লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে যান চলাচলে অচলাবস্থা

লালমনিরহাট সংবাদদাতা : বুড়িমারীস্থল বন্দর থেকে লালমনিরহাটের বড়বাড়ী ও মোস্তফি পর্যন্ত মহাসড়কটি যান চলাচলে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার একমাত্র মহাসড়কটি বেহাল অবস্থার কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। দীর্ঘ প্রায় ১ শত কি. মি. সড়কটিতে খানাখন্দ ছোট-বড় গর্ত হওয়ার ফলে হরহামেশাই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে চলাচল করছে। লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র মহাসড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের ষষ্ঠতম স্থলবন্দর বুড়িমারী দিয়ে ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে আমদানি-রফতানির বিভিন্ন পণ্যের মালামালের ট্রাক এই মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করে থাকে।

সম্প্রতি তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি করা পণ্য বোঝাই ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করায় রাস্তাটি দ্রুত নষ্ট হয়ে গেছে। বুড়িমারী থেকে বড়বাড়ী পর্যন্ত ১ শত কি. মি. এই মহাসড়কটি এরশাদ সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কটি মেরামতসহ সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দুর্নীতির কারণে সড়কটির কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। ওই সময় একাধিক পত্রপত্রিকায় রাস্তা মেরামত কাজের দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হলে লালমনিরহাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপমন্ত্রী অধ্য আসাদুল হাবিব দুলু ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি সরেজমিন তদন্ত করলেও পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদনটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে এই মহাসড়কটি কয়েকবার সংস্কার করা হলেও ঠিকাদার পূর্বের ন্যায় কাজ করায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে লালমনিরহাট জেলায় পরপর ২ জন প্রতিমন্ত্রী থাকলেও একমাত্র মহাসড়কটির পুনঃসংস্কার করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় এ জেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসের ড্রাইভার গুটকা জানান, লালমনিরহাট থেকে পাটগ্রাম উপজেলা সদরে যেতে যেখানে দেড় ঘণ্টা সময় লাগত সেখানে বর্তমানে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়াও সড়কটিতে অসংখ্য খানাখন্দের কারণে গাড়ির টায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আ. হালিম বলেন, কিছু দিন পূর্বে এই সড়কটি সংস্কারের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তবে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য ছোট-বড় গর্তগুলো ইট ও খোয়া দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। ওদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, বুড়িমারী থেকে লালমনিরহাট হয়ে সারাদেশের সাথে যোগাযোগের একমাত্র এই মহাসড়কটির বেহাল দশার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ট্রাকে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা নেয়া করা হচ্ছে। অপর দিকে মহেন্দ্রনগর থেকে মোস্তফি পর্যন্ত প্রায় ১০ কি. মি. রাস্তাটির সংস্কারের অভাবে যানচলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ জানান, মহেন্দ্রনগর থেকে মোস্তফি পর্যন্ত এই রাস্তাটি এলজিইডির তত্ত্বাবধানে একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজের মান নিম্নমানের করায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তবে বেশ কিছুদিন থেকে পুনরায় সংস্কার না করায় বর্তমানে এই রাস্তাটি দিয়ে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি জনসাধারণ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আল আমিন খান বলেন, ওই রাস্তাটিসহ আরো বেশকিছু রাস্তা সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণসহ অনুরোধ জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি মেরামত করা হবে। লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়কটি দ্রুত সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরসহ যোগাযোগ মন্ত্রীর দ্রুত আশু হস্তপে কামনা করছে সচেতন মহল।