যশোরে আটক ৩ ছাত্রের পরিবারের সাংবাদিক সম্মেলন

আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন

যশোরে পুলিশ কর্তৃক আটককৃত তিন ছাত্রের সন্ধান দাবিতে গত ১৫ মার্চ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনে তাদের পরিবারের পক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মো. আবদুস সাত্তার

স্টাফ রিপোর্টার : গত ১০ মার্চ যশোর থেকে তিন ছাত্রকে আটকের ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের আদালতে হাজির না করায় উদ্বেগ প্রকাশ ও অনতিবিলম্বে তাদের সন্ধান দাবি করে গত ১৫ মার্চ মঙ্গলবার রাজধানীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তারা বলেন, মো. নূরুজ্জামান, হাফেজ মো. বিল্লাল ও আবুল কাসেমকে প্রকাশ্য সবার সামনে থেকে আটক করে পুলিশ। প্রথমে গণমাধ্যমের কাছে তাদের আটকের কথা স্বীকারও করে। কিন্তু এখন তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়নি, তাদের অবস্থানও বলছে না পুলিশ। তারা বলেন, গ্রেফতারের পর তাদের সন্ধান দিতে অস্বীকার করায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কাবোধ করছি। তারা অবিলম্বে তাদের সন্তানদের তাদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।

গত ১৫ মার্চ দুপুরে রাজধানীর ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রেফতারকৃতদের পে বক্তব্য রাখেন গ্রেফতারকৃত বিল্লাল হোসেনের পিতা আব্দুস ছাত্তার। সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রেফতারকৃত তিনজনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুস ছাত্তার বলেন, গত ১০ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় যশোরে নির্মাণাধীন একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংককে শিবিরের গোপন ঘর আখ্যা দিয়ে আমাদের সন্তান মো. নূরুজ্জামান, হাফেজ মো. বিল্লাল ও যশোর নিউমার্কেট এলাকা থেকে আবুল কাসেমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অথচ গ্রেফতারের ৫ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো তাদের আদালতে হাজির করেনি পুলিশ। এমনকি পুলিশ তাদের অবস্থানের ব্যাপারে কোন তথ্যও দিচ্ছে না। অথচ গ্রেফতারের পর হাতকড়াসহ দায়িত্বরত পুলিশের সাথে তাদের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন তাৎণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানান যে, ‘বিল্লাল ও নূরুজ্জামান নামে দুই শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে’।

তিনি বলেন, সেদিন রাতে পুলিশের প্রেস ব্রিফিংএ ১২ জনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করে পুলিশ যাদের মধ্যে এই দুই শিবির নেতার নাম রয়েছে। অন্য দিকে সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে ফেরার পথে যশোর শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে আবুল কাসেমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের সন্ধান জানতে চাইলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে যাচ্ছে। বার বার আমরা তাদের সন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা ও পুলিশ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কেউ তাদের গ্রেফতারের কথা স্বীকার করছে না যা প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারের পর তাদের সন্ধান দিতে অস্বীকার করায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কাবোধ করছি। বর্তমানে দেশে গুম হত্যা চলছে যার শিকার হচ্ছেন মূলত ভিন্নমতের রাজনীতির নেতাকর্মীরাই। এর আগেও বহু ছাত্রকে আটকের পর নির্মম নির্যাতন করে আদালতে উঠানো হয়েছে। কাউকে আবার গভীর রাতে বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের জানা মতে, আমাদের এই তিন সন্তান কোন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত নয়। এরপরও আমাদের সন্তানেরা যদি কোন অপরাধ করেও থাকে, তাহলে এর জন্য দেশের আইন মেনেই বিচার হওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশ তা করছে না। কিন্তু প্রকাশ্য গ্রেফতারের কথা প্রথমে স্বীকার করেও তাদের এই আদালতে না তোলা আমাদের মনে সন্তানদের জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবেন না। তাদের কাছে আমার সন্তানদের নিরাপত্তা দাবি করছি। আমাদের আকুল আবেদন, দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক আমাদের সন্তানদের যেন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তারা যেন নির্যাতন বা কোনভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার না হয়। আমাদের সন্তান যদি সত্যিই কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদের আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হোক। তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কাছে তাদের সন্তানদের আইনের আশ্রয় পাবার অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।

তিনি অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের সন্ধান ও আদালতে সোপর্দ করার দাবি জানিয়ে বলেন, দয়া করে আমাদের আদরের সন্তানদেরকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিন। একজন বাবা-মায়ের আকুতি পদদলিত করবেন না। তিনি তার ছেলেসহ গ্রেফতারকৃত তিন জনের সন্ধানের জন্য সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।