সংবাদ শিরোনামঃ

মার্কিন-ভারত প্রক্সি-যুদ্ধ! ** জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলি ** শাহবাগের কথায় রায় দেয়া হলে ট্রাইব্যুনালের আর প্রয়োজন কি? ** রাজনৈতিক অপশক্তি প্রতিরোধে মানুষ চায় বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ** ফ্যাসিবাদকে সহায়তা দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয় ** কন্যা পররাষ্ট্রনীতিতে পিতার পথ পরিত্যাগ করেছেন ** ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি ** তালায় কপোতা খনন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ ফাল্গুন ১৪১৯, ৪ রবিউস সানি ১৪৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

তিস্তার পানি সরিয়ে নিয়ে প্রকৃতির বৈরিতা উস্কে দিচ্ছে ভারত

তিস্তার পানি সরিয়ে নিয়ে প্রকৃতির বৈরিতা উস্কে দিচ্ছে ভারত
॥ আবদুর রহমান মল্লিক॥
তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য সরকারের প থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চলছে নানামুখী দেনদরবার। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ তিস্তা নদীর পানি সমভাবে পাওয়ার অধিকারী হলেও ভারতের একপেশে নীতির কারণে তা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। কোনোভাবেই তিস্তার পানিতে বাংলাদেশকে ভাগ দিতে রাজি নয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে- পশ্চিমবঙ্গ রাজি না হলে তাদের পে কিছুই করার নেই। আর সে কারণেই চুক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসেও তা আটকে গেছে। বাংলাদেশ সরকার ভারতের এমন আচরণে হতাশ। দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে উৎপাদনের মূল শক্তি যেখানে পানি, সেখানে দেশের উত্তরাঞ্চলে পানির অভাবে মাটি ফেটে চৌচির। প্রকৃতির বৈরিতাকে আরও উস্কে দিয়ে তিস্তার পানি সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। এ জন্য তিস্তার উজানে নির্মাণ করা হয়েছে পরিকল্পিত বাঁধ ও স্টোরেজ ড্যাম। আর বেঁচে থাকার তাগিদেই তিস্তার পানির সমহিস্যা চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশে নদীভিত্তিক সেচ প্রকল্পের েেত্র তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প একটি সফল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদফতরের ২০০১ সালের তথ্যমতে, এই দেশের মোট জনসংখ্যার ৮.৫ শতাংশের আবাসস্থল তিস্তা অববাহিকায় রয়েছে মোট আবাদি জমির শতকরা ১৪ ভাগ। এই অববাহিকার শতকরা ৬৩ ভাগ আবাদি জমি সেচের আওতাধীন, যেখানে দেশের গড় সেচ-আবাদি জমির শতকরা হার ৪২। সেচের পানির প্রাপ্যতা এই অঞ্চলে বছরে দুটি ফসল ঘরে তোলার সুযোগ করে দিয়েছিল। কৃষিতে উন্নতি এই অঞ্চলের কৃষক-শ্রমিকের জীবনযাত্রার মানে প্রভাব পড়েছিল।

তিস্তার পানিকে সেচ কাজে ব্যবহার এবং এখানকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে ১৯৬১ সালে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৭২ সালে আন্তঃসীমান্ত নদীসমূহের উন্নয়নের দিককে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ভারতের বাধার মুখে পরিকল্পনাটি ফাইলবন্দী হয়ে যায়। এরপর তিস্তা প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন সাবেক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮৩ সালে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা ও বাংলাদেশ অংশে লালমনিরহাটের দোয়ানীতে প্রায় একই সময় গ্রীষ্মকালীন সেচের জন্য ব্যারেজ নির্মাণ কাজ শুরু হলে তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে আলোচনা অধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হতে থাকে। ব্যারেজ নির্মাণ করলে যেহেতু দুই দেশই নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করবে সেেেত্র এই আন্তঃসীমান্ত নদীর অভিন্ন পানিবন্টন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায় মূলত ভাটিতে থাকা বাংলাদেশের কাছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ১৯৮৩ সালে যৌথ নদী কমিশনের ২৫তম বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত তিস্তার পানি বন্টনের জন্য একটি এডহক চুক্তি করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল বলে জানা যায়। সেসময় তিস্তার মোট প্রবাহের ২৫% কে অবন্টনকৃত রেখে বাকী ৭৫% শতাংশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্টন করার প্রস্তাব করা হয়েছিল যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৩৬% আর ভারতের ছিল ৩৯%। তবে এই বন্টন কোথায় এবং কি পদ্ধতিতে হবে সেটি নিয়ে দ্বিমতের জের ধরে সেই এডহক চুক্তিটি বাস্তবের দেখা পায়নি।

১৯৮৭ সালে ভারতের গজলডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ৯.২৩ লাখ হেক্টর এলাকায় সেচ প্রদানের প্রকল্প হাতে নিয়ে ভারত আস্তে আস্তে ৫.৪৬ ল হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের জন্য ব্যারেজ দিয়ে তিস্তার পানি প্রত্যাহার শুরু করে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে লালমনিরহাটের দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারেজের নির্মাণ কাজ শেষ করে ১.১১ ল হেক্টর জমিতে সেচ প্রকল্প শুরু করে। শুরুতে ব্যারেজ নির্মাণের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এই অংশে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিস্তা থেকে ভারতের পানি প্রত্যাহারের ফলে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তবে এই সময়ে তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে ইতিবাচক কোনো আলোচনা হয়নি। তিস্তা সেচ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর তা ভারতের রোষাণলে পড়ে যায়। ভারত তিস্তার একশ’ কিলোমিটার উজানে গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণ করে এবং এর পরের ইতিহাস শুধুই না পাওয়ার।

ভারত তিস্তার পানি ব্রহ্মপুত্র বেসিন দিয়ে আসামে এবং গঙ্গা বেসিন দিয়ে মালদায় সরিয়ে নিচ্ছে। এতে করে শুষ্ক মওসুমে তিস্তায় যে পরিমাণ পানি থাকার কথা তা থাকছে না। শুষ্ক মৌসুমে এই নদীতে ৩০ হাজার কিউসেক পানি থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে শুষ্ক মওসুমে যে পরিমাণ পানি পাওয়া যাচ্ছে তার সবটুকুই গজলডোবা বাঁধ চোয়ানো পানি। মূলত গজলডোবা বাঁধের ফাঁকফোকর দিয়ে চুইয়ে আসা যৎসামান্য পানিই কোনোমতে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নদীকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সেইসাথে বেঁচে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের আড়াই কোটি মানুষের স্বপ্নের তিস্তা সেচ প্রকল্পটিও। পানির জন্য এই অঞ্চলের অধিবাসীদের হাহাকার থাকে বছরজুড়েই। এ কারণে তিস্তা নদীর পানিই এখানকার অধিবাসীদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই নাব্যতা কমে যাওয়ায় মাইলের পর মাইল জুড়ে চর জেগে উঠেছে। সে কারণেই পানির জন্য এখানকার কৃষকদের করুণ আকুতি শুরু হয়ে গেছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র কাছে।

তিস্তার পানিকে কাজে লাগিয়ে দোয়ানীতে নির্মিত বাংলাদেশের একমাত্র ব্যারেজটি উত্তরাঞ্চলের আড়াই কোটি মানুষের ভাগ্য পাল্টে দিলেও এখন এই সোনালী স্বপ্ন ফিকে হওয়ার উপক্রম। নদীর মাঝে জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর।

এদিকে, গত চারটি বছর তিস্তায় জমা হওয়া চোয়ানো পানিই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড রেশনিং পদ্ধতিতে কৃষকদের মাঝে ভাগ করে দিচ্ছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের কৃষকরা এভাবেই ঘরে তুলছে তাদের ফসল। এবারের শুষ্ক মৌসুমেও এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে বলে স্থানীয় পাউবো’র এক কর্মকর্তা জানান। এই কর্মকর্তার মতে, পানি সঙ্কট নির্ধারিত ল্যমাত্রার তুলনায় সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাধ্য করেছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকার খাদ্য নিরাপত্তার উপর।

তিস্তার উৎপত্তি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭৫০ ফিট উপরে সিকিমের সোহামো লেকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডিমলা উপজেলা দিয়ে এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার। তিস্তার মূল প্রবাহ নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করে এবং কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারিতে যেয়ে মিশেছে ব্রহ্মপুত্রে। এই তিস্তা নদীর পানিকে আটকাতেই ভারতের এতসব পরিকল্পনা।

সিকিমের পাহাড়ী এলাকায় তিস্তার বাঁকে বাঁকে যে স্টোরেজ ড্যাম নির্মাণ শুরু করে ভারত তার অবসান ঘটায় গজলডোবায় ব্যারেজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে। উত্তরাঞ্চলের খরাপীড়িত এই এলাকাটিতে দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে বৃষ্টিপাতের আনুপাতিক হার অনেক কম। অন্যান্য এলাকায় যেখানে বৃষ্টিপাত ৩ হাজার মিলিমিটার সেখানে উত্তরাঞ্চলের বৃষ্টিপাত মাত্র ১৯শ’ মিলিমিটার। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে মে পর্যন্ত এই নয় মাস উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত কম। বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পায়ন অনেক বেশি। মাটিতে জলীয়বাষ্প থাকে খুবই কম। এখানকার তাপমাত্রাও গোটা দেশ থেকে ভিন্নতর। গ্রীষ্মে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শীতে তাপমাত্রা নেমে আসে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই অঞ্চলের মাটি শীত-গ্রীষ্মেতো বটেই, বর্ষাতেও শুষ্ক থাকে। এখানে বর্ষা মৌসুমেও মাটিফাটা জমির অস্তিত্ব এদিক ওদিক তাকালেই দৃষ্টিগোচর হয়। আর সে কারণেই পানির জন্য হাহাকার এখানে বছরজুড়েই। আবার এই অঞ্চলে রুদ্রতর প্রকৃতি বর্ষা মওসুমে হয়ে ওঠে ভয়াল। গজলডোবা বাঁধ বর্ষায় এই অঞ্চলের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রুদ্র প্রকৃতির বৈরিতার আঁচ পেলেই ভারত গজলডোবা বাঁধের ৪৪টি গেট একত্রে উন্মুক্ত করে দেয়। তখন মুহূর্তে বানের পানিতে গোটা অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে জানমাল ও ফসলের ব্যাপক য়তি হয়।

তিস্তার মূল ধারা থেকে এমনভাবে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে যে, শুষ্ক মৌসুমে যার প্রভাব পড়ছে ব্রহ্মপুত্রের উপর। ভারতের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী, কালিঘড়া এলাকায় ভারত তিস্তার ওপর ৩২ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন ব্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই ব্যারেজের মাধ্যমে খরস্রোতা তিস্তার পানিকে আটকে এখানে তিন নম্বর লো ড্যাম নির্মাণ করা হবে এবং এ থেকে ১৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। আর কালিখোলা থেকে ৩৫০ মাইল উজানে ৩০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন চতুর্থ কংক্রিট ড্যাম নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। এখান থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। তিস্তার পানি আটকে ভারত সিকিম থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে গজলডোবা পর্যন্ত কমপে ১৫টি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাচ্ছে। শুধু সিকিমে পাহাড়ী এলাকায় যে ছয়টি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে তার সম্মিলিত উৎপাদন মতা ৩ হাজার ৩১৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে তিস্তা পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১-এর উৎপাদন মতা ২৮০ মেগাওয়াট, তিস্তা পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২-এর উৎপাদন মতা ৩৩০ মেগাওয়াট, তিস্তা পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৩-এর উৎপাদন মতা ১২০০ মেগাওয়াট, তিস্তা পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৪-এর উৎপাদন মতা ৪৯৫ মেগাওয়াট, তিস্তা পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫-এর উৎপাদন মতা ৫১০ মেগাওয়াট এবং তিস্তা পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৬-এর উৎপাদন মতা ৫১০ মেগাওয়াট। এছাড়াও সিকিমের লিচিনে ২১০ মেগাওয়াট মতা সম্পন্ন আরও একটি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে বলে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।

তিস্তায় পানি কম পাওয়া প্রসঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন জানান, আমরা পানি কম পেয়েছি- বিষয়টি ভারতকে জানানো হয়েছে। তিস্তার পানি কম পাওয়ার কারণে আমাদের সেচ কাজেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যদিও রেশনিং পদ্ধতিতে আমরা গত সেচ মওসুম পারি দিয়েছি। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক বসলে এ নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। তার বিশ্বাস আলোচনায় বসলে তিস্তা নদীর পানি বন্টন নিয়ে একটি সন্তোষজনক সমাধান আসবে।

আর যৌথ নদী কমিশনের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট পানিবিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত জানান, ভারত আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গার পানি ভাগাভাগি চুক্তির মধ্য দিয়েই স্বীকার করে নিয়েছে যে, অন্যান্য আন্তর্জাতিক নদীর পানি নিয়েও বাংলাদেশের চুক্তি করার অধিকার রয়েছে। তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী এবং এই নদীর পানি সমভাগে পাওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৭ জানুয়ারি ২০১২ তিস্তা অভিমুখে লংমার্চে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল রোডে এক পথসভায় বলেন, আমাকে যদি সুযোগ দেওয়া হয় আমি তিস্তা পানি চুক্তি করতে পারি। আওয়ামী লীগ গত ৩ বছরে তিস্তা পানি চুক্তি করতে পারে নাই, আগামি ২ বছরেও পারবে না। আওয়ামী লীগ যদি আমাকে সুযোগ দেয় আমি তিস্তা পানি চুক্তি করতে পারি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের সাবেক শিক ও কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা এর গবেষক অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের মঙ্গাপীড়িত উত্তরবঙ্গের জন্য তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প যেমন প্রয়োজনীয়, ভারতের গজলডোবার ব্যারেজ প্রকল্প বা আরো উজানে জলবিদ্যুৎ বাঁধ প্রকল্প হয়তো তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। প্রযুক্তির ছাত্র হিসেবে তিনি জানান বাংলাদেশ এই আপস আলোচনায় যে যুক্তিগুলো তুলে ধরতে পারে তা হলো-

১. গঙ্গাচুক্তির অনুচ্ছেদ ৯-এ ‘পপাতবিহীন ও সাম্যতাপ্রসূত এবং কোনো পরেই তি না করে’ কথাটি উল্লেখ আছে, সেেেত্র ভারতের ৭৫:১৫ অনুপাতের বণ্টনের যুক্তি ভিত্তিহীন এবং প্রকারান্তরে তা গঙ্গাচুক্তি লঙ্ঘনের শামিল।

২. গজলডোবায় সেচ প্রকল্প ভারতে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত শেষ প্রকল্প অর্থাৎ এর ভাটিতে ভারতে তিস্তা নদীর পানি ব্যবহারের কোনো অবকাশ নেই, অন্যদিকে বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশের পর পরই অবস্থিত এবং এর ভাটিতে তিস্তার পানির আরো প্রয়োজনীয়তা ও বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।

৩. বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ইছামতি ও ফেনী নদীর েেত্র ভারতকে একতরফাভাবে ছাড় দিয়েছে; সে েেত্র ভারতেরও তিস্তার েেত্র বাংলাদেশকে ছাড় দেয়া উচিত।

৪. গঙ্গাচুক্তির েেত্র যা দেখা গেছে তা হলো, চুক্তিতে উল্লিখিত পরিমাণ প্রবাহ সব সময় না পাওয়া। সে েেত্র তিস্তা চুক্তিতে মতৈক্য অনুযায়ী প্রবাহ নিশ্চিতকরণের একটি ধারা সংযোজন করা যেতে পারে।

সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভালো প্রতিবেশী মহান স্রষ্টার বিরাট নিয়ামত। ভৌগলিক কারণে এদেশের জনগণ সর্বোপরি আমাদের রাজনীতিবিদরাও প্রতিবেশী হিসেবে  ভারতকে আপন করে নিতে কোনো সময় কার্পণ্য করেনি। কিন্তু বিশাল আয়তনের এই দেশটি বার বার বালাদেশের সাথে অতি ুদ্র মনের পরিচয় দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নির্মমতার পরিচয় দিয়েছে। বর্তমান সরকার ‘চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিব’ নীতিতে রয়েছে অদ্যাবধি। সম্মান নিয়ে মাথা উচু করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা এখন সময়ের দাবি। যা চাইবে তা দিয়ে দেয়া দেশপ্রেমের সাথে খাপ খায়না। তা স্বাধীনতার চেতনাও নয়।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।