সংবাদ শিরোনামঃ

বেকায়দায় সরকার ** দেশে চলছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ** লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তি : আওয়ামী লীগের মুখোশ উন্মোচন ** পাকিস্তানের এমকিউএমকে অর্থায়ন করছে ভারত : বিবিসি ** সুকৌশলে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার ** গৃহশ্রমিকের নিরাপত্তা নেই, মর্যাদা নেই ** প্রতিটি রাষ্ট্রের মূলকথা হলো গণতন্ত্র ** পবিত্র রমজানে মিথ্যা অভিযোগে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করা হোক ** রাজনীতির মৃত্যুপুরিতে জল্পনা-কল্পনা ** দিনাজপুরে কীটনাশক মিশ্রিত লিচু খেয়ে ১১ শিশুর মৃত্যু ** গণবিরোধী বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব ** ‘জাতির সকল দুর্দিনে অতীতের মতো জামায়াতে ইসলামী তার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে’ ** ধনীর দুলাল সালমান (রা.) **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আষাঢ় ১৪২২, ১৫ রমজান ১৪৩৬, ৩ জুলাই ২০১৫

সাজিদা ইসলাম পারুল, দ্য রিপোর্ট : বারো বছরের কুলসুম (ছদ্মনাম)। পরিবারের অভাব মোচনের জন্য রাজধানীর মিরপুরে বাসা-বাড়ির কাজে আসে। কিন্তু সাত দিনের মধ্যেই শুরু হয় তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন। পান থেকে চুন খসলেই গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, অধিক কাপড় কাঁচাসহ সব কাজই করতে হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে তাকে না খেয়ে রাত-দিন উপোষ থাকতে হয়। এতেই শেষ নয়, রাতের অন্ধকারে গৃহকর্তা ওই কিশোরীকে ধর্ষণও করে।

গাজীপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওই কিশোরীর দুর্বিষহ নরক-যন্ত্রণার বিষয়টি অবশেষে একসময় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। মামলা হয়, গৃহকর্ত্রী গ্রেফতার হন। কিছুদিন হৈচৈ হয়, তারপর আবার সবকিছু আগের মতোই চলতে থাকে।

রাজধানীতে কুলসুমের মতো অসংখ্য গৃহকর্মী রয়েছে, যারা পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে গৃহকর্মীর কাজে এসে পারিশ্রমিক বৈষম্যের পাশাপাশি নানাভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তথ্যানুযায়ী, গত ৮ বছরে গৃহশ্রমিকদের ওপর ৬৪০টি অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গৃহকাজে নিয়োজিতদের বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর আওতামুক্ত রাখায় গৃহশ্রমিকদের মজুরির নিশ্চয়তাসহ সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং শ্রমিক হিসেবে মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার দেওয়া হয় না। গৃহকর্মীদের গৃহশ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও জীবন-মানের উন্নয়নের জন্য এখনও কোনো নীতিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় সহজেই অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার মোকাবেলায় নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মানুষের মানবিকবোধ জাগ্রত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নির্বাহী সম্পাদক সাইদা রোখসানা খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গৃহকর্মীদের গৃহশ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সংঘবদ্ধ আন্দোলন দরকার। কিন্তু আমরা সে আন্দোলনটা করতে পারছি না। বৃহত্তর একটি আন্দোলন কেবল অধিকার আদায়েই সহায়ক হয় না, আমাদের মনোজগতেরও পরিবর্তন ঘটায়। তাই সংঘবদ্ধ আন্দোলন দরকার।’

তিনি আরও বলেন, “গৃহ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ৫ হাজার টাকা দেওয়াসহ তাদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হওয়া জরুরি। এর বাইরে ২ ঘণ্টা কাজ করলেও যেন তারা ‘ওভার টাইম’ হিসেবে পারিশ্রমিক পায়। তাদের বিশ্রামের সময় দিতে হবে। সপ্তাহে একদিন ছুটি দিতে হবে। তাদের অধিকার নিয়ে কাউন্সেলিং করাতে হবে। তবেই গৃহকর্মীরা নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবে। একজন শ্রমিক হিসেবে তার মানবিক চাহিদাগুলো মেটাতে পারবে।” সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, দেশে বর্তমানে পৌনে ৫ কোটি অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে গৃহশ্রমিক প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ। অথচ তারা বিদ্যমান শ্রম আইন ও তার অধীন বিধি-বিধানের আওতায় সংজ্ঞায়িত ও নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় তাদের শ্রমিক বলে স্বীকৃত পরিচয় নেই। ফলে এ বিষয়ে একটি আইনি কাঠামো হওয়া এখন সময়ের দাবি।

গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক সূত্রে জানা যায়, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা ২০১৪’-এর খসড়ায় শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা, সন্তানদের শিক্ষা, সাপ্তাহিক ছুটি, অবসরকালীন ভাতা, চিকিৎসাসহ মোট ১৩টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই মে মাসেই তা বাস্তবায়নের কথা রয়েছে বলে সূত্র জানায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকদের ওপর হয়রানি, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদে, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে গৃহকর্মীরা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। কিন্তু অধিকাংশ বাড়িতেই তাদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে না। পান থেকে চুন খসলেই গাল-মন্দ, মারধর এমনকি তাদের তাদের হত্যাও করা হয়। গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের এক ধারণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ গৃহকর্মে নিয়োজিত যার অধিকাংশ নারী ও শিশু। যদিও ১৯৬১ সালে প্রণীত গৃহকর্মী রেজিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স এবং ২০১০ সালে গৃহীত জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন আইনে গৃহকর্মী ও শিশুশ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। তারপরও ২০০৬ সালে প্রণীত শ্রম আইনে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ২০১০ সালে গৃহকর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা ও জীবন-মানের উন্নয়নের জন্য খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও শ্রম আইন পরিবর্তন করে তা এখনো যুক্ত করা হয়নি।

নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গৃহকর্মী ও গৃহমনিব এই দু’টি শব্দ যেদিন বিলুপ্ত না করা হবে। ততদিন গৃহকর্মীদের ওপর এই নির্যাতন চলবে। কারণ একই বাসার ছাদের নিচে বসবাসকারী একজন ওঠে ভোরে আর ঘুমায় সবার পরে। এই বৈষম্য দূর করতে হবে।’ আইন প্রণয়ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রম মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা হওয়া দরকার। শ্রমিক হিসেবে গৃহকর্মীর শ্রমকে মূল্যায়ন করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘দাস প্রথা না থাকলেও ঘরে ঘরে গৃহকর্মীরা দাসের মতো কাজ করছে। পরিবারে অভ্যন্তরীণ এই দাস প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে।’

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।