আদালতে কাঁদলেন রাজনের মা

সিলেট সংবাদদাতা : ছেলের জন্য আদালতে কাঁদলেন রাজনের মা লুবনা বেগম। বললেন, ‘আমি কিছু চাই না আমার বুকের ধন রাজনের খুনিদের বিচার চাই।’ সিলেটের আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার বিচার চলছে মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালতে। গত ১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এই আদালতে স্যা দেয়ার কথা ছিল লুবনা বেগমের। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। এ কারণে গত ৪ অক্টোবর আদালতে এসে তিনি স্যা দিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী স্যা দেন লুবনা বেগম। দুপুর ১২টা থেকে আদালতে রাজন হত্যা মামলার পাঁচ আসামির স্যা গ্রহণ শুরু হয়। ওই পাঁচ আসামির মধ্যে নিহত রাজনের মা লুবনা আক্তারও ছিলেন। প্রথমেই নেয়া হয় রাজনের মা লুবনা আক্তারের স্যা। ছেলে হত্যা মামলার স্যা দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্না থামিয়ে থেমে থেমে স্যা দিতে তিনি প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা সময় নেন। রাজনের বাবার নিযুক্ত আইনজীবী এডভোকেট শওকত চৌধুরী আদালত থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানান, রাজনের মা লুবনা স্যা দিতে এসে ছেলের জন্য কান্না করেছেন। একপর্যায়ে কেঁদে কেঁদে তিনি স্যা দিয়েছেন। তিনি তার ছেলে হত্যাকারী কামরুল, ময়না, মুহিদসহ অন্যদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। আদালত প্রাঙ্গণে রাজনের বাবা আজিজুল রহমান জানান, ‘রাজনের মা অসুস্থ থাকার কারণে গত ১লা অক্টোবর স্যা দিতে পারেননি। তাই আজ তিনি স্যা দিয়েছেন। তবে স্যা দিতে এসে ছেলের জন্য কান্নাকাটি শুরু করেন। এ কারণে স্যা গ্রহণ শেষে তাকে দ্রুত বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’ এ দিকে রাজনের মা ছাড়াও আরও চার সাক্ষী স্যা দিতে আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তারা হলেন রাজনের ছোট চাচা শেখ মো. আল আমিন, প্রতিবেশী ইশতিয়াক আহমদ, রাজন হত্যার ঘটনাস্থল কুমারগাঁয়ের ব্যবসায়ী জিয়াউল হক ও মাসুক মিয়া। সিলেট মহানগর জজ আদালতের পিপি ্এডভোকেট মফুর আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাজনের মা ছাড়াও আল আমিন, জিয়াউল হক ও মাসুক মিয়ার স্যা গ্রহণ করা হয়েছে। আর ইশতিয়াক আহমদের স্যা আগামী ৭ অক্টোবর নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এর আগে গত ১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার আলেচিত এ মামলায় স্যা দেন মামলার বাদী জালালাবাদ থানার সাময়িক বরখাস্তকৃত এসআই আমিনুল ইসলাম ও রাজনের বাবা আজিজুর রহমান। ওই দিন আসামি পরে আইনজীবীরা সাীদের জেরা করেন। আগামী ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ অক্টোবরও স্যা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পিপি মফুর আলী। মামলায় রাষ্ট্রপে মোট ৩৮ জনের জবানবন্দী শুনবে আদালত। এডভোকেট মফুর আরও জানান, রোববার স্যা গ্রহণের সময় রাজন হত্যায় গ্রেফতারকৃত ১০ আসামি উপস্থিত ছিলেন। আসামিরা হলেন সদর উপজেলার শেখপাড়ার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদ; পাভেল আহমদ, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, দুলাল আহমদ, নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী। এদের মধ্যে পলাতক কামরুল, শামীম ও পাভেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে। গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে খুঁটিতে বেঁধে ১৩ বছরের রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরাই নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।