সংবাদ শিরোনামঃ

খুনিদের বিচার করতে হবে ** দেশে সঙ্কট আরো বাড়বে ** লাগামহীন লুটপাটের যোগান দিতেই সরকার দাম বাড়াচ্ছে ** ব্যাংকিং খাতে সীমাহীন লুটপাট ** গাজায় গণহত্যার দায়ে ইসরাইলের বিচার দাবিতে বিশ্ব জনমত গঠন করতে হবে ** বাংলাদেশে অদ্ভুত কাণ্ড শুরু হয়েছে ** প্রতি বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে ** গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া জনগণের জানমাল নিরাপদ নয় ** এ এক অসহায়ত্বের যুগ ** বাংলাদেশ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ ** নাটোরে মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩৪ ** পুলিশের গুলিতে পা হারাল সাজু ** তেঁতুলিয়ার টুপি কারখানার শ্রমিকরা মহাব্যস্ত ** ২৮ অক্টোবর : ইতিহাসের কালো অধ্যায় ** মানবতার কান্না ** ২৮ অক্টোবর ও তার বেনিফিশিয়ারি ** ২৮ আক্টোবর যেন ফিরে না আসে বার বার ** রক্তের তৃষ্ণা প্রবলতর হয়েছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ৯ কার্তিক ১৪২১, ২৮ জিলহজ ১৪৩৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৪

॥ আবু আরমান॥
আপনজনের হাতেই খুন হচ্ছে আপনজন। নিজের পরিবারের সদস্যরাই হয়ে উঠছে ঘাতক। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে আসা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে আশঙ্কাজনক হারে একের পর এক ঘটে চলছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড। তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে খুন করতে দ্বিধা করছে না কেউ। স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে, স্ত্রী খুন করছে স্বামীকে। ভাইয়ের হাতে খুন হচ্ছে ভাই, সন্তানের হাতে খুন হতে হচ্ছে মা-বাবাকে। আবার নিজ সন্তানকেও হত্যা করতে হাত কাঁপছে না বাবা-মায়ের। এক ধরনের সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইনি প্রক্রিয়ায় বিলম্বসহ প্রশাসনিক কাঠামোর নানা দুর্বলতা সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। বর্তমান সমাজের এমন বেহাল অবস্থা à¦¯à§‡Ñ à¦°à¦¾à¦œà¦¨à§€à¦¤à¦¿à¦° কারণে যত না খুন হয় তার চেয়ে বেশি খুন হচ্ছে সমাজের অভ্যন্তরীণ কারণে। গত ২০০৯-২০১৩ পর্যন্ত এই ৫ বছরে সারা দেশে হত্যাকান্ডের সংখ্যা বছরে বিশ হাজার ছয়শত আশিজন। অথচ চলতি বছরে তিন হাজার একষট্টিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় খুন হয়েছেন ১৭২ জন। প্রতিদিন গড়ে ১৪-১৫ জন খুন হচ্ছেন।

এসব হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগই ঘটেছে সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতার কারণে। এই হত্যাকাণ্ডের সিংহভাগই রাজনীতির চেয়ে সমাজের ভেতরের অবক্ষয়কে ইঙ্গিত করে। সমাজে যে অশান্তি এবং অস্থিরতা বিরাজ করছে তার মূল কারণ সমাজের নৈতিক অবক্ষয়। যার জন্য রাজনৈতিক হত্যার চেয়ে সামাজিক হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে। মানুষের মাঝে দয়া-মায়া, শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। হিংস্রতা বেড়ে গেছে। এর পেছনে সমাজ যেমন একাংশে দায়ী, তেমনি দায়ী পরিবার। একটি শিশু সবার আগে যে বিদ্যালয় হতে পাঠ লাভ করে তা হলো পরিবার। সমাজে অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো পরিবারের সদস্যের সাথে সন্তানের দূরত্ব। পরিবারে একটি সন্তান কীভাবে মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হচ্ছে তা যদি বাবা-মা না জানে তবে এটা অবিশ্বাসযোগ্য।

বর্তমানে আমাদের সমাজ নেশায় ছেঁয়ে গেছে। সমাজে এখন অনেক নেশার উপকরণ যা অত্যন্ত সহজলভ্য। গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানা কিসিমের নতুন নতুন নেশা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। নেশায় বেশি আসক্ত হচ্ছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীরা এবং এর ফলে সমাজে যেমন অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে অন্যদিকে খুন, ছিনতাই রাহাজানিসহ নানান ধরনের অপরাধও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পারিবারিক ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৃশংস খুনের ঘটনা বাড়ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বাড়ার নেপথ্যে কাজ করছে। বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটছে যৌতুক, পরকীয়া, দাম্পত্য সমস্যা, পারিবারিক কলহ, জমিজমা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে। নৃশংস এসব ঘটনার শিকার হচ্ছে শিশুরাও। সব খুনের ঘটনাই নৃশংস হলেও খুনের ধরন পাল্টেছে এখন। গলা কেটে হত্যার ঘটনা বাড়ছে দিনকে দিন। হাত-পায়ের রগ কেটেও নিশ্চিত করা হচ্ছে মৃত্যু। তুলে নেয়া হচ্ছে চোখ। পাওয়া যাচ্ছে লাশের খণ্ডিত অংশ। অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। সামাজিক বন্ধনেও ধরেছে চিড়। মানুষ হয়ে উঠছে ভোগবাদী। কমছে মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ। একারণে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে একে অপরকে নৃশংস খুন করতে দ্বিধা করছে না।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক ও পারিবারিক কারণে নৃশংস খুনের সংখ্যা বাড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে। একমাত্র আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই এসব খুন-খারাবি ঠেকানো সম্ভব। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, খুনের ঘটনার পরও দায়ী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রভাব, ক্ষমতা আর অর্থ দিয়ে ‘ম্যানেজে’র মাধ্যমে পার পেয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি ঘটনাও ঘটলে সেটি অন্যদের মধ্যে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়। অন্যরা উৎসাহিত হয় যে, খুন করেও ‘শক্ত খুঁটি’ থাকলে পার পাওয়া যায়। এজন্য অপরাধ বিশেষজ্ঞরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।  সমাজে যে সব কারণে অস্থিরতা বাড়ছে সেসব বিষয়গুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ না নেয়া পর্যন্ত সামাজিক অপরাধ ও মানুষের মানসিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। মানুষের মনের খারাপ চিন্তাকে পাল্টে দিতে হবে। সামাজিক কাঠামোর ভিত্তি মজবুত করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিজ বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় তিন মেয়েসহ মাকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। রাজধানীতে বিমাতার হাতে এক শিশুসন্তান নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। গত ১৯ অক্টোবর রোববার একই দিনে গাজীপুরে এক স্বামী তার স্ত্রীকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। অপর ঘটনায় পারিবারিক কলহের জের ধরে এক স্ত্রী তার স্বামীর গোপনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে দেয়। গত ১৮ অক্টোবর শনিবার রাজধানীর জুরাইনে হাত-পায়ের রগ কেটে এক যুবককে হত্যা করা হয়। গত ১৫ অক্টোবর বুধবার একই দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই ব্যক্তি তাদের স্ত্রীর হাতে খুন হয়েছেন। হত্যার পর তাদের একজনের লাশ ঘরের মাটি খুড়ে পুতে রাখা হয়েছিল। অপরজনের লাশ রাখা হয়েছিল ওয়্যারড্রোবে। গত ১ অক্টোবর এক ব্যক্তির তিন খণ্ড লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২১ সেপ্টেম্বের সন্তানের নাম রাখার অনুষ্ঠান নিয়ে তুচ্ছ বিতর্কে এক স্বামী তার স্ত্রীকে আঁতুড়ঘরেই পিটিয়ে হত্যা করে। গত ২২ আগস্ট রাজধানীর ডেমরায় কামরুল নামে এক তরুণকে তার মায়ের পরিকল্পনাতেই খুন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ১ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে এক স্কুলছাত্রকে কয়েকজন প্রতিবেশী চোখ উৎপাটন ও গোপনাঙ্গ কেটে হত্যা করে। রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গিয়াসউদ্দিন (৩৭) নামে এ ব্যক্তি ছুরিকাহত হয়ে নিহত হয়েছে। স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে গত ১৯ অক্টোবর রোববার রাত ১টার দিকে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। একইদিন নেশার টাকার জন্য সিংগাইর উপজেলার নীলটেক কাটাখালী গ্রামে সকাল ১০টায় ছেলে সাইদুর (৩২) সামুরাই (ছুরি) দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে তার পিতা মহির উদ্দিন প্রামাণিক (৫৫) ও মা সুফিয়া খাতুন (৪৮) কে। পরে সে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। গত সোমবার ভোরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর জেলা পরিষদ মার্কেটের চতুর্থ তলায় অবস্থিত তাহফিজুল কুরআন নুরানী হাফেজী মাদরাসার রান্নাঘর থেকে শিক্ষার্থী রায়হানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ জোরালো করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে পারিবারিক অনুশাসন। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে। তা না হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।