ত জীবনের এক সাহসী পথ প্রদর্শক।

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছিল ‘কল্যাণ ব্রত’ (১৯৬৯-এ)। পরবর্তীতে শ্বেতপত্র (১৯৮৩), সামগীত দুঃসময়ের (১৯৯১), শবমেহেরের ছুটি (২০০৫), নয়া পৃথিবীর জন্য (২০০৬) এবং বিশ্বাসের দিওয়ান (২০০৭)। আগেই উল্লেখ করেছি, তার একটি কাব্য নাটক প্রকাশ পেয়েছিল ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ (১৯৭৯)। প্রবন্ধ ও অনুবাদ গ্রন্থগুলোর মধ্যে ছিল, ঐতিহ্য চিন্তা ও রসূল (সা:) প্রশস্তি (১৯৭৯) ও বার্নাবাসের বাইবেল (১৯৯৬) এবং নাটক সিলেট বিজয় (২০০৬)। আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে তার সমসাময়িক কবিদের মধ্যে দেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি আব্দুস সাত্তার সহ অন্যান্য আরো বিশিষ্টজনেরা তার কাব্য মানস ও কবি সত্তা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পোষণ করতেন। বিশেষ করে খলনায়কোচিত কবিদের তিনি খুবই ঘৃণা করতেন। জাতীয় আদর্শিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যেসব কবি সাহিত্যিকগণ ভিন্নমত ও পথ অবলম্বন করতেন তিনি তাদেরকে আদর্শিক ভাবেই দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতেন এবং তাদের ভ্রম দৃষ্টিকে মৌলিক ও জাতিসত্তার পক্ষে কলম সৈনিকের ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানাতেন। এ ছিল তার পৌরুষদীপ্ত প্রোজ্জল কবি সত্তার নিদর্শন। যা অন্যদের বেলায় খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। যাই হোক, সার্বিক দিক থেকে কবি আফজাল চৌধুরীর কাব্য প্রতিভা ও কবি মানস নিয়ে দেশের আরেকজন বিশিষ্ট কবি মুকুল চৌধুরী তাঁর সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ একটি তুলনামূলক পর্যালোচনার ভিত্তিতে একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। কবির দীর্ঘদিনের সাথী হিসেবে তার এ গ্রন্থটিও কবি আফজাল চৌধুরী সম্পর্কে আরো অনেক তত্ত্ব ও তথ্য জানতে সহযোগিতা করবে বলে মনে করি। তাই আসুন মহান তৌহিদবাদী কবি সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করে এবং তাঁর অবদানকে জাতীয় চিন্তা চেতনার সাথে সম্পৃক্ত করে স্বচ্ছ ও আদর্শিক কাব্য জগতে উত্তরসুরীদের মৌলিক সাহিত্য-সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে উঠুক, তার আদর্শিক চেতনার চাওয়া পাওয়া প্রত্যাশার বিকাশ লাভ করুক, ঐকান্তিক কামনায় সাহিত্য প্রেমিদের এই হোক কল্যাণব্রত।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট ও সহ-সভাপতি সিলেট লেখক ফোরাম।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।