সুবর্ণচরে তরমুজ চাষিরা হতাশ

সুবর্ণচরে তরমুজ চাষিরা হতাশ

সুবর্ণচর (নোয়াখালী) সংবাদদাতা : বাংলাদেশের রবিশস্য প্রধান উপজেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা। যেই উপজেলার কৃষকরা আমন মওসুমের লোকসানকে পুষিয়ে নেয়ার জন্য রবি মওসুমে বিভিন্ন ধরনের শস্যের চাষ করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তরমুজ। কৃষকরা বিগত বছরে তরমুজের উপযুক্ত দাম পাওয়ায় এবছর গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন।  তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় হতাশ কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সময়মত বীজ, সার, ও ওষুধ জমিতে ঠিকমত প্রয়োগ করায় এই বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষকদের অভিমত। আশাতীত ফলন পেয়ে উপজেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটলেও দাম কম হওয়ায় কৃষকেরা হতাশাগ্রস্ত। আমন মওসুমের পর পরেই পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে কৃষকেরা তরমুজ চাষের জন্য জমি তৈরি শুরু করে।

উপজেলার কৃষকেরা সাধারণত ৬ জাতের তরমুজ চাষ করে। গ্লোরি, জাম্বু গ্লোরি, প্যানবাউ, ব্রাক, জাম্বো, বাংলালিং অন্যতম। এবছর সুবর্ণচরে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করে কৃষকেরা। মাটি উর্বর হওয়ায় ফলন খুব ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি  অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার তরমুজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬০ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে  উৎপাদন হয়েছে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন যা অনন্য রেকর্ড। গত বছর একই সময়ে  সুবর্ণচরে ২২শ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছিল। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা গত বছরের তুলনায় চাষ বাড়িয়ে দিয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের অভিমত গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। সরেজমিন কথা হয় চরজব্বর গ্রামের তরমুজ চাষি মো. নুরুল আমিন, চরজুবিলী গ্রামের মজিবুর রহমান, বেচু মিয়া, আলমগীর কবির, গিয়াস উদ্দিন জানান তরমুজ লাভজনক ফসল, এই ফসল উৎপাদন করতে কায়িক পরিশ্রম করতে হয়। ঠিকমত পানি সেচের ব্যবস্থা সঠিক সময়ে কীট নাশক প্রয়োগ, সময় মতো সার প্রয়োগ করা ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ পেলে আরো ভালো ফলন ফলানো সম্ভব। কৃষক নূরুল আমিন চলতি মওসুমে নিজ উদ্দোগে ৩ একর  জমিতে তরমুজের চাষ করে। এতে তার খরচ পড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রির কথা এই প্রতিনিধিকে জানান। শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ তরমুজ বিক্রি করলে হয়তো কিছুটা লাভ হবে। এখন পর্যন্ত লোকসানে আছি। ক্রেতা আসবে তাই জমিতে তরমুজের স্তূপ দিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছি। ক্রেতা কম থাকায় লোকসানের কথাও জানান। নূরুল আমিনের মতো অনেক কৃষক তরমুজ ক্ষেত নিয়ে বসে আছে ক্রেতার আশায়। ক্রেতা আসবে চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার, সাতকানিয়া, হালিশহর, হাট হাজারী, চকোরিয়া, ফেনী, কুমিল্লা, লাকসাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।

তরমুজ ব্যবসায়ীগণ জানান সুবর্ণচর উপজেলার তরমুজ খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু তাই বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ক্রেতা আসলেও একই সময়ে ভোলার তরমুজ বের হওয়াতে তরমুজের দাম কম। আর প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক তরমুজ সুবর্ণচর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি করা হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও এলাকার খেটে খাওয়া ৫ সহস্রাধিক লোক ৫শ টাকা বেতনে প্রতিদিন তরমুজ কাটা ও ট্রাকে কাজ করে পরিবার পরিজন চালাচ্ছে।  

উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় ফলন ভালো হওয়াই কৃষকদের মাঝে খুশির শেষ নাই। কৃষকদের মতে সরকার যদি স্বল্পমুল্যে বীজ, সার,কীটনাশক ও বিনা সুদে কৃষি ঋণের এবং সেচের  ব্যবস্থা করে তাহলে আরো অধিক ফসল উৎপাদন করতে কৃষকগণ উৎসাহ পাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আমিরুল ইসলাম জানান, চলতি তরমুজ মওসুমে যে ফলন হয়েছে তা উৎপাদনের অনন্য রেকর্ড।

তিনি আরো বলেন, কৃষকদের দাবি অনুযায়ী সরকার যদি এই উপজেলাকে সেচ প্রকল্পের আওতায় আনেন এবং স্বল্প মূল্যে সার, ওষুধ ও পর্যাপ্ত কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে আরো অধিক রবিশস্য চাষে কৃষকগণ এগিয়ে আসবে।