খামারিদের দুর্দিন

উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও ভ্যাকসিনের অভাবে লোহাগাড়ায় পোল্ট্রি শিল্প হুমকির মুখে

আরফাত হোছাইন বিপ্লব, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) : প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বার্ড ফ্লু প্রতিরোধক ভ্যাকসিন সহজলভ্য না হওয়ার কারণে লোহাগাড়ায় পোল্ট্রি শিল্প চরম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পুঁজি বিনিয়োগ করেও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না খামারিরা। বার্ড ফ্লু প্রতিরোধক ভেকসিন পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। অথচ বার্ড ফ্লু আঘাত হানলে নিমিষেই ক্ষতি হয়ে যায় হাজার হাজার টাকার। এ অবস্থায় খামারিদের কেবল লোকসান গুণতে হচ্ছে। অপরদিকে প্রজনন মুরগি আমদানি না থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো লোহাগাড়ায়ও বাচ্চা মুরগি তথা লেয়ারের ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বহুমুখী সমস্যায় পড়ে খামারিরা এক প্রকার নিরাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এ ব্যবসা থেকে। ইতোমধ্যে অনেকেই তাদের খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিয়েছে।

বছর খানেক আগেও মুরগি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিত ছিল। কম পুঁজিতে অধিক লাভের কারণে গরিব বেকার যুবকরা ঝুঁকে পড়ে এ ব্যবসায়ে । আর এতে অনেকে সফল হন। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকায় এসব যুবকদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল পোল্ট্রি শিল্প। সম্প্রতি মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য সামগ্রির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা দারুণভাবে ভেঙে পড়েছেন। পশু সম্পদ বিভাগ, পোল্ট্রি মালিক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, তিনমাসের ব্যবধানে কোনো কোনো খাদ্য উপকরণের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। নেদারল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত ভুট্টার দাম ছিল কেজি ১০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। সয়াবিনের খৈল ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ২৩ টাকা হয়েছে। ইউএসও ও নেদারল্যান্ড থেকে আমাদানিকৃত প্রোটিনের দাম ছিল ৩৩ টাকা কেজি। এখন ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাইস পালিশের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনমাস আগে এর মূল্য ছিল ৭ টাকা। ভিটামিনের দাম বেড়েছে প্রতিকেজিতে ৩৮ টাকা করে। পূর্বে যে ভিটামিন ৯০ টাকা দরে বিক্রি হতো, বর্তমানে তা ১শ’ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩ টাকার ঝিনুক গুঁড়ো বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকায়। উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রেডিফিডের দাম বেড়েছে প্রতিকেজিতে ৫ টাকা। ১৭ টাকার রেডিফিড এখন ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ওষুধ এবং প্রতিষেধকের দামও বেড়েছে। তিনমাস আগে নেদারল্যান্ডে তৈরি প্রতিটি ভ্যাকসিনের দাম ছিল ৩শ’ ৫০ টাকা। এখন ৫০ টাকা বেড়ে ৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাচ্চার দামও বেড়েছে। প্রতিটি লেয়ার বাচ্চার দাম ছিল ৩৫ টাকা। বর্তমানে ৫৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। ব্রয়লারের বাচ্চার দাম ২৪ টাকা থেকে ২৮ টাকায় ঠেকেছে।

সব মিলিয়ে পোল্ট্রি শিল্পে এখন চরম দুর্দিন চলছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পোল্ট্রি শিল্প থেকে মানুষের আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ মহল। এর ফলে পার্শ্ববর্তী ভারত কিংবা অন্য রাষ্ট্র থেকে মুরগি আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে বলে ধারনা করছে বিশেষজ্ঞরা। আর এতে প্রচুর টাকা অপচয় হবে বাংলাদেশের। যে শিল্প বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিণত হয়েছিল তা আবার জৌলুশ হারাতে বসেছে বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।

পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, বিগত কয়েক বচল এ ব্যবসা ভাল চললেও এখন খুবই দুরবস্থা চলছে। আগে আমি প্রায় ৫টি খামার করতাম এখন আছে মাত্র দুটি। লোহাগাড়ার পুটিবিলা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া জমির উদ্দিন। তিনি জানান, পোল্ট্রি খামার নিয়ে মনে হচ্ছে সরকারে কোনো মাথাব্যথা নেই। শোনা যাচ্ছে, ভ্যাকসিন আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে পুরো শিল্পটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল মহলের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।