ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন প্রসঙ্গে বিবিসিকে ড. মাসুদ

সরকারের অগণতান্ত্রিক উদ্যোগ একটি দলের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করারই শামিল

সোনার বাংলা ডেস্ক : গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রোববার জাতীয় সংসদে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন উপল্েয বিসিসি রেডিওকে দেয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সাাৎকার নিম্নে দেয়া হলো:

বিবিসি : বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ব্যক্তির পাশাপাশি এখন সংগঠনের বিচারের বিধানও রাখা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এ সংক্রান্ত ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল এমেন্ডমেন্ট বিল ২০১৩ গত রোববার পাস হয়েছে। এই সংশোধনীর আওতায় জামায়াতে ইসলামীর বিচারের সম্ভাবনাকে কিভাবে দেখছেন জামায়াত নেতারা। জামায়াতের মুখপাত্র শফিকুল ইসলাম মাসুদ : প্রথমেই আমরা বলতে চাই যে, সরকার যখন এই বিচারের প্রক্রিয়াটি শুরু করে তখন এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম নিজে এবং আইনমন্ত্রী বলছিলেন, ‘আমরা এখানে কোন দলের বিচার করছি না আমরা ব্যক্তির বিচার করছি। কিছু দিনের মাথায় এসে তাদের এই বিচারের উদ্যোগ নেয়াটা মূলত একটি অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট উদ্যোগ এবং একটি দলকে ধ্বংস করা, ব্যক্তির অধিকার হরণ করা ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করারই শামিল। আমরা শুধু নই, এটা দেশবাসীও প্রত্যাখ্যান করবে। আমরা এর নিন্দা জানাই।

বিবিসি : জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে ইদানীং নানা ধরনের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই। সরকারের দু’একজন মন্ত্রীও এই ধরনের কথাবার্তা বলছেন। আপনারা কি এ ধরনের কোন পদপে নেয়া হলে তার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন?

ড. মাসুদ : প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন সে কথাটি এদেশের ১৬ কোটি মানুষের কথা নয়। বাংলাদেশের জন্য এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং খুব উদ্বেগের ব্যাপার। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ আদর্শিক কারণেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে প্রথম থেকেই নির্মূল করা, দমন করা, প্রতিরোধ করার ইত্যাদি নানারকম কথা বলে আসছে। বাস্তব কার্যক্রমও চালিয়েছে, তারা আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছেন, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে, টিয়ারশেল নিপে করেছে, কথিত রিম্যান্ডের নামে নিয়ে আমাদের প্রায় আড়াই হাজার নেতা-কর্মীকে প্রায় পঙ্গু করে ফেলেছে এবং তাদের অনেককে জেলখানায় আটকে রেখেছে এবং ধারাবাহিকতায় তারা নির্যাতন চালিয়ে দেখেছে যে, এভাবে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। এ কারণেই তারা এখন আইনের অপপ্রয়োগ করে বা সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার অপব্যবহার করে উদ্যোগটি গ্রহণ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিবিসি : আগামীকাল আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) সোমবার আপনারা সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছেনর। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনকারীরা এই হরতালকে প্রতিহত করার কথা বলছেন, পাশাপাশি আজকে (১৭ ফেব্রুয়ারি রোববার) বাংলাদেশের দোকান মালিক সমিতি এবং পরিবহন মালিক সমিতিও বলছে যে, তারা এতে অংশ নেবে না, একে প্রতিহত করবে এবং দোকানপাট খোলা রাখবে। যানবাহন চালু রাখার সিদ্ধান্তও রয়েছে। গত ১৩ দিন ধরে শাহবাগে যা ঘটেছে তাতে কি মনে হচ্ছে যে, আপনারা যে ইস্যুগুলো নিয়ে আন্দোলন করছেন সেগুলো মূলত জনগণ প্রত্যাখ্যান করছে।

ড. মাসুদ : না, এটি ঠিক নয়। প্রতিহত করা, প্রতিরোধ করা এই জাতীয় ঘোষণাগুলো কোনো গণতান্ত্রিক ভাষা না। এগুলো হচ্ছে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস এবং দেশকে এক ধরনের উদ্বিগ্নতার দিকে, গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার অপপ্রয়াস এবং তারা সেই ধরনের বক্তব্যই দিচ্ছে।

বিবিসি : তারা প্রতিহত শব্দটি ব্যবহার করছে কিন্তু একই সঙ্গে তাদের যে স্পিরিট তাতে বুঝা যাচ্ছে তারা আপনাদের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করছে।

ড. মাসুদ : না, প্রত্যাখ্যান যারা করেছেন, যারা শাহবাগে আছেন তারা আওয়ামী লীগ এবং তাদের দলীয় কিছু কর্মী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে তাদেরকে সেখানে একত্রিত করে একটা নাটক মঞ্চস্থ করে এই ট্রাইব্যুনালকে তারা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এবং এখানে যে, অন্যায় বিচার হচ্ছে সেই অন্যায় বিচারটাকে আরও বাধ্যতামূলক করার একটা অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আমাদের দেশীয় আইনজীবী ইতোমধ্যে বলেছেন যে, জনতার আদালতেই যদি বিচার করার সুযোগ থাকে তাহলে আমাদের প্রচলিত আইন বা আদালতের প্রয়োজনটা কি? ওই জনতার আদালত বা শাহবাগ নাটক মঞ্চস্থ করার মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থাকে এক ধরনের বাধ্যবাধকতার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের দেশের বিচার কি কলুষিত করবে।