সকল ধর্মের সম্প্র্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে : বিচারপতি আবদুর রউফ

সিলেট সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ

স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্র্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অতীতে ছিল বর্তমানে আছে ভবিষতেও থাকবে। তবে মাঝে মধ্যে স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সাম্প্র্রদায়িক সম্প্র্রীতিতে আঘাত হানে। এদের রুখতে হবে। সকল ধর্মের সম্প্র্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় করতে হবে।

গত ২৪ মে শনিবার সিলেটে সর্ব ধর্মীয় সম্প্রীতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সর্ব ধর্মীয় সম্প্র্রীতি সভা সিলেট শাখার উদ্যোগে নগরীর একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, রাম কৃষ্ণ মিশন সিলেট-এর অধ্য চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সঞ্জিব চৌধুরী, ইসকন মন্দিরের অধ্য নবদ্বীপ দ্বিজ গৌরাঙ্গ, জগৎ বন্ধু সুন্দর আশ্রমের অধ্য প্রিতম বন্ধু ব্রহ্মচারী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কামাল আহমদ চৌধুরী। সৈয়দা আফসানা মুন ও নিহার রঞ্জন দাসের যৌথ পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন মনিপুরী সম্প্র্রদায়ের প্রতিনিধি অনিল কিষাণ সিংহ, ব্রিগেডিয়ার (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নারায়ণ সাহা, অধ্যাপক তাহমিনা বেগম, অধ্য আতাউর রহমান পীর, এডভোকেট আজিজুল মালিক চৌধুরী, এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, প্রফেসর ননীগোপাল দাস, সত্যিপদ দত্ত, মাওলানা আবদুল মালিক চৌধুরী, সৈয়দ মুলতাজিম আলী বখতিয়ার, বৃষ্টি বড়ুয়া, কাউন্সিলর রাজিক মিয়া, প্রীতি রঞ্জন তালুকদার, সাংবাদিক মুহিত চৌধুরী, লেখক লাভলী চৌধুরী, অধ্যাপক বিজিত কুমার দে, জাতীয় ইমাম সমিতির মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, মইনুদ্দিন চৌধুরী, সর্ব ধর্মীয় সম্প্র্রীতি সভার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বায়জিদ মাহমুদ ও ঢাকা বিভাগের সদস্য সচিব আবেদুর রহমান প্রমুখ। সভায় সিলেটের ধর্মীয় সম্প্র্রীতি রায় সচেতনতা সৃষ্টির স্বার্থে সর্বধর্মীয় সম্প্র্রীতি প্রস্তুতি সভা সিলেট বিভাগীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সভায় মাল্টি প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত সর্বধর্মীয় সম্প্র্রীতি সভার বিভিন্ন কর্মসূচির প্রামাণ্য চিত্র এবং তাদের সাংগঠনিক থিম সং প্রদর্শন করা হয়।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ বলেছেন, স্রষ্টা মানুষকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়ে পাঠিয়েছেন। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানবিক কর্তব্য পালনে আন্তরিক থাকতে হবে। ভিন্ন জাতি-ধর্মে বিভক্ত হলেও সব মানুষের রক্তের রং লাল। স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের রয়েছে শত বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাজনৈতিক স্বার্থে আমাদের লালিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন নষ্ট করার কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানীখ্যাত হযরত শাহজালাল, শাহপরান (র.) স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যভূমি সিলেটের ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধন গোটা দেশবাসীর জন্য একটি মাইলফলক।

সভায় সাবেক বিচারপতি আব্দুর রউফ আরো বলেন, ধর্ম প্রচারকরা ভাষা দিয়ে মানুষের মধ্যে ধর্ম প্রচার করেননি। তারা ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করে ধর্ম প্রচার করেছেন। স্রষ্টার সমস্ত সৃষ্টিকে ভালোবাসার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু খারাপ আইনের কারণে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। অর্পিত সম্পত্তি (এনিমি প্রপার্টি) আমাদের দেশে এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে কেন্দ্র করে সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। তিনি বলেন, ভারতের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এত বছরেও কেন এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানে কেউ আন্তরিকতার পরিচয় দেখায় না। অর্পিত সম্পত্তি অধিগ্রহণ (এ্যাকোয়ার) করে এটা বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। সাবেক এই বিচারপতি আরো বলেন, নতুন প্রজন্মকে প্রত্যেক ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে। ধর্মীয় শিা পেলে তারা নৈতিক ভাবে বলিষ্ঠ হয়ে বড় হবে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এমন সম্প্র্রীতির আয়োজনে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা তার পক্ষ থেকে অব্যাহত থাকবে। সর্বধর্ম সম্প্র্রীতিসভা চাইলে তিনি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে এমন আয়োজন করবেন।

সঞ্জিব চৌধুরী বলেন, পারসেন্টেসের গোলক ধাঁধাঁয় ফেলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, দেশ হিন্দু শূন্য হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো কোনোদিন এই দেশে হিন্দু হবে না। জনসংখ্যার বৃদ্ধির অনুপাতে হিন্দু জনগোষ্ঠীও বাড়ছে। এদেশের মুসলমানরা ১৯৭১ সালে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক হিন্দুকে বাঁচিয়েছে।

সভাপতির বক্তৃতায় লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ বলেন, আমরা সবাই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাস করি। কিন্তু এই সভা রাজনৈতিক মতপার্থক্যের অনেক ঊর্ধ্বে। আমরা সকল ধর্ম-বর্ণ, দলমতের মানবতার মুক্তির জন্য বিচারপতি আবদুর রউফের নেতৃত্বে সারাদেশে কাজ করছি। আমাদের কাজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকেও অনুপ্রাণিত করবে।