সংবাদ শিরোনামঃ

অন্তিম যাত্রায় রাজনীতি ** বিদেশ নামক সোনার হরিণের পেছনে অন্ধের মতো ছুটবেন না -প্রধানমন্ত্রী ** আমাকে আর কত হয়রানি করা হবে -আদালতে আল্লামা সাঈদী ** আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব বাড়ছে ** শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সময়োপযোগী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে : আ ন ম শামসুল ইসলাম ** দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন -ডা. শফিকুর রহমান ** রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে কার্যকর পথ পাচ্ছে না বাংলাদেশ? ** ভোটাধিকার হলো গণতন্ত্রের আত্মা ** মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর--নূরুল ইসলাম বুলবুল ** মানুষের দুর্দশা লাঘবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে----সেলিম উদ্দিন ** ক্ষমাপ্রার্থীকে আল্লাহ পছন্দ করেন ** নিরাপদ শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হতে হবে **

রেজি: ডিএ ৫১৭।। ৫৯ বর্ষ : ৩৯তম সংখ্যা ॥ ঢাকা শুক্রবার ২৪ পৌষ ১৪২৭ ॥ ২৩ জমা .আউয়াল ১৪৪২ : Friday 8 January 2021

স্টাফ রিপোর্টার : টালমাটাল চলছে পেঁয়াজের দামে। দেশের চাষিরা যখন জমি থেকে পেঁয়াজ তুলছেন, তখন ভারত পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পেঁয়াজের বাজারে নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে টেনশনে পড়েছেন দেশি চাষিরা। কারণ তারা অধিক খরচ করেছেন উৎপাদনে, এখন ফল তুলে খরচ পুষিয়ে লাভে যাওয়ার সময়। এই সময় ভারতীয় পেঁয়াজ এলে তারা কাক্সিক্ষত দাম পাবেন না। অন্যদিকে আমদানিকারকরাও রয়েছেন লোকসানের শঙ্কায়। কারণ ভারত রফতানি বন্ধ করে রাখার কারণে বেশি দামে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। এখন ভারতের পেঁয়াজ আসায় তাদের বেশি দামে কেনা পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘ভারত নিজেদের স্বার্থে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ও চালু করে।’ বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ভোক্তা এবং উৎপাদকের স্বার্থ রক্ষায় নেওয়া হচ্ছে পদক্ষেপ।
লোকসানের টেনশনে আমদানিকারকরা : কয়েকদিন আগেও খাতুনগঞ্জে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে চীন, তুরস্ক, ইউক্রেন, নেদারল্যান্ডস ও মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ। কিন্তু বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশের খবর চাউর হতেই এক ধাক্কায় ওই সব পেঁয়াজের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনই যদি ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা না হয়, তাহলে সঙ্কটের সময় পাশে থাকা আমদানিকারকরা এবার পথে বসবেন। ৪ জানুয়ারি দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি আড়তেই চীন, তুরস্ক, ইউক্রেন, নেদারল্যান্ডস ও মিশর থেকে আমদানি করা হাজার হাজার বস্তা পেঁয়াজের মজুদ। ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করেছে এ খবর পেয়ে অধিকাংশ আড়তদার লোকসান হলেও অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পেঁয়াজের দাম আরো à¦•à¦®à¦¬à§‡Ñ à¦ আশায় খুচরা বিক্রেতারা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
ব্যবসায়ীরা জানান, ৪ জানুয়ারি সোমবার খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। বিপরীতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ২০ এবং নেদারল্যান্ডস ও চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেজি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন চীন, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস ও মিশর থেকে পেঁয়াজের আমদানিকারকরা। মূলত মাসখানেক আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় এসব দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে এর দাম কমে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু ৩ জানুয়ারি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির খবর খাতুনগঞ্জে পৌঁছাতেই চীন, তুরস্ক, ইউক্রেন, নেদারল্যান্ডস ও মিশরের পেঁয়াজের দাম কমে ঠেকেছে ১৪ টাকায়; দেশি পেঁয়াজের দাম নেমে এসেছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জে মেসার্স গোলাম ব্রাদার্সের ম্যানেজার মোহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, বাজারে খুব বেশি ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে তা কিন্তু নয়; তবে এ খবরটি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এখন অধিকাংশ পাইকারি বিক্রেতা দাম আরো পড়ে যাওয়ার ভয়ে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। খুচরা বিক্রেতারাও আরও কমে পেঁয়াজ পাবেন সে আশায় বাজারমুখী হচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে অধিকাংশ বিদেশি পেঁয়াজ আড়তেই পচে যাবে।
তিনি বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসার খবরে সাধারণ জনগণ ভাবছে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে; আসলেও তাই হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভয়ে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিচ্ছেন। খাতুনগঞ্জের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা তো জলে ভেসেছি, কৃষকরাও মরে যাবে; যারা দেশি পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায় তুরস্ক, ইউক্রেন ও নেদারল্যান্ডস থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে এখন ১৪ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছি। আমদানিকারকরা লাখে হয়তো ৩০ হাজার টাকা পাবেন, বাকি ৭০ হাজার থাকবে না। আড়তদাররা জানান, গত তিনদিনে মাত্র ২০ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করেছে; যা সঙ্গে সঙ্গে খুচরা বাজারে চলে গেছে। কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশের খবর পুরো বাজারকে অস্থির করে তুলেছে।
প্রায় তিন মাস ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকার পর গত ২ জানুয়ারি শনিবার পুনরায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এ নিয়ে গত দুদিনে ৩১টি ট্রাকে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে। মিতালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা মিয়া বলেন, এই মুহূর্তে যদি ভারতীয় পেঁয়াজ না আসত, তাহলে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন, তারা কিছুটা লাভে থাকত। এখন তারা যা বিক্রি করছেন সব লোকসান করে বিক্রি করছেন। ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় পেঁয়াজ কিনে এখন ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন। দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ টাকার ওপর; এখন সেগুলোর দাম হয়েছে ৩৫ টাকা।
লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা
দেশের ভরা মৌসুমে আসছে ভারতের পেঁয়াজ। এ অবস্থায় লোকসানের শঙ্কায় মাঠ পর্যায়ের চাষিরা। অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আনায় লাভবান হবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আবারও শুল্কারোপের কথা ভাবছে সরকার। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মৌসুম নয়, তাই আবাদ হয় না পেঁয়াজ। ফলে নির্ভরতা আমদানিতে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ঘাটতি ৮ লাখ টন, যা পূরণ হয় ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্কসহ নানা দেশের পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন ভারত বন্ধ করে পেঁয়াজের রফতানি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ৪ বছরের অমৌসুমে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২৫ টাকা। ২০১৮ সালে ১০০ টাকা, ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা এবং গেল বছর পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ১১০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু উল্টো চিত্র দেখা দেয় ভরা মৌসুমে। এসময় কৃষকরা পেঁয়াজের দাম পেয়েছে ১৮ থেকে ৪১ টাকা পর্যন্ত।
রফতানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ভারত। গত ২৮ ডিসেম্বর সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে। এই আদেশ ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও মজুদে ঘাটতির কারণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানিতে ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ভারত। ফলে বাংলাদেশের বাজারে হুহু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম, এক পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকাতেও বিক্রি হয়। এই পরিস্থিতিতে গতবছরের মতো মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রঙের ও স্বাদের পেঁয়াজ আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানিকারক শংকর চন্দ্র ঘোষ বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি খুলে দিচ্ছে। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে দেশের বাজারে ভারতের পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। কারণ ভারতে এবার পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হয়েছে।
‘ভারত নিজেদের স্বার্থে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ও চালু করে’
গত ৩ জানুয়ারি সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত নিজেদের স্বার্থে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ও চালু করে।’ মন্ত্রী বলেন, ভারত তার স্বার্থের কথা ভেবে কখনও কখনও পেঁয়াজ ছাড় করে, আবারো হুট করে বন্ধও করে দেয়। এখন আবার তারা রফতানি শুরু করেছে। আমরা দেশের কৃষকদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করব। ভোক্তারা যাতে কোনো সংকটে না পড়ে সেটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। এজন্য উৎপাদকদের লোকসানে ফেলা যাবে না। তাদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত রফতানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজ সংকটে পড়ে দেশ। তখন অন্য দেশ থেকে আমদানি সহজ করতে পেঁয়াজের ওপর ধার্য ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে সরকার। তবে সেটি আবারো আরোপ করা হবে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।