হতাশায় ২০ কোটি টাকার লোকসান গুণছে চাষিরা

উখিয়ায় ৩ শতাধিক চিংড়ি ঘের ভয়াবহ মড়কে আক্রান্ত

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা উখিয়ায় বিভিন্ন ঘেরে চিংড়ি মাছে এভাবে মড়ক দেখা দেয়

কক্সবাজার থেকে সংবাদদাতা : কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা উখিয়ায় তিন শতাধিক চিংড়ি ঘেরে মহামারী আকারে চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে। ভয়াবহভাবে মড়কে আক্রান্ত হওয়ায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে হাজার-হাজার চিংড়ি চাষীরা। অতিরিক্ত তাপমাত্রা, পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও ভাইরাসজনিত কারণে গত পকাল ধরে অব্যাহত চিংড়ি মারা যাওয়ার ফলে প্রায় ২০ কোটি টাকার তির সম্মুখীন হয়েছে বলে তিগ্রস্থ চিংড়ি চাষীদের দাবি।

সরেজমিন, উপজেলার থাইংখালী, রহমতের বিল, ফারির বিল, আঞ্জুমান পাড়া, বালুখালী ও ঘুমধুম চিংড়ি ঘের অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় চিংড়ি চাষীদের মাঝে চরম হতাশা পরিলতি হয়েছে। তারা জানান, প্রতি মৌসুমে এসব এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে চিংড়ি চাষাবাদ হয়ে থাকে। স্থানীয় চিংড়ি চাষী আলতাফ মিয়া বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা দাদন নিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে নিজের প্রায় দেড়শত একরের ৩টি চিংড়ি ঘের থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার মাছও বিক্রি করতে পারিনি। তিনি’সহ আরো অনেক চিংড়ি চাষী জানান, গত প্রায় ১৫ দিন ধরে চিংড়ি ঘেরগুলোতে জাল ফেললে অসংখ্য মরা চিংড়ি মাছ ও মরা কাঁকড়া জালে উঠতে দেখে চরমভাবে হতাশ হয়ে স্থানীয় মৎস্য অফিসের শরণাপন্ন হই। উপজেলা মৎস্য অফিস চিংড়ি ঘেরে ব্যাপক হারে মড়কের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ও রোগ প্রতিরোধের কোনো উপায় দেখাতে পারছে না। বরং তারা চিংড়ি চাষীদের উপর উল্টে দোষারোপ করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় চিংড়ি চাষীরা বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক বা স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চিংড়ি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। গত ১৫ দিন ধরে তাদের চিংড়ি খামারে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিংড়ির মড়ক শুরু হলে স্থানীয় চাষীরা প্রাণপন চেষ্টা করেও চিংড়ির মড়ক প্রতিরোধের কোনো উপায় খুঁজে পায়নি। ওইসব চিংড়ি হ্যাচারিগুলোতে পোনা উৎপাদনের সময় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরণের নিম্নমানের ক্যামিকেল ও ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করায় উক্ত ওষুধের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় ঘেরসমূহের চিংড়ি মাছ নানা জাতীয় ভাইরাসে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রায় তিন শতাধিক চিংড়ি ঘেরে অন্তত প্রায় আড়াই হাজার একর চিংড়ি চাষে মহামারী আকারে মড়ক ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে সরকারিভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদ্যোগে আক্রান্ত ঘেরসমূহে চিংড়ির মহামারী মড়ক নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া না হলে, এ খাত থেকে জাতীয় রাজস্বে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে চরম আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।