১২ মার্চের মহাসমাবেশ সফল করায় দেশবাসীকে জামায়াতে ইসলামীর মোবারকবাদ

সরকারের নানা বাধা, বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা, হুমকি, ধমকি ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গত ১২ মার্চ ৪ দলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে যোগদান করে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি সফল করায় দেশবাসীকে অন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শকিকুর রহমান গত ১৩ মার্চ নিম্নোক্ত যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “সরকারের নানা বাধা, বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা, হুমকি, ধমকি ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গত ১২ মার্চ ৪ দলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে যোগদান করে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি সফল করায় আমরা দেশবাসীকে অন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে সকল প্রকার ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, ওলামা মাশায়েখসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ মহাসমাবেশ সফল করার জন্য যে সহযোগিতা করেছেন সে জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি ও মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য সরকার বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ, ট্যাক্সি, টেম্পো, বেবিট্যাক্সি, ভ্যান, রিকশা, নৌযান, ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। ঢাকা শহরের হোটেল, রেস্তোরাঁ, বেকারি, পানির দোকান বন্ধ করে সরকার স্বৈরশাসনের এক জঘন্য নজির স্থাপন করেছে। তারা ৩ দিন পর্যন্ত রাজধানী শহর ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। মহাসমাবেশের প্রচারের জন্য পোস্টার, ব্যানার টানানো, মাইকিং করা বন্ধ করে দেয়। কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল মহাসমাবেশের খবর সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নিলে সরকার তা জোর করে বন্ধ করে দেয়। সারাদেশে চলে ব্যাপক গ্রেফতার ধর-পাকড়। জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে গ্রেফতার করা হয়। সমাবেশের দিন বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে সশস্ত্রভাবে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। তারা প্রকাশ্যভাবে লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, রামদা, ছোরা ও পিস্তল নিয়ে সমাবেশে আগত লোকদের উপর হামলা চালায় এবং নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপ ত্র লুটপাট করে। আওয়ামী সরকার জাতির প্রতি অত্যাচারের এক নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করেছে। তারা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়িকে পর্যন্ত তাদের গন্তব্যে যেতে দেয়নি। মহাসমাবেশে আগত জনগণের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তারা লাশের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে। দুনিয়ার কোন সভ্য দেশে এমনকি যুদ্ধরত কোন দেশেও লাশবাহী গাড়িকে আটকিয়ে রাখার কোন নজির নেই। আওয়ামী লীগ সরকার সে নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করল।  আমরা সরকার ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের এহেন অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও মানবতাবিরোধী  ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সরকার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে মহাসমাবেশের খবর সরাসরি সম্প্রচারে বাধা সৃষ্টি করে এবং সাংবাদিকদের নানাভাবে হয়রাণি করে তাদের বাকশালী চরিত্রকেই ফুটিয়ে তুলেছে। সরকারের সকল প্রকার ভয়-ভীতি ও নানামুখী চাপ উপেক্ষা করে ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুগণ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যে সাহসীকতা, দৃঢ়তা, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের এ ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

সরকারের বাধা বিপত্তি ও দুঃশাসন উপেক্ষা করে ঢাকা চলো কর্মসূচি ও সহাসমাবেশ সফল করে জনগণ প্রমাণ করে দিয়েছে দেশের মানুষ এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। জনগণ এ মহাসমাবেশের মাধ্যমে সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রদর্শন করেছে। সরকার যদি জনগণের মতামত উপেক্ষা করে গাঁয়ের জোরে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চায় তার পরিণতি কখনো শুভ হবে না। সরকার শত চেষ্টা করেও আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাই সরকারের উচিত ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। অন্যথায় তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে জালেম সরকারকে বিদায় নিতে হবে। মহাসমাবেশ থেকে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত যে সব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তা সফল করার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং চারদলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীসহ গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।’ প্রেস বিজ্ঞপ্তি