তৌহিদুর রহমান
জেনিফার আর আকাশ দুজনের পাঁচ বছরের সম্পর্ক। প্রতি বছর ভালোবাসা দিবসে তেমন কিছু পরিকল্পনা তাদের থাকে না। কারণ আকাশের মতে, ভালোবাসার কোনো আলাদা দিন থাকে না, প্রতিদিনই তার কাছে ভালোবাসার দিন। তাই জেনিফার ও আকাশ কেউ কাউকে আলাদা করে এ দিনটাতে কিছু বলে না। তবে জেনিফার যেকোনো দিন মনে মনে আকাশের জন্য কোনো একটি বিশেষ উপহার ঠিক করে রাখে এবং আকাশের পিতা-মাতার মৃত্যুদিনে সেই উপহার আকাশকে ডিএইচএল সার্ভিসে পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই দিন তাদের সামনে এগিয়েছে।
জেনিফার ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। আর আকাশ সাংবাদিক রাশেদ-ফাহিমা দম্পতির একমাত্র আকাশ।
ওদের কখনো সরাসরি দেখা হয়নি, শুধু ফোনে কথা হয়, দেখা হয়। কিন্তু এবার আকাশের বিশেষ অনুরোধে আকাশের প্যারেন্টস হত্যা দিবসে অর্থাৎ ১১ ফেব্রুয়ারি যেভাবেই হোক, বিশেষভাবে নিজের পিতা-মাতার অনুমতি নিয়ে হলেও অন্তত জেনিফারকে একবারের জন্য বাংলাদেশে আসতে বলেছে আকাশ। জেনিফার ভেবে পায় না কী জন্য আকাশ যেতে বলছে, কোনো কারণও বলছে না, কী হতে পারে কারণ! সেদিন ‘সারপ্রাইজ ডে’ না অন্য কিছু। কিন্তু এর আগেও তো প্রতি বছর প্যারেন্টস হত্যা দিবস অর্থাৎ এরকম দিন একবার করে এসেছে। কিন্তু এভাবে তো যেতে বলেনি কখনো আকাশ! কী এমন বলার আছে তার!
দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে জেনিফারকে তাই অবশেষে হাজির হতেই হলো আকাশের কাছে। জেনিফারের সহসা মনে পড়ে যায় আকাশকে প্রস্তাব দেওয়ার দিনটা। সেদিন যদিওবা বিশেষ কোনো দিন ছিল না, তবুও মনে পড়ে ওই দিনটার কথা জেনিফারের। এসব ভাবতে ভাবতেই বিমান এসে ল্যান্ড করে ঢাকায়। বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে জেনিফার বাইরে এসে আকাশকে দেখতে পায়। আকাশ অসম্ভব সম্মানের সাথে রিসিভ করে জেনিফারকে। তারপর একটা কফিশপে দুজনে কিছুক্ষণ গল্প করার পর আকাশ তার মূল্যবান কথাটা বলতে শুরু করে। জেনিফারকে বলে, ‘তুমি তো আমার সব কথা সবসময় মেনে নিয়েছ, আজ আমার সর্বশেষ কথাটা তোমাকে মেনে নিতে হবে, তাই তোমাকে অনেক দূর থেকে এখানে ডেকে এনেছি। ‘তুমি আমাকে ভুলে যাও জেনিফার, আমি তোমাকে আমার কাছে বেঁধে রেখে কখনোই তোমার মনোকষ্টের কারণ হতে পারি না। তুমি সবই জানো, তবুও তোমাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা কর্তব্য বলে মনে করেছি। শেষ কথাটা শোনার পর তুমি হয়তো বলবে এ সামান্য কথাটা ফোনে বললেও পারতে, সাত-সমুদ্র তের নদী পার করে ডেকে আনার কি দরকার ছিল! তবুও খুব হালকাভাবে শক্ত কথাটা বলে ফেলল আকাশÑ জানো তো, সরকার বাহাদুর জানিয়েছে আমার প্যারেন্টস হত্যার বিচার শেষ হতে আরো পঞ্চাশ বছর লাগতে পারে। এই পাঁচ বছরেও যে কথাটা তোমাকে বলা হয়নি, তা হলোÑ ‘আমি প্রতিজ্ঞা করেলিাম যেদিন আমার প্যারেন্টস হত্যার বিচার সমাপ্ত হবে, সেদিন আমাদের ‘আকদ ডে’ হবে। কিন্তু তা আর হলো না। কারণ পঞ্চাশ বছর তোমাকে আমি ঝুলিয়ে রাখতে পারবো না। আমাদের পবিত্র গ্রন্থেও মহান আল্লাহ এ বিষয়টা ঝুলিয়ে রাখতে নিষেধ করেছেন। তোমার কাছে বিষয়টা নগণ্য মনে হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে আমার এ প্রতিজ্ঞাটা মহামূল্যবান। আমি আরো পঞ্চাশটা বসন্ত একাই পার করে দেব। তুমি ভুলে যাও আমায়।’
জেনিফার হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে, বার বার আবেগ জড়ানো গলায় বলতে থাকলোÑ ‘আমি তোমাকেই চাই, সবকিছুই আমার কাছে তুচ্ছ, তুমি ছাড়া। শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকেই চাই।’
কিন্তু আকাশ যথেষ্ট বুদ্ধিমান, সে জানে, মানুষের মন কখন কী বলে মানুষ নিজেই জানে না, এ না পাওয়াটা হয়তো জেনিফারকে কখনো বড় কোনো দুঃখের সম্মুখীন করতেই পারেÑ তবুও!!!
এ পাতার অন্যান্য খবর
- শাওয়াল মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- একটি ঐতিহাসিক ঈদকার্ড
- আল্লাহর লানত থেকে বাঁচতে রমাদানে গুনাহ মাফ করাতেই হবে
- ঈদের দিনে করণীয়
- লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও মর্যাদা
- যাকাত-ফিতরা কী এবং কার জন্য
- নূহের জাহাজ
- ফিলিস্তিন
- আশরাফ জামান-এর দুটি কবিতা
- জাকির আবু জাফর-এর কবিতা
- অফুরন্ত শান্তির ঈদ
- সোনার বাংলা
- সরল পথ
- লাহাব
- জেগে ওঠো ঐক্যবলে
- আত্মবিশ্লেষণে সামাজিক উৎসব ঈদুল ফিতর
- দৃষ্টিভঙ্গি বদলান : জীবনও বদলে যাবে
- সাদকাতুল ফিতর ও ঈদ উৎসব
- সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি যাকাত
- আনন্দের বারতা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর
- ঈদ আনন্দ আজ