রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৩য় সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ২২ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ২৫ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ৫ এপ্রিল ২০২৪

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
বরকতময় রমযান মাসের পর আসে শাওয়ালুল মুয়াজ্জম বা মহিমাময় শাওয়াল মাস। রমযানের বরকত লাভের জন্য ত্যাগ, কষ্ট-ক্লেশ ও দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের খুশি নিয়ে পশ্চিম আকাশে উদিত হয় শাওয়ালের নতুন চাঁদ। মাসটির প্রথম দিনেই পালিত হয় মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
ঈদ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ, বার বার ফিরে আসা। ফিতর শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ, আল্লাহর নিয়ামত উপভোগের অনুমতি লাভের আনন্দ। ঈদের দিন আল্লাহ তায়ালার অনেকগুলো অনুগ্রহÑ যেমন নিষেধ করার পর আবার দিনে পানাহারের অনুমতি প্রদান, ফিতরা আদায় করার সুযোগ দান ইত্যাদি বার বার ফিরে আসে।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় আসেন, তখন দেখেন যে সেখানকার লোকেরা বছরে দুদিন (নওরোজ ও মেহেরজান উৎসব) আনন্দ করে, খেলাধুলা করে। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের এ দুদিনের পরিবর্তে আরও অধিক উত্তম ও কল্যাণকর দুটি দিন দিয়েছেন। এক. ঈদুল আজহা এবং দুই. ঈদুল ফিতর।’ (আবু দাউদ)।
এভাবে মুসলমানদের ইতিহাসে পৃথক উৎসবের সূচনা হয়। এটা দ্বিতীয় হিজরী, অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা। মহানবী (সা.) ঘোষণা করলেন, ‘সব জাতিরই ঈদ বা উৎসবের দিন থাকে, এটা আমাদের ঈদ।’ (সহিহ্ বুখারি)।
আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া গ্রন্থে ইবনে জারির (রা.)-এর বর্ণনা মতে, দ্বিতীয় হিজরিতে মহানবী (সা.) প্রথম ঈদ পালন করেন। ঈদ মুসলমানদের জীবনে শুধু আনন্দই নয়; বরং এটি একটি মহান ইবাদতও বটে। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পায়, ধনী-গরিব, ছোট-বড়, দেশি-বিদেশি সব ভেদাভেদ ভুলে যায় এবং সব শ্রেণি ও সব বয়সের মানুষ ঈদের জামাতে শামিল হয়ে মহান প্রভুর শোকর আদায়ে নুয়ে পড়ে।
ঈদের দিন প্রত্যুষে ফজরের নামায জামাতে আদায় করার মাধ্যমে দিনটি শুরু করা।
এদিনের সুন্নত কাজগুলো হচ্ছে- মিসওয়াক করা, গোসল করা, পবিত্র ও উত্তম কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, শরিয়ত মোতাবেক সুসজ্জিত হওয়া, ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া ও অন্য পথ দিয়ে আসা, ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া, ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, ঈদের নামায ঈদগাহে পড়া,  ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিম্ন স্বরে তাকবির পড়া, ঈদের নামাযে যাওয়ার সময় বিজোড়সংখ্যক খেজুর বা মিষ্টান্ন দ্রব্য খাওয়া, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা এবং কায়মনোবাক্যে দোয়া করা, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া, ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা আদায় করে দেওয়া ইত্যাদি।
আরবী বর্ষপঞ্জির দশম মাস শাওয়াল তার অবস্থান ও মর্যাদার কারণে ইসলামী জীবনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। শাওয়াল আরবী শব্দ। এর অর্থ হলো উঁচু করা, উন্নতকরণ ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা ফরজ ইবাদতের পর সুন্নত ও নফল ইবাদতের প্রতি উৎসাহ ও নির্দেশনা দেন। কুরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘যখন তুমি (ফরজ) দায়িত্ব সম্পন্ন করবে, তখন উঠে দাঁড়াও এবং (নফলের মাধ্যমে) তোমার রবের প্রতি মনোনিবেশ কর।’ (সূরা ইনশিরাহ : ৭-৮)।
এতে রমযান মাসের নির্ধারিত ফরজ ইবাদতের পর এ মাসে নফল ইবাদত পালনের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। (তাফসিরে মাজহারি)।
রমযানের রোজার পর ফজিলতপূর্ণ রোজার মধ্যে শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যারা রমযানে রোজা পালন করে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করে।’ (মুসলিম)।
ঈদুল ফিতরের দিন বাদে এ ছয়টি রোজা লাগাতারভাবে রাখা যায় আবার বিরতি দিয়েও রাখা যায়। তবে আলাদা আলাদা করে রাখাই উত্তম। বিনা ওজরে কেউ রমযানের কোনো রোজা কাজা করলে আগে রমযানের কাজা রোজা আদায় করবে, তারপর শাওয়ালের রোজা রাখবে। কোনো সংগত কারণে রমযানের কিছু রোজা বাদ গেলে যেমন অসুস্থতা বা সফরের কারণে কিংবা নারীদের ঋতুস্রাব বা সন্তান জন্মদানকালীন স্রাবের কারণে, তাহলে সেগুলো শাওয়ালের ছয় রোজার আগে আদায় করাই উত্তম। তবে শাওয়াল মাসে উল্লিখিত ছয় রোজা রেখে পরে যেকোনো সময়ে রমযানের কাজা রোজাগুলো আদায় করে নিলেও হাদিসে বর্ণিত ছয় রোজার ফজিলত লাভ করবে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমযানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত; তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না।’ (সহিহ্ বুখারি)।
মহানবী (সা.) এ রোজাগুলো রাখার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তিনি নিজেও শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে তা পালনে উৎসাহিত করতেন। তাছাড়া হাদিসের ভাষ্যমতে, শাওয়াল মাসে বিয়ে-শাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবারে ও জামে মসজিদে এবং বড় মজলিসে আক্দ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ হযরত আয়েশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববীতেই হয়েছিল। (মুসলিম)।
প্রতিটি নেক কাজেই রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার ১০ গুণ সাওয়াব পাবে।’ (সূরা আন’আম: ১৬০)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমাদের মহান রব এরশাদ করেন, রোজা হলো ঢালস্বরূপ। বান্দা এর মাধ্যমে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোজা আমার জন্যই; আমিই এর পুরস্কার দেব।’ (মুসনাদে আহমাদ) তাই নামায, নফল রোজা, তেলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত রমযান ছাড়া বাকি ১১ মাসেও বজায় রাখা জরুরি।
লেখক : গবেষক, কলামিস্ট।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।