সাহিত্য পাতা কবিতাবলি

গাজী এনামুল হক

এখানে আকাশ

 

এখানে আকাশ ঢেকে গেছে কালো মেঘে

এখানে বাতাসে বারুদের ধোঁয়া ওড়ে,

এখানে জমিন কাঠফাটা রোদে পোড়ে।

এখানে মানুষ নেই বুঝি আর জেগে!

 

বহতা নদীরা ভুলে গেছে গতি পথ

শেওলার ফাঁদে কাঁদে দরিয়ার ঢেউ,

হারালো কি জাতি ছিলো যত হিম্মত!

আজ বাঁচাবার নেই মনে হয় কেউ!

 

আবার আসুক তিতুমীর বীরবেশে

পুবের আকাশ লাল হবে ঠিক ফের

আবার পাখিরা গান গাবে সকালের

আসবে ফাগুন সোনাভরা এই দেশে।

 

আজ জেগে ওঠো হাতে হাত রাখো সবে

আজ মেতে ওঠো বিজয়ের উৎসবে।

 

 

 

রানা হোসেন

ফেরার সময় বলে আসতে পারিনি

(১৯৯৮ কুয়েত সিটির সেই সব স্মৃতির স্মরণে)

দেখেছি আকাশ থেকে বেদনার নীল রঙ চুঁইয়ে পড়েছে

 

পুরনো দেয়ালের পড়েছে ভাঁজ! পিছনে স্বপ্ন কথা ভেবে

ভেবে জীবন কে আরো কান্ত করেছে কিছু অদৃশ্য স্বপ্ন!

কখনো রাতের আকাশ দেখে

ভেসে উঠতে দেখেছি আমার প্রিয় সবুজ ভূমির বাংলাদেশ।

 

এই অভিজাত কুয়েতের আল জাহারার

রেস্টুরেন্টের পোড়া গোস্ত আর তরল পানি খেতে খেতে

মনে পড়ে আমার জননীর কথা মৃত্তিকার কথা, রঙিন প্রজাপতি

আর কাশবনে সাদা ফুলের কথা।

 

কাঁচের আয়নায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে নিজের মুখ

কোথায় শান্তি, কোথাও ভালোবাসা, কোথায় সুখ?

নিজের কাছে নিজে দাঁড়িয়ে বলি

বিশ্বাস মরে গেলে মানুষ ডুবে যায়

ভেসে যায়, ডুবে যায় গভীর অর্থেই নদীতে।

 

আমি আমার বিশ্বাসকে হত্যা করতে পারবো না

মানুষ বেঁচে থাকে দীর্ঘকাল বিশ্বাসে।

সেদিন আঁধার রাত্রে ঘুমন্ত শহরের হাতছানিকে বালিকে ছুঁয়ে দিতে পারিনি

ফেরার সময় বলে আসতে পারিনি ... এই আমি কাউকে না।

ভীষণ মর্মান্তিক হয়েছি, দু’এক দিন হলেও

ছুঁয়েছি এই শহরের দীর্ঘকালের মৃত্তিকা।

 

 

 

সুমাইয়া নাফিস

বিবর্ণ সময়

 

রোদ ও জোছনার ভেতর

আমি আমার আবেগের প্রতিফলন ঘটতে দেখি

একবার এক কাঠফাটা রোদে আমরা হেঁটেছিলাম,

পাতা কুড়োনির সাথে।

সেকি ভীষণ রোদ মগজ গলে পড়ে

তারপরও হেঁটেছি বাঁচার তাগিদে

জীবনের জন্য।

মা বলেছিলেন, “আরেকটু ধৈর্য ধর, কদম চালাও

বুকের ভেতর সাহস আনো,

ভেঙে পড়ো না, বলো না আর পারি না

নিশ্চয়ই আমরা পৌঁছে যাব আমাদের ঠিকানায়।

আমরা বেঁচেও থাকব।”

বাঁচাটা যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। বাঁচাটা যেন

সবকিছু পাওয়ার ঊর্ধ্বে।

যেন বাঁচাটাই জীবনের লক্ষ্য,

তারপরও আমরা কেউ কেউ বাঁচতে চাইনি,

কারণ মৃত্যুই যেন সকল দুঃখের অবসান

মৃত্যুতে খুঁজেছি সেদিন শান্তির রঙধনু

আর সুশীতল পরান।

‘একাত্তরের শক্তি সেদিন খেয়েছিল যৌবন’

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে সেদিন বিশ বছরের সংরক্ষিত বসন্ত

বন্ধক রেখেছিল, বেঁচে উঠেছিল চারটি জীবন

তারপর দিন গেছে, প্রকৃতির রঙ বদলেছে

শুধু জীবনের রঙ বদলায়নি

জীবন এখনও হোঁচট খায় ঘরে বাইরে

কোন এক দৃষ্টির সীমানায়

নারী নামের মধু ও মাধুর্য।

 

 

মনির উদ্দিন পাটোয়ারী

অনৈক্যের খোঁজে

 

ঐক্য ছাড়া কারা কোথায়

বল না ওরে বল না

সেথায় যাব ও ভাই তোরা

আমায় নিয়ে চল না।

 

ঐক্য ছাড়া চলতে যখন হবে

খুঁজতে হবে ঐক্য ছাড়া কারা আছে ভবে।

শিখতে হবে তাদের কাছে

ফেলতে হবে তাদের ছাঁচে

তাদের ধাঁচে চলতে পারলে

দেশটা সফল হবে।

গুরুর শিক্ষা ছাড়া ভবে

কে হয় সফল কবে?

 

ঐক্য ছাড়া আমার দেশটা

চলছে না তো বেশ

দিনে দিনে হচ্ছে কেমন

বিবর্ণ নিঃশেষ।

 

জানি না বেশ ঐক্য ছাড়া

কেমনে চলা যায়

জানি না বেশ কেমন করে

দেশকে পড়া যায়।

 

ঐক্য ছাড়া কেমন করে

চলবো সবে ভালো?

কেমন করে সবার ঘরে

জ্বলবে একই আলো?

 

ঐক্য ছাড়া আমার দেশটা

বিশ্বসেরা হবে

শত্রু ঘেরা স্বাধীন দেশটা

স্বাধীন রাষ্ট্র রবে?

 

আমি তো ভাই বোকা সোকা

জানি না ওসব ভালো

যে জানে ভাই তার কাছে

দেশটা নিয়ে চল।

 

 

 

আমিনুল ইসলাম

স্বাধীনতা ঐক্য

 

স্বাধীনতা ঐক্য স্বাধীনতা সাম্য

ভালোবাসা সুখ প্রেমময়

হাহাকার কান্না স্বাধীনতা নয়।

 

স্বাধীনতা নয় মোটে কালো মেঘ

জিঞ্জির ভেঙে ফেলা সব আবেগ

ুধা আর তৃষ্ণার পরাজয়।

 

স্বাধীনতা পাখিদের গাওয়া গান

উঁচু মাথা দিকে দিকে সম্মান

স্বাধীনতা পর্বত হিমালয়।

 

স্বাধীনতা শান্তির ঝরণা

নাই মোটে পরাজয় ধরনা

স্বাধীনতা ঘাঁটি চির দুর্জয়।

 

 

 

ফরিদ আহমদ ফরাজী

আগুন পরিবেশ

 

্আকাশ কাঁদে বাতাস কাঁদে

কাঁদে বনের পাখি

সত্য কাঁদে বিজন বনে

ভেজা চাঁদের আঁখি।

সকাল কাঁদে বিকাল কাঁদে

মানুষগুলোর হৃদয় কাঁদে

কাঁদে সারাদেশ

মিথ্যা দ্বীপের চোরাবালি

তাদের হৃদয় শুধুই কালি

আগুন পরিবেশ।

মানব মানবতা কাঁদে

সবই আজি হিংসার ফাঁদে

প্রতিহিংসার রেশ

কালো দ্বীপে আলো কাঁদে

সবুজ, ষড়যন্ত্রের ফাঁদে

বাস্তবতা শেষ।