কুষ্টিয়াসহ ৫ জেলায় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহে অনিশ্চয়তা

খালিদ হাসান সিপাই, কুষ্টিয়া থেকে : ২০১০ সালের মধ্যে কুষ্টিয়াসহ  খুলনার শিল্প এলাকার  গ্রাহকের কাছে গ্যাস পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। সে মোতাবেক দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় ৮৫৬ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছিল। বিন্তু  ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৫ জেলায় গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।  ইতোমধ্যে গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ মাঝ পথে এসে থমকে গেছে। ফলে কুষ্টিয়া জেলাসহ এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এখনও এ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করা এবং পাইপলাইন বসানোর কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় আগামী ২০১২ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে খুলনার সুন্দরবন গ্যাস ট্রান্সমিশনের অফিসটিও গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে করে এ অঞ্চলে পাইপলাইনে আদৌ গ্যাস আসবে কিনা ব্যবসায়ী ও শিল্পদোক্তাসহ সাধারণ মানুষ সংশয় প্রকাশ করেছে।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে টাঙ্গাইল থেকে খুলনা পর্যন্ত ২৬৬ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ভুমি অধিগ্রহণ করাসহ প্রশাসনিক জটিলতার কারণে মাঝ পথে থেমে গেছে এ প্রকল্পের কার্যক্রম।  কুষ্টিয়ায় পদ্মানদীর ওপর নির্মাণ করা লালন শাহ ব্রিজের ওপর দিয়ে পাইপলাইন  নেয়ার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ফাইল চালাচালি চলছে। সূত্র মতে, ব্রিজটি করার সময় যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গ্যাসলাইন স্থাপনের কোন প্রভিশন রাখেনি। এখন নদীর নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ করতে হবে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। এরই মধ্যে সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয় জার্মানির একটি কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদক করেছে। কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রণালয় হতে লাইন বসানোর জন্য অনুমতি মিলছে না। দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চলছে চিঠি চালাচালি। জানা গেছে, টাঙ্গাইলের এলেজডাঙ্গা পয়েন্ট থেকে সিরাজগঞ্জের বনপাড়া ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার গ্যাসলাইন বসানোর কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড সূত্র থেকে এ খবর জানা গেছে।  

২০০৬ সালের জুলাই হতে এ অংশের কাজ শুরু করা হয়। অন্যদিকে ভেড়ামারা হতে ১৬৫ কিলোমিটার কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা পর্যন্ত গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। লাইন বসানোর জন্য দরপত্রও আহবান করা হয়েছে।  সূত্র মতে, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বিলম্বের কারণে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। সংশিস্নষ্ট জেলা প্রশাসকরা জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করে দখল বুঝে পাওয়া মাত্র পাইপ বসানোর কাজ শুরু করতে পারবেন। এ ব্যাপারে সংশিস্নষ্ট কোম্পানী হতে জেলা প্রশাসনের কাছে তাগিদপত্র পাঠানো অব্যাহত রয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, খুলনা গ্যাস পাইপলাইনের জন্য আগে আহবান করা টেন্ডার বাতিল করা হয়। কারণ ওই সময় পাইপের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় টেন্ডার বাতিল করা হয়। সেক্ষেত্রে আবার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। এ বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতার আসল কারণ অনুসন্ধানেরও দাবি উঠেছে। টাঙ্গাইল থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার ৩০ ইঞ্চি পাইপলাইন বসানো হয়েছে গত বছরের মে মাসে। এখন ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার ২০ ইঞ্চি পাইপ বসানো হবে। পৃথক এ দুটি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৯ মিলিয়ন ডলার।
সূত্র মতে, হাইপ্রেসার লাইন স্থাপন করা হচ্ছে কুষ্টিয়া শহরের পাশে। এ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস যাবে ঝিনাইদহ হয়ে অন্য শহরে। শহরতলী এলাকায় ৮, ৬, ৪, ২ ইঞ্চি পাইপ বসানোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে গ্যাস। বর্তমানে লালন শাহ সেতুতে গ্যাস লাইনের প্রভিশন না থাকায় চারটি স্থানে পানির নিচে পাইপ বসানোর কাজ করতে হবে।