সংবাদ শিরোনামঃ

অর্থ লুটের মহোৎসব ** ভোটে আগ্রহ নেই মানুষের ** সারাদেশে গুম হত্যা আতঙ্ক ** ড. মাসুদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের মিছিল ** প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দায় এই সরকারকেই নিতে হবে : খালেদা জিয়া ** পানির জন্য হাহাকার ** ক্ষমতার নিশ্চয়তা পেলেই আগাম নির্বাচন ** তিস্তা এখন ধু ধু বালুচর ** তেলের দাম কমানোর নামে প্রহসন ** সরকার দায় চাপানোর কৌশল নিয়েছে ** আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে ** ওনারা বললে দোষ হয় না! ** মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কি সুদূর পরাহত? ** পার্বতীপুরে পানির জন্য হাহাকার ** টাঙ্গাইলের ছয় উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই! ** কুষ্টিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু বাড়ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ বৈশাখ ১৪২৩, ২১ রজব ১৪৩৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে ব্যাংক

বিনিয়োগ এখনো স্থবির, বাড়ছে না কর্মসংস্থান

জাহাঙ্গীর শাহ ও সানাউল্লাহ সাকিব : গাজীপুরের মাওনায় অবস্থিত একটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর সিরামিকস কারখানার উৎপাদন সমতা দ্বিগুণ করে ২০১৪ সালে মেশিনপত্র বসানো হয়েছিল। এরপর প্রায় দুই বছর হলো গ্যাস-সংযোগ পাচ্ছেন না ওই উদ্যোক্তা। আবার দিনে চার ঘণ্টার বেশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহও মেলে না, যা দিয়ে পুরোনো উৎপাদন সমতার পুরোপুরি ব্যবহারই করা যাচ্ছে না।

বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও কারখানা তৈরির জন্য জমি পাচ্ছেন না বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। আবার জমি পেলেও গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন না অনেকে। যন্ত্রপাতি বসানোর পর গ্যাসসংযোগের অভাবে বসে আছে বহু কারখানা। গ্যাস ও জমির সঙ্কট দূর করতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় কয়েক বছর ধরেই বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দাবস্থা চলছে। অথচ ব্যাংকগুলো প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে। নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না বেসরকারি উদ্যোক্তারা। ফলে উদ্যোক্তা না পেয়ে এ বিপুল অর্থ নামমাত্র সুদে বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রেখেছে ব্যাংকগুলো।

সরকারের প্রাক্কলন হচ্ছে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়ালেও বিনিয়োগ বাড়িয়ে তা হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর কারণে জিডিপি বেড়েছে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগের স্থবিরতা রয়েই গেছে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কমেছে বেসরকারি বিনিয়োগের হার। গত প্রায় এক দশক ধরে জিডিপির ২১-২২ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ। বেড়েছে কেবল সরকারি বিনিয়োগ। আবার এই বিনিয়োগের গুণ ও মান নিয়েও রয়েছে নানা সমালোচনা।

বিনিয়োগ না হওয়ায় আশানুরূপ কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ-২০১৫ অনুযায়ী, দুই বছরে মাত্র ৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে মাত্র তিন লাখ লোক চাকরি বা কাজ পেয়েছেন। এর ফলে বেড়েছে বেকারত্বের হার। অথচ এর আগের এক দশক ধরে বছরে গড়ে ১৩ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে।

জমি না পাওয়া, পরিবহন খাতে দুর্বলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এ তিনটি কারণকেই বিনিয়োগের প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও তা বেশ ব্যয়বহুল, যা নতুন বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে না। তাঁর মতে, রাজনৈতিক অঙ্গন এখন কিছুটা শান্ত থাকলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর প্রতিফলন হিসেবে বিপুল পরিমাণ মূলধন দেশের বাইরে চলে গেছে।

ছয় বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কথা ছিল, কিন্তু ১১ বছরেও শেষ হয়নি। জমির সঙ্কট দূর করতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ১০টি উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রতিবার বাজেট বক্তৃতায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখান অর্থমন্ত্রী। পিপিপিতে এখনো নতুন বড় প্রকল্প হয়নি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস-সংযোগের অভাবে বহু কারখানা চালু করা যাচ্ছে না। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমতা থাকলেও শিল্প খাতে নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাঁর মতে, আগে অনেক কষ্ট করে উদ্যোক্তারা জমি জোগাড় করতেন। এ জন্য এখন অর্থনৈতিক অঞ্চল করলেও তাতে জ্বালানিসহ অন্য অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।

তবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম এ বিষয়ে বলেন, পানির দামে গ্যাস পান বলেই ব্যবসায়ীরা গ্যাসের দাবি করেন। দণি কোরিয়ার মতো দেশ বিদ্যুৎ দিয়েই শিল্পায়ন করেছে। তবে জমির সঙ্কট দূর করতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো দ্রুত করা উচিত।

সুদহার : এক বছর ধরে ব্যাংক খাতের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যেই আছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে এ ব্যবধান ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। গত ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশীয় পয়েন্ট। এর ফলে ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের সুদের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ ও ঋণের সুদের হার ১০ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের হালনাগাদ তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীদের প থেকে দফায় দফায় সুদহার কমিয়ে আনার দাবির পরিপ্রেেিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদহারের পার্থক্য কমানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল। এর ফলে পার্থক্য খানিকটা কমেছে।

তবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, সুদের হার বিনিয়োগের স্থবিরতার বড় কারণ নয়। জ্বালানি সঙ্কট, অবকাঠামো ও আমলাতান্ত্রিক সমস্যার মতো বিনিয়োগের মৌলিক সমস্যার সমাধান হলে বিনিয়োগকারীরা উচ্চ সুদও পরিশোধ করতে পারবেন।

 à¦¤à¦¾à¦°à¦²à§à¦¯ পরিস্থিতি : ২০১৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ তারল্য ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে নগদ তারল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। নগদ জমা সংরণ হার (সিআরআর) হিসেবে ৫১ হাজার ২১০ কোটি টাকা, বিদেশী মুদ্রায় ৬ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা রাখা রয়েছে। বাকি অর্থের মধ্যে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ না করতে পেরে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রেখেছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। কম মুনাফার বন্ডে বিনিয়োগ করে রাখায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থকে অলস টাকা বলতে রাজি নয়। প্রকৃতপে এই অর্থ অলস টাকাই।

সব মিলিয়ে বলা যায়, বিনিয়োগের জন্য অর্থ প্রস্তুত থাকলেও নতুন প্রকল্পে খুব বেশি ঋণ যায়নি। ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ গেছে বিদ্যমান কারখানা বা ব্যবসা সম্প্রসারণে। জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অনেকে ঋণ নিলেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ না পেয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেননি।

বিনিয়োগ : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে, চলতি অর্থবছরে জিডিপির ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ হবে বেসরকারি বিনিয়োগ। গত অর্থবছরে এর অংশ ছিল ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ। জিডিপির আকার যে হারে বাড়ছে, বেসরকারি বিনিয়োগ সে হারে বাড়ছে না। অর্থবছর শেষে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে চলতি মূল্যে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ চলতি মূল্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। জিডিপিতে সরকারি বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব পাঁচ বছরে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলমের মতে, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পুঁজির নিরাপত্তা দিতে হবে। নিয়মকানুনের মধ্যে থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারী যেভাবে চান, সেভাবে মুনাফা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাঁরা মুনাফা করতেই এখানে আসেন। এ ছাড়া উচ্চ করপোরেট করহারও বিনিয়োগে বড় বাধা বলে মনে করেন তিনি। প্রথম আলোর সৌজন্যে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।