সংবাদ শিরোনামঃ

স্থানীয় সরকার ধ্বংসের নীলনকশা ** কেন মানুষ অথৈ সাগর পাড়ি দিচ্ছে, দায় কার? ** দেশকে রাজনীতিহীন করার ষড়যন্ত্র ** গণতন্ত্রহীনতা দেশকে সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাবে ** আফগানিস্তানে শান্তির সম্ভাবনা ** গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারে ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে হবে : বিচারপতি আব্দুর রউফ ** নরেন্দ্র মোদির সফর : বাংলাদেশের প্রত্যাশা! ** গণতন্ত্র ছাড়া দেশের উন্নতি কখনই সম্ভব নয় ** নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রয়োজন ** সোনা নয়, সোনালী ফাঁস ** নিখোঁজ আর গুম ** জগতসেরা পর্যটক ইবনে বতুতা ** বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই ** কুষ্টিয়ায় পারিবারিক কলহে নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাড়ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২২, ৩ শাবান ১৪৩৬, ২২ মে ২০১৫

জাহিদ আবেদীন
বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত? তা জানতে নেটে সার্চ দিয়ে যা জানা গেলো, তা হলো প্রায় ত্রিশ লাখ। ধরা যাক এই ত্রিশ লাখ ইউজার গড়ে প্রতিদিন যদি এক ঘণ্টা করে ফেসবুকে সময় দেয় তাহলে প্রতিদিন ত্রিশ লাখ শ্রম ঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে এই ফেসবুকে। আর এর প্রায় ৭৫% সময় নষ্ট হচ্ছে নানাভাবে।

যদিও কেউ কেউ বলেছে, মিসরের পিরামিড নির্মাণে প্রয়োজন হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। তবে ড. হেরিবার্ট ইলিগ এবং ফ্রাঞ্জ লনারের মতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ শ্রমিক হলে ৬,৭০০জন শ্রমিকের পক্ষেই মিসরের খুফু পিরামিডটি নির্মাণ করা সম্ভব। আর এই পিরামিড নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ থেকে ২০ বছর।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) নিময় অনুযায়ী প্রতিদিন একজন শ্রমিক ৮ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ছয় দিন অর্থাৎ (৪৮ ঘণ্টা) কাজ করবে। তবে এর অতিরিক্ত হলে সেটা ওভারটাইম হিসেবে পরিগণিত হবে অর্থাৎ তার জন্য তাকে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিতে হবে। যাহোক, আমরা যদি ৬,৭০০ শ্রমিকের ২০ বছরের শ্রমঘণ্টা হিসাব করি তাহলে পাবো ৪,১৯,৪২,০০০ শ্রমঘণ্টা। অর্থাৎ বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যয়িত  সময়ে প্রায় প্রতি ১৪দিনে একটা করে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য মিসরীয় পিরামিড নির্মাণ করা সম্ভব।

প্রতিটি প্রযুক্তিরই উদ্ভাবন হয় কোনো না কোনো মানব কল্যাণের জন্য। কিন্তু পরিতাপের বিষয় মানুষ সেখান থেকে কল্যাণের পরিবর্তে তার অপব্যবহারেই বেশি লিপ্ত থাকে। আমেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গসহ পাঁচ বন্ধু মিলে ফেসবুক সাইটটি তৈরি করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এই সাইটের মাধ্যমে প্রিয়জন কিংবা বন্ধু-বান্ধব যাদের সাথে সময়ের কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে দেখা সাক্ষাৎ হয়ে উঠে না তাদের সাথে বিশেষ কোনো মুহূর্তের ছবি অথবা অনুভুতিকে শেয়ার করা। কিন্তু আমাদের দেশে এর ব্যবহারের বহুমাত্রিকতার ফলে এর আবিস্কার উদ্দেশ্যের বিবর্তন ঘটেছে। ফেসবুকের অপব্যবহারের ফলে সবচাইতে বেশি যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে পারিবারিক কলহ। আবার কেউ কেউ এই পারিবারিক কলহ এড়াতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ফেইক আইডি’র যা প্রকৃত পক্ষে তার চারিত্রিক অবক্ষয়ের আরেক স্তর নিচে নামিয়েছে নিজেকে। যুব সমাজের একটা বড় অংশ এতটা ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়েছে যে, তারা তাদের লেখা-পড়া ও অন্যান্য সামাজিক দায়িত্ববোধ ভুলেই যায় এই ফেসবুকের ফলে। চলছে এইচ.এস.সি সমাপনী পরীক্ষা অনেক ছোট ভাই-বোনদের দেখি সকালে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে সেলফি, পরীক্ষা দিয়ে এসে আবার সেলফি। বাসে বসে ফেসবুক চালাতে চালাতে কখন যে গন্তব্য অতিক্রম করেছে এর খবর রাখেন না অনেকেই। ফেসবুকের ফলে অনেকের অফিসের সপ্তার কাজ জমে গেছে। কাজের টার্গেট পূরণ না হওয়ায় বিরক্ত বস। এভাবে চলতে থাকলে নিশ্চিত ডিমোশন কিংবা চাকরি থেকে অব্যাহতি জানার পরেও ফেসবুক প্রেম ছাড়তে পারছে না অনেক ফেসবুক প্রেমী। আগে মানুষ কারও বিপদ দেখলে সাধ্যমত তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতো। এখন কেউ রাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছে কিংবা পকেটমারকে ধরার জন্য সাহায্য চাচ্ছে এই সময় সাহায্যের পরিবর্তে ঐ দৃশ্যটিকে মোবাইলে ধারণ করার জন্যই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কেউ কেউ। কেননা অমন একটা ছবি যদি তোলা যায় আর যদি ফেসবুকে পোস্ট করা যায় তাহলে লাইক আর কমেন্টস দেখে কে! সবাই যেন মিডিয়াম্যান।

এতো গেল অন্যের বিপদের কথা। ফেসবুক আসক্তিতে অনেকে নিজের বিপদের কথাও ভুলে যাচ্ছে। বাসের সাথে ধাক্কা লেগে রিক্সা যাত্রী পড়ে গিয়ে পা রক্তাক্ত! কোথায় সে আগে ডাক্তারের কাছে যাবে তা না করে বন্ধুর হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে নিজে প্যান্টটা একটু উচু করে ধরে ছবি তোলে পাঠিয়েছে ফেসবুকে। হায়রে ফেসবুক আমাদেরকে বানালে কতটা বেয়াকুফ।

অনেক ছেলে, মেয়েদের ছবি দিয়ে খুলছে নতুন নতুন আইডি। দীর্ঘদিন মেয়ের মতো করে স্ট্যাটাস দেওয়া, মেয়েদের মতো করে কমেন্টস করা এবং মেয়ে সেজে অন্যের সাথে প্রতারণা করতে করতে এর একটা মনস্তাত্বিক বিরূপ প্রভাব পড়তেও পারে সে মানুষটির মাঝে। যা তাকে হয়তো মেয়ে বানিয়ে ফেলবে একথা সত্য না হলেও যদি ছেলে এবং মেয়ের মাঝামাঝি মানসিকতায় রূপ নেয় তাহলেই তো মহা সর্বনাশ!  বন্ধুরা হাসছেন?

প্রতিদিনই ফেসবুকে বাড়ছে চেনা-অচেনা অনেক বন্ধু। আর একটা লাইক পেলে ঋনী হয়ে যাচ্ছেন তার কাছে। তাই সেই ঋণ শোধ করতে হচ্ছে তার পোস্টে লাইক দিয়ে কিংবা কমেন্টস করে। আর কমেন্টস-এর উত্তর দেওয়া তো অনেকটা মহাকর্তব্য হয়ে পড়ে। তাই লাইক আর কমেন্টস দিয়ে সকলের পোস্ট দেখে দেখে সময় পেরিয়ে যায়। অথচ এভাবেই আপনি ভুলে যাচ্ছেন অতি প্রয়োজনীয় কাজের কথা। আপনার অজান্তেই আপনি জড়িয়ে যাচ্ছেন ফেসবুকের মায়াবী অন্তরজালে। ফেসবুক কিংবা ইন্টারনেটকে এখন অনেকে আবার ফিশিং নেট হিসেবেও ব্যবহার করছে। আপনার অচেনা ফেসবুক বন্ধুদের মধ্য থেকে কোনো সুন্দরী বন্ধু যদি আপনাকে হঠাৎ ইনবক্স করে হায় বলে, তখন নিশ্চই খুব পুলকিত হবেন। কিন্ত এর কিছুক্ষণ পর যদি বিনীত অনুরোধ করে একটা মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলে কিছু টাকা পাঠাতে তখন এমন প্রস্তাব কি ফিরিয়ে দেওয়া যায়! টাকা পাঠাতে থাকেন পকেটে টান পড়লেই বুঝবেন মজা। অনেকের অভিজ্ঞতার কথা জেনে বলছি। টাকা পাঠানোর পর সেই ফোন আর কখনই রিসিভ হয়নি এমন ঘটনাও শোনা যায়। শুধু টাকা গিয়েই কি ক্ষ্যান্ত! এভাবে অনেকেই পা বাড়াচ্ছে চারিত্রিক অবক্ষয়ের পথে।

আমাদের জন্য সবচাইতে ভীতির বিষয় হচ্ছে যারা ফেসবুক ইউজার কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম, তারা কিন্তু সমাজের শিক্ষিত ও মেধাবী জনশক্তি। সুতরাং শ্রমঘণ্টা বিনষ্ট কিংবা এর সমাধান টাকার অংকে হিসাব করলেই হবে না বরং আমাদেরকে হিসাব করতে হবে একটি সমাজ দাঁড়িয়ে থাকে যে মেধাবী ও সৎ চরিত্রবান নাগরিকের উপর সেই সমাজ বিনির্মাণের দায়িত্ব বোধ থেকে।

ফেসবুক কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহারের উপকারিতা অপরিসীম এ কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু পাশাপাশি আমাদেরকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এর অপব্যবাহার যাতে না হয়।

ই-মেইল : zahidabedin@yahoo.com

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।