সংবাদ শিরোনামঃ

আইনের ব্যাপকতা ও বাধ্যবাধকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ** সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায় ** আওয়ামী লীগে প্রবল সাংগঠনিক বিপর্যয়; শীর্ষ নেতৃত্বে বিভাজন অত্যাসন্ন ** ঢাবি জাবি রাবি চবি’র চার ভিসি অবৈধ! ** নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ** জাসদই তাহলে মুজিব হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল! ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** ৮০০ রাইস মিলের চালের দুনিয়া এখন খাজানগর গ্রাম ** আইনের শাসন পরিপন্থী অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** আদর্শ জননীরূপে একজন নারী **

ঢাকা শুক্রবার ৩০ চৈত্র ১৪১৮, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩, ১৩ এপ্রিল ২০১২

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার খাজানগর। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রাম। কিন্তু গ্রাম হলেও এর পরিচিতি বিশ্বজোড়া। এই গ্রামটি এখন দেশের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে একাধারে চাল উৎপাদন, উন্নত জাতে রূপান্তর ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে। এ চাল গ্রাম থেকেই সারাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চাহিদা মেটানো হয়। পাশাপাশি খাজানগর থেকে প্যাকেটজাত উন্নত চাল রফতানি হয় ৩৮টি দেশে।

শুধু খাজানগর-আইলচারা চালশিল্প ঘিরে ছোট-বড় প্রায় ৮০০ রাইসমিল গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি ধান সিদ্ধ-শুকানোসহ নানা প্রক্রিয়ার জন্য চাতালও রয়েছে দুই সহস্রাধিক। সেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়। ২০-২২ হাজার টন চাল মজুদ রাখার মতো শত শত গুদামও গড়ে উঠেছে খাজানগরে। এখানকার সাধারণ বাড়িঘরও উৎপাদন, রক্ষণ, সরবরাহসহ বাণিজ্যিক নানা প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত। সব মিলিয়ে রাত-দিন চলছে ১০ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিকের বিশাল কর্মযজ্ঞ। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা-পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই স্থানীয় অধিবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে এখানকার চালকল আর চাতালগুলো। পদ্মার ভাঙনে দিশাহারা চিলমারী, বাজুমারা ও ফিলিপনগর চরাঞ্চলের অধিবাসীরা বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে খাজানগরকেন্দ্রিক চালের ব্যবসা শুরু করেন এক সময়। আজ যা প্রসারিত হয়েছে কয়েক গুণ।

সুগন্ধা রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ওয়াহিদুজ্জামান অর্ক বলেন, রাজধানী ঢাকায় প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ড মিনিকেট এই খাজানগরেরই সৃষ্টি। এমনকি এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের চাল ইতালি ও জার্মানিতে রফতানি হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার রশিদ অ্যাগ্রো ফুড, খাজানা মিল, স্বর্ণা অটো রাইস মিলসহ ২০-২২টি চালকল দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একেকটি মিলে প্রতিদিন ৭০০ টন এবং ছোট মিলে ৫০ টন পর্যন্ত চাল উৎপাদন হয়।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নে খাজানগর অবস্থিত। বটতৈল ইউনিয়নে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ৩৬ হাজার হলেও শুধু খাজানগর গ্রামেই বাস করেন সাড়ে ১৪ হাজার মানুষ। এ গ্রামের শতকরা ৯০ জনই চালশিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানকার কেউ শ্রমিক, কেউ ব্যবসায়ী কেউবা মিল কিংবা চাতালের মালিক। মাত্র এক-দেড় যুগ আগেও যে খাজানগর আর আশপাশ এলাকা চরমপন্থি-উপদ্রুত ছিল, এখানে-সেখানে পড়ে থাকত মানুষের রক্তাক্ত লাশ, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে একই স্থানে এখন জীবনের জয়গান। ঘটেছে চালবিপ্লব। ‘ধান উৎপন্ন করে কৃষক আর চাল উৎপাদন করে খাজানগর'’ এমন কথা মানুষের মুখে মুখে।

খাজানগর ব্যাপারী অ্যাগ্রোর মালিক তোফাজ্জল হোসেন জানান, চিলমারীর পদ্মার চরে বসতি ছিল তার। ১৯৯২ সালের বন্যায় বাড়িঘর ভেসে গেলে শুধু ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে সপরিবারে ঠাঁই নেন খাজানগরে। প্রথম দিকে ভাড়ায় নেয়া ভ্যানগাড়ি চালিয়ে কোনো রকমে জীবিকার ব্যবস্থা হলেও পরে তিনি রাইস মিলে যোগ দেন শ্রমিক হিসেবে। একসময় ভাগ্য ফেরে। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শুরু করেন মিল পরিচালনা। এরপর ব্যাংক, এনজিও আর পরিচিতজনদের সহায়তায় নিজেই গড়ে তোলেন অটো রাইস মিল। তোফাজ্জলের মতো ভাগ্য পরিবর্তনের গল্প এখানকার অনেকের। এখানে যারা আজ বৃহৎ ব্যবসায়ী, তাদের প্রায় প্রত্যেকে উঠে এসেছেন শ্রমিক থেকে।

আনন্দময় কর্মযজ্ঞ : খাজানগরে মাঝারি শ্রেণীর সাধারণ মিলের সংখ্যা এখন ২৫০টি। অটো কালার শুটার মিল আছে ২৫টি আর বৃহদাকারের ডাইয়ার অটো মিল ১০টি। একেকটি অটো রাইস মিল থেকে প্রতিবার প্রায় আড়াই হাজার মন চাল উৎপাদন সম্ভব হয়। আধুনিক এসব মিলে দিনমজুর, প্যাকিংম্যান, গুদামকর্মী, সাধারণ লেবার, হেলপার, মেশিন অপারেটর, টেকনিক্যাল ম্যানমেকার, ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ম্যানেজার, সেলসম্যান, ক্যাশিয়ার, পরিচালক পদে জনবল নিয়োগ হয়ে থাকে। প্রতিটি কারখানায় আট ঘণ্টায় এক শিফট। প্রতি শিফটে ২০-৩০ জন নারী-পুরুষ কাজ করে থাকেন। চাহিদা অনুযায়ী রাত-দিন তিন শিফটে সচল রাখা হয় মিলগুলো। পুরো খাজানগর এলাকা যেন কর্মযজ্ঞের আনন্দে রাত-দিন ভাসে।

শিশু থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই কোনো না কোনো কাজের মধ্য দিয়ে সময় কাটান। সত্তরোর্ধ্ব নূর মোহাম্মদ চোখে কম দেখলেও বড় আকারের সুই আর পাটের সুতলিতে বস্তা মেরামতের কাজ করেন দিনমান। বৃদ্ধা করিমন বেওয়া চাল থেকে বেছে আলাদা করা তুষ-কুঁড়া বস্তায় পোরেন আয়েশি ভঙ্গিতে। ক্লান্তি এলে এখানে-সেখানে শুয়ে-বসে সময় কাটান তারা। আড্ডায় মেতে ওঠেন যখন-তখন।

তবে এত আনন্দের মধ্যেও আছে সমস্যা। এখানকার অধিবাসীদের প্রধান সমস্যা ড্রেনেজ। স্থানীয় মিল-মালিকরা ব্যক্তি উদ্যোগে এ সমস্যা কিছুটা নিরসন করেছেন। এ সমস্যা সমাধানে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।

খাজানগরের উৎপাদিত চালের সুনাম দেশে-বিদেশে। অথচ এ সুনামকে পুঁজি করে একশ্রেণীর ঠক-প্রতারক ‘খাজানগরের চাল’ ব্র্যান্ড ব্যবহার করে খারাপ চালের জমজমাট ব্যবসা শুরু করেছে। এসব ব্র্যান্ডের চাল কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। সাধারণ থেকে শুরু করে পোলাওয়ের চাল পর্যন্ত বাজারজাত করে চলেছে অসাধু এই ব্যবসায়ী চক্র। সংশ্লিষ্ট মিল-মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলেন, রাজধানীর একশ্রেণীর অতি মুনাফালোভী দুষ্টচক্রের যোগসাজশে এখানকার ঠক-প্রতারকরা ছোট-বড় ব্যাগে নানা নামে, নানা ব্র্যান্ডে সিলমোহরের মাধ্যমে দেদার পচা-গন্ধ নিম্নমানের চাল ছাড়ছে বাজারে। মানসম্মত চালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রশিদের মিনিকেট, সিরাজের মিনিকেট, দাদা রাইস, জোয়ার্দার রাইস, নাটোর অটো রাইসের চাল। চিনিগুঁড়া, কালিজিরার মতো চালের ক্ষেত্রে এরফান, মোজাম্মেল, সাগর স্পেশাল, রজনীগন্ধা, সোনার চাবি, সাহেব বাবু, আবুল হোসেন, মঞ্জুর, মিন্টু ও আনোয়ার স্পেশাল ব্র্যান্ডের উন্নতমানের চাল রয়েছে। অথচ একই নামে নকল বাজারজাত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মূল উৎপাদনকারীরা। শুধু ব্র্যান্ডভক্তির এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন রাজধানীর বাবুবাজার, বাদামতলী, ছোটকাটরা, মৌলভীবাজার প্রভৃতি এলাকার কিছু অসাধু পাইকার।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।