আমেরিকান প্রতিষ্ঠান এনডিআই-আইআরআই’র প্রতিবেদন
প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতির কারণে নির্বাচনের মান ক্ষুণ্ন হয়েছে
সোনার বাংলা ডেস্ক : প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মান ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত শনিবার (১৬ মার্চ) সংস্থা দুটির যৌথ টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশনের (টিএএম) চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এনডিআই-আইআরআইয়ের যৌথ মিশন বলছে, বর্ধিত রাজনৈতিক মেরুকরণ, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্থান সংকুচিত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবনতি এবং প্রাক-নির্বাচন পরিবেশও নির্বাচনের গুণমানকে হ্রাস করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়কাল, প্রচারের সময়কাল, নির্বাচনের দিনসহ অন্যান্য সময়ে পূর্ববর্তী নির্বাচন চক্রের তুলনায় শারীরিক এবং অনলাইন সহিংসতা কম হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী কার্যকর নির্বাচনী পক্ষগুলোর প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজর দেয়ার কারণে এটি হয়েছে। ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং পরে সম্ভাব্য নির্বাচনী সহিংস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য যৌথ এনডিআই-আইআরআই টিমকে বাংলাদেশে মোতায়েন করা হয়েছিল।
আইআরআই-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মিশন বলেছে, নির্বাচনের সময়কালে বাংলাদেশ সরকার নির্বাচনী নিরাপত্তার জন্য বাজেট বাড়ানো, দীর্ঘসময়ের জন্য বৃহত্তরসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েনসহ নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিষেবা এবং অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝে মাঝে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী বিধিগুলো অসমভাবে প্রয়োগ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরোধীদলের সদস্যদের গ্রেফতার এবং বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সীমিত বা বাধাগ্রস্ত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার মাত্রা সন্তোষজনকভাবে ন্যায়সঙ্গত ছিল না। এছাড়া নির্বাচনের সময়ে রাজনৈতিকভাবে আইন প্রয়োগের ব্যাপক ধারণা তৈরি করেছিল। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘প্রান্তিক গোষ্ঠী; বিশেষ করে নারী এবং হিন্দুরাও নির্বাচনী সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে।’
প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনের সময় তথ্য পরিবেশে ভিন্ন প্রবণতা দেখা গেছে। প্রখ্যাত সংবাদপত্র এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলো ক্ষমতাসীন দল এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে সমালোচনামূলক বক্তব্য ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
নিচে এনডিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি হুবহু দেয়া হলোÑ ‘ওয়াশিংটন ডিসি: ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, চলাকালীন ও পরে সম্ভাব্য নির্বাচনী সহিংসতা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে প্রেরণ করা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম) ১৬ মার্চ রোববার তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি প্রশমন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইআরআই ও এনডিআই’র তুলনামূলক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারের নির্বাহী ও আইন বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্য অংশীজনদের কাছে সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মিশন সদস্যগণ অবগত হয়েছেন যে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়কাল, প্রচারের সময়কাল, নির্বাচনের দিনসহ অন্যান্য সময়ে পূর্ববর্তী নির্বাচন চক্রের তুলনায় শারীরিক এবং অনলাইন সহিংসতা কম হয়েছে। এটি হয়েছে প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী কার্যকর নির্বাচনী প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতির কারণে এবং দেশের নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজর দেয়ায়। তা সত্ত্বেও জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগতমান ক্ষুণ্ন হয়েছে যেসব ঘটনার কারণে তা হলো রাষ্ট্র, শাসকদল এবং বিরোধীদের সহিংসতা, সেইসাথে একটি প্রাক-নির্বাচন পরিবেশ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় শূন্য-সমষ্টির রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন, এবং বাকস্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অবনতি।
এনডিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতে আরও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য একটি মূল্যবান রোডম্যাপ হিসেবে অবদান রাখবে। অহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নাগরিক সমাজসহ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলজুড়ে নেতাদের নির্বাচনী রাজনীতির নিয়ম, অনুশীলন এবং নিয়মগুলোর সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। আইআরআই’র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে টিএএম-এর স্বীকৃত পাঁচজন দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষক নির্বাচন ও সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মী, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সংগঠনসহ যুবক, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনের সাথে বৈঠক করেছেন। এ মিশনটি একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) অনুসরণ করে, যা এনডিআই এবং আইআরআই ৮ থেকে ১১ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত পরিচালনা করেছিল। পিইএএম-এর পর্যবেক্ষণে কারিগরি মূল্যায়নের কাঠামো ও পরিধি সম্পর্কে অবহিত করা হয়, যা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালার ঘোষণাপত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। আইআরআই এবং এনডিআই হলো নির্দলীয়, বেসরকারি সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করে। ইনস্টিটিউটগুলো গত ৩০ বছরে ৫০টিরও বেশি দেশে সম্মিলিতভাবে ২০০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- জনগণের মুখোমুখি আ’লীগ
- তীব্র যানজটে যাত্রীদের নাভিশ্বাস
- ডামি নির্বাচন বাতিলে রাজপথে সক্রিয় বিরোধীদলগুলো
- বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রেইন টিউমার রোগী
- উদ্ধার বিলম্ব হওয়ায় শঙ্কিত তাদের পরিবার
- চীনে বেড়েছে বিয়ের হার
- আল কুরআন হলো সত্য এবং ন্যায়ের মানদণ্ড------মতিউর রহমান আকন্দ
- নামায পড়ায় গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ শিক্ষার্থীকে মারধর
- হলমার্কের তানভীর ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন
- অবিলম্বে মামুনুল হকের মুক্তি চেয়েছে শিবিরসহ ১০ ছাত্রসংগঠন
- ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত