সংবাদ শিরোনামঃ

ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নয়া মোড় ** করোনা মোকাবিলায় সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে : প্রধানমন্ত্রী ** জামায়াতের সাবেক আমীর মকবুল আহমাদের ইন্তেকাল ** ফেনীতে মকবুল আহমাদের দাফন সম্পন্ন ** কেমন আছেন খালেদা জিয়া? ** তাকওয়া অর্জন, গুনাহ মাফ ও কুরআন নাজিলের মাস রমাদান ** লকডাউনকে কেন্দ্র করে ক্র্যাকডাউনে নেমেছে সরকার : মির্জা ফখরুল ** মিয়ানমারে স্বাধীনতাকামী ও অভ্যুত্থানবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সমঝোতা ** রাজনীতি নির্বাচন সবই নির্বাসনে ** মাহে রমজান ও তাকওয়া ** সৎ কর্মশীলদের কাজ আল্লাহ বিনষ্ট করেন না ** মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করুন **

রেজি: ডিএ ৫১৭।। ৬০ বর্ষ : ৩য় সংখ্যা ॥ ঢাকা শুক্রবার ৩ বৈশাখ ১৪২৮ ॥ ৩ রমজান ১৪৪২ : Friday 16 April 2021

জান্তাবিরোধী লড়াই শুরু

॥ ফারাহ মাসুম॥
মিয়ানমারে জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এক সমন্বিত রূপ নিতে যাচ্ছে। দেশটির নির্বাচন বাতিল করে সেনা অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে যে সর্বব্যাপী আন্দোলন, তা দমন করতে জান্তার রক্তক্ষয়ী কৌশলের বিপরীতে এই কৌশলের কথা জানা যাচ্ছে। এটি সফল করার জন্য মিয়ানমারের ওপর সর্বাত্মকভাবে আন্তর্জাতিক অবরোধ ও বয়কট চাপানোর কথাও জানা গেছে। চীন এবং রাশিয়ার কারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে এই বয়কট কার্যকর করা না গেলেও ন্যাটো ও অন্যান্য পাশ্চাত্য জোটের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার ভাবনার কথা জানা যাচ্ছে।
মিয়ানমারের সামরিক শাসনবিরোধী নজিরবিহীন চলমান আন্দোলনে এই পর্যন্ত ৭০০ জনের বেশি লোক মারা গেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ হাজারের বেশি রাজনৈতিক কর্মীকে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমারের প্রায় সব রাজ্যে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে একটি বার্তা দেয়া হচ্ছে যে, নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে জান্তা সরকারকে ব্যারাকে চলে যেতে হবে। তা না হলে মিয়ানমারের পরিণতি হবে একদিকে উত্তর কোরিয়ার মতো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী দলগুলোর হাতে বিভিন্ন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকবে জান্তা সরকার।
১০টি জাতিগোষ্ঠী বিদ্রোহী দলের নেতাদের এর মধ্যে ক্যুবিরোধী অভিযানে তাদের সহায়তার কথা জানিয়েছেন ব্যাংককভিত্তিক জেইন’স গ্রুপের একজন। নানা সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূত্র থেকে সহায়তা সংগ্রহ করে বর্মী বাহিনীর ওপর তাদের অভিযান জোরদার করেছে আর নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা বিস্তৃত করছে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ও জোরদার করেছে তারা। জান্তাবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতাদের সাথে তারা এই মর্মে বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে যে, আন্দোলন সফল হলে মিয়ানমারকে একটি ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে এবং রাজ্যগুলো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে।
মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই ৩০ বছরের কম বয়সী। তাদের অনেকেই গত এক দশকে দেশটির ভঙ্গুর ও অসম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ থেকে উপকৃত হয়েছেন। তারা জানে যে, গত এক দশকে দেশটিতে অপ্রস্ফুটিত গণতন্ত্রের ছোঁয়াতেও সামাজিক উন্নয়ন ও মৌলিক স্বাধীনতার যে সুফল তারা পেয়েছে, জান্তা সরকারের হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ায় তা শেষ হয়ে যেতে পারে। তাদের ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। শুধু সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যক্তিস্বাধীনতাই নয়, এই তরুণদের জীবনও হুমকির মুখে পড়েছে।
গত ২৭ মার্চ জেনারেল মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে দেওয়া ভাষণে দাবি করেছেন, সেনাবাহিনী সাধারণ জনগণকে সুরক্ষা দেবে এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। কিন্তু আদতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশটিতে রক্তক্ষয়ী দিনের শুরু হয়। ওই দিন মরণাপন্ন সন্তানকে জড়িয়ে ধরে এক অসহায় বাবা বলছিলেন, ‘আজ আমার জীবন ও ভবিষ্যৎ দুই-ই শেষ হয়ে গেল।’ এই বাবার মতো হাজার হাজার তরুণ চোখের সামনে তাঁদের ভবিষ্যৎকে উবে যেতে দেখে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তারা আশাবিহীন জীবনকে স্পর্ধাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
দেশটির সামগ্রিক পিছিয়ে পড়ার লক্ষণ ইতোমধ্যেই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। কোভিড-১৯ ছাড়াও দেশটিকে অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘিরে ধরেছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ দেশটির প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ সংকুচিত হবে। এর আগে ২০২০ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৭ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে সেই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ।
গত বছরের শেষে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির গৃহস্থালী নাজুকতাবিষয়ক জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে, মিয়ানমারে দরিদ্র পরিবারগুলোকে দারিদ্র্যসীমার আরও নিচে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা পরিবারগুলো নিচের দিকে পতিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এমনকি যেসব পরিবার আগে থেকেই সচ্ছল, সেসব পরিবারও ব্যবসা গোটাতে বাধ্য হয়ে বা চাকরি হারিয়ে বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়েছে।
এই অবস্থায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মিয়ানমারের সেনা সরকারের সামনে একটিই পথ খোলা আছে। সেটি হলো তাদের যত দ্রুত সম্ভব গত নির্বাচনে জয়ী সু চির দল এনএলডির হাতে শাসনক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে মিয়ানমারের তরুণদের সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ এই প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে শিখে গেছে।
অনলাইন রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক খবরে বলা হয়েছে, গত ৯ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত রাতভর সামরিক জান্তার নির্দেশ মানতে গিয়ে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা কমপক্ষে ৬০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। অভ্যুত্থানবিরোধী জনতার সৃষ্টি করা ব্যারিকেড পরিষ্কার করতে গিয়ে তারা নিরস্ত্র জনতার ওপর রাইফেল গ্রেনেড ও মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়েছে। এতে মিয়ানমারের মধ্যঞ্চলীয় শহর বাগোয় রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। সেখানে প্যাগোডার ভেতর লাশের স্তূপ দেখা গেছে। স্কুল চত্বরেও লাশের সারি সৃষ্টি হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী বাগো শহরের ওথার থিরি ওয়ার্ডের রাস্তায় বৃষ্টির মতো বুলেট ও গ্রেনেড ছুড়েছে। এই শহরে বসবাস করেন আড়াই লাখ মানুষ। তারা শহরে অভ্যুত্থানবিরোধীরা রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। সেই ব্যারিকেড ভেঙে জনতার ওপর গুলি চালায় বর্মী সেনা- তাতমাদাও।
ওই শহরে সারাদিনই নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গুলি ছুড়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, স্থানীয় সময় রাত ৮টা নাগাদ তারা মাত্র তিনটি মৃতদেহ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছেন। জেইয়মুনি প্যাগোডা এবং পার্শ্ববর্তী স্কুলে মৃতদেহের স্তূপ তৈরি করেছে সেনাবাহিনী। ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর সামরিক জান্তা প্রতিষ্ঠা করেছে স্টেট এডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল। তারা বাগো শহরে এই রক্তপাত নিয়ে কোনো কথা বলেনি।
কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালিত মিয়ানমার রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন (এমআরটিভি) রিপোর্ট করেছে যে, সামরিক জান্তা শুক্রবার ১৯ জনের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে মৃত্যুদ- দিয়েছে। সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন ও অন্য একজন ব্যক্তিকে প্রহার ও নির্যাতন করার অভিযোগে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে। গত মাসে ইয়াঙ্গুনের উত্তর ওক্কালাপা শহরে ওই প্রহারে বেসামরিক ওই ব্যক্তি মারা যায়। এ ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
থাইল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যাসিসট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স-এর (এএপিপি) হিসাব অনুযায়ী, গত ৯ এপ্রিল শুক্রবার নাগাদ মিয়ানমারে নিহত হয়েছেন ৬১৮ জন। সামরিক জান্তার বন্দিশিবিরে অবস্থান করছেন ২৯৩১ জন। অন্যান্য সূত্র মতে, নিহতের সংখ্যা এর মধ্যে ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
গত ৯ এপ্রিল শুক্রবার মান্দালয়, তানিনথারি, সেগাইং অঞ্চলে এবং কাচিন ও শান রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটির ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র ইয়াঙ্গুনের জনজীবনও একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। সেখানে কোনো বাণিজ্যিক কর্মকা- নেই। অধিবাসীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। সরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে কারখানার শ্রমিক সবাই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকে কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। অনলাইনে যারা কাজ করেন, তাদেরও একই অবস্থা। কারণ সামরিক জান্তা বেশিরভাগ মোবাইল ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই সার্ভিস বন্ধ করে দিচ্ছে বা দিয়েছে।
 à¦«à§à¦¡à¦ªà¦¾à¦¨à§à¦¡à¦¾à¦° সাবেক এক কর্মী বলেছেন, প্রায় দুই মাস ধরে আমরা বেকার। রাস্তা বন্ধ। আমরা বাইরে যেতে পারছি না। ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অনলাইন খাবার অর্ডার পাওয়ার জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন। সামরিক জান্তার নিষ্পেষণের কারণে প্রায় সব কারখানা ও ওয়ার্কশপ বন্ধ। ইয়াঙ্গুনে বসবাসকারী ৬০ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেকই তাদের কাজ হারিয়েছেন। এখন তারা কঠিন দিন পার করছেন।
গত ১৩ এপ্রিল মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনার মিশেল বাছেলেট মিয়ানমারে সামরিক শাসনের দ্বারা দমন ও হত্যাকা- অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাৎক্ষণিক, সিদ্ধান্তমূলক এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বাছেলেট বলেন, “২০১১ সালে সিরিয়ার স্পষ্ট প্রতিধ্বনি দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারে। রাষ্ট্রের বর্বর, অবিরাম দমন অভিযানে সেখানে জনগণ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, তারপর দেশজুড়েই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আমি আশঙ্কা করছি, মিয়ানমারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ক্রমবর্ধমান সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় ও অন্য কোথাও অতীতের মারাত্মক ভুলকে এখানে পুনরাবৃত্তি করতে দেওয়া উচিত নয়। ”
বাছেলেটের বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়। ওয়াশিংটন যে বার বার মিয়ানমার সরকারের নিন্দা করেছে এবং অভ্যুত্থান নেতাদের তাদের ক্ষমতা দখলের পর থেকে টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সঙ্কট সমাধানের জন্য তার এশীয় অংশীদারদের, বিশেষত আসিয়ান (যার মধ্যে মিয়ানমার সদস্য) এর সাথে কাজ করার চেষ্টা করছে- সেটি কতটা ফল দেবে বাছেলেটের কথায় সেই সংশয় স্পষ্ট।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সঙ্কট এবং দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আসিয়ানের অভ্যন্তরীণ অ-হস্তক্ষেপ নীতি হলো অসংখ্য অন্তর্নিহিত দুর্বলতার মধ্যে একটি। আসিয়ানের থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ বেশিরভাগ সদস্যই অগণতান্ত্রিক দেশ। ১৯৯৭ সালে মিয়ানমার এই গ্রুপে যোগ দেওয়ার কয়েক দশক পর আসিয়ান পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা থেকে মিয়ানমারের পূর্ববর্তী সামরিক শাসনব্যবস্থা এবং তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে কূটনীতিক ছাতা হিসেবে কাজ করে।
মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের বিষয়ে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর দাবি করেছে যে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং বেশকিছু রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম অ-হস্তক্ষেপ নীতিতে দৃঢ়ভাবে আটকে রয়েছে।
মিয়ানমারের এক বিশ্লেষক লিখেছেন, এই মুহূর্তে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা এবং সরকার কর্তৃক দেখানো বর্বরতার মাত্রা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিন্দা ও সীমাবদ্ধ নিষেধাজ্ঞার চেয়ে শক্তিশালী কিছু আসার পক্ষে যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে যে,  মিয়ানমারের মানুষকে যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তা ইতোমধ্যে ভয়াবহ হারে বেড়েছে। কেবলমাত্র এর উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিই এই ধরনের হত্যাকারী শাসনের অপরাধকে পুরোপুরি থামিয়ে দেয়ার মতো অর্থবহ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিবেচিত হবে বলে মনে হচ্ছে।
মিয়ানমারের বাস্তবতা হলো সেখানকার অধিকাংশ মানুষ জান্তার শাসন চাইছে না। কিন্তু চীনের সর্বাত্মক সমর্থন সেনা নেতৃত্বকে চরম দমন অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার কৌশলে আস্থাশীল করেছে। রাশিয়া এর পাশে থাকায় জান্তা সরকার তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাবার ব্যাপারে শক্তি অনুভব করছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য শক্তি মিয়ানমারের ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস বলেই মনে হচ্ছে। এই শক্তিটি ভারতকে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সহায়তা করার কথা বলেছে। ভারত সম্ভবত এ ব্যাপারে এখনো নিরাসক্ত প্রতিক্রিয়াই জানাচ্ছে। অধিকন্তু মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে কালানদান রিভার প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে  সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
মিয়ানমার সরকার তাদের হাতে থাকা ভারতীয় বিদ্রোহীদের দিল্লির হাতে তুলে দিচ্ছে। আর দিল্লিও মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের ব্যাপারে সহায়তা করবে বলে মনে হচ্ছে। যদিও ভারতের পক্ষে বর্মী বিদ্রোহীদের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু সাহায্য করার মতো হাতে নেই। তবে এই বিষয় নিয়ে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বেশ অবনতি হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে। অতিসম্প্রতি ভারতের লাক্ষাদ্বীপের অদূরে ভারতের দাবিকৃত সমুদ্রাঞ্চলে দিল্লিকে অবহিত করা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র তার ৭ম নৌবহরের একটি রণতরী পাঠিয়েছে। এটি ভারতের ভেতরে-বাইরে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দিল্লির সহায়তা না পেলে পশ্চিমা শক্তিকে থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হবে। দুই দেশই বর্মী উদ্বাস্তুর ভারে ভারাক্রান্ত। বর্র্মী বিচ্ছিন্নতাকামী দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও সমন্বয় করে জান্তাবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি যে সমর্থন জানিয়েছে, তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আর জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তা তার বক্তব্যে সিরিয়ার সিন্ড্রম শুরু হবার যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, তাতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আরো সহিংস উপায়ে দমন করতে চাইলে মিয়ানমারের বামার জাতিগোষ্ঠীও অস্ত্র হাতে তুলে নিতে পারে। দেশটির ৫৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী হলো বামার। বাকি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় সবাই মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে নানা মাত্রার স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে যুক্ত রয়েছে। অং সান সু চি ক্ষমতায় আসার পর তাদের সাথে শান্তি আলোচনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আসার পর শান্তি আলোচনার আর কোনো ভবিষ্যৎ তাদের সামনে কার্যত নেই। ফলে জান্তাবিরোধী সব শক্তিকে এই বিষয়টি এক হতে সাহায্য করেছে।
আর নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোর একই সাথে যদি সংখ্যাগুরু বামাররাও অস্ত্র¿ হাতে তুলে নেয়, তবে সামরিক জান্তার পক্ষে আগের মতো পরিস্থিতি দমন করে রাখা কঠিন হবে। বিশেষভাবে যদি এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওআইসি দেশগুলোর সম্পৃক্ততা থাকে।
মিয়ানমারের ঘটনা সমঝোতার পরিবর্তে সংঘাতের দিকে এগুলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়ার মতো একটি রক্তক্ষয়ী দেশে পরিণত হতে পারে। যার প্রভাব বাংলাদেশের মতো আশপাশের দেশগুলোয়ও পড়বে অনিবার্যভাবে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।