হতদরিদ্র মিল শ্রমিক চম্পা বেগমের মানবতাবোধ

মোঃ মফিজুর রহমান, অভয়নগর (যশোর) সংবাদদাতা : ‘‘মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য’’ এই সত্যটিকে আবারো প্রমাণ করলেন অভয়নগর উপজেলার অজপাড়া গাঁয়ের এক সহায় সম্বলহীন মিল শ্রমিক চম্পা বেগম। হৃদয়ের সবটুকু সহানুভূতি আর নিজের মুখের খাবার বিলিয়ে দিয়েও তিনি বাঁচাতে পারেননি শত বর্ষী এক অজ্ঞাতনামা বৃদ্ধকে। গত শনিবার সকালে ওই শতবর্ষী বৃদ্ধের লাশের পাশে বসে ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থেকে নিজের হারিয়ে যাওয়া পিতার অস্তিত্ব খুঁজে ফিরছিল মিল শ্রমিক চম্পা আর বার বার মূর্ছা যাচ্ছিল।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অজ্ঞাতনামা ওই বৃদ্ধ বেশ কিছুদিন যাবৎ শংকরপাশা গ্রামে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো এবং শংকরপাশা খেয়াঘাট এলাকায় রাস্তারপাশে রাত যাপন করতো। তার পরিচয় এলাকার কেউ জানত না। ভিক্ষা বৃত্তির এক পর্যায়ে গত বৃহষ্পতিবার সকালে শংকরপাশা খেয়াঘাট এলাকায় অসুস্থ্য হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে কাতরাতে থাকে সে। তার কাতর যন্ত্রণা ওই্এলাকার বিত্তবানদের হৃদয় স্পর্শ না করলেও সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়া মিল শ্রমিক চম্পার হৃদয়ে শেলের মত বিধতে থাকে এবং শতবর্ষী বৃদ্ধের মুখে নিজের জন্মদাতা পিতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় যেন। মিলে যাওয়ার কথা ভুলে যায় সে। সন্তানের মত করে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নিজের মুখের খাবার তুলে দেয় ওই বৃদ্ধের মুখে। তার সুস্থতার জন্য ছুটে যায় ওই এলাকার ডাক্তার শাহাজান আলীর কাছে। নিজে একবেলা না খেয়ে থাকলেও পিতৃ সমতুল্য ওই বৃদ্ধের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক কোন ওষুধ পথ্য আনতে ভুল করেনি ওই মিল শ্রমিক চম্পা বেগম। ধীরে ধীরে সুস্থ্য করে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি সে। গত ১০ ফেব্রম্নয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছে ওই অজ্ঞাতনামা বৃদ্ধ। অসহায় বৃদ্ধের এই মৃত্যু সমাজের অন্য সকলে সহজভাবে মেনে নিলেও মেনে নিতে পারেনি চম্পা।

মিল শ্রমিক চম্পার সাথে এ প্রতিনিধির কথা হলে সে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে ‘‘ দীর্ঘ কয়েক বছর আগে এমনই ভাবে আমার জন্ম দাতা পিতা পিতৃস্নেহের জাল ছিড়ে চলে গিয়েছিল । আজ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে আমার বারবার বাবার কথা মনে পড়ছে। ওই বৃদ্ধকে পেয়ে আমি যেন আমার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে খঁজে পেয়েছিলাম।
এদিকে হতদরিদ্র মিল শ্রমিক চম্পার এমন মানুষিকতা দেখে সমাজের বিত্তবানরা লজ্জায় মুখ লুকিয়েছিল কিনা জানা না গেলেও এলাকার পিতৃহারা শত শত চম্পা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।