সংবাদ শিরোনামঃ

মার্কিন-ভারত প্রক্সি-যুদ্ধ! ** জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলি ** শাহবাগের কথায় রায় দেয়া হলে ট্রাইব্যুনালের আর প্রয়োজন কি? ** রাজনৈতিক অপশক্তি প্রতিরোধে মানুষ চায় বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ** ফ্যাসিবাদকে সহায়তা দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয় ** কন্যা পররাষ্ট্রনীতিতে পিতার পথ পরিত্যাগ করেছেন ** ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি ** তালায় কপোতা খনন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ ফাল্গুন ১৪১৯, ৪ রবিউস সানি ১৪৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

॥ খন্দকার মহীউদ্দীন আহমদ॥
মিসরের রাজধানী কায়রোতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এর দুই দিনব্যাপী ১২তম শীর্ষ সম্মেলন গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শেষ হয়েছে। ২৬টি মুসলিম দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানান। এবারের সম্মেলনে মূল আকর্ষণ ছিল ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের অংশগ্রহণ। গত ৩০ বছরের মধ্যে এটাই কোনো ইরানী প্রেসিডেন্টের প্রথম মিসর সফর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধানদের বক্তব্যে সিরিয়া পরিস্থিতিসহ মালি, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও ফিলিস্তিন ইসরাইল ইস্যুর মতো বিষয়গুলো স্থান পায়। তাছাড়া মিসর-ইরান এর মধ্যকার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও দেশ দুটোর দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট মুরসি জোড়ালোভাবে সিরিয়ার বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা আসাদ বিরোধী শক্তির মধ্যকার বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। সিরিয়ার চলমান রক্তপাত ও সংঘর্ষের সমাপ্তি টানতে বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর পূর্ণাঙ্গ সমঝোতা ও একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে মিসরের জোড়ালো ভূমিকা রাখারও প্রয়োজন রয়েছে। জনসাধারণের দাবির প্রতি কর্ণপাত করছেন না সিরিয়ার   প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানরা সংখ্যালঘু আলাউইত তথা আলাভি সম্প্রদায়ভুক্ত বাশার সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালালেও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে সেনা প্রশাসন ও সিভিল প্রশাসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আসাদের অনুগতদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। পাশাপাশি আসাদ সরকার ইরানের সমর্থনপুষ্ট হওয়ায় পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে অবস্থানে রয়েছে। বিষয়টিকে সামনে রেখে কায়রোর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন প্রেসিডেন্ট মুরসি। প্রেসিডেন্ট মুরসি ইরানী প্রেসিডেন্ট আহমদিনেজাদকে সিরীয় সরকারকে সমর্থন দেয়া বন্ধের আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট মুরসি তেহরানে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনেও একই দাবি জানিয়ে এসেছেন। যদিও এ বিষয়ে তেহরান কোনো  প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এদিকে সম্মেলনের ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ও সিরিয়া বিষয়ে আলোচনা হয়েছে প্রেসিডেন্ট মুরসির। উভয় নেতা আঞ্চলিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই সিরিয়ায় রক্তপাত বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। ইরানী বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, আহমদিনেজাদ বলেছেন, তিনি ইরান ও মিসরের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রেও উন্নয়নের পথ সুগম করার চেষ্টা করবেন। এছাড়া ইরানী নেতা মধ্যপ্রাচ্যে শত্রুর মোকাবেলায় ইরান ও মিসরের মধ্যে শক্তিশালী জোট গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মিসর ও ইরান যদি জোট গঠন করে তাহলে শত্রুরা এই দেশ দু’টির কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। তিনি বলেন, কোনো রকম সীমাবদ্ধতা ছাড়াই মিসরের সাথে সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইরানের আগ্রহ পূর্বের চেয়ে বর্তমান সময়ে অনেক বেশি। মিসরের কৌশলগত অবস্থান ও গণতান্ত্রিক ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার পর তাদের এই আগ্রহ আরো তীব্রতর হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার বলয়ে ইরানের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহের অন্যতম কারণ এই এলাকার বিশাল অংশে শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমানদের অবস্থান। ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও বাহরাইনে শিয়া সম্প্রদায় বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এদের দীর্ঘকাল ধরে নৈতিক ও আর্থিক এবং সামরিক সাহায্য দিয়ে আসছে ইরান। তাই অন্য বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার বলয় এবং রাজনীতিতে ইরান ফ্যাক্টর পূর্বেও ছিল, বর্তমানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এমন বাস্তবতায় মিসরের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ইরানের আগ্রহকে অবমূল্যায়ন না করে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নকে সন্দেহের চোখে দেখবে বিভিন্ন আরব দেশ ইসরাইল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।  তবে এ ক্ষেত্রে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক ও সর্বোপরি অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বারোপ করার প্রয়োজন রয়েছে। ইরানের সাথে উন্নয়নের মধ্যদিয়ে সিরিয়ায় ইরানের ভূমিকা দুর্বল করা সম্ভব এ বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ওআইসির সদস্য দেশগুলোর।

ওআইসি সম্মেলনে বাংলাদেশের দুর্বল ভূমিকা লক্ষ্যণীয়। মুসলিম উম্মার প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ যেন ক্রমান্বয়ে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এর পূর্বে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ডি-৮ এর শীর্ষ সম্মেলনেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেননি। বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবেই বাংলাদেশকে মুসলিম বিশ্ব থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলোই এই সংস্থার সদস্য। বাংলাদেশের নিজ স্বার্থেই এই ব্লকে থাকা প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বৈশ্বিক অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও সম্ভাব্য কৌশল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি সরকারি ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট গ্লোবাল ট্রেন্ডস ২০৩০ : অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ডস এর বিশ্লেষণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অপার সম্ভাবনার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা বাংলাদেশ সরকার বিবেচনায় এনেছেন বলে মনে হয় না। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে শক্তিধর দেশ থাকবে তবে সামগ্রিকভাবে এশিয়া ছাড়িয়ে যাবে সবাইকে। যে দেশগুলোর অর্থনীতি এগিয়ে আসছে তাদের বলা হয়েছিল ‘নেক্সট ইলেভেন’। দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনাম। অপার সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের মধ্যে ৭টি দেশই মুসলিম ব্লকভুক্ত এবং ওআইসির সদস্য দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বলছে ২০৩০ সাল নাগাদ নেক্সট ইলেভেন সম্মিলিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। উদিয়মান অর্থনীতি ও অপার সম্ভাবনাময় ৭টি মুসলিম দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কি রকম হবে বা হতে হবে তা নিয়ে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। আর পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ওআইসির এই সমস্ত দেশগুলোর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ওআইসির সম্মেলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ উচিত ছিল। ইসলামী দেশগুলোর বিভিন্ন ফোরামে অংশগ্রহণ না করার মাধ্যমে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে বার্তা এই সমস্ত দেশগুলোকে দিচ্ছেন, বর্তমান বিশ্বের সামগ্রিক রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে তা বাস্তব সম্মত নয়। আমরা এ বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে সরকারকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। অবশ্য কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী এজন্য ওআইসির অকার্যকারিতাকেও দায়ী করতে পারেন। ওআইসি বর্তমান সময়ে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে সত্যি, তবে আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষীক সম্পর্ক উন্নয়নের রাস্তাও প্রশস্ত হতে পারে এবং কায়রো সম্মেলনে ইরানের সক্রিয় অংশগ্রহণই তার প্রমাণ। বাস্তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত থাকলে তা অর্জন সম্ভব। মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনে ও বিশ্ব রাজনীতির ময়দানে পিছিয়ে পড়বে সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। ফিলিস্তিন ইস্যু ও মিয়ানমার প্রসঙ্গে আমাদের তো অনেক কিছুই বলার ছিল এবং আছে, নিষ্ক্রিয় থেকে আমরা কি লাভ করছি তাও ভেবে দেখতে হবে। কায়রো সম্মেলনে প্রত্যাশা অনেক থাকলে প্রাপ্তি সামান্য। তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্বের অনুপস্থিতিও লক্ষ্যণীয়। মুসলিম উম্মার সার্বিক কল্যাণ সাধনে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ওআইসির কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই এটা দুঃখজনক। উম্মার সম্মিলিত প্লাটফরম হিসেবে ওআইসির আরও জোরদার ভূমিকা মুসলিম উম্মার কাম্য। আরব বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত ওআইসির শীর্ষ সম্মেলন উম্মার রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আরব শাসকরা সম্ভবত বাস্তবতা এড়িয়ে চলার নীতিতে বিশ্বাসী আর তাই তারা সতর্ক অবস্থান থেকে সম্মেলনকে পরিহার করেছেন। সিরিয়ার বাশার সরকারের বিরুদ্ধে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্মিলিত জোট গঠন সম্মেলনের বড় সাফল্য এ বিষয়ে ইরানকে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

দুই. মালিতে ফ্রান্সের সামরিক অভিযান কাম্য নয়। এটা সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন হস্তক্ষেপ। আল কায়েদা দমনের নামে মালিতে পরিচালিত ফ্রান্সের সাড়াশি হামলা একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার। বস্তুত ফ্রান্সের দোসর গণবিরোধী বর্তমান সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে আল কায়েদা নিধনের নামে। ১২ লাখ ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের মালি স্বর্ণ, ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য মূল্যমান ধাতব ও খনিজ সম্পদে ভরপুর একটি দেশ এবং মূলত এই সম্পদ গ্রাস করতেই মালির উত্তরাঞ্চলে ইসলামী সংগঠন আলসারুদদিনের  দুর্গে গত ১১ জানুয়ারি হঠাৎ আক্রমণ করে বসে ফ্রান্স। ফ্রান্স বলছে আলসারুদ্দিন বিশ্ব শান্তি ও ফ্রান্সের জন্য হুমকি তারা গত এক বছরে মালিক দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা দখল করে সেখানে শরিয়া আইন চালু করেছে। এখন তারা রাজধানী বামাকোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য মালিতে ইসলামী হুকুমত কায়েম করা। এটা হুবহু ১২ বছর পূর্বেকার আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের পরিচালিত নাটকের নতুন রূপ। মালিতে ফ্রান্সসহ পশ্চিমাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাকে সোচ্চার হতে হবে, যাতে করে নতুন আফগানিস্তান সৃষ্টি না হয়।

তিন. কায়রোর ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো হামাস-ফাতাহর মধ্যকার ফিলিস্তিনে জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণা। মুসলিম উম্মার এই ক্রান্তিলগ্নে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে  সরকার পরিচালনার শুভ সংবাদ নিশ্চয়ই একটি বড় অর্জন। হামাস নেতা খালিদ মিশাল বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফিলিস্তিনে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে এবং সব ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে। এখন সামনে এগিয়ে যাওয়াই মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি ফিলিস্তিন আন্দোলনের মূলধারা পিএলও এর কর্মকাণ্ড জোর দার করা এবং নতুন জাতীয় পরিষদ ও নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত পিএলও বৈঠক অনুষ্ঠানের ফয়সালার কথা জানান খালিদ মিশাল।

চার. এদিকে তিউনেসিয়ার বিরোধী দল পপুলার ফ্রন্টের নেতা শুকরি বেলায়েতের হত্যাকে কেন্দ্র  করে আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে তিউনেসিয়া।  বিরোধী দলীয় স্পষ্টবাদী এই নেতার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী আল নাহদার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে, যদিও আল নাহদা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। গত কয়েকদিন থেকেই সমগ্র তিউনেসিয়া জুড়ে বিক্ষোভ ও ধর্মঘট চলছে এবং সহিংসতার মুখে দেশ অচল হয়ে আছে। পুরো দেশ জুড়ে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী হামাদি জাবালি সরকার ভেঙ্গে দিয়ে টেকনোক্রেটদের সমন্বয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার এই পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামপন্থী আল নাহদাসহ পার্লামেন্ট সদস্যরা। আরব বসন্তের সূতিকাগার তিউনেসিয়ায় গণআন্দোলনের মুখে ২০১১ সালে বেন আলীর পতন হয়। এরপর থেকে দেশটিতে চরম অশান্তি বিরাজ করছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি বেকারত্ত্ব, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার মুখে দেশটি আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো। ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন পার্টনার ইসলামপন্থী দল আল নাহদার জন্য পুরো বিষয়টি ভীষণ অস্বস্তিকর। আরব বসন্তের প্রথম সফল আন্দোলন ও ক্ষমতার পটপরিবর্তনে তিউনেসিয়ার জনগণের মাঝে যে আশা ও মোহ জেগেছিল তা বাস্তবে রূপান্তরিত করা এখন ইসলামপন্থী আল নাহদার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য দলটিকে দায়ী করা যায় না। কেননা দলটি এককভাবে ক্ষমতা গ্রহণের অবস্থানে নেই। তাছাড়া দেশটিতে এখনও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ চলছে। জনগণের বিভক্ত ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার পরিচালনায় সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া বেন আলীর পতনের পর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অবসান হয়নি। দেশটির অর্থনীতি দুর্বল, তাছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়নি কোয়ালিশন সরকার। সব মিলিয়ে লেজে গোবরে অবস্থানে রয়েছে তিউনেসিয়া। পরিস্থিতির উত্তরণে জোট নেতৃত্বের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজনীয়। জনগণের আকাক্সা বাস্তবায়নে আল নাহদাকে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ এবং অর্থনৈতিক কর্মকৌশল গ্রহণে ব্যর্থ হলে, জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। বিপ্লব পরবর্তী প্রতিটি দেশের জনগণের প্রত্যাশা প্রবল এবং  সেই প্রত্যাশা পূরণে ক্ষমতাসীন সরকার ব্যর্থ হলে জনগণ প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটাই স্বাভাবিক।

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক।

Email : mohi_ahmad15@yahoo.com

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।