ঘরবাড়ি বিক্রি করে জনসেবাকারী জাফর ফরাজি

কাফনের কাপড় সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে দেশ ভ্রমণ

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : নিজের সব সম্পদ বিক্রি করে এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করা সেই জাফর ফরাজি এবার সাইকেলে দেশ ভ্রমণে বেরিয়েছেন। এই সাইকেলে চড়ে সৌদি আরব গিয়ে তিনি পবিত্র হজ্বও পালন করতে চান। দেশ ভ্রমণের সময় তিনি অলি আউলিয়াদের মাজারও জিয়ারত করতে চান। মাথায় লম্বা চুল, মুখভর্তি সফেদ লম্বা দাড়ি, গলায় গামছা, পরনে সাদামাটা লুঙ্গি ও শখের বাহন সাইকেল নিয়ে ৫০ বছর বয়সী ফরাজি ১৯টি জেলা ভ্রমণ ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। গত ১১ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় এসে পৌঁছেছেন। ফরাজির গ্রামের বাড়ি মাদারিপুর জেলার পূর্ব কমলাপুর ইউনিয়নের কালকিনি গ্রামে। এলাকায় তিনি সমাজসেবক দর্জি জাফর হিসেবে বেশ পরিচিত।

দর্জি জাফর ফরাজি জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে তিনি বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (র.) মাজার শরীফ জিয়ারতের জন্য বাগদাদ যেতে পাসপোর্ট তৈরি এবং ভিসার জন্য আবেদন করেন। ভিসা না পেয়ে তিনি মনে কষ্ট পান। শপথ নেন বাগদাদ যেতে না পারা পর্যন্ত মাথার চুল ও মুখের দাড়ি কাটবেন না। এরপর নিজ পেশা দর্জির কাজে মনোযোগ দেন। বিবাহিত জীবনে তিনি ৩ ছেলে ২ মেয়ের জনক। প্রায় ৫ বছর আগে নিজের নামে থাকা জায়গা সম্পত্তি ও দর্জির দোকান বিক্রি করে ঐ অর্থ কালকিনি নিজ গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের সাধারণ মানুষের উপকারে কাজে লাগান। এতে গ্রামের মানুষের উপকার হলেও তাকে হারাতে হয়েছে সবকিছু। এখন তিনি রাতে থাকেন তার গ্রামের কমলাপুর বাজারে এক পাগলার তরকারির দোকানে। ঝড় বৃষ্টিতে কষ্ট হলেও মানুষের উপকার করতে পেরে তিনি খুশি।

খুশি তার সন্তানরাও। সবকিছু হারালেও তারা তাদের বাবার কাজে সন্তুষ্ট। জাফর ফরাজির ছেলে-মেয়েরা নারায়ণগঞ্জে তৈরি পোশাক কারখানায় (গার্মেন্টস) চাকরি করেন।

ফরাজির মেয়ে মর্জিনা আক্তার মুঠোফোনে জানান, এক সময় তাদের ঘরবাড়ি, বাবার টেইলারিং ব্যবসা সবই ছিল। গ্রামের রাস্তা ও কালভার্ট তৈরিসহ গ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করতে তার বাবা তাদের সবকিছু বিক্রি করে দেন। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন বুঝতে পারি দেশের প্রতি অগাধ টান এবং দায়িত্ববোধ থেকে তিনি এসব করছেন। এলাকার মানুষ তাদের বাবাকে ভালো বললে বুকটা ভরে যায়। বাবার সকল কাজে ফের সমর্থন জানান মর্জিনা।

জানা গেছে, জাফর ফরাজি গত দুই বছর আগে ঢাকার নারায়ণগঞ্জ শহরে এসে আবার দর্জির কাজ শুরু করেন। এখন মনে বাসনা জেগেছে পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আবর যাওয়ার। কিন্তু এখন তার টাকা নেই। তাই গত ১৫ ফেব্র“য়ারি ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে কাফনের কাপড় সাথে নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার অলি আউলিয়ার মাজার জিয়ারতে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে পড়েন। কাফনের কাপড় কেন সঙ্গে নিলেন এই প্রসঙ্গে ফরাজি জানান, বাংলাদেশে এখন সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সাইকেলে ভ্রমণ করতে গিয়ে যদি কখনও তার মৃত্যু হয় তাহলে যারা তাকে দাফন করবে তাদের যেন কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্যই কাফনের কাপড় সঙ্গে রেখেছেন। তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারসহ দেশের সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের মাজারগুলো জিয়ারত শেষে সাইকেল চালিয়ে সৌদি আরব পবিত্র হজ্ব পালন করতে যাবেন। ইতোমধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, ফিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার প্রায় ৪৫টি মাজার জেয়ারত শেষ করেছেন।

ফরাজি বলেন, বাংলাদেশের অলি আউলিয়ার মাজার জিয়ারত শেষে তিনি সাইকেল চালিয়ে সৌদি আরব পবিত্র হজ্ব পালন করতে বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি আরবের দূতাবাসে সহযোগিতা চাইবেন।