সংবাদ শিরোনামঃ

বিদ্যুৎ : কোন সুখবর নেই লোডশেডিং তীব্রতর হবে ** জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার নেপথ্য খলনায়ক কে? ** জামায়াত নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত নন ** কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আ’লীগ সরকারের কোরআন বিরোধী নারী নীতি ** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রলম্বিত হোক ** পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নায়ক ডেভিস ইস্যুতে পাক জনমত ও আদালতের চাপে সরকার ** ভূমিকম্প আর সুনামির পর পরমাণু আতঙ্কে জাপান ** কোরআন বিরোধী নারীনীতির অনুমোদনের পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ** আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক **

ঢাকা শুক্রবার ০৪ চৈত্র ১৪১৭, ১২ রবিউস সানি ১৪৩২, ১৮ মার্চ ২০১১

।। আবুল কালাম আজাদ ।।
‘‘দহন শায়নে তপ্ত ধরনী পড়েছিল পিপাসার্তা
পাঠালে তাহারে ইন্দ্রলোকের অমৃত বারির বার্তা
মাটির  কঠিন বাঁধা হল ক্ষীণ দিকে দিকে হল দীর্ন
নব অংকুর জয়পতাকায় ধরাতল সমাকীর্ণ
ছিন্ন হয়েছে বন্ধনবন্ধনীর।’’
আতপে তাপিত ধরা যখন আকণ্ঠ তৃষ্ণায় আকুল হয়ে উঠে, মহান প্রভু তখন আর্শিবাদের বারি বর্ষণে সুশীতল করেন বসুন্ধরাকে। দারুণ অনাবৃষ্টির দিনে মাঠ ঘাট শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, তারই করুণা অঝোরে নেমে আসে মেঘ-বাদলের রূপধরে; ধন্যধান্যে পুষ্পে বসুন্ধরা ফুলল হয়। তেমনি ধরণী যখন পাপের ভার আর সইতে পারে না, যখন অন্যায় এসে ন্যায়ের মিথ্যা এসে সত্যের, অন্ধকার এসে আলোর, কুসংস্কার এসে জ্ঞানের, পশুত্ব এসে মানবত্বের স্থান জুড়ে বসে, তখনই অধঃপতিত মানবাত্মার মুক্তির নিমিত্তে বিধাতা তাঁর দূত পাঠিয়েছেন। এমনি এক অমানিসার রাজত্বে হেরার জ্যোতি বুকে নিয়ে নবুয়তের রাজমুকুট মাথায় পরে, শান্তির স্বর্গীয় বার্তা সাথে নিয়ে বিশ্ব মানবাত্মার মুক্তিকামী রাহমাতুল্লিল আলামীন, সাইয়েদুল মুরছালিন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, অধিকার বঞ্চিত নিপীড়িত ও শোষিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, অধিকার বঞ্চিত নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির দূত, বিশ্বের স্বৈরাচারী শাসকের আতঙ্ক, সংস্কার আন্দোলনের অগ্রনেতা, মহাসত্যের সাধক, চরিত্র গঠনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, দেশপ্রেমিক, জনদরদী মানবতার কল্যাণে গৃহিত কর্মসূচী নিয়ে কামিল ইনসান হযরত মুহাম্মদ (সা.) লক্ষ তারার চাদোয়া ভেদ করে, সৌর সীমা পার হয়ে, তিমির অমানিশা তিরোহিত করে আগমন করলেন এ ধরাধামে। তার পরশ পেয়ে বন বিহঙ্গী সুমধুর তানে বন বিটপির ঘন বিথীকা মধুময় করে তুলল। ফুলেরা রক্ত ব্যঙ্গ হাসি মেখে পাপড়ি ছড়াল শাখায় শাখায়। কেটে গেল শত সহস্র যুগের ঘনীভূত জুলমাত, আলোকময় হলো এ বসুন্ধরা। পবিত্র কোরআনে বিঘোষিত হয়েছে ‘‘আমি আপনাকে (মুহাম্মদ) সর্বগুণে পরিপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছি।’’

মহানবী (সা.) তার সততা অনুপম চরিত্র মাধুর্য এবং অসাধারণ দেশপ্রেমিক সময়ের চাহিদানুসারে মানবতার কল্যাণে যথার্থ কর্মসূচী বিশ্বের ইতিহাসে প্রদীপ্ত ভাস্কর হয়ে রয়েছেন। তার এ মহৎ গুণাবলীর দ্বারা আরব জাতিকে একটি সুশৃঙ্খল নীতিবান ও সুসভ্য জাতিতে পরিণত করেছিল। কায়েম করেছিলেন সুন্দর ও চিরসুখী সমাজব্যবস্থা। তার আঙ্গুলি স্পর্শে পৌত্তলিকতার সীমাহীন প্রসারতা, মদ, জুয়া, সুদ, দাসত্ব প্রথা, নারী নির্যাতন, শিশুহত্যা ইত্যাদি সমাজ বিধ্বংসী আচরণ চিরতরে হলো বন্ধ। মহানবী (সা.) এ গঠনমূলক জীবনের উন্নততর আদর্শ মানব জাতির জন্য মাইল স্টোন হিসেবে কাজ করলো। মহানবীর গৃহীত কর্মসূচির (মানব কল্যাণে) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন একটি সুসভ্য ও সুসংহত জাতি এবং আদশ সমাজ পদ্ধতি। আর এটাই ছিল তার জীবনের মানব কল্যাণে ভারসাম্য কর্মসূচি। যার ফলে সময়ের অনিবার্য ভাবনায় মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করলেন- ‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, আমার নেয়ামত তোমাদের উপর সম্পন্ন করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (মায়েদা)
সাথে সাথে মহানবীর কল্যাণমূলক কর্মসূচির প্রতি নির্দেশ করে কোরআনে আরো ঘোষণা করা হয়েছে - ‘‘রাসূলের জীবনের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ’’
রাসূল (সা.) কর্মসূচি

সামাজিক
(১) দুর্নীতি ও প্রতিরোধ : দুর্নীতি অধিক পরিচিত শব্দ। এ সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশি কিছু জানি। নীতি বহির্ভুত কোন কাজই হচ্ছে দুর্নীতি। তিন অক্ষরের শব্দ এ দুর্নীতির কালে। থাবায় আজ গ্রাস করছে সারা বিশ্বকে। পৃথিবীর মানুষ নানা দুর্নীতির স্বীকারে পর্যুদস্ত। কোন মহান নেতাই যেন এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নি তে পারছেন না। এর কারণও দুর্নীতি। ধ্বংসের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সর্বকালে কালজয়ী দুর্নীতি প্রতিরোধকে হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর কথা। সমাজ থেকে নানা দুর্নীতি উচ্ছেদে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর গ্রহণীয় পদক্ষেপগুলো ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি মানুষকে শাশ্বত বাণীর নীতিমালা দ্বারা লোকদিগকে সতর্ক করে দেন। কালামে পাকে ঘোষিত হয়েছে ‘‘তোমরা মাপার সময় পুরোপুরি মেপে দিবে এবং সঠিক পাল্লা দ্বারা ওজন করবে। (বণী ইসরাইলী)
এছাড়া হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেই বলেছেন : অর্থাৎ ‘‘যে ব্যক্তি দোষমুক্ত বিক্রির সময় দোষ প্রকাশ করে না ফেরেস্তারা তার উপর অভিশাপ দিতে থাকে।
হাদিসে আরো বলা হয়েছে - যে ব্যক্তি (বেচা-কেনায়) ধোঁকা দিবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়! দুর্নীতির সর্বোচ্চ ঘাঁটি সুদের বিরুদ্ধে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। তিনি মদিনা সনদের শর্তে সুদের নিষিদ্ধ ও হারাম ঘোষণা করেন। সাথে সাথে আল্লাহর বাণী ঘোষিত হয় অর্থাৎ ‘‘আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করে ছেন।’’ এছাড়া তিনি নিজেই উচ্চারণ করেছেন- অর্থাৎ ‘‘সুদ যে খায়, সে দেয়, যে লিখে এবং যে সাক্ষ্য দেয়, সকলের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন- অর্থাৎ ‘‘ঘুষ দাতা এবং ঘুষ গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামের অধিবাসী।

(২) মাদকতা প্রতিরোধ : আধুনিক সভ্যতা নামক বিষবৃক্ষের আরেকটি বিষফল হচ্ছে মাদকাশক্তি। এ মাদকাশক্তি শুধু বাংলাদেশের নয় গোটা  বিশ্বকে এবং বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। মাদকতা শক্তির বিরুদ্ধে অনেক প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলেও এর যথার্থ কোন ফল পাওয়া যায়নি। মাদকতা বিরোধী সর্বপ্রথম কর্মসূচি গ্রহণ করেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি ছিলেন মাদকতা বিরোধী এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তার অসাধারণ নীতিমালা, কঠোর আইন প্রয়োগে তৎকালীন সময়ে ভারসাম্য সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক হন। কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- অর্থাৎ : হে বন্ধু! লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল উভয়ের মধ্যে মহাপাপ। মানুষের জন্য উপকার ও আছে কিন্তু উহার উপকারের তুলনায় ক্ষতিই বেশি। মহান আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ঘোষণা করেছেন অর্থাৎ : হে ঈমানদারগণ তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের কাছেও যেয়ো না।’’

(৩) সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিরোধে মহানবী (সা.) : সন্ত্রাস প্রতিরোধে হযরত মোহাম্মদ (সা.) কর্তৃক এ ‘শান্তিবাহী, কমিটির তৎপরতা ছিল প্রবল। অন্তত প্রাথমিকভাবে সমাজের সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাসের বিভীষিকাময় যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিতে এ কমিটির অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। শুধু তাই নয়, সমাজে সন্ত্রাসের সৃষ্টিকারী হোতারা এটাও বুঝতে পারলো যে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক আদর্শ যুব গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে। ঐতিহাসিক হিলফ উল ফুজুল জীবনের একমাত্র কৃতিত্ব ছিল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আর কোন নেতা সন্ত্রাস দমনে এ অভিনব ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারেনি।
অতঃপর নবুয়ত প্রাপ্তির পরে মহানবী (সা.) নানা রকম সন্ত্রাস প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্ত্ততি নেন। এজন্য আল্লাহই তার প্রিয় নবীকে ব্যাপক সহায়তা দান করেন। পবিত্র কোরআনে সন্ত্রাসকারীদের পরিচিতি দিয়ে সূরা বাকারায় বলা হয়েছে। অর্থ : যখন তাদের বলা হয় তোমরা ভূপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ তথা সন্ত্রাস সৃষ্টি কর না, তখন তারা বলে আমরা তো শুধু শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান নিশ্চয়ই এরাই সন্ত্রাস তথা ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, অথচ তারা এ ব্যাপারে উপলব্ধি করতে পারছে না। আরো বলা হয়েছে সুতরাং পাপাচারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধ করতে গিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে বিভিন্ন যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

(৪) জানসাধনা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূরীভূত : বিশ্বনবী (সা.) ই প্রথম অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, একমাত্র প্রকৃত শিক্ষা ও জ্ঞান সাধনার মাধ্যমেই সমাজ থেকে সব ধরনের অজ্ঞতা ও অপসংস্কার দূর করা সম্ভব, যার ফলে মানবতার কল্যাণ আসতে পারে। আল্লাহর প্রথম বাণী --- ‘তোমরা স্রষ্টার নামে পাঠ আরম্ভ কর। এজন্য রাসূল পাকের সকল আদর্শে জ্ঞানাহরণের উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। AlFRED MARTIN এর ভাষায় THE GREAT RELIGIOUS TEACHER OF THE EAST রাসূল (সা.) শিক্ষা আন্দোলনের কর্মসূচি হাতে নিয়েই মানবতার কল্যাণ সাধনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে : যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কখনও সমান হতে পারে? আল্লাহ অন্যত্র আবার বলেন- যাকে জ্ঞান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যঅণ দেয়া হয়েছে! রাসূল (সা.) নিজেই বলেছেন- আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।

(৫) নারীর অধিকার আদায় : মহানবী (সা.) এর আবির্ভাব পূর্বকালীন সময়ে সমাজে নারী জাতির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। সমকালীন ইতিহাসে উল্লেখিত যে কোন দেশের তুলনায় আরবের নারীর অবস্থান ছিল দুঃখজনক। তাদের কোন সামাজিক অধিকার বা মর্যাদা ছিল না। কন্যা সন্তান জন্মের কথা শুনলেই পিতার মুখে ক্ষোভে দুঃখে বিবর্ণ হয়ে যেত। মহান আল্লাহ বলেন- ‘তারা (তোমাদের স্ত্রীগণ) তোমাদের অঙ্গাররণ এবং তোমরা তাদের অঙ্গাবরণ। তিনি সন্তানদেরকে বললেন, আল্লাহ ও রাসূলের পরই মাতা হলেন সবচাইতে ইজ্জত ও সদ্ব্যবহার পাবার অধিকারী। বলা হয়েছে- ‘‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। মহান আল্লাহ বলেছেন ‘‘নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘‘তোমাদের মাঝে তারাই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যারা আপন স্ত্রীদের কাছে শ্রেষ্ঠ, তিনি আরো বলেন, ‘‘নারীরা হলো পুরুষের একান্ত সাথী।’’
তিনি পরিবার কাঠামোর প্রয়োজনীয় রদবদল করেন। রাসূর (সা.) এরশাদ করেছেন ‘‘দুনিয়ার নিয়ামত সমূহের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট নেয়ামত হচ্ছে্উত্তম স্বভাবের স্ত্রী।

(৬) দোষপ্রথার উচ্ছেদ : অতি প্রাচীন কাল থেকে আরব দেশেও বহির্বিশ্বে গোলামী প্রথার প্রচলন ছিল। গবাদী পশুর ন্যায় দাস-দাসীদের হাটে বাজারে ক্রয়-বিক্রয় হতো। মনিকান দাসদের জীবন মরণের প্রভু হিসাবে স্বীকৃত ছিল। রাসূল (সা.) এর আগমনের পর আসেত্ম আসেত্ম এ জঘন্য প্রথার উচ্ছেদ কাজ শুরু হয়। রাসূল (সা.)  নবুয়ত লাভের পর প্রকাশ্য দাস প্রথার বিলুপ্ত সাধনের কাজ শুরু করেন। যার ফলে মানবতার কল্যাণে এ কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বলে মনে হয়। দাস দাসীদের দুঃখ দুর্দশার জীবনচিত্রও তুলে ধরতে গিয়ে ঐতিহাসিক আমির আলী বলেন, SERFS SLAVES, FOR THEN THERE WAS NO HOPE GLEAM SUNSHINE ON THIS SIDE OF THE GRAVE. বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে হযরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বপ্রথম দাস প্রথার সামাজিক মর্যাদায় উপনীত করেন। তিনি বলেছেন, ‘‘গোলামকে আজাদী দানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কাজ আল্লাহর কাছে আর কিছুই নাই।’’

(৭) সামাজিক বৈষম্যের অবসান : বিশ্বসভ্যতার ক্রমবিকাশ বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্ব বন্ধুত্ব স্থাপনের গুরুত্ব ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্ব সমাজকে এক সুবিচার পূর্ণ ব্যবস্থার অনুসারী ও অনুগামী করে নেয়াই হচ্ছে বিশ্বনবী (সা.)-এর বিপ্লবের প্রধান উদ্দেশ্য। মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব খতম করে তথা মিথ্যা ও কৃত্রিম প্রভূর দাসত্বের জাল থেকে  এবং শোষণ ও কুশাসনের হাত থেকে বিশ্ব মানবতার মুক্তি দিয়ে বিশ্বভ্রাতৃত্ব জাগিয়ে তোলাই হচ্ছে তার প্রধান লক্ষ্য। কোরআনে বলা হয়েছে ‘‘সমস্ত মানব মন্ডলী এক জাতি (২. ২১৩)

(৮) সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা : সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া সুসভ্য শান্তিপূর্ণ সমাজের কল্পনা করা যেতে পারে না। তাই ব্য&&তগত জাতি ও আন্তর্জাতিক সকল জীবনেই শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইনসাফ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপিরিসীম। রাসূল (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত আদর্শ রাষ্ট্রের উপস্থাপিত কুরআনী দর্শনের মধ্যেই একমাত্র সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মহান নীতির অস্তিত্ব রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে- আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায় বিচার, সদ্ব্যবহার এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রাপ্য আদায়ের জন্য আদেশ দিচ্ছেন। পক্ষপাতহীন বিচার করা সমাজ জীবনে একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিক। আল্লাহ বলেন, আর যখন তোমরা লোকদের বিচার কর তখন তোমরা ন্যায়ের সহিত বিচার কর। রাসূল (সা.) বিচারে পক্ষপাতিত্ব করেননি। সর্বদা নিরপেক্ষ বিচার করতেন।

(৮) প্রতিবেশীর প্রতি সৌহার্দ্যতা : সামাজিক অশান্তির অবসান : পরিপূর্ণ নীল নকশা পেশ করেছেন। একটা শান্তিপূর্ণ সমাজ ও পরিবেশে সৃষ্টির ব্যাপারে সুখী সমৃদ্ধিশালী জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তথা মানব জীবনের সাফল্যের জন্য এক পরিকল্পনাপূর্ণ বাস্তবায়ন পূর্বশর্ত।
তিনি প্রতিবেশীর হক পালন ও কল্যাণ সাধনের তাকিদ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন ‘‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ তে পারে না, সে বেহেশ যেতে পারবে না। তিনি আরো ইরশাদ করেন ‘‘প্রতিবেশীর উপকার কর। তাহলে তুমি প্রকৃত মুমিন হতে পারবে।’’

(৯) প্রতিশ্রম্নতি আমানতদারী রক্ষায় : যে সমাজে ছলচাতুরী ধোঁকাবাজি, অঙ্গীকার ভঙ্গ করার ন্যায় আত্মঘাতীমূলক আচরণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার সেই সমাজে তিনি ওয়াদা পালন করার প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করার মহান আদর্শ পেশ করেন। এজন্যই তাকে আরববাসী ওয়াদা পালনকারী খেতাব দিয়েছিল। তিনি ইরশাদ করেন ‘‘মুনাফিকের আলামত তিনটি- ওয়াদা পালন না করা, মিথ্যা কথা বলা, আমানতে খেয়ানত করা।’’ তাই আরববাসী তার এ অভিনব চরিত্র গুণের পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হয়ে বিমুগ্ধ হন।

(১০) সমাজ হিতৈষ : মানুষের প্রতি মানুষের মায়া-মমতা সমাজ হতে যখন বুদবুদের মত উড়ে গিয়েছিল, কোমলতা মহানুভবতা কর্তব্যনিষ্ঠা, ও সহিষ্ণুতা যখন অচিন্তনীয় ছিল, ঠিক এমনি এক সময়ে মহানবী (সা.) মানব সমাজের প্রতি সদয় হও আহবান জানালেন[- সদয় হও, তাহলে ঊর্ধ্বালোকের প্রভুও তোমাদের প্রতি সদয় থাকবেন। মানবের সেবায় মহানবী (সা.) স্বীয় জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। পীড়িত ব্যক্তির শশ্রূষার পর নিকট শত্রু মিত্র ধর্মী-বিধর্মী, মুমিন-কাফির ভেদাভেদ ছিল না। তিনি নিজ হাতে সববিধ পীড়িতের সেবা করতেন।

(১১) ব্যভিচার ও সমকামিতা রোধ : আজ বিশ্বের প্রতিটি দেশে বিশেষ করে পাশ্চাত্যের প্রতিটি রাজ্যে ব্যভিচারের হার যেমন বাড়ছে কুমারী মাতার সংখ্যা তেমনিহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শুধু মানবীয় নয়, সামাজিক অবক্ষয়ও বটে। ১৪০০ বৎসর পূর্বেই আল্লাহ এ প্রথাকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে নির্দেশ দেন- ‘‘তোমরা ব্যভিচারে নিকটবর্তী হয়ো না। কেননা এটা অত্যন্ত অশস্নীল ও নিকষ্টতম অপরাধ।
অর্থনীতি

মানব জাতির কাছে অর্থনৈতিক সমস্যাই বড় সমস্যা। এ সমস্যার কারণেই পৃথিবীর মানুষ যুগ যুগ ধরে অশান্তি ভোগ করে। রাষ্ট্রনায়ক ও মানবতার মহান নির্দেশক মহানবী (সা.) এ সমস্যাটির স্পষ্ট সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান দিয়ে এ ধরায় মানবতার কল্যাণ সাধন করেছেন।
প্রিয়নবী তথা হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ছিলেন। একজন যোগ্য অর্থনীতিবিদ হিসেবে একটি সুন্দর ভারসাম্য অর্থনীতির রূপরেখা প্রণয়ন করে গেছেন তিনি। তিনি রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক প্রশাসনিক উন্নয়ন তথা ধনী দরিদ্র বৈষম্য দূর করার লক্ষক্ষ্য একটি উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করে গেছেন।

(১) সম্পদের মালিক আল্লাহ : অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে ইসলামের সবচে’ বড় অবদান হচ্ছে অর্থ-সম্পদ সম্পর্কিত প্রাচীন ও গতানুগতিক ধারার আমূল পরিবর্তন সাধন। আবহমান কাল ধরে ধন-সম্পদকেই মানুষ সবচেয়ে অধিক মূল্যবান এবং একমাত্র কাম্য বস্ত্ত মনে করে আসছে। আর এ সম্পদের একমাত্র মালিকই হলেন মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন। মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন অর্থাৎ আসমান ও জমীনে যা কিছু আছে তার সবকিছু আল্লাহর জন্যই আল্লাহর মালিকানাধীন’’ ইসলাম আরো বলে অর্থসম্পদ মানুষের জৈব জীবনের জন্য অপরিহার্য তবে তা কখনও মানুষের একমাত্র লক্ষ্য বস্ত্ততে পরিণত হতে পারে না।

(২) বিধিবদ্ধ ব্যক্তি মালিকানা : ইসলাম ব্যক্তি মালিকানাকে বঞ্চিত করেনি। কিন্তু ইসলাম ব্যক্তিমালিকানায় কখনো শোষণ-পীড়ন ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির সুযোগ করে দেয়নি। ইসলাম প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য, ব্যক্তিগত আযাদী ও অধিকার ক্ষুণ্ণ না করেই সম্পদের বণ্টন ও ভোগ ব্যবহারের পন্থা নির্দেশ করেছে এবং যে ধরনের উৎপাদন বণ্টন ও ভোগ ব্যবহারের এ সকল বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ণ হয়। তাকে ইসলাম মানবতার জন্য মারাত্মক ও অপমানকর বলে উল্লেখ করেছে। কালামে পাকে ঘোষণা করা হয়েছে- অর্থাৎ ‘‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। হ্যাঁ, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিচালিত ব্যবসা ব্যতীত।’’

(৩) অপব্যয় নিষিদ্ধকরণ : সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ইসলাম নির্দেশ দেয়। অকাজে বিলাসে, সামরিক প্রতিযোগিতায়, অস্ত্র তৈরিতে, সমাজে অশান্তি ও বিপর্যয় আসতে পারে এমন খাতে অর্থ ব্যয়কে অপব্যয় ও শয়তানের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে- অর্থাৎ নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।

(৪) সুদ প্রথার বিলোপ সাধন : সুদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় আজকের বিশ্বে বিরাজ করছে অস্থিরতা, ধনী-নির্ধনের মধ্য আকাশ-পাতাল বৈষম্য, হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি। কারণ সুদভিত্তিক সমাজে দুনিয়ার সকল সম্পদ সমাজের গুটিকতক লোকের হাতে কুক্ষেগত থাকে এবং সমাজের অপরপ্রান্তে নেমে আসে ইরিত্রিয়া ও ইথ্রিপিয়ার মত দুর্ভিক্ষ। ক্ষমতা ও অবৈধ সম্পদের নেশায় মানুষ থাকে মত্ত। মহান আল্লাহ ঘোষণা করলেন- আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। এককথায় রাসূল (সা.) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর অর্থনৈতিকভাবে নতুন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। যা অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে  অবারিত শান্তি নেমে আসে।

(৫) যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা : ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলোর মধ্যে সালাতের পরেই যাকাতের স্থান। যাকাত হলেঅ সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার একমাত্র হাতিয়ার। ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুল মালের আয়ের অন্যতম উৎস যাকাত। অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে সমাজে যাকাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। হযরত ওমরের শাসনামলে যাকাতের ইতিবাচক ভূমিকার ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন হয়েছিল যে, সমগ্র দেশে খুঁজে এমন একজন মিসকীন পাওয়া যায়নি, যাকে যাকাত প্রদান করা যেতে পারে। আজকের সমাজের অর্থনৈতিক মেকানিজাম হল যাকাত ব্যবস্থা চালু করা। রাসূল (সা.) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ সাদাকাহ ফরজ করেছেন, যা ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দারিদ্র্যদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

(৬) শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা একটি বিজ্ঞানভিত্তিক শ্রমনীতি চালু করা চাট্টিখানি কথা নয়। সমগ্র বিশ্বের বিরাজমান সমস্যাগুলোর মধ্যে ইহা জটিলতম সমস্যা। আধুনিক যুগের বিজ্ঞানোজ্জ্বল শিক্ষেত সমাজেও শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখানে শ্রমিকদের কোনরূপ সামাজিক মর্যাদা দেয়া হয় না। তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ শ্রমের নিঃশব্দ আঘাতে তাদের মেরুদন্ড কুজো হয়ে যায়, পানি হয়ে যায় বুকের রক্ত, শুকিয়ে লবণ হয় গায়ের ঘাম। একমাত্র ইসলামই শ্রমিকদের কোন শ্রেণী হিসেবে বিবেচনা করে না, তাকে ভাইয়ের মর্যাদা দিয়েছে। এখানে মনিব ও শ্রমিকের সম্পর্ক হল ভাইয়ের সম্পর্ক। এখানে শ্রেণী সংঘাত, শ্রেণী সংগ্রাম কিংবা শ্রেণী বিদ্বেষের কোন সুযোগ নেই। ইসলাম শ্রমিকদের অধিকারকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে তাদের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই ন্যায্য পাওনা আদায় করে দেয়ার নির্দেশ দেয়। রাসূল (সা.) ই একমাত্র এ কাজটি করেছেন। যার ফলে ভারসাম্য সমাজক বিনির্মাণে সম্ভব হয়েছে।

(৭) বেকার সমস্যার সমাধান : কর্মহীন অলস, বেকার ও অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্য কর্মসংস্থান করা, জীবিকা উপার্জনের উপায় সংগ্রহ করে দেয়া, অর্থনীতির ইতিহাসে এক চিরন্তন সমস্যা। বহু কর্মক্ষম লোক অলসতা কিংবা কর্মের অভাবে তাদের অন্তর্নিহিত বুদ্ধি প্রতিভা ও কর্মক্ষমতাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। বহু কর্মহীন বেকার যুবক কর্মের অভাবে হতাশায় ভুগছে। মদ, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি সমাজ বিরোধী তৎপরতায় ডুবে আছে। এ সকল সমস্যার সমাধান মহানবী (সা.) অতি সুন্দরভাবে দিয়েছেন। হালাল রুজিঅমেবষণণের ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন, ফরজ ইবাদত শেষে হালাল রুজিরঅমেবষণণ করাও ফরজ তথা একান্ত করণীয় কাজ।

(৮) সম্পদ বণ্টনের জীবিকার্জন ও ব্যবসা বাণিজ্যে প্রেরণা
মহানবী (সা.) তার অর্থ ব্যবস্থার তথা সম্পদ বণ্টন এর মাধ্যমে জীবিকা অর্জন ও ব্যবসা বাণিজ্যে বেকারদেরকে প্রেরণা দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছিলেন। তিনি স্বহসেত্ম জীবিকার্জনকে এবং সম্পদ অর্জনকে শরিয়তের অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বলেন : স্বহসেত্ম উপার্জিত সম্পদই হচ্ছে সর্বোত্তম সম্পদ। তিনি আরো বলেন : সত্যবাদী, ন্যায়পন্থী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী ও সিদ্দিকের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবেন।’’ মহানবী (সা.) এভাবে বহু বাণীর মাধ্যমে জীবিকা ও ব্যবসার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে গেছেন যা আজও সকলের আদর্শ। মহানবী (সা.) আরো ঘোষণা করেছেন- ব্যবসায়ী মাত্রেই কেয়ামতের দিন অপরাধী হিসেবে পুনরুত্থিত হবে, তবে তারা নয়, যাদের কার্যে খোদাভীতি ছিল, ন্যায় ও সত্যবাদিতা গুণ ছিল।

(৯) ভিক্ষাবৃত্তির উচ্ছেদ সাধন : মহানবী (সা.) তার উপস্থাপিত সম্পদ বণ্টন ব্যবসায় অভাবীদের অবস্থার উন্নতি ও বেকার সমস্যার সমাধানে পথ নির্দেশনা দিয়ে কর্মহীন লোকদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের প্রেরণা ও উজ্জ্বল দিক নির্দেশনা জ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথা সম্পদের উন্নয়নে এক অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল পদক্ষেপ রেখেছিলেন। তাই তিনি ভিক্ষাবৃত্তি দমনে গুরুত্বারোপ প্রদান করে একথা চিরতরে বিলুপ্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। মহানবী (সা.) ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করে বলেন- অর্থাৎ যে বক্তি পেশা হিসেবে অন্যের মাল ভিক্ষা চাইবে, সে যেন ভগ্নির জ্বলও অংগার চেয়ে নিল। কাজেই বেশি নিবে না কম নিবে সেটা তার এখতিয়ার।
তিনি আরো বলেন- রশি নিয়ে বনে গিয়ে এক বোঝা কাষ্ঠ আহরণ করা এবং তা বিক্রি করে অর্থোপার্জন করা লোকের কাছে ভিক্ষা করা থেকে উত্তম। যেখানে দেওয়া ও না দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

(১০) ভারসাম্যপূর্ণ ভাতা : শ্রমিকের মজুরির ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) এমন পরিমাণ ভাতা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যদ্বারা সে নিজে ও তার পরিবারের ভরণ-পোষণ করা চলে। এরমধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা এ পাঁচটি মৌলিক অধিকার রয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন : মজুর ও শ্রমিকের খাদ্য ও বস্ত্র দিতে হবে মালিকের তথা রাষ্ট্রের। তাই মহানবী (সা.) পরিবার বহনকারীকে দ্বিগুণ্বং পারিবারিক দায়িত্বমুক্ত ব্যক্তিকে একগুণ দিতেন।

(১১) মূল্যবৃদ্ধির আশায় প্রয়োজনীয় দ্রব্য আটকিয়ে রাখা : হুজুর (সা.) মানুষের কল্যাণে তার বাপকে নিবেদিত করেছিলেন একনিষ্ঠভাবে। তাই কোন দুর্নীতি তার চোখ এড়াতে পারে নাই। তারমধ্যে আর আর একটি হলো মূল্যবৃদ্ধির আশায় প্রয়োজনীয় দ্রব্য আটকিয়ে রাখা। মূল্য যখন বৃদ্ধি পায়, তখন তা তারা বাজারজাত করে। ইহার বিরুদ্ধে রাসূল (সা.) দুর্বার কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন এবং দীপ্ত কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেছিলেন- অর্থাৎ যে ব্যক্তি  মূল্যবৃদ্ধি কল্পে খাদ্যবস্ত্ত জমা করে রাখে সে পাপী বা অন্যায়কারী (মুসলিম আবু দাউদ)।

(১২) ওজনে ফাঁকি দেয়া : বিশ্ব নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহ রাববুল আলামিন যখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করলেন- অর্থাৎ এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায় তখন থেকেই হযরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনার সমগ্র ব্যবসায়ীদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, আজ থেকে আর কোন ব্যবসায়ী তাদের গ্রাহকদেরকে ওজনে কম দিতে পারবে না এবং যারা ওজনে ন্যায় নিষ্ঠা অবলম্বন করবে কাল কিয়ামতের দিন তারা নবী ও ছিদ্দিকদের সহিত হাশর-নাশর করবে।

(১৩) অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎ করা : সারা জাহানের নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহ রাববুল আলামিন তার মহা আসমানী গ্রন্থ আল কুরআনের বাণী প্রদান করেন : ‘‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।

(১৪) গণীমত ও ফহি সম্পদ : ইসলামী রাষ্ট্রের দুটি অন্যতম আয়ের উৎস হচ্ছে গণীতম ও ফহি। কাফিরদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হলে তাদের পরিত্যক্ত যাবতীয় ধন-সম্পদ বিজয়ী ইসলামী রাষ্ট্রের এক বৈধ আয় বিশেষ। এর থেকে সমাজের মৌল প্রয়োজন পূরণে অবশ্যই ব্যয় করতে হবে।

৩. রাজনৈতিক কর্মসূচী : মহানবী মানবতার কল্যাণ সাধনের জন্য যে সমস্ত কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন তারমধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচী অন্যতম প্রধান। নিম্নে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো-

(১) রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে রাসূল (সা.) প্রাক ইসলামী যুগে আরবের রাজনৈতিক ইতিহাস অন্ধকারাচ্ছন্ন। আরবরা তাদের ইতিহাস লিখেনি। তবুও আমরা যা জানতে পারি, তা অতীব নৈরাশ্যজনক বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। কেন্দ্রীয় কোন সরকার বা শাসন না থাকায় যা হবার হয়েছে। অধ্যাপক জাওয়াদ আলী বলেন, ‘‘কখন তিন ধরনের নেতৃত্ব ছিল  বা পারিবারিক প্রধানত্ব গোত্রীয় প্রধানত্ব, রাষ্ট্র প্রধানত্ব। কি রাসূল (সা.) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর আরবে এমন কোন নেতৃত্বের অবস্থা রাখেননি। তিনি নব ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ শুরু করেন।

(২) গণতন্ত্রের সমন্বয় : মক্কার কুরাইশরা রসূল (সা.)কে মানলোতো নয়ই বরং তাকে দেশান্তরিত করে, তারপর ছাড়ল। রসূল (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সর্বপ্রথম ইসলামী প্রশাসনিক কাঠামো সৃষ্টি করেন। গণতন্ত্রের সমন্বয়ে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রবর্তন করেন এবং আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয়কে একহতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ও অমুসলিমদের মাঝে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ভিত্তিতে সহনশীলতাতর মনোভাব গড়ে তোলার জন্য ৪৭টি শর্ত সম্বলিত একটি সনদ প্রণয়ন করেন। ইসলামের ইতিহাসে যা মদিনার সনদ নামে পরিচিত।

(৩) রাষ্ট্রনীতি : অধুনা যুগের পাশ্চাত্যের অনেকেই মনে করেন যে, ইসলাম শুধু আচার সর্বস্ব ধর্ম। অথচ ইসলাম কেবল আধ্যাত্মিক বিধান অথবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের নাম নয়। বরং একটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা যার মধ্যে মুসলমানদের সামগ্রিক জীবনবিধান ধর্মীয় সামাজিক দেওয়ানী ফৌজদারী ব্যবসায় সংক্রান্ত, সামরিক বিচার বিভাগীয় এবং দন্ডবিধি বিষয়ক আইন কানুন রয়েছে।
এ ধর্মের প্রবর্তক হলেন হযরত মুহাম্মদ। তিনি হলেন বিশ্বের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। যার ছিল না কোন নিয়মিত সৈন্যবাহিনী, না ছিল কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কর্মসূচী। অথচ তিনি এমন একটি আদর্শ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করলেন, যার নিদর্শন আজও ইতিহাসে বিরল। প্রখ্যাত বৃটিশ মনীষী বার্নার্ডশ বলেন-  If all the world was under one leader then Mohammad (sm) would have been the best fitted man to lead the peoples of various creed dogmas and ideas to peace and happiness.
অর্থাৎ গোটা বিশ্বর বিভিন্ন ধর্মের সম্প্রদায় আদর্শ ও মতবাদ সম্পন্ন মানব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক নায়কের শাসনাধীনে আনা হতো তবে একমাত্র মুহাম্মদ (সা.)ই সর্বাপেক্ষা সুযোগ্য নেতারূপে তাদেরকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পরেথ পরিচালিত করতে পারতেন।

(৪) সমরনীতি : সংগ্রাম ব্যতীত সত্য (কোনদিন) উচ্চাসনে হতে পারে না। আর সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে গেvাল তিরস্কার শুনতে ও বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে নম্ন স্বভাবের অধিকারী ছিলেন ঠিক, কিন্তু আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার লক্ষক্ষ্যই সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে- অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে যেখানে পাও হত্যা করো। আর যেখানে থেকে তোমাদেরকে বের করে দিয়েছিল, তোমরাও তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দাও। তিনি ব্যক্তির জন্য সংগ্রাম করেননি। গোটা জাতিকে মুক্তির দিশা দেওয়ার জন্য সমরনীতির কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন। রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য রাজনীতির বলিষ্ঠতার জন্য সমরনীতির বিকল্প নেই। এ জন্য রাসূল (সা.) সমরনীতির কর্মমুখী কর্মসূচী ঘোষণা করেন।

(৫) স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আজকের বিশ্বে যে সকল বস্ত্তগুলোকে পূর্ব শর্তরূপে উৎকৃষ্ঠতর। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র হচ্ছে মহানবী (সা.) এর বিপ্লবের একটা মজ্জাগত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পদক্ষেপ। যে সাম্যমৈত্রী ও স্বাধীনতার জন্য খ্রিস্টান জগৎ বিপ্লবের দাবানলে বহুবার ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে, যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীর গণ রক্তক্ষরণে কলঙ্কিত, সে গণতন্ত্র স্বাধীনতার এবং সাম্যই ইসলামের ব্যবহারিক জীবনের মূলভিত্তি। এখানে আমীর ফকিরের ভেদাভেদ মূলভিত্তি। এখানে অস্পৃশ্যতার অভিশাপ নেই। কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গের বৈষম্য নেই। রাসূল (সা.) নবুয়ত প্রাপ্তির পর আরবে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেছেন- আল-কুরআনে প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্রনায়কদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- তাদের (সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের) সাথে পরামর্শ করে নাও।’ আরো বলা হয়েছে- ‘‘তাদের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।’’

(৬) পররাষ্ট্রনীতি : মহানবী (সা.)  রাষ্ট্র শাসনে যেমন ছিলেন একজন দূরদর্শি। তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রেও ছিলেন একজন দক্ষ সেনানায়ক। তার সমর কৌশল ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং সাহস ছিল অপরিসীম। তাই বলে যুদ্ধই তার মূল উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি ছিলেন একজন শান্তিকামী মানুষ। তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন শান্তির বাণী নিয়ে বিশ্বে শান্তি স্থাপন করতে। আল্লাহ বলেন- হে নবী! আমি আপনাকে নিখিল সৃষ্টির জন্য মহান রহমত ও করুণা প্রেরণ করেছি। গোটা মুসলিম উম্মতের অখন্ডেত্বর আহবান জানাবে না ও ইসলামী পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম দিক। পারস্পরিক সহযোগিতা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে বিশ্বের সকল মুসলমানকে এক করার উদ্দেশ্যে সর্বাবিধ উপায় অবলম্বন করাই ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্য ও দায়িত্ব। মুসলমানকে পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত। আল্লাহ বলেন- আর দেখ তোমাদের এই উম্মত প্রকৃত পক্ষে একই উম্মত, আর আমি তোমাদের সকলেরই পরোয়ারদেগার।

(৭) কূটনীতি : কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে হযরত (সা.) সার্থক ও শ্রেষ্ঠ আদর্শের নজীর স্থাপন করেছেন। আল্লাহপাক কুরআনে ইরশাদ করেছেন- জ্ঞান ও সদুপদেশ দ্বারা তোমার প্রভু আলস্নঅহর পথে আহবান কর এবং তাদের সাথে তর্ককালে উৎকৃষ্ট যুক্তির অবতারণা কর। বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে সত্য ধর্ম প্রচারের জন্য বিভিন্ন নবী ও রাসূল আবির্ভূত হয়েছেন। পূর্ববর্তী কোন গ্রন্থে কোন নবী বিশ্বজগতের নবী বলে ঘোষিত হননি। আমরা দেখতে পাই কেবলমাত্র শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সমগ্র মানবজাতির নবী সকলের রাসূল ও বিশ্ব কল্যাণ নামে কুরআনে অভিহিত হয়েছেন। তিনি তার কূটনীতি কর্মসূচীর মাধ্যমে হুদাইবিয়া পরে মক্কা বিজয় করার মত কৌশল মানব অবলোকনে তুলে ধরেন।

(৮) অমুসলিমদের প্রতি আচরণ : অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি সুআচরণ রাষ্ট্রনায়ক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর অন্যতম মহান কীর্তি। অমুসলিমদের প্রতি তিনি সম্পূর্ণ মানবীয় অধিকার দিয়েছেন। যার প্রমাণ মদিনার ইয়াহুদদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বা বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান। কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ নয় বা ধর্ম পালনের সকল ধর্মের লোকদের সুযোগ প্রদানদই রাসূলের তথা রাষ্ট্রজীবনের বড় কৃতিত্ব ছিল। কুরআনে এরশাদ করা হয়েছে- ধর্ম গ্রহণে কোন জোর জবরদস্তি নেই।

(৯) শাসন ব্যবস্থার মূলভিত্তি : ইসলামী শাসনব্যবস্থার ভিত্তিসমূহ থেকে আমরা কয়েকটি পেশ করব।
১, শাসন ক্ষমতা শুধু আল্লাহর যেমন বলা হয়েছে শাসন চলবে কেবলমাত্র আল্লাহর।
২. পরামর্শ: শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য পরামর্শ ছাড়া হয় না। কুরআনে বলা হয়েছে কাজে পরামর্শ গ্রহণ কর।
৩. অভিভাবক সুলভ দায়িত্ব : রাষ্ট্রীয় শাসন হচ্ছে  অভিভাবক সুলভ দায়িত্ব। কুরআনে বলা হয়েছে- তোমাদের প্রত্যেকে জিম্মাদার এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। নেতাও অনুরূপ জিম্মাদার। তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

(৪) শিক্ষানীতি :
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) এর অবদান অতুলনীয়। মহানবী (সা.) জাতিকে শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করেছেন। কারণ শিক্ষা বিপ্লব হচ্ছে সংগঠনের একমাত্র উপায়। তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর তৈরি একজন আদর্শ শিক্ষক। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’’
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে উৎকৃষ্ট জ্ঞান শিক্ষা দান করার উদ্দেশ্যেই মহান আল্লাহ মানবতার শিক্ষক দিশারী রাসূল (সা.)কে করণীতে পাঠান। রাসূল (সা.) মানুষকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেন। কুরআনে বলা হয়েছে- এই হচ্ছে গোটা সৃষ্টি  জগতের জন্য উপদেশ।
(৫) মৌলিক মানবীয় গুণাবলী অর্জন : রাসূল (সা.) মানবতার কল্যাণে যেসব কর্মসূচী নিয়েছিলেন মৌলিক মানবীয় গুনাবলী অর্জন বিশেষ দিক। নিম্নে আলোচনা করা হলো-
(১) সত্যবাদিতা : যেসব চারিত্রিক গুনাবলী মানুষকে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে, সত্যবাদিতা তার অন্যতম গুণাবলী। রাসূল (সা.) বলেছেন- সত্যবাদিতা মানুষকে মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।
(২) চরিত্র গঠন : চরিত্র জীবনের অমূল্য সম্পদ। চরিত্র ছাড়া মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয় না। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন- তোমাদের মাঝে ঐ ব্যক্তিই উত্তম যার চরিত্র উত্তম। মহানবী (সা. নৈতিক বিপ্লব সাধন করেছিলেন তার বিলাস পদ্ধতি জাহেলী বিলাস পদ্ধতির সম্পূর্ণ বিপরীত। রাসূল (সা.) গৃহীত কিছু পদ্ধতি যেমন- (১) শিরক কুফরীর উচ্ছেদ, (২) নিফাকী কপটতার উচ্ছেদ, (৩) খেয়ানত ও ওয়াদা ভঙ্গ প্রসঙ্গে, (৪) পরনিন্দা সম্পর্কে (৫) চোগলখুরী ও কটুকথা, (৬) অহঙ্কারি আত্মভিমান প্রসঙ্গে, (৭) ঈর্ষা বা পরশ্রীকাতরতা দূরীকরণ, (৮) মিথ্যারীতির উচ্ছেদ, (৯) ফিস্কা, (১০) নৈতিক অবক্ষয় অবরোধ, (১১) বিলাশ ও কৃপণতা দূরীকরণ, (১২) ঘুষ প্রতারণার উচ্ছেদ, (১৩) মদ জুয়ার উচ্ছেদ, (১৪) ধূমপান ও নেশা পরিহার।
সৎ চরিত্রের উপায় : সৎ চরিত্র গঠনের উপায় সম্পর্কে রাসূল বলেছেন, তোমাদের মাঝে ঐ ব্যক্তিই উত্তম, যার চরিত্র উত্তম। এর আবার কিছু দিক রয়েছে-
(১) তাকওয়া অর্জন- আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক মুত্তাকীদের ভালোবাসেন। (২) ধৈর্য : আল্লাহ বলেন, ---- (৩) ক্ষমা : (৪) ইনসাফ : আমানত : (৬) আহাদ : ওয়াদা পূরণ করা যেমন ওয়াদা ঋণ স্বরূপ। (৭) দয়া ও দানশীলতা : (৯) বিনয় ও নম্রতা অর্জন।

৬. ধর্মীয় কর্মসূচি
রাসূল (সা.) যখন তিমির ঘেরা আরবে আগমন করেন, তখন মানুষের কাছে ধর্মীয় চিন্তাধারা ছিল খুব নিম্নে। মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করতো না। প্রথমত তিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করেন- তোমরা বল আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে। তিনি মূর্তিপূজা ত্যাগ করে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন, তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে উত্তম জাতি হিসেবে যেন তোমরা সৎ কাজের আদেশ করতে পার এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে পার।
উপসংহার : সত্যের মহানায়ক এবং আদর্শ চরিত্রবান বিশ্বনবীর জীবনকে আমরা নানাদিক পর্যালোচনা করলাম। আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, জগতে যদি কোন পূর্ণাঙ্গ সুন্দর সার্থক মহামানব এসে থাকেন তবে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)। যে জীবনের সাধনার ফলে সমগ্র জগতে আজ চির কল্যাণের উৎস বয়ে চলছে।
বিশ্ব মানববের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য যার আগমন,  মানবতা যার মহান দান, সার্বজনীন যার আদর্শ, যিনি বিশ্ব কল্যাণের আহবায়ক যিনি সমগ্র মানব জাততির একমাত্র আলোকবর্তিকা, তিনিই আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (সা.), যিনি মানবতার কল্যাণৈর জন্য যে কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন, তা সত্যিকারের একটি ভারসাম্য সমাজ গঠনে সহায়ক হয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি ছাড়া পৃথিবীতে মানবতার কল্যাণ সাধন কেউ করতে পারেনি।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।