কা’বার পথে

মোহাম্মদ বেলাল
অনেক দিন থেকে পবিত্র কা’বা (আল্লাহর ঘর) জিয়ারত করার ইচ্ছা করেছিলাম, কিন্তু সুযোগ আসে আবার যায়। নিয়মিত টেলিভিশনে লাইভ নামাজগুলো দেখতাম। আবদুর রহমান সোদাইস, সউদ শারিমের মধুর কণ্ঠে পবিত্র কুরআন শুনতাম। কিন্তু মন ভরতো না। একটা কিছু সরাসরি দেখা আর টেলিভিশনে দেখা অনেক পার্থক্য। অবশেষে মহান আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবাণীতে সুযোগটা পেয়ে গেলাম, সন ২০০৪।

একদিন আমার এক ফ্রেন্ড (মিসরীয়) আমাকে বললো মক্কায় যাবে? আমাদের কফিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের দু’জনকে ওমরা করার জন্য পাঠাবে। মূলত আমরা দু’জন একসাথে কাজ করতাম। অবশেষে যেমন কথা তেমন কাজ। আমাদের পাসপোর্ট ওমরা অফিসে জমা দেয়া হলো। মনে মনে অনেক খুশি আল্লাহর ঘর পবিত্র কা’বা দেখবো। পবিত্র কা’বা জিয়ারত করবো। মাসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করবো। যেই মসজিদে নামাজ আদায় করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। তাইতো মন অনেক খুশি। ঠিক এক সপ্তাহ পর আমাদের ভিসা লাগলো। নির্ধারিত সময়ে আমরা ওমরা অফিসে গেলাম। আসরের নামাজের পর গাড়ি ছাড়লো। মাগরিবের সময় আমরা বর্ডারে পৌঁছে গেলাম। বর্ডারে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। ৩/৪ ঘণ্টা পর আমাদের গাড়ি সৌদি আরবে প্রবেশ করলো। গাড়ি চলতে লাগলো। সন্ধ্যা গেলো, রাতগেলো ফজর গেলো আবার জোহর গেলো। পরদিন আসরের নামাজের  সময় আমরা মিকাতে পৌঁছলাম। সেখানে গোসল আসরের নামাজ ও ওমরার নিয়ত করলাম। এরপর আমাদের গাড়ি মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়না হলো। মিকাত থেকে মক্কার দূরত্ব ৭০/৭৫ কিলোমিটার। ঠিক মাগরিব নামাজের সময় আমরা মক্কায় পৌঁছলাম। আমাদের জন্য আগে থেকে হোটেল বুক করাছিল। হোটেলে যাওয়ার আগে মসজিদুল হারামের প্রধান গেইট দিয়ে দূর থেকে পবিত্র কা’বা ঘরকে এক নজর দেখতেই আমার শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেলো। অবশেষে আমরা হোটেলে গিয়ে আমাদের জিনিসপত্র রেখে আমরা মসজিদুল হারামের দিকে গেলাম।

কিং আবদুল আজিজ গেইট দিয়ে আমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলাম। ভেতরে গিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে নত শিরে শুকরিয়া আদায় করলাম। তারপর পবিত্র কা’বা ঘর তাওয়াফ শুরু করলাম। আমার মনে হচ্ছে যেন আমি হাসরের ময়দানে মহান প্রভুর দরবারে আছি। পবিত্র কা’বা ঘর তওয়াফ করার পর মাকামে ইব্রাহীমে গিয়ে দু’রাকাত নামাজ পড়লাম। তারপর পাশেই দেখতে পেলাম পৃথিবীর সুমিষ্ট উৎকৃষ্ট পানি নির্ভেজাল পানি জমজম।  নিয়তের সাথে পেট ভরে জমজমের পানি পান করলাম। আহা যত পান করি ততই ভালো লাগে। এরপর আমরা সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার সাঈ করলাম। পরিশেষে মাথা ন্যাড়া করে আমাদের ওমরা পালন করলাম। এরপর বাসায় গিয়ে এহরামের কাপড় পরিবর্তন করে আবার মাসজিদে হারামে গিয়ে পবিত্র কা’বা ঘরকে সামনে রেখ মাসজিদের সিঁড়িতে বসে পড়লাম আর ভাবতে লাগলাম, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হুকুমে হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার পুত্র ইসমাঈল (আ.) এই সুন্দর বরকতময় ঘর তৈরি করেছিলেন। দেখতেছি হাজার হাজার নরনারী তাদের রবের সামনে হাজির হয়েছেন। এরপর ওয়াক্তের নামাজগুলোতে আমরা আব্দুর রহমান সোদাই ও সওদ সারিমের সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত শুনতে লাগলাম। এদিকে আমাদের সময় যে শেষ হয়ে এলো। আমাদেরকে যে চলে আসতে হবে। পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা থেকে কার না আসতে মন চায়। তবুও যে আসতে হবে। নির্ধারিত সময়ে গাড়ি ছেড়ে দিল। গাড়িতে বসে পেছনে বারবার তাকাচ্ছি। যেন পবিত্র কা’বা ঘর আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

লেখক : কুয়েত প্রবাসী