‘পলাতক’ রানা সংসদে, কেউ ‘দেখেনি’

স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক। অথচ সেই পুলিশের সামনে দিয়েই গত ২০ জুন সোমবার জাতীয় সংসদে গিয়ে এমপিদের হাজিরা খাতায় সই করলেন তিনি। অধিবেশনে যোগ না দিয়ে সবার সামনে দিয়ে চলেও গেলেন। তিনি টাঙ্গাইল-৩ আসনের এমপি আমানুর রহমান।

একই জেলার আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি তিনি।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ টাঙ্গাইলে তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন।

প্রথমে থানার পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত শুরু করে। ২০১৪ সালের আগস্টে এই মামলার আসামি আনিছুল ইসলাম ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ আলী গ্রেফতার হন। আদালতে তাঁদের স্বীকারোক্তিতে এমপি আমানুর ও তার তিন ভাইয়ের এ হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর থেকে এমপিও তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে আছেন। এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি এমপি আমানুর ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল আদালত মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক আমানুরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ১৭ মে এই ১০ জনের বিরুদ্ধে হুলিয়া ও মালামাল জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত।

২০ মে পুলিশ সাংসদ ও তার তিন ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মালামাল জব্দ করে, তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য  কিছু ছিল না। সর্বশেষ ১৬ জুন আদালত আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। এমপির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির বিষয়টি চিঠি দিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে জানানো হয়।

সংসদ সদস্য আমানুর রহমান সর্বশেষ গত বছরের ৫ জুলাই সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। টানা ৭৩ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার পর সোমবার তিনি সংসদে হাজিরা দেন।

প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। সংসদের কার্যপ্রণালিবিধি অনুযায়ী, সংসদ এলাকায় কোনো এমপিকে গ্রেফতার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে।

সংসদের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও সংসদ সদস্য লবির গার্ডদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমানুর রহমান গত ২০ জুন সোমবার বেলা ১১টার পর নিজস্ব গাড়িতে চেপে সংসদে আসেন। এরপর তিনি অধিবেশন কক্ষের ৪ নম্বর লবিতে রাখা হাজিরা বইয়ে সই করেন। সই শেষে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে তিনি লবি ছেড়ে চলে যান।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদে তো প্রতিদিন শত শত মানুষ আসা-যাওয়া করে। সম্ভবত পুলিশ আমানুর রহমানকে চিনতে পারেনি। চিনতে পারলে তারা নিশ্চয় বিষয়টি স্পিকারকে জানাত।’

পলাতক থেকেও এই সংসদ সদস্য গত এপ্রিলে নিজস্ব প্যাডে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র জমা দেন।

সোমবার সংসদ সচিবালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মামলা পুনঃ তদন্তের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ কোনো কর্মকর্তার কাছে তদবির করার জন্য আমানুর রহমান সংসদে এসেছেন। তবে তার আগে তিনি যে গ্রেফতার হবেন না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমানুর রহমান সংসদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তারা বিষয়টি সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানান। কিন্তু কর্মকর্তারা গ্রেফতারের ব্যাপারে কোনো নির্দেশ দেননি।

তবে সংসদের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস) কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম ও ডেপুটি সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস (অপারেশন) সেলিম খান এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘আমানুর রহমান সংসদে এসে হাজিরা দেওয়ার বিষয়টি মঙ্গলবার শুনলাম। তবে সংসদে এলেও তিনি অধিবেশনে যোগ দেননি। দিলে আমার চোখে পড়ত।’