সংবাদ শিরোনামঃ

অর্থ লুটের মহোৎসব ** ভোটে আগ্রহ নেই মানুষের ** সারাদেশে গুম হত্যা আতঙ্ক ** ড. মাসুদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের মিছিল ** প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দায় এই সরকারকেই নিতে হবে : খালেদা জিয়া ** পানির জন্য হাহাকার ** ক্ষমতার নিশ্চয়তা পেলেই আগাম নির্বাচন ** তিস্তা এখন ধু ধু বালুচর ** তেলের দাম কমানোর নামে প্রহসন ** সরকার দায় চাপানোর কৌশল নিয়েছে ** আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে ** ওনারা বললে দোষ হয় না! ** মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কি সুদূর পরাহত? ** পার্বতীপুরে পানির জন্য হাহাকার ** টাঙ্গাইলের ছয় উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই! ** কুষ্টিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু বাড়ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ বৈশাখ ১৪২৩, ২১ রজব ১৪৩৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

ভিক্ষাবৃত্তির রমরমা বাণিজ্য : শেষ পর্ব

‘ভিক্ষুক পুনর্বাসন আইন’ কথাতেই সীমাবদ্ধ

ভিক্ষাবৃত্তি। সব থেকে নিকৃষ্ট বৃত্তি হিসেবে বিবেচিত এটি। আয়ের কোনো বিকল্প পথ নেই এমন সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো অনেকটা বাধ্য হয়ে সাধারণত এ পথ বেছে নেন। তবে রাজধানী ঢাকার চিত্র এর সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভিক্ষাবৃত্তি জনবহুল এই শহরটির কিছু অসাধু মানুষের একটি রমরমা ব্যবসা। ভিক্ষুকদের আয় থেকে প্রতিদিন কোটি টাকার উপরে নিয়ে যায় এ সংঘবদ্ধ চক্র।

সংঘবদ্ধ এই চক্র নিয়ে দীর্ঘ দুই মাস অনুসন্ধান করেছেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক সাঈদ শিপন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে তা তুলে ধরা হলো।

রাজধানীর ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে সরকারের প থেকে একাধিকবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমনকি বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও ভিক্ষুকমুক্ত নগরী গড়ার কথা বলা হয়। তবে বাস্তবতা হলো? রাজধানীকে ভিক্ষুকমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ দেখা যায়নি।

ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১তে বলা হয়েছে, যে নিজে বা কারও প্ররোচনায় ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত, সে ভবঘুরে হিসেবে বিবেচিত হবে। এ আইনে ভবঘুরেদের আটক করার বিধান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনের তৃতীয় অধ্যায়ের ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিম্নে নন এমন কর্মকর্তা অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা, কোনো ব্যক্তিকে ভবঘুরে বলে গণ্য করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে মর্মে নিশ্চিত হলে, তিনি উক্ত ব্যক্তিকে যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময় আটক করতে পারবেন।’

আইনে আরও বলা হয়েছে, ভবঘুরেকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে। আর আটককৃত ব্যক্তি ভবঘুরে হলে ম্যাজিস্ট্রেট যেকোনো আশ্রয়কেন্দ্রে কমপে ২ বছর তাকে আটক রাখার জন্য অভ্যর্থনা বা আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেবেন।

এদিকে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে ২০১০ সালে ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ শীর্ষক কর্মসূচি হাতে নেয়।

এরপর ২০১০-১১ অর্থবছরে কর্মসূচি খাতে ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৭ কোটি টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তবে মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কর্মসূচির আওতায় খরচ হয়েছে এক কোটি টাকারও কম। জরিপ, আসবাব কেনা এবং ময়মনসিংহ ও জামালপুরে কিছু কার্যক্রম পরিচালনায় এ টাকা খরচ হয়। আর গত দুই অর্থবছরে এ কর্মসূচির আওতায় তেমন কোনো কাজ হয়নি। ফলে কমেছে বরাদ্দের পরিমাণও। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটে এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশে কোনো ভিক্ষুক নেই বলে বাজেটে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখতে হয়নি। শহরের রাস্তাঘাটে যে ভিক্ষুকদের দেখা যায় তারা চরিত্রগতভাবে ভিক্ষুক। এদের রাজবাড়ি বানিয়ে দিলেও ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়বে না।

অবশ্য অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের কোনো বাস্তবতা আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ কর্মসূচির আওতায় ২০১১ সালে ঢাকা শহরে ১০টি বেসরকারি সংগঠনের সহায়তায় ভিক্ষুক জরিপে ১০ হাজার ভিক্ষুকের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়। তবে কর্মসূচির আওতায় কাগজে-কলমে ময়মনসিংহ ও জামালপুরে মাত্র ৬৬ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

এর মধ্যে কর্মসূচির আওতায় ১২ জনকে ১২টি রিকশা, ১৭ জনকে ১৭টি ভ্যান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। এ ভিক্ষুকদের সবাই ময়মনসিংহ জেলার। এর পাশাপাশি জেলাটির আরও ৮ জন ভিক্ষুককে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়।

তবে এই ৩৭ জন ভিক্ষুকের মধ্যে ৩০ জন বর্তমানে কোথায় আছে? কী করছে? তার কোনো তথ্য নেই সমাজসেবা অধিদফতরে। ধারণা করা হচ্ছে, এরা সবাই রিকশা ও ভ্যান বিক্রি করে আবারও ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে গেছেন।

এ েেত্র ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১ প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এই আইনে বলা হয়েছে, যদি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কেউ পালায় তবে সে কমপে ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আইনের চতুর্থ অধ্যায়ের ২২(১)(খ) ধারায় এ বিধান রাখা হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবস ও সমাজসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল মানুষদের সরকারের তরফ থেকে বিনা খরচে পুনর্বাসন করার কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার পর ২ মাস চলে গেলেও তা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদপে নেওয়া হয়নি। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে কার্যকর কোনো পদপেও গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ঢাকা শহরকে ভিক্ষুকমুক্ত করার ল্েয গ্রহণ করা কর্মসূচিরও কোনো কার্যক্রম নেই। বর্তমানে এ কর্মসূচির সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে।

সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ দুই অর্থবছরে কর্মসূচির আওতায় সরকার ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫০ লাখ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে এই কোটি টাকা থেকে এক টাকাও ছাড় হয়নি। এমনকি কর্মসূচি বাস্তবায়নের অধিদফতরে কোনো জনবলও নেই। অন্য ডেস্ক থেকে সাময়িকভাবে এই কর্মসূচির আওতায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা।

এ ছাড়া জরিপ করাদের মধ্য থেকে পাইলট পর্যায়ে ২ হাজার ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। পাইলট পর্যায়ে ১ হাজার জনকে ময়মনসিংহ জেলায় এবং বরিশাল ও জামালপুর জেলায় ৫শ’ জন করে পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল? ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিতদের পুনর্বাসন ও কারিগরি প্রশিণের মাধ্যমে আয়ের কাজে সম্পৃক্ত করা। কর্মসূচির আওতায় কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ৮টি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করে প্রতিটিতে ২৫০ জন করে মোট দুই হাজার জন ভিক্ষুকের অস্থায়ী পুনর্বাসন করার কথা থাকলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এদিকে চলতি অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ উপখাতের আওতায় নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ভিক্ষুকদের জন্য ১৫টি ঘর তৈরির জন্য ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সহায়তায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করতে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ল্েয প্রাথমিকভাবে আটটি উপজেলার মধ্যে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কাজের আওতায় ১০টি ঘর তৈরি শেষ হয়েছে। ৫০টি ঘর তৈরির কাজ চলছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করা হলে সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (কার্যক্রম) আবু মো. ইউসুফ দ্য রিপোর্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আমরা ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম জোরদার করেছি। এ ল্েয দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কোনো ভিক্ষুককে ধরে নিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কি? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখনো কোনো ভিক্ষুককে ধরা হয়নি। পুনর্বাসন-সংক্রান্ত কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে পদপে নেওয়া হবে।

ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ৩৭ জন ভিক্ষুককে রিকশা, ভ্যান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় আগে একজন প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন। এখন তিনি নেই। আমরা কর্মসূচির আওতায় নতুন প্রজেক্ট ডিরেক্টর নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে প্রজেক্ট ডিরেক্টর নিয়োগের দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের।

দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সৌজন্যে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।