কায়রো, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের বিক্ষোভ

ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি

সোনার বাংলা রিপোর্ট : ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও করেছে প্রবাসীরা। কায়রোতে ওআইসি সম্মেলন চলাকালে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ও বার্মিংহামে হাইকমিশনের সামনে পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হাজার হাজার প্রবাসীরা। তারা আবদুল কাদের মোল্লার ব্যাপারে অন্যায় রায় বাতিল করে তাকেসহ সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি : বাংলাদেশের আলেমদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদ ও বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে গত ৬  ফেব্রুয়ারি কায়রোতে ওআইসি সম্মেলন চলাকালে বিােভ করেছে আরব ইসলামিক ফোরাম ও  সিরিয়ার যুব সংগঠনের নেতারা। সিরিয়া মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি জুহেরনার মাওড়ার সভাপতিত্বে বিক্ষোভে প্রধান অতিথি ছিলেন সিরিয়া থেকে আগত হায়াতুল ইগাছা ফোরামের চেয়ারম্যান ড. মুউতাজ আল খাইরি।

প্রধান অতিথি বলেন, আমরা সিরিয়ার মানুষ সারা দুনিয়ার কাছে পরিচিত, বাশার আল আসাদের নির্যাতনে লাশের পরে লাশ পড়ছে। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ মেরেও সে ্যান্ত হচ্ছে না। সে যেমন জাতির কাছে এক ঘৃণীত বলে পরিচিত ঠিক তেমনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দমন করতে শেখ হাসিনা সরকার যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তা বিশ্বজুড়ে আজ বিতর্কিত। আগামীতে শেখ হাসিনার অবস্থা হবে বাশার আল আসাদের মতো। তিনি বলেন, জামায়াত নেতাদের দোষ একটাই যে তারা ইসলাম ও কুরআনের কথা বলে তাই মতার লোভে হাসিনা তাদের বিচার করছে। মুবারকের দিনগুলো যেমন ছিল আজ হাসিনা সেই সময়ের মধ্যে। তাকে ভুল থেকে সরে আসতে হবে। জামায়াত নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। আর তাদের যদি শাস্তি দেয়া হয়, তাহলে সিরিয়ার ন্যায় বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে পড়বে।

সকালে  মিসরের প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মাদ মুরসি ও ইরানের প্রেসিডেন্ট সম্মেলন কে যাবার সময় বাংলাদেশ ও সিরিয়া নিয়ে দফায় দফায় বিােভ করে তারা। বিক্ষোভে মিসরসহ অনেক দেশের সাধারণ জনতা অংশগ্রহণ করে জামায়াত নেতাদের মুক্তি চাই ও ট্রাইব্যুনাল বাতিল কর বলে স্লোগান দিতে থাকে। শত শত লোকের উপস্থিতিতে বিােভ সকল ডেলিগেটদের নজর কাড়ে।

ওয়াশিংটন ডিসি : স্থানীয় সময় ৬ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বিােভ করেছে ফোরাম ফর ডেমোক্রেটিক রাইট্স ইন বাংলাদেশ (এফডিআরবি)। বিক্ষোভ শেষে তারা রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে তারা ৩ দফা দাবি পেশ করেন। প্রথম দাবি হচ্ছে, বাংলাদেশে কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে বিরোধী মত দমনের বিচার বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংগঠিত সকল যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিষয়ে তদন্তের জন্য জাতিসংঘ অনুমোদিত আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করতে হবে। তৃতীয় দাবি হচ্ছে, যদি এই কমিশন অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে সাবেক যুগোস্লাভিয়া বা রুয়ান্ডার মতো জাতিসংঘ অনুমোদিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আবদুল কাদের মোল্লার রায় প্রসঙ্গে স্মারকলিপিতে বলা হয়, এতে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। আবদুল কাদের মোল্লা সম্পূর্ণ নির্দোষ।

স্মারকলিপি দেয়ার আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্বে করেন ফোরামের সভাপতি আবদুল মান্নান। আরো বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মোহাম্মদ তাহের, শরীফুল ইসলাম শিকদার, আবদুল আউয়াল ও মাহমুদুল কবির প্রমুখ।

ম্যানচেস্টারে সমাবেশ : হাসিনা সরকারের চরম মিথ্যাচার, জুলুম, প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীকে হত্যা ও আলেম-ওলামার উপর অত্যাচার নিপীড়ন, অন্যায় রায়সহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি এবং ক্যাঙ্গারু ট্রাইব্যুনাল বন্ধের দাবিতে ম্যানচেস্টারস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে সেইভ বাংলাদেশের ব্যানারে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক বিশাল বিােভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মুহুর্মুহু সরকার বিরোধী স্লোগানের মধ্যদিয়ে গ্রেটার ম্যানচেস্টার ও ব্রাডফোর্ডসহ আশপাশের বিভিন্ন শহর থেকে অসংখ্য মানুষ এতে উপস্থিত হন। এতে বক্তব্য রাখেন ওল্ডহাম বাংলাদেশ সোসাইটি, ম্যানচেস্টার নাগরিক সমিতি, প্রজন্ম বাংলাদেশ, সাঈদী মুক্তি পরিষদ, বিভিন্ন সংস্থা ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দসহ ১৮  দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন জুলুমের রূপ তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে বগুড়ায় পুলিশ ও নিন্দিত ছাত্রলীগ কর্তৃক তিন জন জামায়াত শিবির কর্মীকে হত্যা এবং চট্টগ্রামে চার জনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা করার মতো ঘৃণ্যতম কাজের সমালোচনা করে অবিলম্বে এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। অন্যথায় বিশ্ব মুসলমান এক হয়ে এই জালিম হাসিনা  সরকারকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বক্তারা সম্প্রতি বিতর্কিত  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার উপর স্বেচ্ছাচারমূলক অন্যায় ও ঘৃণ্যতম এই রায়ের কড়া সমালোচনা করেন এবং অনতিবিলম্বে মাওলানা নিজামী, গোলাম আযম, মাওলানা সাঈদীসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

নোমান আহমেদের সভাপতিত্বে এবং মাওলানা শরীফ হুসাইনের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন, রমজান খান, সাজিয়ান আহমেদ, ফজল হক চৌধুরী, শফীকুল হোসাইন, আজিজুল হক, মুশফিক শাহজাহান চৌধুরী, হাফিজ নজরুল ইসলাম, আব্দুল মালিক, আফসার আহমেদ চৌধুরী, মঞ্জুর আহমদ, মাওলানা ইখলাসুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো অনেকে।

বিােভ সমাবেশ উত্তর সেইভ বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ম্যানচেস্টারস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়।