প্রবাহমান সময়ে সাহিত্য পত্রিকার প্রয়োজন

আসাদুজ্জামান আসাদ
জন্মের পর প্রত্যেক মানুষ, মায়ের কোল থেকে কথা বলা শুরু করেন। প্রত্যেক মানুষের কথা বার্তায় সাহিত্যের নানা রুপ, গুণ, রস থাকে। সে হিসেবে প্রত্যেক মানুষ সাহিত্যিক। আসলে সাহিত্য কি? কিভাবে সাহিত্যের বিকাশ বা সৃষ্টি হয়? সে প্রশ্নটা থেকে যায়। তবে এ প্রশ্নের  জবাব খুবই সহজ আবার খুবই কঠিন। কেননা, প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে সর্বদা একটা মনোভাব বিদ্যমান থাকে। সেই মনোভাবটাই হলো সাহিত্য। কেউ মনের ভাবকে সাহিত্যের মাপকাঠি, রস কস, ছন্দময় শব্দে, নান্দনিক ভাষা, শিল্পী গুণে ও মধুময় ভাষায় প্রকাশ করেন, আবার কেউ মনোমুগ্ধকর ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন না। যারা প্রকাশ করেন তারাই কবি, সাহিত্যিক, রচনা শিল্পী।

আমরা বাংলাদেশী ও বাঙালি। বাংলা ভাষায় কথা বলি, পড়ালিখা শিখি। আমাদের মাতৃভাষায় প্রতিদিন অসংখ্য পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে।  এসব পত্রিকায় দেশী-বিদেশী, মফস্বল, নারী, কৃষি, খেলাধুলা, ধর্মীয়, কম্পিউটার, শিক্ষা-দীক্ষার পাতাসহ অনেক পাতা প্রকাশ পায়। পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন সাহিত্যে পাতা থাকে। যা দিয়ে  সাহিত্য পাঠকদের চাহিদা অপূরণ থেকে যায়। বলা যায়, এটা পত্রিকার সীমাবদ্ধতা। অপর দিকে একটি সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিন যথাযথভাবে পাঠকের চাহিদা পূরণ করে থাকেন। দেখা যায়, দৈনিক পত্রিকা ও সাহিত্য পত্রিকার মাঝে একটা বড় পার্থক্য রয়েছে। দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ থাকে, সাহিত্য পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে সংবাদ থাকে না। দৈনিকে বিজ্ঞাপন থাকে, ম্যাগাজিনে থাকে না। দৈনিকে পাতার সীমাবদ্ধতা থাকে, সাহিত্য পত্রিকায় পাতার সীমাবদ্ধতা থাকে না। এ ছাড়াও আরো অনেক পার্থক্য রয়েছে।

আমাদের সমাজ জীবনে সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের অনেক প্রয়োজন।  কেননা, সাহিত্যের সাথে মানুষের সু-গভীর সর্ম্পক রয়েছে। সাহিত্য উড়িযে দেয়, জীবনের সব বিষণœà¦¤à¦¾à¦•à§‡à¥¤ সাহিত্য ছাড়া মানুষ চলতে পারেন না। সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের সুখ, দুঃখ হাসি কান্না, ব্যথা বেদনা, মান-অভিমান,মায়া-মমতা এবং ভালোবাসা প্রকাশ পায়। এমন কিছু লেখা আছে, যা স্থানীয় বা জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করা অসম্ভব। পক্ষান্তরে সে লেখাটি সাহিত্য পত্রিকায় সহজেই প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশিত লেখাটি ব্যক্তি, সমাজ,জাতি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোড়ন বা ঝড় তুলেছে। সাহিত্যে সমগ্র মানব জাতীর প্রতিচ্ছবি প্রকাশ পায়। যেমন- ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, কৃষ্টি কালচার, মানবতা বোধ এবং পৃথিবীর করুণ আর্তনাদ তুলে ধরার চেষ্টা করেন মাত্র।  কবি ও সাহিত্যিকগণ মনের উৎকর্ষ সাধন করে  ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনের আকা-বাক, চড়াই-উত্তরাই পথ পেরিয়ে আবিষ্কার করেন সাহিত্যের নতুন চোখ। সেই চোখের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা চেতনায় নতুন পথ আবিস্কার করেন। এটাই তাদের মহত্ব বা কর্তৃত্ব।

সাহিত্য বা কবিতার জন্ম মানুষের ভাষা থেকে। ভাষা দিয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু। আর ভাষার জীবন ব্যকরণ থেকে। কিন্তু তার আগে ব্যকরণকে জীবন্ত করতে হবে। সব কিছুর মাঝে থাকতে হবে নীতিমালা। নীতিমালা মেনেই পূরণ হবে মনের ক্ষুধা। প্রতিটি সমাজে অনেক কবি,সাহিত্যিক বা রচনা শিল্পী আছে। সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে আবর্জনাময় কয়েকটা পাতা তুলে দিয়ে বলেন, এ লেখাটা ছাপিয়ে দাও। আবর্জনাময় লেখাটা সাহিত্য পত্রিকাকেই হজম করতে হয় । কেননা, সাহিত্য পত্রিকা দ্বারা সাহিত্যিক, কবি এবং রচনা শিল্পী তৈরি হয়। আর তৈরি করার কাজটা নিখুত মানুষ ছাড়া অসম্ভব । রচনা শিল্পীরা জ্ঞানের কথা, রম্যে-রসিকতা আবার ব্যঙ্গত্মক ভাব দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে সমাজের ত্র“টি ও ভুলগুলো, দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। 

আমার আলোচনায় যতটুকু বলার প্রয়োজন, ততোটুকু বলার ভাষা আমার জানা নেই। তবু একটু বলার চেষ্টা করছি। যখন কোনো লেখকের স্বরচিত ছড়া, কবিতা, গল্প কিংবা উপন্যাস সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়, তখন সে আনন্দের সাগরে ডুবে যায়। লেখার উৎসাহ ও প্রেরণা তার মাঝে বৃদ্ধি পায়। সময়ের চলমান বিবর্তনে তার লেখা যখন স্থানীয় বা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পায়, তখন সে আরো মহাআনন্দ অনুভব করেন। আমাদের সমাজ জীবনে- স্কুল ম্যাগাজিন, দেয়াল লেখিকা,উৎসব ম্যাগাজিন, সাহিত্য ম্যাগজিন এবং সাহিত্য পত্রিকার যথেষ্ট চাহিদা ও পাঠক রয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রচুর পরিমাণ সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিন বের হচ্ছে। এ সব সাহিত্য পত্রিকায় কবি, সাহিত্যিক বা শব্দ শিল্পীরা সৃস্টির উল্লাসে মেতে আছেন। সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিন সম্পাদক লেখার দোষ-গুণ, ভালো-মন্দ, মাপ-কাটি, লেখার কৌশল, আবেগ ইত্যাদি মূল্যায়ন করেন। লেখার ভুল ত্র“টি সংশোধন করাও সুযোগ তৈরি করেন। সম্পাদক প্রতিটি লেখার চুল চেড়া বিশ্লেষণ করেন। তাই প্রবাহমান সময়ে সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের মুল্যায়ন ও গুরুত্ব অপরিসীম। নতুন কবি বা লেখকরা একদিন বড় কবি বা লেখক হিসাবে স্বীকৃতি পাবেন। অর্থবহ শব্দের ছন্দ তুলে তারা বাক্যকে শ্র“তিমধুর করে তুলেন। কবিতায় ছন্দ, মাপ, পরিমাপ, লেখার বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি মেপে কবিতা,ছড়া ও সাহিত্য রচনা করেন। কবিতায় থাকতে হয় অন্তরাল। থাকতে হবে আবিস্কারের রহস্য। সব কিছু নিয়ম কানুন মেনে রচনা শিল্পীরা সাহিত্যে  তৈরি করে চলেছেন ।

আমার বলতে কোনো কৃপণতা নেই। ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক সাহিত্য পত্রিকা রয়েছে। সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, অর্র্থনীতি, রাজনীতি, শাসন-শোষণ, দুর্নীতি, স্বদেশ প্রেম, পাহাড় পর্বত, নদী নালা,আকাশ বাতাস, মা, মাটি ইত্যাদি বিষয়ে ছড়া কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসসহ নানা বিষয়ের লেখা প্রকাশিত হয়ে আসছে। এ সব লেখার বন্ধনে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের চরিত্র সুন্দরভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি সাহিত্য পত্রিকায় জ্ঞানী, গুণি, কবি, সাহিত্যিকদের লেখা নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। নতুন লেখার ক্ষেত্রে সাহিত্যের রসকস সংযোগ, সঙ্কোচন করার সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে। লেখকরা  অতি সহজে তথ্য, প্রমাণসহ সহজ সরল ভাষায় লেখা উপস্থাপন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। লেখার বৈশিষ্ট্য, নীতি-মালা মানার চেষ্টা করেন। যে ভাষায় লিখলে পাঠকরা সহজে বুঝতে পারেন সে বিষয়টি খেয়াল রাখেন। এই জন্য সাহিত্য ক্যাম্পাসে সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সর্ব শেষে বলতে চাই বর্তমান সময়ে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ ও সংরক্ষণ করার কোনো বিকল্প নেই। আসুন, আমরা সবাই একত্রিত হয়ে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ ও সংরক্ষণ করি। 

লেখক : সাংবাদিক, গ্রন্থকার।