সংবাদ শিরোনামঃ

সমুদ্রে বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছে ** গ্যুন্টার গ্রাসের কবিতা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে ** বিচারের নামে নির্যাতনের প্রতিবাদে জামায়াতের বিক্ষোভ ** সব কালো বিড়াল খুঁজে বের করতে হবে ** ১৭ এপ্রিল : স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার গঠনের দিন ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** উখিয়ায় ৩ শতাধিক চিংড়ি ঘের ভয়াবহ মড়কে আক্রান্ত ** আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে শিবির কর্মী মঞ্জু হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিােভ ** বড়াইগ্রামে রসুনের বিপুল ফলন ** শিবির কর্মী মঞ্জু হত্যার প্রতিবাদে বিােভ **

৭ বৈশাখ ১৪১৯, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩, ২০ এপ্রিল ২০১২

হারুন ইবনে শাহাদাত

‘আসসালামু আলাইকুম। হ্যালো। হারুন ভাই, আমি ফজলুল করিম। ফজলু মাস্টার।  আপনি, বাড়ি আসবেন কবে? বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানটা আপনি আসলেই করবো।’ এ ফোন আর কোনোদিন আসবে না। ভাবতেই আমার দু’চোখের পাতা ভিজে ওঠছে। আমাদের ফজলু ভাই আর কোনোদিন ফোন করবেন না। তিনি চলে গেছেন, না ফেরার দেশে। সবার চিরস্থায়ী ঠিকানায়। ৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিবারের সবার সাথে আমি খাবার টেবিলে বসেছি, হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে ওঠলো। আমার শ্বশুর আবদুল হাকিম সাহেবের ফোন। ছোট্ট একটি কথা বলেই তিনি ফোন রেখে দিলেন,‘ ফজলু মাস্টার হঠাৎ স্টোক করে ইন্তিকাল করেছেন, ইন্না লিল্লাহহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’  মনটা ব্যথায় ভরে ওঠলো। ইচ্ছে করলো ছুটে যেতে তখনই। কিন্তু টাঙ্গাইলের পথ বর্তমান মহাজোট সরকারের কল্যাণে এখন আর ২-৩ ঘণ্টার পথ নয়। মহাখালী গিয়ে বাসে ওঠলে কখন গিয়ে পৌঁছা যাবে, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ছোট্ট সুন্দর গ্রাম পাথালিয়া, তা বলা মুশকিল। পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টায়, সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সদস্যদের নিয়ে একটি কর্মশালায় আমি একজন নির্ধারিত প্রশিক। সবদিক বিবেচনা করে, তাঁর বিদেহী আত্মার রূহের মাগফিরাত কামনা করলাম, ১৩০ কিলোমিটার দূরে এ ঢাকায় বসেই। ইশা’র নামাজের পর জায়নামাজে বসে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে অশ্র“সিক্ত চোখে দু’হাত তুললাম।

শ্বশুর সাহেবের ফোনের কিছুণ পর আবার মোবাইল বেজে ওঠলো। এবার ফোন করেছেন সাভার মডেল কলেজের বাংলার অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল আউয়াল মাসুম। মাসুম আমার স্নেহস্পদ, তিনি একজন কবিও। মাসুম সৈয়দ নামে লেখালেখি করেন। তাঁর লেখা কয়েকটি বই ইতোমধ্যে পাঠকদের নজর কেড়েছে। মাসুমও ফজলু ভাইয়ের ইন্তিকালের সংবাদ জানালেন। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম পাথালিয়া যাবে কি না? তিনিও জানালেন, রাস্তার খারাপ অবস্থা কথা। তাঁকে পরদিন সকালে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়ে শিা সফরে  যেতে হবে। ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাঁর।

ফজলু ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল ১৯৮৬ সালের কোন এক শুভদিনে। তখন আমি এসএসসি পরীার পর সারা গোপালপুর উপজেলা চষে বেড়াচ্ছি, একটি ছাত্র সংগঠনের উপজেলা সভাপতির দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে। ফজলু ভাইয়ের বড় ভাই, জুলহাস ভাই। তিনিও এখন একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক। যখন জুলহাস ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়, তখন তিনি গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র। আর ফজলু ভাই পড়েন সম্ভবত: একাদশ শ্রেণীতে। ভালো ছাত্র হিসেবে বিশেষ করে ইংরেজিতে কথোপকথনের দতার জন্য ছাত্রশিক সবার মাঝে জুলহাস ভাইয়ের বিশেষ কদর ছিল। তিনি তখন ধর্মনিরপেতাবাদী একটি ছাত্র সংঠনের একজন তুখোড় কর্মী। তাঁর কণ্ঠে, মুজিব বেয়ে যাও রে... গান। একটি সাধারণ সভায় আমার বক্তৃতা শুনে নাম লেখালেন, ইসলামী আর্দশের ছাত্র সংগঠনে। কয়েকদিন পর তিনি তাঁর গ্রামে সাধারণ সভার আয়োজন করলেন। ডাক পড়লো আমার। জেলা সভাপতি শহীদুল্লাহ কায়সার সাহেবকে সাথে নিয়ে গেলাম। বিশাল আয়োজন। দণি পাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ সভা। সভার সভাপতি কাদরিয়া বাহিনীর সদস্য দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদ। সাধারণ সভার বক্তৃতা পর্ব শেষ হওয়ার পর আ. হামিদ সাহেব তাঁর প্রাইমারি স্কুল পড়–য়া দুই ছেলে মাসুম, মামুনকে প্রাথমিক সদস্য করে নিতে বলে বললেন, আমি তো আমার নেতা কাদের সিদ্দিকীর সাথেই আছি, তাঁর আর্দশই আমার আর্দশ। কিন্তু আমি চাই স্বাধীন বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করতে আমার দুই সন্তানকে তোমরা ইসলামী আর্দশের আলোকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলো। সেই সাধারণ সভার দিন ফজলু ভাইও নাম লেখালেন ইসলামী ছাত্র সংগঠনে। ছাত্রজীবনে নিষ্ঠা আর আন্তরিকতার সাথে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংগঠনের কাজ করেছেন। গোপালপুর কলেজ থেকে বিএ  ডিগ্রি লাভ করার পর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং বিএড সনদ অর্জন করে আত্মনিয়োগ করেছিলেন কর্মজীবনে। আজীবন সংগ্রামী আর স্পষ্টভাষী ফজলু ভাই আর দশজন যুবকের মতো লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেননি। নিজের প্রচেষ্টায় ঝাওয়াইলে গড়ে তোলেন মুন লাইট কিন্ডার গার্টেন স্কুল এবং বেড়া ডাকুরি গ্রামবাসীর সহযোগিতায়  সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিকের দায়িত্ব পালন করেছেন সুনামের সাথে।

ফজলু ভাই দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুন লাইট বৃত্তি প্রকল্প চালু করেছিলেন। এ বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রতি বছরই ডাক পড়তো আমার। ব্যস্ততার কারণে অনেক বারই তাঁর এ মহৎ আহ্বানে সাড়া দিতে পারিনি। প্রতিটি পদেেপর আগে তিনি আমার সাথে পরামর্শ করেছেন, তেমন কোনো সহযোগিতা তাঁকে করতে পেরেছি, এমনটা আমার মনে হয় না। কিন্তু এ জন্য তাঁর মধ্যে কোনো অনুযোগ অভিযোগ ছিল না। তিনি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারছি, এ কর্মপাগল মহৎ মানুষটি আমি যতটা না বড়, তাঁর হৃদয়ে তা চেয়ে অনেক বড় আসনে আমাকে বসিয়েছিলেন। কিন্তু নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা আর নানামুখী সংকটের চাপে তাঁর দিকে মুখ ফিরে তাকানোর খুব একটা সময় করতে পারিনি। আমরা বুঝতে পারিনি, তিনি এত তাড়াতাড়ি নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন। শুধু আমি কেন তাঁর চারপাশে যারা ছিলেন এবং আছেন তারাও হয় তো বুঝতে পারেননি। ঝাওয়াইল কাচারি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাজারের একটি স্টলে চা খেতে বসেছিলেন। চা শেষ করে চেয়ার ছেড়ে ওঠার সময় তিনি স্টোকে আক্রান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন। ঝাওয়াইলের সাথে জড়িয়ে আছে তাঁর হাজারো স্মৃতি। তাঁর পৈতৃক নিবাস দণি পাথালিয়া আর ঝাওয়াইলের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ঝিনাই নদী। শৈশবে বাবাকে হারিয়ে ফজলু ভাই সংগ্রাম করে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন পানকাতা হাই স্কুলে। তবে স্কুল ও কলেজ জীবনের অবসর সময়গুলোও তাঁর কেটেছে ঝাওয়াইলে। তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এখানেই। উল্লেখ্য, এই ঝাওয়াইল বাজার এক সময় নাটোরের মহারাজার জমিদারির অন্তুর্ভুক্ত ছিল। তার জমিদারির খাজনা আদায়ের জন্য এখানে ছিল কাচারি বাড়ি। হিন্দু জমিদারের আধিপত্যের কারণে এ বাজারে কোনো মসজিদ ছিল না, পাকিস্তান আমলেও এ বাজারে গরু জবেহ করা নিষিদ্ধ ছিল। এ কাচারি বাড়ির কাছে এবং ঝাওয়াইল মোড়ে এখন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। ফজলু ভাইয়ের  সাথে অমুসলিম সম্প্রদায়ের ছাত্রদের সুসম্পর্ক ছিল। অনেক হিন্দু ছাত্ররা তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার থেকে ইসলামী বই পুস্তক নিয়ে পড়তো। তিনি ইসলামী ছাত্র সংগঠনের কোনো নেতা সফরে গেলে তাদের সাথে চা চক্রের ব্যবস্থা করতেন। পরস্পরের প্রতি ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে তাঁর এ পদক্ষেপ ছিল প্রশংসনীয়।

ফজলু ভাই কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি গ্রামের একটি হাই স্কুলের সহকারী প্রধানশিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তাঁর দেশপ্রেম, মহৎ কাজের প্রতি আগ্রহ, সত্যভাষণ নিঃসংকোচে দৃঢ়তার সাথে বলার সাহস ছিল। এ কারণে তিনি তাঁর পরিমণ্ডলে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। হয় তো ইতিহাসে তাঁর  মতো   একজন স্কুল শিক্ষকের নাম লেখা রবে না। কিন্তু তারপরও তিনি বেঁচে থাকবেন অনেক দিন তাঁর প্রতিষ্ঠিত মুন লাইট এবং বেড়া ডাকুরি আদর্শ হাই স্কুলের স্মৃতির আবরণে। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমীন। ইমেইল : যরযধৎঁহ@যড়ঃসধরষ.পড়স

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।