সংবাদ শিরোনামঃ

ভোট ডাকাতির আশঙ্কা ** বাংলা সাহিত্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিন ** দেশের রাজনীতি এখন ছাই চাপা তুষের আগুন ** বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত ** হারলেন ট্রাম্প, টিকলেন হিলারি ** মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ ** বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিলেন খালেদা জিয়া ** অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত জাতীয় পার্টি ** মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ** শিশু নির্যাতন ও অপহরণ বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ** নিশ্চিত অনিশ্চয়তার মুখে দেশ ** নাজাত লাভের উপায় ** যেভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ** নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাস করছে ** করতোয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে তীরবর্তী স্থাপনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪২২, ২৫ রবিউস সানি ১৪৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আশরাফ জামান
আমাদের পাড়ার দত্ত মশাইয়ের প্রকাণ্ড বাড়ি ছিল। বাড়িটির নাম ‘রেনুবালা শান্তি কুটির’। দোতালা বিরাট আকারের রাজ প্রাসাদতুল্য সে বাড়ি। এক একর জমির উপর একপাশে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা দালান। পেছন দিকটায় নানা গাছ-গাছালিতে ভরা। ছাদের উপরে ঘেরাও করা দেয়াল ও বসার জন্য কংক্রিকেট ঢালাই করা বেঞ্চ তিনদিকে। সে বাড়িতে দু’টি ছেলে ছিল মনু ও শ্যামল। শ্যামল ছোট, আমাদের বন্ধু। শুনেছি ওদের দু’টি বোন ছিল, বয়সে বড়। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা কলকাতায় থাকেন।

আমি তখন তৃতীয় শ্রেণীতে বিন্দুবাসিনী স্কুলে পড়ি। সহপাঠী ও সমবয়সী বন্ধুরা ছিল আবুল, সূর্য, আতিক, সাইফুল ও দত্ত বাড়ির ছেলে শ্যামল। টাঙ্গাইল তখন মহকুমা আর আমাদের বিশ্বাস বেতকা তখন শহরের একটি পাড়া। টাঙ্গাইল শহরে তখন টিজিটি কোম্পানির লাল, হলুদ ও রং মেশানো পাঁচটি বাস গাড়ি ছিল  মাত্র   à¦¯à¦¾ ঢাকা ও ময়মনসিংহ যাতায়াত করতো। সারাদিনে তিনটি বাস ঢাকা ও দু’টি বাস ময়মনসিংহ একবার যেতো। পরদিন বাসগুলো ফেরত আসতো। সম্ভবত সময়টা ১৯৫৯-৬০ সাল হবে।

আমাদের পাড়ায় গর্ব করার মতো ছিল দত্ত বাড়ির একটি ভাঙ্গা বাস। বাসটি দত্ত বাড়ির গেটের ভেতর রাখা হতো।

দত্ত বাড়ির পাশে ছিল বিরাট ঘাট বাধানো কেশিয়ার সাহেবের পুকুর। আমরা প্রতিদিন দল ধরে ছোট বড় ছেলেরা সে ঘাটে গোসল করতাম, সাঁতার কাটতাম।

ঢাকা-টাঙ্গইল রোডের উত্তর পাশে ছিল পুকুরটি আর রাস্তার দক্ষিণ পাশে ছিল আরফান খানের টিজিটি কোম্পানির পেট্রোল পাম্প। প্রতিদিন সকাল বেলায় টিজিটি কোম্পানির বাসগুলো পেট্রোল নিতে আসতো তারপর কখনো বা বাসস্ট্যান্ড পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়াতো ঢাকা বা ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আবার কখনও আরফান খান সাহেবের বাসভবন প্যারাডাইজ পাড়া চলে যেতো। শহরের বিন্দুবাসিনী স্কুলে আমরা পড়তাম। আমরা বাসে উঠতাম পাড়ার পাম্প থেকে। বড় ভাই মতিন, তার বন্ধুরা ইসরাফিল, আলম, জাহাঙ্গীর ভাই উঠে বসতেন। বাস কন্ডাক্টর আমাদের ঘ্যাগের দালানের সামনে নামিয়ে দিতো। বাসে আমাদের কাছ থেকে পয়সা নেয়া হতো না। তারা আমাদের স্নেহ করতো।

আরফান খানের বাসা ছিল টিনের বেড়া দ্বারা ঘেরাও করা বাড়ি। সম্ভবত দশবারো বিঘা আয়তনের সে বাড়ি। রাস্তা ঘেষে ছিল সে প্রাসাদোপম দোতলা বাড়ি।

টাঙ্গাইল শহরে দোতলা বিল্ডিং তখন মাত্র দু’টিই ছিল। এক আরফান খানের বাড়ি অপরটি আমাদের পাড়ার দত্ত মশাইয়ের বাড়ি। তবে আরফান খানের বাড়ি ছিল জমিদার বাড়ির মতো। এখানে চাকর-বাকর ও পরিবারের লোকজন নিয়ে থাকতেন ছোট ভাই আজগর খান। পরিবারটি ছিল ব্যবসায়িক। বড় ভাই আরফান খান তখন জীবিত ছিলেন না। তার ছেলেমেয়েরা ঢাকায় থাকতেন। বাড়িটি ছোট্ট শহরে পশ্চিম দিকে লৌহজং নদীর পাশে ছিল। টাঙ্গাইল শহরে ও নারায়ণগঞ্জে ছিল টিজিটি কোম্পানির বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

॥ দুই॥

রেনুবালা শান্তি কুটিরের ভাঙ্গা বাসটি আজকের যুগের মুড়ির টিনের গাড়ির মতো। যাত্রী কুড়ি পচিশ জনের বেশি বসা যেতো না। বাসটি টাঙ্গাইল শহর থেকে পোড়াবাড়ি যেতো। শহরের দক্ষিণ দিকে শান্তিকুঞ্জ কাচারির পাশ দিয়ে সন্তোষ হয়ে পোড়াবাড়ি যেতো। রাস্তাটি ইট বিছানো ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা। সারাদিন দু’তিনবার যাতায়াত করতো। পোড়াবাড়ি লঞ্চঘাটে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা এ বাসে উঠতো। পোড়াবাড়ি ধলেশ্বরী নদীর ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়তো উত্তরবঙ্গ হয়ে ভারতের দিকে। তখনও এ দেশের মানুষরা অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে যাতায়াত করতেন।

আমরা শ্যামলকে খ্যাপাতাম ওদের বাস বাড়ি থেকে ছাড়বার সময়। একজন শক্তিশালী জোয়ান মানুষ বাসের সামনে লোহার একটি বাঁকা রড ঢুকিয়ে দিয়ে স্টার্ট দেয়ার জন্য কুস্তি করতো। ড্রাইভার তার সিটে বসে চাবি ঘুরিয়ে পায়ে গিয়ার চেপে ধরতেন। এভাবে গাড়ি চালু করতে কখনো আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় লেগে যেতো। তারপর ধীরে ধীরে ভীষণ শব্দ করে গাড়ি চলতে থাকতো।

আমরা পাড়ার ছেলেরা দলবেধে শ্যামলকে সামনে পেয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে ছড়া কাটতামÑ

দত্ত মশার ভাঙ্গা গাড়ি

ধাক্কিয়ে নেয় পোড়াবাড়ি॥

তেলপড়ে চুয়া চুয়া

শিয়ালে করে হুক্কা হুয়া॥

সে বাস রাস্তার গিয়ে দু’তিনবার থেমে পড়তো। যাত্রীরা গালাগাল শুরু করতো। অগত্যা বাস থেকে নেমে গাড়ি ধাক্কিয়ে চালু করতে হতো। তখন ছড়া বলতোÑ

দত্ত বাবুর বাস গাড়িতে

উঠে না তো কেউ

পোড়াবাড়ির কুকুর উঠে

করে ঘেউ ঘেউ॥

হেঁটে গেলেও হয়তো এর আগে যাওয়া যেতো কিন্তু তাতে বাঙালির সম্মান যে কমে যায় তাই তারা হেঁটে যাওয়া পছন্দ করে না।

॥ তিন॥

শ্যামলদের বাস গাড়ি আছে এটা তার কাছে গর্বের ব্যাপার ছিল। আর আমরা সবে মিলে ওকে এজন্য ছড়া কেটে খ্যাপাতাম। ছ’সাত বছর পরে ওরা স্বপরিবারে পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়।

পোড়াবাড়ির চমচম ছিল সে আমলে দেশ খ্যাত মিষ্টি। এজন্যও লোভ সামলাতে না পেরে ঢাকা বা দূরের যাত্রীরাও পোড়াবাড়ি যেতেন।

সে আমলে টাঙ্গাইল শহরে ছিল মাত্র দু’টি জীপ গাড়ি। একটা মহকুমা প্রশাসক সাহেবের অপরটি ছিল টিজিটি কোম্পানির মালিক আজগর খানের। যখন কোনো কাজের জন্য আজগর খান বাইরে বের হতেন তখন জিপে পাকিস্তানী ছোট একটি পতাকা উড়তো আর তার বডিগার্ড বা আর্দালী দাঁড়িয়ে মুখে রাখা বাঁশি বাজাতে থাকতো। রাস্তার দু’পাশে দর্শকরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতো সে দৃশ্য। দূর থেকেই সালাম জানাতো। বডিগার্ডের নাম সালামত। সাহেবকে স্নেহ করতেন। সুইপার কলোনী থেকে শিশুকালে ওকে এনেছিলেন। স্কুলে সে আমাদের সহপাঠী ছিল। ওর পকেটে সব সময় পয়সা থাকতো। ওর মধ্যে একটা অহঙ্কার ছিল সাহেবের আর্দালী বলে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।