সংবাদ শিরোনামঃ

মার্কিন-ভারত প্রক্সি-যুদ্ধ! ** জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলি ** শাহবাগের কথায় রায় দেয়া হলে ট্রাইব্যুনালের আর প্রয়োজন কি? ** রাজনৈতিক অপশক্তি প্রতিরোধে মানুষ চায় বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ** ফ্যাসিবাদকে সহায়তা দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয় ** কন্যা পররাষ্ট্রনীতিতে পিতার পথ পরিত্যাগ করেছেন ** ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি ** তালায় কপোতা খনন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ ফাল্গুন ১৪১৯, ৪ রবিউস সানি ১৪৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমের পে তার ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর স্যা প্রদান গত ১১ ফেব্র“য়ারি শেষ হয়েছে। গত বছরের ১২ নভেম্বর তিনি তার পিতার পে স্যা দেয়া শুরু করেন। মোট ১০টি সেশনে তিনি জবানবন্দী দেন। পরে সরকার পরে আইনজীবী প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী তাকে জেরা করেন। গত ১১ ফেব্র“য়ারি সোমবার সকাল-বিকাল দুই বেলা জেরা করার মধ্য দিয়ে জেরা শেষ হয়। ব্রিগেডিয়ার আমান মোট ১২ দিনে জবানবন্দী দেন। এর মধ্যে ১২, ১৩, ১৮, ১৯, ২০ নবেম্বর তিনি কিছু বক্তব্য রাখেন। পরে ২১ ও ২২ নভেম্বর, ৮ জানুয়ারি, ৯ জানুয়ারি ও ৩ ফেব্রুয়ারি কিছু ডকুমেন্ট আদালতে পেশ করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি জবানবন্দী শেষে তার জেরা শুরু হয়। পরে ৪, ৭, ১০ এবং গত ১১ ফেব্রুয়ারি তার জেরা হয়। সব মিলিয়ে মোট ১৬ সেশনে তার জবানবন্দী ও জেরা সম্পন্ন হয়। বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলছে অধ্যাপক গোলাম আযমের ১৯৭১ সালের কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত সোমবারও তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়নি। জেরায় প্রসিকিউটর হায়দার আলীকে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সীমন প্রমুখ। অপরদিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের পে ছিলেন এডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারী, শিশির মোহাম্মদ মনির, ইমরান সিদ্দিক, রায়হান উদ্দিন প্রমুখ।

গত ১১ ফেব্র“য়ারির জেরার উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নরূপ :

প্রশ্ন : জীবনে যা দেখলাম বইয়ের তৃতীয় খণ্ডের ১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আপনার পিতা একটি বেতার ভাষণ দিয়েছিলেন।

উত্তর : জি।

প্রশ্ন : প্রদর্শনী আই জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা বইটি আপনার পিতার লেখা। উক্ত বইয়ের ৭০ ও ৭১ পৃষ্ঠায় (রানিং পৃষ্ঠা ১৯৯) উল্লেখ করা আছে যে মজলিসে শূরার বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে করণীয় কি করা হবে। তা নির্ধারণ করা হয়। দলের করণীয় সম্পর্কে বিশ্লেষণ উল্লেখ আছে।

উত্তর : জি।

প্রশ্ন : ট্রাইব্যুনালে আপনার দাখিলকৃত ভলিউম ২ এবং ৩ আপনি পড়েছেন?

উত্তর : জি, পড়েছি।

প্রশ্ন : এই দু’টি ভলিউমের বিষয়বস্তু এই মামলার সাথে সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট নয়। এগুলো অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র।

উত্তর : আমি মামলার জন্য প্রয়োজনীয় মনে করেই দাখিল করেছি।

প্রশ্ন : প্রদর্শনী BC বইটি মুনতাসির মামুন কর্তৃক লিখিত ‘রাওফরমান আলী খান ঃ বাংলাদেশের জন্ম’ একটি বই।

উত্তর : এটি অনুবাদ গ্রন্থ। ভূমিকা লিখেছেন মুনতাসির মামুন।

প্রশ্ন : এই বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠার শেষাংশ ও ৫২ পৃষ্ঠার প্রথম অংশে উল্লেখ আছে যে, প্রেসিডেন্ট সকল গভর্নর ও এমএনএ’র একটি সভা ডেকেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আহসান ও ইয়াকুবের এতে যোগ দেয়ার কথা ছিল। আমাকে অবশ্য প্রেসিডেন্টের সাথে সাাতের জন্য ক’দিন আগেই ডেকে নেয়া হয়েছিল। জেনারেল পীর জাদার সঙ্গে আমি ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্টের অফিসে তার সঙ্গে দেখা করলাম। আমাদের বৈঠকটির বিবরণ অনেকটা এরকম- আমরা বসার সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট বলে উঠলেন ‘আমি ঐ বাস্টার্ডকে শায়েস্তা করতে যাচ্ছি’। আমি বললাম, ‘স্যার তিনি এখন আর বাস্টার্ড নন। তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং এখন সমগ্র পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছেন’। ইয়াহিয়া সত্যিই ক্রুদ্ধ ছিলেন এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার ব্যাপারে মন স্থির করে ফেলেছিলেন। আমি বললাম, ‘এর ফলে মিলিটারি এ্যাকশনে যেতে হবে’। তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে’।

উত্তর : জি।

প্রশ্ন : প্রেসিডেন্ট কাকে বকা দিয়েছেন?

উত্তর : বইয়ে যা আছে তা বোঝাই যায়। আমার বলার কিছু নেই। এটা স্বব্যাখ্যায়িত।

প্রশ্ন : উক্ত বইয়ে উল্লেখ আছে যে, ‘আমার পূর্ব পাকিস্তানকে আমাদের ওপর শাসন চালাতে দিব না’।

উত্তর : জি।

প্রশ্ন : আপনার দাখিলকৃত ডকুমেন্ট ভলিউম ২, ৫, ৬, ৭, ৮ এবং ১০ এই মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় অপ্রয়োজনীয়।

উত্তর : সত্য নয়।

প্রশ্ন : প্রদর্শনী এ, বি, সি সম্পূর্ণ আপনার মনগড়া কাগজ, মামলার প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন।

উত্তর : সত্য নয়।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সেনা অফিসার নির্বাচনের েেত্র যা বিবেচনা করা হয় তা হলো- শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি রায় বীরত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী অফিসার এবং দেশে-বিদেশে খেতাব অর্জনকারী অফিসার।

উত্তর : ইহা সত্য নয়।

প্রশ্ন : আপনি কোনো খেতাবপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার ছিলেন না।

উত্তর : খেতাব পাইনি, তবে পদকপ্রাপ্ত।

প্রশ্ন : রাজনৈতিক কারণে আপনাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়নি এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

উত্তর : সত্য নয়।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের শেষ দিকে নিশ্চিত পরাজয় জেনে আপনার পিতা পশ্চিম পাকিস্তানে পালিয়ে যান।

উত্তর : ইহা সত্য নয়।

প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ভাঙ্গার অভিযোগ ছিল।

উত্তর : সত্য নয়।

প্রশ্ন : বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পরে আপনার নানা কারণে ক্যান্টনমেন্টে আপনাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল।

উত্তর : সত্য নয়।

প্রশ্ন : প্রসিকিউশনের স্যা চলাকালে আপনি এই ট্রাইব্যুনালে এসেছেন।

উত্তর : কখনো কখনো এসেছি, প্রতিদিন নয়।

প্রশ্ন : আপনার পিতা, সজ্ঞানে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। সেটা জেনে বুঝেও আপনি তা গোপন করে ট্রাইব্যুনালে সত্য গোপন করে স্যা দিয়েছেন?

উত্তর : সত্য নয়।

প্রশ্ন : আপনার পিতা আত্মস্বীকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধী। এটা জেনে বুঝেও আপনি তাকে বাঁচানোর জন্য সত্য গোপন করে স্যা দিয়েছেন।

উত্তর : ইহা সত্য নয়। তিনি অখণ্ড পাকিস্তানের পে ছিলেন- এটা তিনি স্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো অপরাধ করেননি।

প্রশ্ন : আপনার পিতা স্বাধীনতার পরেও ১৯৭১ সালে তার কৃত মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী কাজ করেছেন।

উত্তর : সত্য নয়।

প্রশ্ন : আপনার পিতার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ জানা সত্ত্বেও আপনি সত্য গোপন করে আপনার পিতাকে বাঁচানোর জন্য স্যা দিলেন।

উত্তর : সত্য নয়।

শান্তি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে নূরুল আমিনের বাসায়

আহূত সভায় আ’লীগের ২ জন নেতাও ছিলেন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর জেরা অব্যাহত রয়েছে। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালে পিডিবি প্রধান নূরুল আমিনের বাসায় আয়োজিত সভায় মুসলিম লীগ, পিডিবি, জামায়াতে ইসলামী ও নেজামে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ঐ বৈঠকে আওয়ামী লীগের ২ জন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সেরা অফিসার নির্বাচন করা হয় প্রথা অনুসারে। একাডেমিক ক্যারিয়ার, পেশাগত দতা এবং মানবিক গুণাবলী এই ৩টি বিষয় বিবেচনা করা হয় সেরা অফিসার নির্বাচনের েেত্র। তিনি বলেন, আমার দাবি করার কোনো বিষয় নয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতে আমি সর্বকালের সেরা অফিসারদের একজন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই, সাধারণত অপরাধ সংঘটন এবং তদন্তের ভিত্তিতে কাউকে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়ে থাকলেও আমার েেত্র তার কোনোটিই করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না, কোনো তদন্তও হয়নি। প্রতিরা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে যা আইনসিদ্ধ নয়।

বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল-বিকাল দুই বেলাই জেরা করা হয় ব্রিগেডিয়ার  (অব.) আমানকে। জেরায় প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীকে সহায়তা করেন জেয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সীমন। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের পে ছিলেন এডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারী, ইমরান সিদ্দিক, শিশির মোহাম্মদ মনির ও রায়হান উদ্দিন প্রমুখ।

জেরা শেষ না হওয়ায় রোববার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধ্যাপক গোলাম আযমের অনুপস্থিতিতেই চলছে তার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া।

জেরার উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নরূপঃ

প্রশ্ন- আর্মিতে সেরা অফিসার নির্বাচনের ক্রাইটেরিয়া কি তার একাডেমিক কোয়ালিফিকেশনের ওপর নির্ভরশীল না পারফর্মেন্সের ওপর নির্ভর করে।

উত্তর- একাডেমিক দতা, পেশাগত দতা এবং সুন্দর আচার-আচরণ বা মানবিক গুণাবলী এই তিনটি বিষয় সাধারণত বিবেচনা করা হয়।

প্রশ্ন- এটা কি বিধি না প্রথা?

উত্তর- প্রথা।

প্রশ্ন- তাহলে কি এ ধরনের কোনো বিধি নেই?

উত্তর- প্রতিবছর একটি (TRACE) ট্রেস করা হয়। তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়।

প্রশ্ন- আপনি সেরা অফিসার বলে যে দাবি করেছেন তা সত্য না।

উত্তর- আপনার বক্তব্য সত্য নয়। আমাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বকালের সেরা অফিসারদের একজন বলে সেনাবাহিনী গণ্য করে।

প্রশ্ন- সেনাবাহিনী থেকে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছে মর্মে যে চিঠি দিয়েছিল তা কি এখানে দাখিল করেছেন?

উত্তর- প্রয়োজন ছিল কি না জানি না।

প্রশ্ন- বরখাস্তের চিঠির মধ্যে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয় কি না?

উত্তর- অপরাধ ছাড়া বরখাস্তের কোনো নিয়ম নেই। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না, কোনো তদন্ত হয়নি। সরকারের সাংবিধানিক মতাবলে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের চিঠির সাথে সাধারণত সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা উল্লেখ থাকে।

প্রশ্ন- আপনার বরখাস্তে কোনো কারণ উল্লেখ আছে কি না?

উত্তর- সেনাবাহিনীর চিঠিতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে প্রতিরা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ অপরাধ উল্লেখ ছাড়া বা আইন উল্লেখ ছাড়া এভাবে বরখাস্ত করার নজির উপমহাদেশের ইতিহাসে নেই।

প্রশ্ন- আপনাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় বরখাস্ত করা হয়েছে কোনো অপরাধ ছাড়া এ কথা সত্য নয়।

উত্তর- আপনার বক্তব্য সত্য নয়।

প্রশ্ন- ১৯৭৫ এবং ১৯৮২ সালের মার্শাল ল চলাকালে বাংলাদেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ ছিল না।

উত্তর- জি।

প্রশ্ন- যতগুলো সামরিক শাসন জারী হয়েছে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত তা অবৈধ ঘোষণা করেছে।

উত্তর- জি, আমি শুনেছি।

প্রশ্ন- অধ্যাপক পদবী অর্জন করতে  হয় এটা আপনার জানা আছে কি না?

উত্তর- আমার বাবা ৫০-এর দশকে রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করতেন। তিনি তার বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। অধ্যাপনার যে ধারাবাহিক পদবী- এগুলো চালু হয়েছে ৬০-এর দশকের পরে।

প্রশ্ন- আপনার পিতা যখন শিকতা করতেন তখন প্রভাষক পদ ছিল কি না?

উত্তর- সেটা আমার জানা নেই।

প্রশ্ন- ঐ সময় কলেজ শিকদের ভিন্ন ভিন্ন পদ ছিল কিনা?

উত্তর- আমার জানা মতে ঐ সময় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিকদের সবাইকেই ঢালাওভাবে অধ্যাপক বলা হতো। তখন শিকদের মধ্যে কোনো শ্রেণী বিভাগ ছিল না।

প্রশ্ন- আপনি আপনার পিতার রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী।

উত্তর- এ বিষয়ে মতামত দিতে বাধ্য নই।

প্রশ্ন- আপনি আপনার পিতার রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী কি না?

উত্তর- আমি জামায়াতের রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী নই। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে কখনো সম্পৃক্ত ছিলাম না, এখনো নই।

প্রশ্ন- আপনারা কয় ভাই বোন?

উত্তর- আমরা ৬ ভাই। বোন নেই।

প্রশ্ন- আপনার ভাইয়েরা আপনার পিতার রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী। এটা আপনি জানেন কি না?

উত্তর- আমার ভাইয়েরা কেউ রাজনীতি করে না। তারা সকলেই বিদেশে থাকেন।

প্রশ্ন- ১৯৫২ সালে আপনার পিতা কোথায় ছিলেন?

উত্তর- রংপুর কারমাইকেল কলেজে শিকতা করতেন। ঢাকায় ছিলেন না।

প্রশ্ন- আপনার বাবা যে দল করেন পাকিস্তান আমলে তার নেতা ছিলেন মওদূদী সাহেব।

উত্তর- জি।

প্রশ্ন : মওদূদী সাহেবের ছেলেমেয়েদের সাথে আপনাদের কোনো পরিচয় বা পারিবারিক সম্পর্ক ছিল?

উত্তর : না।

প্রশ্ন  বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মওদূদী সাহেবের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আপনার কোনো দেখা-সাাৎ হয়নি?

উত্তর : জীবনেও কখনো দেখা হয়নি।

প্রশ্ন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০-এর দশকের শেষ দিকে ভিপি মুসলমান হলে জিএস হিন্দু হতেন।

উত্তর : আমি শুনেছি, তবে নিশ্চিত নই। যেটাই হোক শেটা নির্বাচনের মাধ্যমে হতেন।

প্রশ্ন : আপনি বৃটিশ ইন্ডিয়া পাকিস্তানের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে যাদের উদ্বৃতি দিয়েছেন তাতে সূত্র উল্লেখ করেননি।

উত্তর : সূত্র উল্লেখ করিনি সত্য। তবে ট্রাইব্যুনাল চাইলে আমি সেসব বই উপস্থাপন করতে পারব।

প্রশ্ন : মওলানা মওদূদী কতবার ঢাকায় আসেন?

উত্তর : এটা বলতে পারব না। আমরা বইয়ে পড়েছি যে, ৫০ দশকে এবং সত্তর সালে একবার এসেছিলেন। এছাড়া আর এসেছিলেন কিনা তা আমার জানা নেই।

প্রশ্ন : ’৭০ সালে যখন তিনি ঢাকায় আসেন তখন কি আপনার সাথে দেখা হয়েছিল?

উত্তর : মনে পড়ছে না। কারণ আমি ছোট ছিলাম।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে আপনার বাবা কোথায় ছিলেন?

উত্তর : মগবাজারের বাসায় ছিলেন।

প্রশ্ন : সকাল থেকে সারাদিনই কি বাসায় ছিলেন? না কোথায়ও গিয়েছিলেন?

উত্তর : সারাদিন বাসায় ছিলেন আর তিনি উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত ছিলেন।

প্রশ্ন : ঐদিন উনি কারো সাথে দেখা করেছেন বা কেউ উনার সাথে দেখা করেছিল কিনা?

উত্তর : ঐদিন কার্ফিউ ছিল। তিনি বাইরে যাননি। কেউ আমাদের বাড়িতে ঐদিন আসেননি।

প্রশ্ন : ২৫ মার্চের পরে প্রথম কবে আপনার পিতা বাইরে যান?

উত্তর : ৪০ বছর আগের কথা মনে নেই। তবে কয়েক দিন পর্যন্ত বাসা থেকে বের হননি।

প্রশ্ন : প্রথম যেদিন বের হন সেদিন কোথায় গিয়েছিলেন?

উত্তর : কবে কোথায় কার কাছে গিয়েছিলেন তা বলতে পারব না।

প্রশ্ন : আপনার পিতা যখন সামরিক কর্তৃপরে সাথে দেখা করতে যেতেন তখন আপনি সাথে যেতেন?

উত্তর : ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ তারিখের সাাতের বিষয়টি আমি জানতাম না। অন্য কখনো তিনি সামরিক কর্তৃপরে সাথে সাাৎ করেছেন বলে আমার জানা নেই। ৪ঠা এপ্রিলের সাাতের বিষয়টি পরে জেনেছি। তবে আমার পিতার সাথে আমি তখন ছিলাম না।

প্রশ্ন : ৪ঠা এপ্রিলের সাাতে কি আলোচনা হয়েছিল তা আপনার জানা আছে?

উত্তর : যারা ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শুধু তারাই জানেন।

প্রশ্ন : ৪ঠা এপ্রিলের আগে বা পরে আপনার পিতা পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপরে সাথে সাাৎ করেছেন কিনা?

উত্তর : আমার জানা নেই।

প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আপনার পিতা কতবার পাকিস্তান গিয়েছেন?

উত্তর : জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিস লাহোরে ছিল। আমার পিতা পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর ছিলেন। ফলে কয়েক মাস অন্তর মজলিসে শূরার বৈঠকে যোগ দিতে তিনি লাহোরে গিয়েছেন একাধিকবার।

প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের মিটিংগুলো ১৯৭১ সালে কোথায় হতো?

উত্তর : আমার জানা নেই। আদৌ হতো কিনা তাও জানা নেই।

প্রশ্ন : নূরুল আমিনের বাসায় শান্তি কমিটি গঠনের জন্য আহূত সভায় আপনার পিতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর : আমার বাবার লেখা বইতেই আছে যে, ঐ বৈঠকে মুসলিম লীগ, পিডিবি, নেজামে ইসলামের নেতৃবৃন্দ যেমন ছিলেন তেমনি আওয়ামী লীগেরও ২ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনার বাবা যখন ঢাকার বাইরে যেতেন তখন কি আপনি সাথে যেতেন?

উত্তর : ’৭১ সালে উনি বাসার বাইরে খুব কম যেতেন। ২/১ বার ঢাকার বাইরে গিয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আমি যাইনি।

প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বা তার আগে ঢাকার বাইরে কি কাজে যেতেন?

উত্তর : সাংগঠনিক সফরে যেতেন। ’৭০ সালের নির্বাচনের সময় কয়েকটি নির্বাচনী সভায় গিয়েছেন বলে শুনেছি।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনার পিতা মুসলিম লীগ, পিডিবি বা অন্যান্য দলের সাথে কোনো মিটিং করেছেন কিনা?

উত্তর : আমার জানা নেই।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনার পিতা বাসার বাইরে কোথায় কি কাজে যেতেন তা আপনার জানা নেই।

উত্তর : খুব স্বাভাবিক। তবে মুক্তিযুদ্ধকালে উনি খুব কমই বের হতেন।

প্রশ্ন : আপনার পিতার রচিত জীবনে যা দেখলাম একটি ৯ খণ্ডে আত্মজীবনীমূলক বই।

উত্তর : জি।

প্রশ্ন : এই বইয়ের ১ম এবং ৩য় খণ্ড আপনি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছেন?

উত্তর : জি।

প্রশ্ন : বইগুলো আপনি পড়েছেন?

উত্তর : অনেক আগে পড়েছি।

প্রশ্ন : উক্ত বইয়ের তৃতীয় খণ্ডে ১৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত মোহাম্মদ আলী কে।

উত্তর : উনি আমার আব্বার গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন।

প্রশ্ন : বইয়ের ঐ অংশে উল্লেখ আছে যে তিনি সকালে গাড়িতে ঢাকা শহরে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবাবপুর রোড, বংশাল এলাকায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, সেনাবাহিনী যেনো কোনো শত্রুদেশ জয় করার জন্য এরূপ আক্রমণ চালিয়েছে।

উত্তর : জি।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আওয়ামী লীগকে পাকিস্তান সামরিক সরকার নিষিদ্ধ করেছিল।

উত্তর : আমি পরবর্তীতে স্ট্যাডি করে জেনেছি।

প্রশ্ন : সামরিক সরকার অনেকের এমএনএ পদ বাতিল করেছিল।

উত্তর : জি। বাতিল হলে শূন্য আসনে উনি নির্বাচন করেছিল।

প্রশ্ন : ঐ উপ-নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নিয়েছিল।

উত্তর : আমি নিশ্চিত নই। তবে হতে পারে।

প্রশ্ন : আপনি যেসব কাগজপত্র দাখিল করেছেন তাতে দুষ্কৃতিকারী বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে।

উত্তর : ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম দুষ্কৃতিকারী বলতে সশস্ত্র প্রতিপকে বুঝিয়েছেন। তিনি কোনো অবস্থাতেই নিরস্ত্র, নিরীহ জনসাধারণকে বোঝাননি বা কোনো বিশেষ শ্রেণী, ধর্ম, গোত্র বা দলকে বোঝাননি।

প্রশ্ন : তাহলে এই সশস্ত্র প্রতিপ বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে।

উত্তর : যারা অখণ্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিল তাদের সশস্ত্র প্রতিপকে বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন : অখণ্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসীরা কি নিরস্ত্র ছিল?

উত্তর : অখণ্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শান্তি কমিটির সদস্য এবং সাধারণ মানুষ সবাই নিরস্ত্র ছিল।

প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্যরা রাজনৈতিক নেতা ছিলেন?

উত্তর : জি।

প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির অধীনে সারা দেশে জেলা, মহকুমা শাখা পরিচালিত হতো?

উত্তর : অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৎকালীন মুসলিম লীগের নেতারাই শান্তি কমিটিতে ছিল। জেলা, মহকুমা, ইউনিয়ন বা থানা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণ ছিল কিনা আমার জানা নেই।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আপনার বাবা পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোনো দেশে গিয়েছিলেন কিনা?

উত্তর : ১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর পাকিস্তান থেকে বিমানে ঢাকায় আসার চেষ্টা করেন। ভারতীয় বাহিনীর গোলাবর্ষণের কারণে তিনি ঢাকা এয়ারপোর্টে নামতে পারেননি। ফলে তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে সৌদি আরব যান। পাসপোর্ট না থাকায় ৩/৪ দিন সৌদি আরব অবস্থানের পর তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন।

প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আপনার পিতা কোনো বিদেশী সাংবাদিক বা নাগরিককের সাথে সাাৎ করেছেন কিনা?

উত্তর : আমার জানা নেই।

প্রশ্ন : দৈনিক সংগ্রাম জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র। এটা জানেন আপনি।

উত্তর : পাকিস্তান আমল থেকেই দৈনিক সংগ্রাম প্রকাশিত হতো। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র কিনা সেটা আমি জানি না। কোনো পত্রিকাই কোনো দলের মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হয় বলে আমার জানা নেই।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।