৮৫ ভাগ গুঁড়ো দুধই ভেজাল

বাজারে পাস্তুরিত তরল দুধের সঙ্কটে বেড়েছে গুঁড়ো দুধ বিক্রি। তবে বিক্রি হওয়া গুঁড়ো দুধের প্রায় ৮৫ শতাংশই ভেজাল বলে শনাক্ত করেছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।  ২০১২ সালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা গুঁড়ো দুধের ১৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগারে পাঠান। পরীক্ষা শেষে ১১টি নমুনা অর্থাৎ ৮৪.৬২ শতাংশে ভেজাল ধরা পড়ে।

পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়ো দুধে মিল্ক ফ্যাট থাকার কথা কমপে ২৬ শতাংশ। কিন্তু জনস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ নমুনাগুলোয় নির্ধারিত মাত্রার কম মিল্ক ফ্যাট পাওয়া গেছে। এর কারণ মূলত পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়ো দুধের মধ্যে ননীবিহীন দুধ মেশানো। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বলছে, কোনো খাদ্যদ্রব্য থেকে কিছু তুলে নেয়া বা অতিরিক্ত কিছু যোগ করা হলে সেটি ভেজাল বলে শনাক্ত হবে। গুঁড়ো দুধে সঠিক মাত্রার মিল্ক ফ্যাট না পাওয়ায় সেটিও ভেজালের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বেলাল হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষ উচ্চমাত্রায় প্রোটিন পেতে পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়ো দুধ ব্যবহার করে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দুধ থেকে ফ্যাট তুলে নেয়ায় পুষ্টির মাত্রা কমে যায়। এ দুধ খাওয়ায় তির আশঙ্কা নেই।

সরকারের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সূত্রে জানা গেছে, গুঁড়ো দুধে ভেজাল শনাক্তে কয়েকটি বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এগুলো হলো মিল্ক ফ্যাট, আর্দ্রতা, মিল্ক প্রোটিন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে উৎপাদন  হয় কিনা। পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়ো দুধে মিল্ক ফ্যাট থাকতে হবে ২৬%, পনির ৫% ও মিল্ক প্রোটিন ৩৪ শতাংশ।

সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানান, আমদানি করা গুঁড়ো দুধ বন্দরে আসার পর বিএসটিআই ও আণবিক শক্তি কমিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কাস্টমসের ছাড়পত্র নিতে হয়। এ তিন বিভাগের ছাড়পত্র পাওয়ার পর টিনের কৌটায় আসা গুঁড়ো দুধ বন্দর থেকে খালাস করা হয়। এসব দুধ অনেক কোম্পানি প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগারে গুঁড়ো দুধে ভেজাল শনাক্ত হলেও ভিন্ন কথা বলছে মান নিয়ন্ত্রণকারী আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই। ফলে সংস্থাটির ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে বিএসটিআই পরিচালক (সিএম) কমল প্রসাদ দাস বলেন, ‘আমাদের ল্যাবরেটরি আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত। নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা পদ্ধতি সঠিক থাকতে হবে। অন্য ল্যাবরেটরিতে কোন পদ্ধতিতে পরীা করা হয়েছে, তা দেখার বিষয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থার একই পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত, যাতে মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।’

বাজারে পূর্ণ ননীযুক্ত ও ননীবিহীন গুঁড়ো দুধের দামে পার্থক্য রয়েছে। এ কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লোভে পূর্ণ ননীযুক্ত দুধে ননীবিহীন দুধ মেশায়।

ননীবিহীন গুঁড়ো দুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ননীবিহীন গুঁড়ো দুধ (স্কিম মিল্ক পাউডার) ৪২০-৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পূর্ণ ননীযুক্ত গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে ৫৭০-৭১০ টাকায়।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. সুবিমল সিংহ চৌধুরী বলেন, মাত্র ১৩টি নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যাবে না, দেশের ৮৪ শতাংশ গুঁড়ো দুধই ভেজাল। তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১টিতেই ভেজাল পাওয়া গেছে। সূত্র: বণিক বার্তা