সংবাদ শিরোনামঃ

অবশেষে সরকার ও আ’লীগের পরাজয় ** তত্ত্বাবধায়কের দাবি মানুন নয় তো বিদায় নিন ** আওয়ামী লীগাররা বিস্মিত হতবাক! ধস আর ঠেকানো যাচ্ছে না! ** উন্নয়নের রাজনীতি উপহার দিন না হলে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দেয়া হবে ** আ’লীগের ফ্যাসিবাদী চেহারা ** প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গ-তামাশা বনাম খালেদা জিয়ার আলটিমেটাম ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** ঢাকার মহাসমাবেশে আসতে পথে পথে বাধা ** ৪২টি ট্রেন চলাচলের জংশন স্টেশন পার্বতীপুরে যাত্রী ভোগান্তির শেষ নেই **

ঢাকা শুক্রবার ২ চৈত্র ১৪১৮, ২২ রবিউস সানি ১৪৩৩, ১৬ মার্চ ২০১২

১২ মার্চ বানচালের ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাসীন দল ছিল দ্বিধাবিভক্ত

আওয়ামী লীগাররা বিস্মিত হতবাক! ধস আর ঠেকানো যাচ্ছে না!

॥ মুনতাসির রহমান॥
শুধু বিরোধীদলের আন্দোলনে নয়, ক্ষমতাসীন দলের ভেতরকার আন্দোলনেও অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে সরকার। বাইরে অর্থাৎ বিরোধীদলের আন্দোলন, সমালোচনা বা বিরোধিতা প্রকাশ্যে হচ্ছে- যেটা দৃশ্যমান। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে যা’ ঘটছে সেটা অদৃশ্যমান। তিন বছরে সরকার পরিচালনায় ব্যর্থতা কি কারণে হয়েছে সে ব্যাপারে অদৃশ্যমান শক্তির আন্দোলন, বিরোধিতা চলছে। ব্যর্থতার পাল্লা এতটাই ভারী যে বিরোধিতা-সমালোচনা প্রকাশ্য শুরু হয়েছে। দলের মধ্যে এতকাল যারা কোণঠাসা ছিলেন তাদের পক্ষে সমর্থন বেড়ে গেছে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কি বলবেন তার জন্য অপেক্ষা করার সময় আর নেই। কারণ বিরোধী দলের আন্দোলন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, র াজপথ ফের রক্তাক্ত হবে। বিরোধী দলের রাজপথের আন্দোলন ঠেকাতে ইতোমধ্যে দল এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। কিন্তু হাইকমান্ডের নির্দেশ মানার আগেই গত তিন বছরের সরকার ও দলের সুবিধাভোগী ক্ষমতা ভোগকারী এবং অতিমাত্রায় আওয়ামীপ্রেমীদের সমালোচনা ও চিহ্নিতকরণ শুরু হয়েছে। এমন অবস্থা শুধু রাজধানীতে নয়, দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠছে। দলের প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা সরকার গঠনের শুরু থেকেই। ২০০৮ সালে নির্বাচন প্রক্রিয়াটা ছিল মূলত আমলাদের নিয়ে। আমলানির্ভরতা সরকার গঠনেও প্রতিফলিত হয়েছে। যার পরিণতি এখন সরকারকে রীতিমতো ভোগ করতে হচ্ছে। সরকারের ভেতরকার আমলা যারা ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তাদের পরামর্শ, বুদ্ধি নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোনা যায়, ১২ মার্চ বিরোধী দলের ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচির দিন ঢাকাকে অচল করে দেয়ার বুদ্ধি পরামর্শ তাদের দেয়া। সরকার রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে গণপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। বাস, ট্রেন, লঞ্চ কোনো জেলা থেকে আসতে দেয়া হয়নি। রাজধানীর সমস্ত হোটেল বন্ধ করে দেয়া হয়। ১২ মার্চের বিরোধী দলের মহাসমাবেশে ভীত হয়ে অঘোষিত হরতাল ডাকে- এমন মন্তব্য খোদ আওয়ামী লীগ থেকে করা হয়েছে। নাম প্রকাশ করতে চাননি দলের একাধিক নেতা জানান, দলের সভানেত্রী স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদকে হার মানিয়েছেন। এরশাদের আমলেও সভা-সমাবেশের ওপর শর্ত আরোপ করা হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশ ১১টি শর্ত জুড়ে দেয় মহাসমাবেশ করতে। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনে সমাবেশের মিছিল করেছি। তাতে কোনো শর্ত ছিল না। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেউ কেউ পুলকিত হলেও দলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। যার পরিণতি আগামী নির্বাচনের ওপর পড়বে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ সংস্কারপন্থী অভিযোগে দলের মধ্যে কোণঠাসা। তিনি একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, দল যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন উনাদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না। অধিক ক্ষমতা ভোগকারী এই উপদেষ্টাদের কথায় সরকার চলছে, এমন মন্তব্য করেছেন সরকারের নব্য দুই মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সুরঞ্জিত সেন গুপ্তও। এই দুইজন মন্ত্রী হওয়ায় তারা আপাতত মুখে তালা লাগিয়েছেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারাও ফুঁসে আছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ

১২ মার্চের মহাসমাবেশ সরকারের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না, চ্যালেঞ্জ ছিল বিরোধীদলের জন্য। বিরোধীদল সরকারের পতন নয় অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানী ঢাকাতে মহাসমাবেশ ডাকে।  সমাবেশ সফল করা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। সমাবেশে ২০ লাখ লোক হলেও সরকারের পতন ঘটে যেত না। কারণ এ সমাবেশটা সরকারের পতন ঘটানোর জন্য নয়। যে কোনো দাবিতে বিরোধীদল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে। এটা সকলের গণতান্ত্রিক অধিকার। বরং গণতান্ত্রিক অধিকার সরকার সঠিকভাবে পালন করতে দিলে সরকারেরই ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো। গণতন্ত্রের ভিত আরো মজবুত হতো। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সেটা না করে বাঁকা পথ অনুসরণ করে যে নজির স্থাপন করেছ তা রীতিমতো গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকি। গণতন্ত্রের লেবাসধারী আওয়ামী লীগ যে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন একটি দল তা ’৭৫ সালের মতো আবারো প্রমাণ করলো। শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ চালাতে ব্যর্থ হন তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেন। রক্ষী বাহিনী দিয়ে বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের পাইকারী হারে পেটানো হয়। ১২ মার্চে বিরোধী সমাবেশের উপর সরকারের পেটোয়া বাহিনীর যে আচরণ জাতি প্রত্যক্ষ করেছে তাতে শেখ মুজিবের বাকশালী শাসনামলের কথাই মনে করিয়ে দেয়। শেখ হাসিনা নতুন কোনো বাকশাল গঠন করেননি, তবে তার শাসনব্যবস্থা বা পদ্ধতি তদ্রƒà¦ª মনে হয়েছে। শেখ মুজিব যেমন লাল ঘোড়া দাবড়াতে চেয়েছিলেন, হাসিনাও ১২ মার্চের সমাবেশে লালঘোড়া দাবড়ালেন। এতে আর যাই হোক বিরোধীদলের কোনো ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি যেটা হওয়ার তা সরকারি দলের হয়েছে। আজীবন আওয়ামী লীগের সমর্থক, নৌকা ছাড়া জীবনে কোথাও ভোট দেননি এমন একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, জীবনে আর কখনো নৌকায় ভোট দেব না। নৌকায় ভোট দিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বানিয়েছি। অন্ধ বিশ্বাসের ভঙ্গ এবার হলো। এমন মন্তব্য দলের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদেরও। দলের এই পর্যায়ের কর্মী বা সমর্থকরা এবারই প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছে। তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর বড় ধরনের ফাটল ধরলো যার হিসাব-নিকাশ পাওয়া যাবে আগামী নির্বাচনের সময়।

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার আওয়ামী লীগের একজন কট্টর সমর্থক এ প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে জানালেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে বিপুল বিজয় অর্জিত হয়েছিল আগামী নির্বাচনে তার বিপরীত হবে। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে আমরা কষ্টে আছি। বিদ্যুতে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে অথচ আমরা বিদ্যুৎ  পাচ্ছি না। প্রতি পরিবারের একজন কর্মশীল বেকার যুবককে চাকরি দেয়ার কথা বলেছিলেন শেখ হাসিনা। এটা তার নির্বাচনী অঙ্গীকারও ছিল। কিন্তু সরকারের তিন বছর পার হয়ে গেলেও  অনেক চেষ্টা করেও বেকার ছেলেকে চাকরি দিতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয়ে প্রতিনিয়ত যাই। ওখানে কোনো মন্ত্রীর দেখা পাই না। কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকেও পাই না। যাদের পাই তারা দলের মধ্যে কোণঠাসা। নগর কমিটির নেতারা তো দুইভাগে বিভক্ত। ফলে দল করেও কোনো লাভ হলো না। তিনি পরিষ্কার বললেন, আগামীতে আর নৌকায় ভোট দেব না। আমাদের নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীকে একথা জানিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেছেন, আমার হাতে তো ক্ষমতা নেই।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, দলের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী সমর্থকদের এমন ক্ষোভ এবং পরিবর্তনের আভাস সারাদেশে একই রকমের। যারা এতকাল মুখ খোলেনি তারাও ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। এ ধস সামাল দেয়ার পথ আপাতত নেই।

বিভক্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব

বিরোধী দলের আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধী এই দুই ইস্যুতে মহাজোটে ঐক্য ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়। ঐক্য ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়েও আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছেন না বলে শোনা যাচ্ছে। ১৪ দলকে আপাতত ধরে রেখেছেন। কিন্তু তারা বিগড়ে গেছে ১২ মার্চের সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণে। এখন ১৪ দলের বৈঠক ঘন ঘন ডাকা হচ্ছে শরিক দলের অফিসে তাদের খুশি করতে। রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনু সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে তাদের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বৈঠকে যাচ্ছেন শুধু যুদ্ধাপরাধী বিচারের ইস্যুতে। নাম প্রকাশ করতে চান না আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক এ প্রতিনিধিকে বলেন, দলের অবহেলিত সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমু, আবদুল জলিল, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও ওবায়দুল কাদের এই পাঁচ নেতা বিএনপি’র মহাসমাবেশকে বাধা দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু তাদের কথা রাখা হয়নি। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও নমনীয় ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একেবারে অনমনীয় ছিলেন। তিনি তার ৭ উপদেষ্টা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং আইন প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে নিয়ে পুলিশকে কড়া অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সারাদেশে পরিবহন ব্যবস্থাকে অচল করার নির্দেশ দেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে দিয়ে। তবে রেলের টিকিট বন্ধ করার ব্যাপারে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত কিছু বলেননি বলে ওই নেতা জানান। মূলত বিরোধী দলের মহাসমাবেশের এই ইস্যুটি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের বিরোধ দেয়া দিয়েছে। বিরোধ দেখা দেয়ার প্রধান যে কারণটা তা à¦¹à¦²à§‹Ñ à¦¦à¦²à§‡à¦° সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ উপেক্ষা করা। এতে তারা অনেকে ফুঁসে উঠেছেন।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।