সংবাদ শিরোনামঃ

অন্তিম যাত্রায় রাজনীতি ** বিদেশ নামক সোনার হরিণের পেছনে অন্ধের মতো ছুটবেন না -প্রধানমন্ত্রী ** আমাকে আর কত হয়রানি করা হবে -আদালতে আল্লামা সাঈদী ** আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব বাড়ছে ** শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সময়োপযোগী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে : আ ন ম শামসুল ইসলাম ** দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন -ডা. শফিকুর রহমান ** রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে কার্যকর পথ পাচ্ছে না বাংলাদেশ? ** ভোটাধিকার হলো গণতন্ত্রের আত্মা ** মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর--নূরুল ইসলাম বুলবুল ** মানুষের দুর্দশা লাঘবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে----সেলিম উদ্দিন ** ক্ষমাপ্রার্থীকে আল্লাহ পছন্দ করেন ** নিরাপদ শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হতে হবে **

রেজি: ডিএ ৫১৭।। ৫৯ বর্ষ : ৩৯তম সংখ্যা ॥ ঢাকা শুক্রবার ২৪ পৌষ ১৪২৭ ॥ ২৩ জমা .আউয়াল ১৪৪২ : Friday 8 January 2021

হতাশা-দুশ্চিন্তা আর দুর্নীতি ছাপিয়ে ২০২১

জাগাবে কি নতুন কোনো সম্ভাবনা

॥ সাইদুর রহমান রুমী॥
চরম হতাশা-দুশ্চিন্তা আর দুর্নীতি-অপশাসনে শেষ হলো ২০২০ সাল। আসবে কি সুদিন, কাটবে কি সব অনিয়ম আর অপশাসন। মহামারি করোনা কি পেরেছে মানুষের মাঝে মনুষ্যত্বের বন্ধন জাগাতে। যে প্রাণঘাতী করোনা তছনছ করে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, কেড়ে নিয়েছে অনেক প্রিয়জন। আশা-নিরাশার দোলাচলে নতুন ২০২১ সাল জাগাবে কি আশা। ঘোচাবে কি সব দুঃখবোধ আর দুর্নীতি-অপশাসন। সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে এ প্রশ্ন আর আশাবোধ।
মহামারি করোনাকালেও দুর্নীতি, অবাক বাংলাদেশ : বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় হয়ে থাকবে মহামারি করোনার সময় এর পরীক্ষা নিয়ে চরম জালিয়াতির বিষয়টি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ২০২০ মেয়াদে সবচেয়ে আলোচিত-ঘৃণিত একটি বিষয় ছিল করোনা রিপোর্ট নিয়ে চরম দুর্নীতি। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির ভয়াল চিত্র তো রয়েছেই। ২০২০ সালে দুর্নীতির অন্যতম প্রধান খাত ছিল স্বাস্থ্য ক্ষেত্র। ২০২০ সালে সবকিছু ছাপিয়ে যায় করোনা নিয়ে চরম জালিয়াতির বিষয়টি। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কেনাকাটা বা নিয়োগ-বদলিতে দুর্নীতির পাশাপাশি নতুন করে বিভিন্ন জালিয়াতির ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে মহামারি করোনায় কোনো ধরনের টেস্ট না করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় মানুষ হতবাক হয়ে গেছে। মানুষের জীবন নিয়ে দুর্নীতির এ ভয়ঙ্কর খেলায় সাধারণ মানুষ যেন হতবিহ্বল এবং এর হোতারা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ হওয়ায় বিষয়টি মানুষের মনে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
করোনার শুরু থেকে চিকিৎসা নিয়ে নানা অপ্রতুলতা-অব্যবস্থাপনায় এমনিতেই সাধারণ মানুষ ছিল পর্যুদস্ত। তারওপর করোনার ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে ব্যাপক জালিয়াতির ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। মহামারির মাঝেই খোদ করোনা নিয়ে একের পর এক মারাত্মক অনিয়মের খবরে সাধারণ মানুষ আঁতকে ওঠে। বিশেষ করে ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট বিক্রির সাথে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের কুকর্ম মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। হাসপাতালের ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা এবং কোনো ধরনের লাইসেন্স না থাকার পরও করোনার চিকিৎসায় রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চুক্তির বিষয়টি সবাইকে হতবাক করে দেয়। হাসপাতালটির লাইসেন্স না থাকা, নিম্নমানের চিকিৎসা, আইসিইউ’র যথাযথ সুবিধা না থাকাসহ নানা অসঙ্গতির কথা জানার পরও মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে গত বছর ২১ মার্চ চুক্তি করে মন্ত্রণালয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের সাথে সরকারি দলের হেভিওয়েট প্রায় সব নেতার সম্পর্ক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শুধু আওয়ামী লীগ নেতা হবার কারণে কথিত এই সাহেদের সব অবৈধ কাজের অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসন। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এই সাহেদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে ৩২টি মামলা খুঁজে পেয়েছে র‌্যাব। এর বেশিরভাগই ছিল প্রতারণা মামলা। শুধু সরকারদলীয় লোক বলে সাত খুন মাফ পেয়ে সে দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে সাহস পেয়েছে। সে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য পরিচয়ে বিভিন্ন টিভি-টকশোতে অংশ নিত। আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলে এত গুরুত্বপূর্ণ পদ কী করে সাহেদ বাগিয়ে নিল, সরকারের প্রভাবশালী বড় নেতাদের সঙ্গে সাহেদের দহরম-মহরম ছবি দেখে সাধারণ মানুষ হতবাক। তাকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হলেও তার প্রশ্রয়দাতা গডফাদারগণ এখনো আড়ালেই রয়ে গেছে। জনগণের জীবন নিয়ে এতবড় প্রতারণার পরও হয়তো শুধু সরকারি দলের লোক হবার সুবাদে সাহেদসহ তার আশ্রয়দাতারা বরাবরের মতোই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। যার কারণে নতুন নতুন সাহেদ তৈরি হবে বলে মানুষ আতঙ্কিত।
ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী : জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ও জুনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা। সরকারি ডাক্তার হয়েও স্বাস্থ্য খাতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে এ সেক্টরের নানা কাজ বাগিয়ে নিতো সে। ২০২০ সালে করোনা টেস্ট জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়ে ঘৃণিত আলোচিত হয় সরকারি ছত্রছায়ায় থাকা এ জুনিয়র ডাক্তার। করোনা চিকিৎসায় জুনিয়র এ ডাক্তারের জালিয়াতি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবরিনা একা কখনোই এ কাজ করতে সাহস করেনি। তার পেছনে প্রভাবশালীরা জড়িত ছিলেন। কিন্তু সাবরিনা মিডিয়ার কারণে ধরা পড়ে গেলেও তার প্রশ্রয়দাতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। জুনিয়র একজন ডাক্তার হয়ে সরকারি চিকিৎক দল স্বাচিপের নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে সব অপকর্ম করে আসছিল এই সাবরিনা। ১১ জুলাই গ্রেফতারের পর ডা. সাবরিনাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ও কার্ডিয়াক সার্জন পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যা ইতঃপূর্বে করেনি।
তারা সারা দেশে ৪৪টি ভুয়া বুথ বসিয়ে ও বাসাবাড়িতে গিয়ে তারা কমপক্ষে হাজার হাজার নমুনা সংগ্রহ করে, যার সবই ছিল নিজেদের বানানো ভুয়া রিপোর্ট। এর প্রতিটি রিপোর্টের জন্য বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ও বিদেশিদের কাছ থেকে ১০০ ডলার করে নেয়া হতো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাবরিনাকে গ্রেফতার করলেও তার গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতার না করায় সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যায়। মহামারি করোনা নিয়ে এতবড় জালিয়াতি বিশ্বে বোধ হয় নজিরবিহীন। জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, যেখানে মহামারি করোনায় দলমত-নির্বিশেষে পৃথিবীর সব দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ভেদাভেদ ভুলে একযোগে কাজ করেছে। সেখানে বাংলাদেশে সরকারি দলের প্রশ্রয়ে একের পর এক মারাত্মক দুর্নীতি দেশের মানুষদের অবাক করে দিয়েছে।
করোনা সুরক্ষাসামগ্রীতেও ছিল দুর্নীতি : পিপিই, মাস্কসহ করোনা সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে বছরব্যাপী দুর্নীতি ছিল ২০২০ সালে চরম এক আলোচিত বিষয়। করোনার শুরু থেকেই মাস্ক, পিপিই, ভেন্টিলেশনসহ বিভিন্ন ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র আসতে থাকে। করোনা ব্যবস্থাপনায় জালিয়াতি ও কেলেঙ্কারি যেন পিছু ছাড়ছেই না স্বাস্থ্য বিভাগের। একের পর এক জালিয়াতির কথা বেরিয়ে আসছে সংবাদমাধ্যমে। বড় রকমের জালিয়াতির অভিযোগে সংবাদ শিরোনাম হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। তিনিও মোহাম্মদ সাহেদের মতোই আওয়ামী ঘরানার পরিচিত মুখ। ডাক্তারদের মাঝে সরবরাহ করা কেএন-৯৫ নিয়ে জালিয়াতিতে এই আওয়ামী লীগ নেতা খবরের শিরোনাম হন। এপ্রিলের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় ঔষধাগার চিকিৎসকদের জন্য ৫০ হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায় মেসার্স এলান কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম। কিন্তু তিনি চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য অত্যাবশ্যকীয় যে মাস্ক সরবরাহ করেন, তা ছিল একেবারেই নকল। যার ফলে শত শত চিকিৎসক কোভিডে আক্রান্ত হন। মৃত্যু বরণ করেন প্রায় ৭০ জনের মতো ডাক্তার। এতবড় একটি ঘটনা পুরো চিকিৎসক সমাজকে কাঁপিয়ে দেয়। অথচ অনেকটা মানসম্মত মাস্ক সরবরাহ করার পরও জেএমআই গ্রুপের এমডিকে গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেয়া হয়। এছাড়া বছরজুড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি পদে নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি ছিল আলোচিত। সরকার ঘোষিত ১২শ’ মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ ২৮১৭টি পদে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় হয় চরম দুর্নীতি। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়ার জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স, অভিজ্ঞতাসহ অন্যান্য বিষয় শিথিল হয়।
বেকারত্বে ছেয়ে গেছে দেশ : সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রচুর তোড়জোড় লক্ষ করা গেলেও কর্মসংস্থান উপযোগী উন্নয়ন না হওয়ায় বেকারত্বে ছেয়ে গেছে দেশ। তারওপর করোনার ভয়াবহতা বিষয়টি চরম আকার ধারণ করেছে। চাকরি প্রত্যাশী বেকাররা বলছেন, করোনার কারণে নতুন বিজ্ঞপ্তি অনেক কম। এতে করে চাকরির অপেক্ষায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে প্রত্যাশা। আবার কারো কারো চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও শেষ হতে চলছে। একদিকে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি একেবারেই নেই। চাকরি প্রত্যাশী বেকাররা কী করবেন, তার কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না।
আইএলও বলছে, বাংলাদেশের প্রায় চার ভাগের মধ্যে এক ভাগেরও বেশি অর্থাৎ ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ যুবক কোনো কাজে, শিক্ষায় ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত নন। জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স কাজ করার মতো এবং এদের মধ্যে শতকরা ৩ দশমিক ২৪ কোটি শ্রমিকের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। সরকার যখন এই ব্যাপকসংখ্যক জনশক্তিকে কোনো কাজ দিতে পারবে না, তখন এই শক্তি পরিণত হবে আপদে। বেকারত্ব, অভাব আর দারিদ্র্য তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করবে। যুবকরা কাজ করতে চায়, আয় করতে চায়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু কোথাও যেন আশার বাণী নেই যুবকদের জন্য। সার্বিক বিবেচনায় পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার দিকেই যাচ্ছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার ২৩ লাখ ৭৭ হাজার এবং অশিক্ষিত বেকার তিন লাখ। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত, যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। উচ্চশিক্ষা পর্বের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করা বেকারের সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার। গত বছরের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৪টি অধিভুক্ত/অঙ্গীভূত কলেজের শিক্ষার্থী ব্যতীত) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সংখ্যাই সাত লাখ ১৪৮। প্রতি বছরই এ সংখ্যায় নতুন করে যোগ হচ্ছে।
সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস-এর গবেষণা বলছে, এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ পুরোপুরি বেকার। গতবছর ডিসেম্বরে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। সংস্থার মতে, এর বড় অংশই চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ পায় না। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা- দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে এমনিতেই প্রায় ২৫ শতাংশই বেকার। করোনার কারণেই তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে।
চাকরির বাজার নিয়ে সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। গত বছরের মার্চের তুলনায় এ বছরের মার্চে চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৩৫ শতাংশ। এপ্রিলে এই হার ৮৭ শতাংশ। গত এপ্রিলে পোশাক ও শিক্ষা খাতে ৯৫, উৎপাদনমুখী শিল্পে ৯২ ও স্বাস্থ্য খাতে ৮১ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৯ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তা এতে দেখা যায়, ২০১৩ সালে সরকারি চাকরিতে মোট পদের ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ শূন্য ছিল। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ২১ দশমিক ২৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ১৮ লাখ ২১ হাজার ২৮৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬ জন কর্মরত আছেন। তার মানে দেখা যাচ্ছে শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮। এছাড়া চাকরির আশায় যারা এতদিন অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের একটি বছর কে ফিরিয়ে à¦¦à§‡à¦¬à§‡Ñ à¦¤à¦¾à¦° সদুত্তর নেই কারোর কাছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বলছে, স্বীকৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেকার ছিল প্রায় ২৭ লাখ। এদের প্রায় ৯০ ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত, বাকিরা শিক্ষাবঞ্চিত। কর্মসংস্থান বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩০ লাখে উঠতে পারে। বেকারত্বের হারের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বেকারত্বের হার প্রকৃত পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ হবার সম্ভাবনাই বেশি। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, করোনা সঙ্কটের ছয় মাসে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ লাখ বা ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ-তরুণী বেকার হয়েছেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ১১ দশমিক ৯ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদগণ বলছেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক জোর দিলেও লাখ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান উপযোগী অর্থনীতি তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এছাড়া সরকারি পর্যায়ে অতিমাত্রায় দুর্নীতি দেশকে অস্থির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে অনেকেই আশা করছেন, ২০২১ সাল হয়তো নিয়ে আসবে অনেক সুখবর আর অনেক সম্ভাবনা। মানুষের মনে জাগাবে নতুন করে বাঁচার আশা।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।