মহাসমাবেশে মকবুল আহমদ

উন্নয়নের রাজনীতি উপহার দিন না হলে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দেয়া হবে

গত ১২ মার্চ নয়াপল্টনে চারদলীয় জোট ও সমমনা দলের উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ

সোনার বাংলা রিপোর্ট
গত ১২ মার্চ নয়াপল্টনে চারদলীয় জোট ও সমমনা দলের উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ বলেছেন, জনগণের জন্য কল্যাণ ও উন্নয়নের রাজনীতি উপহার দিন, না হলে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দেয়া হবে।  মকবুল আহমদ বলেন, ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীন মৈত্রী আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিরোধী দলকে সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করবেন না। হানাহানির রাজনীতি পরিহার করবেন। কিন্তু তারা এ কথা রাখেনি। তিনি বলেন, ওয়াদা করার সময় লিখে রাখা উচিত। কেন না দুনিয়ায় জবাব দিতে না হলেও আখিরাতে এর হিসেব দিতেই হবে।

তিনি বলেন, ঈমানদারদের এক কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুই রকম কথা। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে এক রকম কথা বলে, ক্ষমতায় গেলে আরেক রকম কথা বলে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তারা বলেছিল, কুরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো কিছু তারা করবে না। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই তারা সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক দল। তারা মামলা প্রত্যাহার কালে দলীয় লোকদের মামলা প্রত্যাহার করে। চাকরি দিলেও দলীয় লোকের বাইরে দেয় না। ক্ষমতাসীনদের দায়িত্ব শুধু দলীয় লোকদের জন্য কাজ করাই নয়, গোটা জাতির জন্য কাজ করা। কিন্তু এ সরকার সে মর্যাদা রাখতে পারেনি। তিনি বলেন, তারা ১০ টাকা কেজি চাল, দ্রব্যমূল্য কমানোর ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে কিছু করতে পারেনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের দুই নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিবির নেতাকে র‌্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা এখনো নিখোঁজ। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও মামলা দেয়া নিয়ে ব্যস্ত। যে জুলুম নির্যাতন করা হচ্ছে, এর জবাব জনগণের কাছে একদিন দিতে হবে।

মকবুল আহমদ বলেন, উচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিলেও ২ মেয়াদের জন্য এ ব্যবস্থা রাখার কথা বলে দিয়েছিল। কিন্তু সরকার তা মানেনি। এর মাধ্যমে সরকারই আদালত অবমাননা করেছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা বাতিল করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।

তিনি সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, ইভটিজিং, ভারতীয় সংস্কৃতি আমদানির মাধ্যমে যুব সমাজের চরিত্র ধ্বংস করার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ভারতের সাথে ৩ বিঘা করিডোরের মীমাংসা হয়নি। বাংলাদেশ ট্রানজিট দিয়ে দিচ্ছে। তারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। এটা কখনই বন্ধুত্বের লক্ষণ হতে পারে না।

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, বর্তমান আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, তাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে। বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করে তিনি তাদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের জন্য কল্যাণ ও উন্নয়নের রাজনীতি উপহার দিন, নইলে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে জনগণকে আসতে বাধা দিলেও জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে এই মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করায় তিনি সকলেকে অভিনন্দন জানান। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে জনগণ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে।

মহাসমাবেশ সফল করায় নগরবাসীকে মহানগরী জামায়াতের অভিনন্দন

দেশ পরিচালনারায় ব্যর্থ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল ও কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসন বন্ধের দাবিতে চারদলীয় ঐক্যজোট ও সমমনা দলগুলোর আহ্বানে ঢাকা চলো কর্মসূচি ও রাজধানী ঢাকার মহাসমাবেশকে সরকারের সকল দমন, পীড়ন ও বাধা, প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সর্বাত্মকভাবে সফল করায় নগরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে এক যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, চারদলীয় জোট ও সমমনা দলগুলো বিগত ৩ মাস পূর্বে ঢাকা চলো কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলো গ্রাউন্ডে স্মরণকালের জনসমুদ্রে চারদলীয় জোটের পক্ষ থেকে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণার পরই বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার দিশেহারা হয়ে পড়ে। গত ২৯ জানুয়ারির গণমিছিল ঠেকাতে সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করে শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে বর্বরোচিত কায়দায় গুলি করে জামায়াত, বিএনপির ৫ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। এরপর ১২ মার্চের ঢাকা চলো কর্মসূচি ঠেকাতে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার আবার নতুন করে বাকশালী রূপ ধারণ করে। সারাদেশে দমন-পীড়ন ও গণগ্রেফতারের সাথে সাথে দেশের সকল যানবাহন মালিকদের সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। রাজধানীর আবাসিক ও খাবার হোটেলগুলো বন্ধ করে দেয়।

সরকার মহাসমাবেশ বানচাল করতে জামায়াত শিবিরের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করলেও জালিম সরকারের হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও হাজারো বাধা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে স্মরণকালের মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে জনগণ স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে। কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে কোনো প্রহসন জনগণ মানে না। অবিলম্বে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে হবে। আর কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমেছে। কেয়ারটেকার সরকারের পুনর্বহাল ছাড়া জনগণ ঘরে ফিরবে না। অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার জন্য নেতৃদ্বয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

নেতৃদ্বয় চারদলীয় জোটের মহাসমাবেশকে সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য আবারো জামায়াত-শিবির ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীসহ ঢাকা মহানগরীর সর্বস্তরের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।