দলীয় উপাচার্যে ডুবছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

দলীয় উপাচার্যে ডুবছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিার পরিবর্তে অনিয়ম-দুর্নীতি আর রাজনীতিই পাচ্ছে প্রাধান্য। দলবৃত্তির এই চর্চা শিক ও ছাত্ররাজনীতিকেও দিন দিন নাজুক করছে। হরহামেশা ঘটছে সহিংস ঘটনা। শিাবিদরা বলছেন, উচ্চশিার এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদে রাজনৈতিক পরিচয় নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেয়া উচিত। কিন্তু কোনো সরকার সেটা করছে না। সে কারণে প্রতিনিয়ত কমছে শিার মান। আন্তর্জাতিক তালিকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো স্থান করে নিতে পারছে না।

জানা গেছে, দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করেই অধিকাংশ উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। যে দল মতায় আসে সেই দলের অন্ধ সমর্থকরা এ পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। ফলে তারা দলের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। ঢালাওভাবে নিয়োগ দিচ্ছেন আত্মীয়-স্বজন ও দলের সমর্থকদের। সূত্র জানায়, দলীয় উপাচার্যদের সিংহভাগের বিরুদ্ধে একের পর এক আসছে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। অনেকে নিজেদের স্বার্থে ক্যাম্পাসে সবসময় সৃষ্টি করে রাখছেন অস্থিরতা। শিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে প্রশাসনিক, একাডেমিক কোনো েেত্রই যোগ্যতা নয়, গুরুত্ব দিচ্ছেন দলীয় আনুগত্যকে। শিক, প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও তারা তৈরি করে রেখেছেন বিরোধ। ঢাকা, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জগন্নাথ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল, খুলনা প্রকৌশল, সিলেট শাহজালাল, কুষ্টিয়া ইসলামী, পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি প্রায় সব উচ্চশিা প্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে একই চিত্র। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে উপাচার্যও বদল হয়ে যায়। নিয়োগে গুরুত্ব পায় শিক রাজনীতিতে তার পারফরম্যান্স। আবার একই দলের সমর্থকদের মধ্যে শীর্ষ পদটিতে যাওয়ার জন্য চলে লবিং-তদবির। বিভিন্ন েেত্র রাজনৈতিক বিবেচনা মুখ্য হওয়ায় অনেক শিক কাসে না গিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দল মতায় গেলে অনেকে আলাদা শিাপ্রতিষ্ঠান গড়ে শিাবাণিজ্যও করেন। উপাচার্যদের ছত্রছায়ায় দলীয় ছাত্র সংগঠন বেপরোয়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে লিপ্ত থাকছে। ভাগ-বাটোয়ারা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে রক্তয়ী সংঘর্ষে। দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিংহাসন হারালেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপাচার্যদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, একজন শিক সবসময় সবার ঊর্ধ্বে থাকবেন। কোনো শিকের দলীয় মনোভাবে কাজ করা উচিত নয়। যা কিছু করা দরকার, সব কিছু জাতির স্বার্থে করতে হবে। কিন্তু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। এটা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক হিসেবে কাম্য নয়।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বুয়েটে পর্যন্ত এখন দলীয়করণ চলছে। যারা শিক হওয়ার যোগ্য নন, তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তারা ৩৫ বছর ধরে শিার্থীদের কী পড়াবেন? উচ্চশিায় দলীয়করণ ত্যাগ করা জরুরি। এই ব্যাপারগুলো সরকারকে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক অধ্যাপক দুর্গাদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘উপাচার্যের পদটাই এমন। কারও না কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হয়। সরকারই উপাচার্য নিয়োগ করে। সরকারের কথা তো শুনতে হবে।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ‘কোনো উপাচার্যের দলীয় মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে যে সরকার মতায় থাকে সেই সরকারের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কিছু সুযোগ-সুবিধা নিতে চায়। নয় তো পরিস্থিতি ও পরিবেশ অশান্ত হয়ে পড়ে।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয়করণের সুযোগ নেই। শিা নিয়ে দলীয়করণ করলে শিার মান ও শিাপ্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখা সম্ভব নয়।’ বা : প্র :