‘ওলট-পালট করে দে লুটে-পুটে খাই’

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা : চলতি বর্ষা মওসুমে সাতক্ষীরা ইটের সোলিং, রাস্তা সংস্কার, কালভার্ট মেরামতসহ কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পে এডিপির  ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারদলীয় লোকজন নিজেদের মধ্যে এসব প্রকল্পের সিডিউিল ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। অভিযোগ উঠে জেলার ৭টি উপজেলায় এডিপি প্রকল্পের ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজ ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। কাগজে কলমে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও বাইরের কোনো ব্যক্তি সিডিউিল ক্রয় করতে পারেনি। বিক্রি করতে দেওয়া হয়নি কোনো সিডিউল। বিপুল পরিমাণ টাকার এ কাজের টেন্ডারে কোনো প্রতিযোগিতা না থাকায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

জানা গেছে, জেলায় ৭টি উপজেলায় এডিপি প্রকল্পের উন্নয়ন খাত ও বিশেষ খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার তারিখ র্নির্ধারণ করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কলারোয়া উপজেলায় এডিপি প্রকল্পের কাজের জন্য ১৭ গ্রুপের কাজে ১৮ লাখ টাকা ও তালা উপজেলায় ৩৬ গ্রুপের কাজের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কলারোয়া ৫১টি ও তালা উপজেলায় ১২৫টি সিডিউল বিক্রি হয়। বরাদ্দকৃত টাকায় ইটের সোলিং, রাস্তা সংস্কার, কালভার্টসহ কয়েকটি উন্নয়ন কাজ করা হবে। এ কাজের জন্য সিডিউিল বিক্রির জন্য কমিটি নির্ধারণ করেন তালা উপজেলা সদর, কলারোয়া ও জেলা সদর থেকে সিডিউিল বিক্রি করা হবে। কিন্ত তা করা হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে তালা উপজেলায় এ কাজের জন্য সরকার সমর্থক নেতারা অন্য কাউকে সিডিউল ক্রয় করতে ও উপজেলার বাইরে কোনো সিডিউল বিক্রি করতে দেয়নি। এক কোটি টাকার কাজ আওয়ামী লীগ সমর্থক এক জনপ্রতিনিধি ও যুবলীগ ও কয়েক জন মাঝারি গোছের নেতারা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কলারোয়া উপজেলায় ১৭ গ্রুপের কাজ আওয়ামী লীগ নেতারা ভাগভাগি করে নিয়েছেন। কাউকে সিডিউল ক্রয় করতে ও কাজে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ছোট ছোট ইটের, সোলিং এর কাজ, এ জন্য আগ্রহ দেখায়নি। আমরা বসে সমঝোতা করে কাজগুলো শেষ করা হবে।

তালা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাইদ মো. জসিম মুঠোফোনে জানান, এডিপির এক কোটি টাকার কাজে যে কয়টি সিডিউল বিক্রি হয়েছে সেই কয়টি সিডিউল পড়েছে। বাইরে থেকে কেউ ভাগাভাগি করলে তাদের কিছুই করার নেই।

কলারোয়া উপজেলার এলজিডির উপজেলা প্রকৌশলী জানান, তার অফিসে নিয়ম মেনে সিডিউল বিক্রি করা হয়েছে। তার অফিসের ভিতরে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি। আশাশুনি উপজেলায় ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১১ গ্রুপের এ কাজে বাইরে কোনো সিডিউল বিক্রি করতে দেওয়া হয়নি। কাজগুলো ভাগাভাগি করে নিয়েছে সরকার সমথর্ক নেতাকর্মীরা। শ্যামনগর উপজেলায় ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ কাজেও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। গোপনে সমঝোতা করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, নিয়ম মেনে কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলায় ৪৪ লাখ টাকার কাজে একই অবস্থা। উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুল আলম জানান, কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি। আমি নতুন যোগদান করেছি। এর বাইরে তিনি কিছু জানে না। সদর উপজেলায় ৩৫ লাখ টাকার কাজ মাত্র ৩টি সিডিউল বিক্রি হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। দেবহাটা উপজেলায় ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ কাজ ভাগ করে নিয়েছে সরকার সমর্থকরা। সিডিউিল বিক্রি হয়েছে কয়েকটি। উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল হাদি মাহমুদ জানান, কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানান, সাতক্ষীরা জেলায় ৭টি উপজেলায় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজ ভাগ করে নিয়েছে সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা। উপজেলা প্রকৌশলীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের মতো করে কাজ নিয়েছেন তারা। কোনো এলাকায় কি কাজ করা হচ্ছে তা রয়েছে অজানা।