আজও পলাতক রানা প্লাজা মামলার ১২ আসামি

॥ জাহাঙ্গীর আলম, দ্য রিপোর্ট॥
সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির তিন বছর পূর্ণ হলো ২৪ এপ্রিল (রোববার)। এ তিন বছরেও শুরু হয়নি আলোচিত মামলাগুলোর বিচার। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হয় তিনটি মামলা। তিন মামলার মধ্যে হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের মামলা দুটি বিচারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

অপরদিকে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ আইনের দায়ের করা মামলাটি পুনঃতদন্তাধীন।

রাষ্ট্রপ আশা করছে, হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের মামলা দুটি এই বছরে বিচার কার্যক্রম শেষ হবে। গত বছর ২৬ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা ও ইমরাত আইনের দুই মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। এর মধ্যে ১২ জন আসামি পলাতক, ৬ জন কারাগারে ও বাকিরা জামিনে আছেন।

পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও পত্রিকায় প্রজ্ঞাপন জারি করতে প্রায় ১১ মাস অতিবাহিত হয়। মামলা দুটির পরবর্তী বিচার কার্যক্রমের জন্য ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য ছিল। ওইদিন আসামিদের উপস্থিতি ও অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করা হয়। অপরদিকে, অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলাটি ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৬ মার্চ মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। মামলাটি পুনঃতদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য ৮ মে দিন ধার্য রয়েছে।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খন্দকার আব্দুল মান্নান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা মামলা দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বড় মামলা হওয়ায় তদন্তে একটু সময় বেশি লেগেছে। মামলা দুটি এখন বিচারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা আশা করছি এই বছরেই মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম শেষ করব।’ রাষ্ট্রপরে অপর আইনজীবী (পিপি) আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, ‘মামলা দুটি বিচারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। খুব শিগগির মামলা দুটির বিচার শুরু হবে এবং এ বছরে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করা হবে।’

মামলার নথি পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। ভবনের নিচে চাপা পড়েন সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাকশ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন অবহেলাজনিত হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন একই দিনে সাভার থানায় আরও একটি মামলা করেন।

হত্যা ও ইমরাত আইনের দুই মামলায় গত বছরের ২৬ এপ্রিল ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ৪১ জনকে ও ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়। ১৭ জনের নাম উভয় মামলার অভিযোগপত্রে থাকায় দুই মামলায় মোট আসামি ৪২ জন।

হত্যা মামলায় সাী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে। আর ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় সাী করা হয়েছে ১৩০ জনকে।

মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফাত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানসহ মোট ২৩ জন জামিনে আছেন।

আর সোহেল রানা, সরকারি কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন ও জামসেদুর রহমানসহ ছয়জন কারাগারে আটক আছেন।

পলাতক রয়েছেন, সাভার পৌরসভার সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, পৌর নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, ঠিকাদার নান্টু, ইতার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস এবং আবদুল মজিদ, শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, মনোয়ার হোসেন, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, আবদুল হামিদ ও নয়ন মিয়া।

অপরদিকে, ভবনটি অবৈধভাবে নির্মাণের মামলার নথি পর্যালোচনা করে জানা যায়, অবৈধ, নকশাবহির্ভূত ও অনুমোদিত ছয় তলা ভবন দশ তলায় উন্নীত করায় ২০১৪ সালের ১৫ জুন দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) উপ-সহকারী পরিচালক এস এম মফিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় সোহেল রানাকে বাদ দিয়ে বাবা-মাসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

২০১৪ সালের ১৬ জুলাই মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে দুদকের উপ-পরিচালক এস এম মফিদুল ইসলাম ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগ পত্রের আসামিরা হলেন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেক, রানার মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম এপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান। মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৬ মার্চ মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য নির্দেশ দেন ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ এম আতোয়ার রহমান। মামলাটির পুনঃতদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য ৮ মে দিন ধার্য রয়েছে।