চট্টগ্রাম নগরীতে ক্ষমতাসীনদের ফুটপাথ-বাণিজ্য

চট্টগ্রাম সংবাদাদাতা : চট্টগ্রামের মহানগরীর ফুটপাথগুলো আবারও হকারের দখলে চলে যাচ্ছে। দীর্ঘ একমাসের পরিচ্ছন্ন হকারমুক্ত ফুটপাথ ধীরে ধীরে আবার নগরবাসীর পথ-চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠছে। এই দখল প্রক্রিয়ায় আবারও সক্রিয় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা ক্যাডার-বাহিনী। কে-কার আগে ফুটপাত দখল করবে  তা নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা।

সূত্রে প্রকাশ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট চট্টগ্রাম আসরের খেলা শেষ হওয়ার পর পরই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ফুটপাত দখলে নেমেছে উচ্ছেদ হওয়া ফুটপাথ ব্যবসায়ীরা। এর নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করছেন, নগরের ক্ষমতসীন দলের নেতা-কর্মীরা।

এছাড়া প্রতিদিন স্থানীয় পুলিশ  প্রশাসনকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদার বিনিময়ে মৌখিক চুক্তিনামার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) থেকে পতেঙ্গা সি-বিচ পর্যন্ত রাস্তার  দু’পাশ ছেয়ে গেছে ভাসমান দোকানে। ফুটপাথ দখলের মহোৎসবের কারণে নগরীর ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট রোড দিন দিন সঙ্কোচিত হয়ে আসছে। গত মার্চ মাসে নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় জোড়া খুনের চাঁদাবাজি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) প্রকৌশলী বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, পথচারীদের যাতায়াতে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হওয়ার জন্য  মাঝে মাঝেই অবৈধ ভাসমান দোকানিদের উচ্ছেদ করা হয়। তিনি আরো বলেন, নানান কারণে সব সময় তা সম্ভব হয় না।

ফুটপাথ দখলের চেষ্টায় অতি সম্প্রতি নগরীর আগ্রাবাদে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মাছ ব্যবসায়ী রফিকসহ আহত হয়েছেন ৫ জন। নগরের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে- জিইসি মোড়, কাজীর দেউরী, নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লাহ, দেওয়ানবাজার, চকবাজার, ২নং গেইট, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, হালিশহর ও রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) থেকে পতেঙ্গা  সি-বিচ পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে  ইতোমধ্যে আবারও বসানো হয়েছে ভাসমান দোকান। পুলিশ ফুটপাথ দখলদারিত্ব নিয়ে মানবিকতার কথা বললেও নেপথ্যে চলে অবৈধ লেনদেন।

সূত্রে জানা যায়, নগরীতে এক শ্রেণীর উঠতি মাস্তান, রাজৈনিতক নেতা ও কর্মী এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় চলে ফুটপাথ দখল বাণিজ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিইপিজেড থেকে নৌ-বাহিনী পর্যন্ত ফুটপাথের ভাসমান দোকানগুলো  নিয়ন্ত্রণ করে বন্দর থানা হকার্স লীগ। তাদের বিরুদ্ধে  মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে এসব ভাসমান দোকান অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

অস্থায়ী দোকান বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার হকার্স লীগের একাধিক কর্মী বলেন, আইনগত বৈধতা না থাকলেও  গরিব হকারদের দোকান দিয়ে সহযোগিতা করা কোনো অপরাধ নয়।

নগরীর লালখান বাজার, ওয়াসা, জিইসি, খুলশী,  ২ নম্বর গেইট, বায়েজিদ বোস্তামী, অক্সিজেন রোড এলাকার ভাসমান দোকান নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা, এমইএস কলেজের ছাত্রলীগ নেতা ও পলিটেকনিক ছাত্রলীগের কর্মীরা।

এদিকে নগরীর আগ্রাবাদ, এক্সেস রোড, ছোটপোল, বড়পোল এলাকার ভাসমান দোকান নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করে নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক রনি মীর্জা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ভাসমান দোকান থেকে চাঁদাবাজির ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কোনো কর্মী জড়িত নয়। যারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করে তারা কেউ ছাত্রলীগের কর্মী নন।

জানা যায়, ২ এপ্রিল আগ্রাবাদের লাকী প্লাজা এলাকায় ভাসমান দোকান বসানো নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুমের অনুসারীদের সাথে হাজিপাড়ার যুবদল নেতা ইকবাল অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভাসমান দোকান ব্যবসায়ী জানান, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও কর্মীদের নিয়মিত চাঁদা দেয়ার বিনিময়ে তারা এসব ভাসমান দোকান পরিচালনা করেন।

জানা যায়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট চট্টগ্রামের খেলা শেষ হওয়ার পর পরই নতুন করে ভাসমান দোকান বসানো হচ্ছে ফুটপাথে। আর এ জন্য প্রকারভেদে তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

সিএমপি’র ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মতিউল ইসলাম জানান, ফুটপাথে বসা অবৈধ দোকান মাঝে মাঝে উচ্ছেদ করা হয়। মানবিক বিবেচনায় অনেক সময় কঠিন হওয়া যায় না বলেও জানান তিনি। অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করে জনসাধারণের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার জোর দাবি সচেতন মহলের।