সংবাদ শিরোনামঃ

মার্কিন-ভারত প্রক্সি-যুদ্ধ! ** জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলি ** শাহবাগের কথায় রায় দেয়া হলে ট্রাইব্যুনালের আর প্রয়োজন কি? ** রাজনৈতিক অপশক্তি প্রতিরোধে মানুষ চায় বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ** ফ্যাসিবাদকে সহায়তা দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয় ** কন্যা পররাষ্ট্রনীতিতে পিতার পথ পরিত্যাগ করেছেন ** ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি ** তালায় কপোতা খনন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ ফাল্গুন ১৪১৯, ৪ রবিউস সানি ১৪৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

সোনার বাংলা রিপোর্ট : দেশে বিদেশে ‘বিতর্কিত’ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করে হয় তো বা নির্দোষ কিছু লোককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা যাবে কিন্তু এতে দেশের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ুণœ হবে। বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থার সঙ্কট দেখা দেবে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সরকারপন্থী কিছু সংখ্যক তরুণের বিক্ষোভের মুখে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তৃতীয়বারের মতো আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের পর ডিফেন্স ও বাদী উভয় পক্ষের আইনজীবীগণ এমন মত প্রকাশ করেছেন।

জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বার কাউন্সিল, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন র‌্যাপ ও দেশী-বিদেশী আইনজ্ঞরা স্বচ্ছ, নিরপে ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আন্তর্জাতিক মানবতা বিরোধী আইনের বিশেষ কিছু ধারার সংশোধনী আনার জন্য বার বার  সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। পরিতাপের বিষয়, সরকার তাদের সেই পরামর্শ গ্রহণ করেনি। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে ইতোমধ্যে দুইবার আইনটি সংশোধন করেছে এবং তৃতীয় সংশোধনীর জন্য গত ১১ ফেব্রয়ারি মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। মানবতা বিরোধী মামলায় সরকারের পে আপিলের সুযোগ এবং আপিল নিষ্পত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই তা পাস করা হবে। বর্তমান সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এর আগে দুই দফা সংশোধনী আনা হয়েছে। ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আনা সংশোধনীতে কেবল খালাসের েেত্র রাষ্ট্রপরে আপিলের সুযোগ সংযোজন করা হয়।  মূল আইনে শুধু আসামিপরে আপিলের বিধান ছিল। ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা সংশোধনীতে আপিলের সময় সীমা ৬০ দিন থেকে কমিয়ে ৩০ দিন করা হয়। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধানও সংযুক্ত করা হয়। এক ট্রাইব্যুনাল থেকে আরেক ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া যে দিন রায় হবে, সে দিনই রায়ের সত্যায়িত কপি উভয় পকে বিনামূল্যে দেয়ার বিধান করা হয়।।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, সংসদের চলতি অধিবেশনেই এ সংশোধনী  পাস করা হবে। এতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিল করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আপিল দায়েরের সময় সরকার ও দণ্ডিত ব্যক্তিদের মামলার সব প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিতে হবে। এখানে অন্য মামলার মতো পেপার বুক তৈরির বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৪৫ দিনের মধ্যে শুনানি করে রায় ঘোষণা করবেন। তবে উপযুক্ত কারণ থাকলে পরবর্তী ১৫ দিন অর্থাৎ সর্বমোট ৬০ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণা করার বিধান করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে মামলা নিষ্পত্তির েেত্র আপিল বিভাগের ওপর সময় নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৩ সালের আইনে সরকারের আপিলের কোনো সুযোগ ছিল না।

পরে ২০০৯ সালে আইন সংশোধন করে এতে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়। এখন যে কোনো রায়ের বিরুদ্ধে আসামির মতো সরকার বা তিগ্রস্ত ব্যক্তির পে আপিলের সুযোগ রাখার বিধান যোগ করা হয়েছে। সংবিধানের ৪৭(ক) অনুচ্ছেদে এই আইনের প্রোটেকশন দেয়া আছে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড  প্রদান করে। এ রায় বাতিল করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে মতাসীন আওয়ামী লীগসহ বাম রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীও এ রায়ের প্রতিবাদে বিােভ কর্মসূচি পালন করেছে। এরই প্রেেিত সরকার আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী সাবেক আইনমন্ত্রী উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রতি সরকারের আস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতেও এ ট্রাইব্যুনালের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ পেয়েছে। দেশের কোনো মানুষেরই আস্থা নেই। তাই বিচারপতিদের উচিত পদত্যাগ করা।

ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ আরো বলেন, নাগরিক ও রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে বিচারপতিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হয় কোনোভাবেই যেন নাগরিক অধিকার ুণœ না হয়। তখন তার দায়িত্ব হলো নাগরিক অধিকার রক্ষা করা কারণ রাষ্ট্রের তুলনায় একজন নাগরিক অতি ুদ্র।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ট্রাইব্যুনাল যখন গঠন করা হয় তখনই বলেছিলাম এ ট্রাইব্যুনাল কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রায় ঘোষণার পর আমাদের সে কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাই বলছি যে ট্রাইব্যুনালের প্রতি জনগণের আস্থা নেই তা ভেঙে দিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে চিহ্নিত ১৯৫জন পাকিস্তানী সৈন্যের বিচার আগে করতে হবে। যুদ্ধারপরাধীদের সহযোগীদের বিচার করতে হলে যারা ১৯৫ জন মূল অপরাধীকে ছেড়ে দিয়েছে তাদেরও বিচার করতে হবে। তা না হলে এ বিচার দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না।

সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন,সরকারের মন্ত্রীরা যখন রায়ের দিন ক্ষণ ঠিক করে দেন, শাহবাগের নাটক দেখে প্রকাশ্যে বলেন, আগে এ চাপ সৃষ্টি করলে রায় অন্য রকম হতো! তখন আর কারো কি বুঝতে বাকি থাকে সরকার কি চায়।

 à¦¦à§‡à¦¶à§‡à¦° সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আইন সংশোধন দিয়ে বিরূপ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে, বিবিসি বাংলার ফেসবুকে তারা তাদের এ মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, আইন সংশোধনের লক্ষ্য যদি হয় ইচ্ছে মতো রায় পাওয়া, তাহলে আর আইন করার দরকার কি?

একটি জাতীয় পত্রিকার ওয়েব সাইটে দেয়া মন্তব্যে একজন পাঠক লিখেছেন, দেশ কি আইনের শাসন দ্বারা পরিচালিত হবে, নাকি আবেগের শাসন দ্বারা? বিচারালয়ে বিচারকরা কোনো অপরাধীকে সাজা দেন যুক্তি-তর্ক, তথ্য-উপাত্ত, স্যা-প্রমাণ এবং পরিস্থিতি-পরিবেশ এর নিরপে বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে। যদি কোনো রায় ঘোষণার পর কোনো প রায় মানতে না চায় বা সন্তুষ্ট না হয় তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ্ আদালতে আপিল করে থাকে, এটাই আইনের স্বাভাবিক নিয়ম, এভাবেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু এখন দেশে এটা কি হচ্ছে, এখন মনে হয় আইন-আদালত রাস্তার আন্দোলন আর আবেগের দ্বারা পরিচালিত হবে, বিচার কাজ প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় এমনকি রায় ঘোষণার পর আইন বাদী পরে (সরকারের) সুবিধামত সংশোধন করা হবে, এমন নজীর বাংলাদেশ ছাড়া আর দুনিয়ার কোথায় আছে বলে আমাদের জানা নেই। অর্থাৎ বিচারকদের এখন রায় দিতে হবে রাস্তার দাবির আলোকে, তাহলে আর ট্রাইব্যুনাল কেন, এটা বাতিল করে দিলেই হয়। শাহবাগ চত্বরের তরুণ নেতারা চ্যানেল আই এর তৃতীয় মাত্রায় বলল তাদের নাকি বর্তমান ট্রাইব্যুনালের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা আছে, তাহলে ট্রাইব্যুনালের রায় মানেনা কেন? অর্থাৎ দেশীয় কথায় বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার। এ অবস্থা যদি একবার চালু হয়ে যায় তবে এর পরিণাম কি ভয়াবহ হবে তরুণদেরকে যারা নাচাচ্ছে তারা কি একবার ভেবে দেখছে?

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ সংশোধনীর ফলে আবদুল কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দেশের সিনিয়র আইনজীবীগণ এর বিরোধিতা করেন। ব্যারিস্টার আ. রাজ্জাক বলেছেন, রায় ঘোষণার কারণে এখন আর কাদের মোল্লার রায়ের ব্যাপারে সরকার পক্ষের আপিল করার সুযোগ নেই।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কেন আইন সংশোধন করা হবে? দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কেন এই আইন সংশোধ করা হয়নি? এখন আইন সংশোধন করে যদি কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় তাহলে এই আন্তজার্তিক ট্রাইব্যুনালের যে অর্জন তা ম্লান হয়ে যাবে। এই ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্যতাকে এবং পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।