নাটিকা : ন্যায় বিচার

পারভেজ হোসেন মোল্লা
(রাজা সাপ্তাহিক শিকারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন)

রাজা : মন্ত্রী

মন্ত্রী : মহারাজ শিকারে যাওয়ার সবকিছু প্রস্তুত।

রাজা : (ঘোড়ায় উঠে) তাহলে যাত্রা শুরু করো।

মন্ত্রী : জু হুকুম মহারাজ।

(ঠিক ঠিক আওয়াজ করে ধূলো উড়িয়ে রাজার মন্ত্রীর ও সেনাপতির ঘোড়া ছুটে চলবে)

রাজা : (বনের আঁকাবাঁকা পথ থেকে দূরে কয়েকটি হরিণ দেখতে পেয়ে) থামো তোমরা। সেনাপতি, তীর ও ধনুক দাও।

সেনাপতি : এই নিন মহারাজ।

(রাজা হরিণগুলোর একটিকে লক্ষ্য করে তীর ছুড়বে)

রাজা : লক্ষ্য ব্যর্থ হলো। কিন্তু কিসের আর্তনাদ শোনা গেলো? তোমরা কি বুঝতে পেরেছো?

মন্ত্রী : মাফ করবেন মহারাজ। আমরা দু’জনেই শুনেছি কিন্তু কেউই বুঝতে পারলাম না কিসের আর্তনাদ।

রাজা : আজকে আর শিকারই করবো না। আমার কাছে কেমন জানি লাগছে। চলো ...

(একটা মহিলা হন্তদন্ত হয়ে কাজির কাছে আসবে)

মহিলা : কাজি সাহেব, আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাইতে এসেছি।

কাজি : দয়া করে খুলে বলুন।

মহিলা : আপনার রাজার রাজ্যের বনের ভেতর আমার ছেলে গিয়েছিলো ফল ও কাঠ সংগ্রহ করতে। ওকে ফিরে আসতে না দেখে আমি তাকে বনে খুঁজতে যাই এবং মৃত অবস্থায় পাই। সাথে তার বুকে একটা তীর দেখতে পাই। সে ছিলো আমার অন্ধের যষ্ঠি। এখন সেও আমায় ছেড়ে চলে গেলো।

কাজি : তীরটা কোথায়?

মহিলা : ঘরেই আছে।

কাজি : পেয়াদা ওনার সাথে গিয়ে তীরটা আনো।

(পেয়াদার প্রস্থান ... আবার আগমন)

পেয়াদা : এই সে তীর যা আমি ওনার মৃত ছেলের বুক থেকে তুলে এনেছি।

কাজি : (তীরটা দেখে) রাজাকে তলব করো।

***

মন্ত্রী : গোস্তাকি মাফ করবেন মহারাজ। অনুমতি দিলে একটা কথা বলি।

রাজা : বলো।

মন্ত্রী : কাজি সাহেব আপনাকে বিচারালয়ে তলব করেছেন।

রাজা : ঠিক আছে চলো।

মন্ত্রী : জু হুকুম মহারাজ।

***

কাজি : মহারাজ, এ তীরটি নিশ্চয়ই আপনি শিকারে ব্যবহার করেছেন।

রাজা : হ্যাঁ। কেনো না এই ফার্স্ট পয়েন্টার ডিজাইনের ৯৬ তীরটি আমিই সকালে শিকারে ব্যবহার করেছি।

কাজি : তাহলে আসামির কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। (রাজাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে দেখে) আপনার তীরটি ঐ মহিলার ছেলের বুকে পাওয়া গেছে। যেহেতু ...

রাজা : আর বলতে হবে না। যেহেতু আমি মুসলমান সেহেতু আমি আল্লাহকে ভয় করি। শিকারে গিয়ে একটা হরিণকে লক্ষ্য করে তীর ছুড়েছিলাম। কিন্তু তীরটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বনে হারিয়ে যায়। আর সাথে একটা আর্তনাদ শুনলাম। তখন বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি আর্তনাদটা কিসের ছিলো।

কাজি : (মহিলার দিকে তাকিয়ে) যেহেতু রাজা ভুল করে আপনার ছেলেকে হত্যা করেছে তাই কুরআনের বিধান অনুযায়ী রাজার জন্য দু’টি রায় রয়েছে। এর যেকোনোটি আপনি পছন্দ করতে পারেন। এখানে আমার হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই।

মহিলা : রায়গুলো কি কি?

কাজি : প্রথমত রক্তমূল্য। অর্থাৎ রাজা আপনাকে একশত উট দুইশত গরু বা এর সমমূল্য দিবেন। দ্বিতীয়তম রায় আপনি রাজাকে ক্ষমা করে দিবেন।

মহিলা : আমি প্রথমটি পছন্দ করলাম।

কাজি : মহারাজ আপনি ২ দিনের ভেতর রক্তমূল্য পরিশোধ করবেন। এখন  আপনি যেতে পারেন।

রাজা (কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে একটি চাবুক হাতে নিয়ে) কাজি, আজ যদি তুমি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ন্যায়বিচার সম্পাদন না করতে, আমি রাজা বলে আমার দিকে টানতে তাহলে আমি তোমাকে এ চাবুক দিয়ে প্রহার করতাম।

কাজি : (অনেক বড় একটি চাবুক বের করে) আপনি যদি আল্লাহর বিধানের এতো সুন্দর বিচার মেনে না নিতেন তাহলে আমি আপনাকে এ চাবুক দিয়ে রক্তাক্ত করতাম।

প্রজা : এ রকম রাজ্যই তো সবার কাম্য। যেখানে কাজিকে রাজার পক্ষ টেনে বিচার করতে হয় না এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিই রায় পছন্দ করেন।

প্রজাসকল : আমাদের রাজাকে আল্লাহ রহম করুন, আমাদের রাজাকে আল্লাহ রহম করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীশয় মেহেরবান। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীশয় মেহেরবান।

span> পারবে না!